মজুদ ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য প্রয়োগ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-মজুদ ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য প্রয়োগ

মজুদ ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য প্রয়োগ (Rearing Management & Feeding)

রেণুপোনার রোগ প্রতিরোধের লক্ষ্যে পুকুরে ভালো পরিবেশ বজায় রাখতে হয়। সঠিক সংখ্যায় রেণুপোনা মজুদকরণ, নমুনায়নের সময় যত্নের সাথে মাছ নাড়াচাড়া করা এবং সতর্কতার সাথে পরিবহন রেণুপোনার রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে । অধিক উৎপাদনের জন্য রেণুপোনা মজুদের পর পুকুরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণে রেণুপোনার পূর্ণ পুষ্টিসাধন হয় না।

পরিপূর্ণ পুষ্টিসাধনের লক্ষ্যে পুকুরে সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। সুষম খাদ্য গ্রহণে রেণুপোনা সুস্থ-সবল থাকে এবং এতে রেণুপোনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অ্যান্টিবায়োটিকযুক্ত সম্পূরক খাদ্য প্রদানের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট রোগ প্রতিরোধ করা যায়। অতিরিক্ত খাদ্য বা সার প্রয়োগে পুকুরের পানির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে মাছে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং সঠিক সংখ্যায় রেণুপোনা মজুদ, পরিমিত সার প্রয়োগ ও সুষম খাদ্য সরবরাহ করে রেণুপোনার বিভিন্ন রোগ সহজেই প্রতিরোধ করা যায় ।

 

মজুদ ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য প্রয়োগ

 

পুকুর জীবাণুমুক্তকরণ (Pond Disinfection)

পুকুর শুকনো এবং পুকুরে রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে পুকুর জীবাণুমুক্ত করে সফলভাবে রোগ প্রতিরোধ করা যায় । পুকুর জীবাণুমুক্তকরণের লক্ষ্যে মাঘ-ফাল্গুন মাসে পুকুর শুকিয়ে ফেলে তলায় অতিরিক্ত কাদা থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। এরপর তলায় চাষ দিয়ে রোদ্রে কয়েকদিন শুকাতে হবে । সূর্যালোকে সর্বাপেক্ষা উত্তম ।

শুকনা পুকুরে শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করলে তলার মাটি জীবাণুমুক্ত হয় । অতঃপর উক্ত পুকুরে যথানিয়মে মাছ চাষ করা হলে সাধারণত কোনো রোগ-বালাই দেখা দেয় না । চুন প্রয়োগের মাত্রা মাটির পি.এইচ-এর ওপর ভিত্তি করে কম-বেশি হতে পারে ।
মজুদ পুকুরে পোনামাছ ছাড়ায় ৪-৫ দিন পূর্বে নার্সারি বা চারা পোনার পুকুরে ০.২৫ পিপিএম হারে ম্যালথিয়ন/সুমিথিয়ন প্রয়োগ করে চাষকৃত মাছের পরজীবীঘটিত রোগ প্রতিরোগ করা যায় ।

এছাড়াও পোনা মজুদের সময় পুকুর প্রস্তুতকালে একবার এবং কার্তিক মাসে একবার প্রতি শতকে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করে মাছের জীবাণুঘটিত (pathogenic) প্রায় সব রোগই প্রতিরোধ করা যায় ।উপকরণ জীবাণুমুক্তকরণ (disinfection of appliances) মাছ চাষে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ, যেমন- রেণুপোনা পরিবহন পাত্র, খাদ্য প্রদানের পাত্র, জাল বা রেণুপোনা ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম রোগজীবাণু ও পরজীবীর বাহক হিসেবে কাজ করে।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

এসব উপকরণ এক জলাশয় থেকে অন্য জলাশয়ে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সেগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করা প্রয়োজন । সাধারণভাবে ৪০-৫০ পিপিএম মাত্রার ব্লিচিং পাউডার দ্রবণে এসব উপকরণ ৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখলে জীবাণুমুক্ত হয় । অতঃপর শুকিয়ে নিয়ে ব্যবহার করা যায় ।

বিভিন্ন বয়সের মাছ পৃথকভাবে লালন-পালন (Separation of year-class fish populations) অনেক সময় প্রজননক্ষম এবং বয়স্ক মাছ অনেক রোগজীবাণুর বাহক হিসেবে কাজ করে থাকে । কিন্তু এসব মাছ রোগাক্রান্ত হয় না। পূর্বে মাছ ঐসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে দেহে উক্ত রোগের স্বাভাবিক প্রতিরোধক ব্যবস্থা (Immune System) গড়ে ওঠে।

ফলে মাছ উক্ত রোগজীবাণুর উত্তরজীবী (Survivor) -তে পরিণত হয়। কিন্তু ঐসব রোগ জীবাণু অপেক্ষাকৃত কম বয়সের মাছ বা ভিন্ন বয়স গ্রুপের মাছে রোগের সংক্রমণ ঘটায়। সুতরাং ভিন্ন ভিন্ন বয়স গ্রুপের মাছকে আলাদা ভাবে পালন করে মাছের রোগ প্রতিরোধ করা যায় ।

মরা বা রোগাক্রান্ত মুমূর্ষু রেণু অপসারণ (Removal of Dead mori Yund Fish) এক পোষক হতে অন্য পোষকে গমন বা স্থানান্তরের মাধ্যমে রোগজীবাণুর সংক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় । রোগাক্রান্ত মরা বা মুমূর্ষু রেণু রোগজীবাণু দ্রুত বংশ বিস্তার করে । তাই মরা ও মুমূর্ষু রেণু পুকুর/হ্যাচিং জার / ইনকুবেশন ট্যাংকে থেকে যথাশীঘ্র সম্ভব অপসারণ করে রোগ সংক্রমণের তীব্রতা হ্রাস করা যায় ।

রাসায়নিক প্রতিরোধ ( Chemoprophylaxis) মাছকে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য খাইয়ে, রাসায়নিক দ্রবণে মাছকে ডুবিয়ে রেখে বা পুকুরে প্রয়োগ করে রোগ প্রতিরোধ করা যায়। নির্দিষ্ট রাসায়নিক দ্রব্য নির্দিষ্ট রোগজীবাণু মেরে ফেলে বা পানির গুণাবলির উন্নয়ন করে রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন রোগ এবং রোগের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য মাছের রোগ প্রতিরোধে প্রয়োগ করা হয় ।

 

মজুদ ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য প্রয়োগ

 

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ২-৩% হারে সাধারণ লবণ দ্রবণ ব্যবহার করে অল্প ব্যয়ে এবং সহজেই বিভিন্ন ধরনের পরজীবী ও অণুজীব সংক্রমিত রোগ প্রতিরোধ করা যায়। মাঝে মাঝে ২-৩ পিপিএম হারে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট প্রয়োগ করে পুকুরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানো যায় এবং এতে মাছের রোগ প্রতিরোধ হয় । নমুনায়ন বা অন্য কোনো কারণে ধরা মাছ ৫০০-১০০০ পিপিএম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণে কয়েক সেকেন্ড ডুবিয়ে রেখে পুকুরে ছাড়া হলে মাছের সাধারণ রোগ-বালাই প্রতিরোধ হয় ।

আরও দেখুন:

Leave a Comment