Site icon Fisheries Gurukul [ মৎস্য গুরুকুল ] GOLN

ভেজা খাদ্য বল আকারে প্রয়োগ করলে কী ঘটে

ভেজা খাদ্য বল আকারে প্রয়োগ করলে কী ঘটে

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ভেজা খাদ্য বল আকারে প্রয়োগ করলে কী ঘটে – যা চাষযোগ্য মাছের খাদ্য ও পুষ্টি এর অন্তর্ভুক্ত।

ভেজা খাদ্য বল আকারে প্রয়োগ করলে কী ঘটে

ভেজা খাদ্য বল আকারে পুকুরে প্রয়োগ করলে প্রয়োগকৃত খাদ্যের অধিকাংশই পানিতে গলে যায়। যা মাছ সরাসরি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না। ঐ খাদ্য পানিতে সার হিসেবে কাজ করে পরোক্ষভাবে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য (প্ল্যাংকটন) উৎপাদনে সহায়তা করে।

খাদ্যাভ্যাস অনুয়ায়ী সব প্রজাতির মাছ প্রাকৃতিক খাদ্য খেতে ততবেশি অভ্যস্তও নয়। যেমন- সিলভার কার্প, কাতলা, বিগহেড এ জাতীয় মাছ প্রাকৃতিক খাদ্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল বলে এদের মুখের আকৃতি এবং ফুলকার সজ্জাবিন্যাসও সেইভাবে তৈরি। তাই এদের প্রোকৃতিক খাদ্য প্রয়োজন। পক্ষান্তরে রুই, মৃগেল, পাঙ্গাশ এ জাতীয় মাছ পুরোপুরি সম্পূরক খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল বলে মুখের আকৃতি এবং ফুলকার বিন্যাস প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণের জন্য ততবেশি উপযোগী নয়।

আবার মুখের আকার ছোট বিধায় একই সময়ে একটি রুই মাছ যতগুলো প্ল্যাংকটন খেতে পারবে সেই সময়ে একটি কাতলা মাছ তার চেয়ে অনেক বেশি প্ল্যাংকটন খেতে পারবে। শুধু তাই নয় রুই মাছের মুখের আকৃতি ছোট বিধায় কাতলার সমপরিমাণ প্ল্যাংকটন খেতে তাকে যতবার মুখ হা এবং বন্ধ (Gulping) করতে হবে তাতে তার যে শক্তি ব্যয় হবে সেটাও আসবে নিশ্চয়ই খাদ্য থেকে এটাও বিবেচ্য হওয়া উচিত।

 

 

আবার ভেজা খাদ্য বল আকারে প্রয়োগ করলে একটি বলকে কেন্দ্র করে তার চার পাশে বড় জোড় ১০-১৫টি মাছ সুষ্ঠুভাবে সেই খাদ্য খেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে বল খাদ্য প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে শত শত মাছ সেখানে এসে  ভিড় করে। ফলে খাদ্য নিয়ে তাদের মধ্যে প্রচণ্ড কাড়াকাড়ি হয়। তাদের লেজ এবং পাখনা দ্বারা বল খাদ্যের অধিকাংশ ভেঙ্গে পানিতে গলে যায়।

অপেক্ষাকৃত বড় এবং সবল মাছগুলোই প্রতিযোগিতার টিকে খাদ্য গ্রহণ করে। ছোট ও দুর্বল মাছগুলোও খাদ্য গ্রহণের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে সময় এবং শক্তি ব্যয় করে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য গ্রহণে ব্যর্থ হয়ে ছোট ও দূর্বল মাহগুলো আরও ছোট ও দুর্বল হয়ে যায়। পিলেট খাদ্যে এ সমস্যা নেই।

 

 

বল খাদ্যের অসুবিধা

পিলেট খাদ্যের সুবিধা

খাদ্য প্রয়োগ হার :

মজুদকৃত মাছের জন্য কতটুকু খাদ্যের প্রয়োজন তা জানার জন্য অবশ্যই পুকুরে বিদ্যমান মাছের মোট জীবভর বের করতে হবে। আর এজন্য প্রথমেই মজুদকৃত মাছের গড় ওজন বের করে সেই গড় ওজনকে মজুদকৃত মাছের মোট সংখ্যা দ্বারা গুণ করলে মোট জীবভর (Biomass) পাওয়া যাবে। জীবভরকে শতকরা হার (%) দ্বারা গুণ করলে প্রয়োজনীয় মোট খাদ্যের পরিমাণ পাওয়া যাবে। যা নিচে সারণি – ৮ এ দেখানো হলো ।

 

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

সারণি-৮ : প্রজাতি ভিত্তিক খাদ্য চাহিদা

 

 

যদি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির মাছ মজুদ করা হয় তাহলে নমুনায়নের (Sampling) মাধ্যমে প্রত্যেক প্রজাতির মাছের আলাদা আলাদাভাবে গড় ওজন এবং জীবভর বের করে পরে সেগুলো আলাদা আলাদাভাবে যোগ করতে হবে। যেমন- মজুদকৃত মাছের গড় ওজন ২০ গ্রাম এবং মোট মাছের সংখ্যা ৬০০০টি। তাহলে মোট জীবভর হবে (২০ X ৬০০০ = ১২০০০০ গ্রাম) ১২০ কেজি। প্রত্যেক দিন মজুদকৃত মাছের দৈহিক ওজনের ৫% হারে খাদ্য প্রয়োগ করলে মোট ৬ কেজি খাদ্যের প্রয়োজন হবে।

ছোট মাছের খাদ্যের চাহিদা বেশি বিধায় মজুদকালীন সময়ে মাছের দৈহিক ওজনের ১০% এবং পরবর্তীতে আস্তে আস্তে কমিয়ে ২% এ আনা যেতে পারে। এভাবে আস্তে আস্তে মাছ যত বড় হবে খাদ্য প্রয়োগের হার তত কমে আসবে কিন্তু মোট খাদ্যের পরিমাণ বেড়ে যাবে । তবে অবশ্যই নমুনায়নের মাধ্যমে মাছের দৈহিক বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আস্তে আস্তে খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে।

সারণি – ৯ : মাসভিত্তিক মাছের খাদ্য প্রযোগের হার

 

 

খাদ্য প্রয়োগে সতর্কতা

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version