স্বাস্থ্যসম্মত চিংড়ি মাছ উৎপাদন ও রপ্তানিতে আধুনিক প্রযুক্তি

স্বাস্থ্যসম্মত চিংড়ি মাছ উৎপাদন ও রপ্তানিতে আধুনিক প্রযুক্তি

কৃষিবিদ রিপন কান্তি ঘোষ

স্বাস্থ্যসম্মত চিংড়ি মাছ উৎপাদন ও রপ্তানিতে আধুনিক প্রযুক্তি
স্বাস্থ্যসম্মত চিংড়ি মাছ উৎপাদন ও রপ্তানিতে আধুনিক প্রযুক্তি

স্বাস্থ্যসম্মত চিংড়ি মাছ উৎপাদন ও রপ্তানিতে আধুনিক প্রযুক্তি

আমাদের দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার পুষ্টি পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে মাছ ও চিংড়ির গুরুত্ব অপরিসীম। নানা কারণে আমাদের প্রাকৃতিক উৎসের মাছ ও চিংড়ি দিন দিন কমে আসছে। এ প্রেক্ষাপটে চাষের মাধ্যমে মাছ ও চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। তবে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদিত মাছ যেন জনস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ হয় সে বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। কেননা নিরাপদ খাদ্য মানুষের জন্ম জন্মান্তরের অধিকার। উৎপাদিত মাছ ও চিংড়ি খেয়ে কেউ অসুস্থ হবে না- এ প্রত্যাশা সবার। তাছাড়া আমরা সকলেই জানি বিশেষ করে চিংড়ি হলো আন্তর্জাতিক বাজারের পণ্য।

বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে মানসম্পন্ন ও নিরাপদ মৎস্য ও মৎস্য পণ্য উৎপাদন করতে হবে। কিন্তু চাষ পর্যায়ে আমরা এমন কিছু কাজ বা প্র্যাকটিস অনুসরণ করে থাকি যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উৎপাদিত মাছ ও চিংড়ির গুণগত মান বিনষ্ট ও জনস্বাস্থ্যের জন্য অনিরাপদ হয়ে পড়ে। তাই মাছ অথবা চিংড়ি চাষে খারাপ প্র্যাকটিসগুলো বর্জন করে ভালো বা উত্তম প্র্যাকটিসগুলো অনুসরণ করা খুবই জরুরি। যথাযথ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণ করে পুকুরে চাষের উত্তম পরিবেশ রক্ষা করতে পারলে যেমন রোগবালাই এর ঝুঁকি কমে, তেমন উৎপাদনও বাড়ে।

সেই সাথে উৎপাদিত চিংড়ির গুণগতমান রক্ষা পায় এবং বিশ্ববাজারে সুনামের সাথে টিকে থাকা যায়। আমাদের দেশ থেকে পণ্য ক্রয়ে ক্রেতা দেশের নানা বিধিনিষেধ, শর্ত ও আইনি বাধা সম্পর্কে আমরা অনেকটাই জানি। ইইউ এর আইন অনুযায়ী ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রায় সকল প্রকার রাসায়নিক দ্রব্যাদি চিংড়ি চাষে ব্যবহার নিষিদ্ধ। অতএব, চাষকৃত মাছ ও চিংড়ির গুণগতমানের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্যাদির ব্যবহার পরিহার করে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘গুড অ্যাকোয়াকালচার প্র্যাকটিস’ বাস্তবায়ন ও অনুসরণ করা।

স্বাস্থ্যসম্মত চিংড়ি মাছ উৎপাদন ও রপ্তানিতে আধুনিক প্রযুক্তি
স্বাস্থ্যসম্মত চিংড়ি মাছ উৎপাদন ও রপ্তানিতে আধুনিক প্রযুক্তি

‘গুড অ্যাকোয়াকালচার প্র্যাকটিস’ এর অংশ হিসেবে পুকুরের ডিজাইন, পানির গুণাগুণ এবং চিংড়ির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা প্র্যাকটিসসমূহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব ক্ষেত্রে গুড প্র্যাকটিস অনুসরণ করলে উৎপাদিত মাছ ও চিংড়ির গুণগতমান ও খাদ্য নিরাপত্তা নিঃসন্দেহে বজায় থাকবে। গুণগতমানসম্পন্ন চিংড়ি উৎপাদনে অনুসরণযোগ্য ভালো বা উত্তম প্র্যাকটিসসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলো-

* খামারের অবস্থান সম্পর্কিত গুড প্র্যাকটিস
* চিংড়ি চাষে ব্যবহ্নত পানি সম্পর্কিত গুড প্রাকটিস
* খামারের আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কিত গুড প্র্যাকটিস
* খামারের অনুসরণীয় স্বাস্থ্যগত ব্যবস্থাপনা/হাইজনিক প্র্যাকটিস
* চিংড়ির খাদ্য সম্পর্কিত গুড প্র্যাকটিস
* চিংড়ির খামারের ঔষধ ব্যবহারের গুড প্র্যাকটিস

মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যসমূহের মধ্যে অন্যতম। আমাদের দেশের মৎস্য ও মৎস্যজাত দ্রব্য মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় রপ্তানি হয়। এ সকল দেশ তাদের জনস্বাস্থ্যের প্রশ্নে বিশেষ করে রাসায়নিক দ্রব্যের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। উৎপাদন পর্যায়ে ব্যবহার বা প্রাকৃতিকভাবে সংশ্লেষিত হওয়ার কারণে অথবা আহরণ পরবর্তী ব্যবস্থাপনার ত্রæটি বা প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যায়ে ব্যবহার বা সংক্রমণ ইত্যাাদি কারণে মৎস্য ও মৎস্য পণ্যে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতি ঘটে থাকে, তা প্রতিরোধের জন্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাহিদার কারণেই ও পরামর্শ মতে বাংলাদেশে জাতীয় রেসিডিউ নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।

স্বাস্থ্যসম্মত চিংড়ি মাছ উৎপাদন ও রপ্তানিতে আধুনিক প্রযুক্তি
স্বাস্থ্যসম্মত চিংড়ি মাছ উৎপাদন ও রপ্তানিতে আধুনিক প্রযুক্তি

আমদানিকারক দেশসমূহের নিয়মনীতি অনুসরণ করে আমাদের রাসায়নিক দূষণ দ্রব্যগুলোর রেসিডিউ পরীক্ষা, দূষণের উৎস শনাক্ত করা ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি কাজ করা হয়ে থাকে। এর আওতায় প্রতি বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক ঘের/পুকুর হতে মাছ/চিংড়ি ও পানি সংগ্রহ করে কেমিক্যাল পরীক্ষা করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো পরিবীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে মাছ ও চিংড়িতে ক্ষতিকর কেমিক্যালের উপস্থিতি শূন্যমাত্রায় বা অনুমোদিত পর্যায়ে নামিয়ে আনা। যদি এনআরসিপি হতে ধারাবাহিকভাবে কয়েক বছর প্রমাণ করা যায় যে, দেশে উৎপাদিত মৎস্য ও মৎস্য পণ্যে নিষিদ্ধ/ক্ষতিকর দ্রব্য নেই অথবা অনুমোদিত মাত্রার মধ্যে রয়েছে, তাহলে রপ্তানিপূর্ব পরীক্ষার প্রয়োজন নাও হতে পারে।রাখা এবং সেগুলো বিক্রয় বন্ধে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারকরা।

-ওষুধসমূহের মোড়কে উৎপাদন তারিখ, ব্যবহারের শেষ তারিখ এবং ব্যবহারের কত দিন পরে মাছ বা চিংড়ি ধরা নিরাপদ তা যথাযথভাবে প্রদর্শন করা।

– মৎস্য খাদ্য উৎপাদন পর্যায়ে যাতে কোনরূপ নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর দ্রব্য না মেশানো হয় তা নিশ্চিত করার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারকরণ।

– মৎস্য খাদ্য বা খাদ্য উপাদানে ব্যবহৃত উপকরণ আমদানি প্রচলিত আইন অনুয়ায়ী কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।

স্বাস্থ্যসম্মত চিংড়ি মাছ উৎপাদন ও রপ্তানিতে আধুনিক প্রযুক্তি
স্বাস্থ্যসম্মত চিংড়ি মাছ উৎপাদন ও রপ্তানিতে আধুনিক প্রযুক্তি

আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চিংড়ি ও মাছের চাহিদা প্রতিদ্ব›দ্বী দেশসমূহ- যেমন- ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতির তুলনায় কম নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে বেশি।
দেশের রপ্তানিতব্য মৎস্য পণ্যের গুণগতমানের নিশ্চয়তা বিধানকল্পে রেসিডিউ নিয়ন্ত্রণ ও রেসিডিউ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ক্রেতাদের বিশ্বস্ততা অর্জন করে আরও অনেক বেশি পরিমাণে রপ্তানি করা সম্ভব।

আরও পড়ুন:

ট্যাংরা মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন

মৎস্য শিল্প

 

Leave a Comment