আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – আলোকদায়ক জীবাণুজনিত রোগ । যা ” বাগদা চিংড়ির প্রজনন ও হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।
শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
আলোকদায়ক জীবাণুজনিত রোগ
আলোকদায়ক জীবাণুজনিত রোগ (Luminescent vibriosis)
এই রোগটি ঠরনব্রড় যধাবুর জীবাণুদ্বারা হয়ে থাকে। চিংড়ির লার্ভা বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হলে অন্ধকারে সার্ভা জ্বলজ্বল করে এবং ধীরে ধীরে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যাকটেরিয়া যকৃত ও অগ্নাশয় গ্রন্থিকে আক্রান্ত করে। আস্তে আসেত গর্তের সৃষ্টি হয় ফলে সেপটিসিমিয়া (Septicemia) ঘটে। এই পর্যায়ে লুমিি নসেন্ট রোগ ধরা পড়ে। ১৯৯১ সালে ইন্দোনেশিয়ায় পিনাইড চিংড়ি হ্যাচারিতে এই রোগ প্রথমে ধরা পড়ে বলে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়।
এই রোগের প্রধান শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য হলো যকৃত ও অগ্ন্যাশয় গ্রন্থির স্বাভাবিক রং পরিবর্তন হয়ে গাঢ় বাদামি রঙের হয় এবং অগ্নাশয় গ্রন্থি সঙ্কুচিত হয়ে ছোট হয়ে যায়। মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করলে অসংখ্য মৃত ব্যাকটেরিয়া যকৃত ও অগ্নাশয় গ্রস্থিতে দেখা যায়। এখন পর্যন্ত এর পূর্ণাঙ্গ হিস্টোপ্যাথালেজিক্যাল তথ্য পাওয়া যায় নি। এই জীবাণু Penaeus monodon! Penaeus Inergaensis এ আক্রমণ ঘটায়।
চিংড়িতে Luminescent bacteria রোগের উপস্থিতি প্রধানত নির্ভর করে হ্যাচারির নিকটবর্তী সমুদ্র উপকলীয় এলাকার পানির উপর। Cultictaiar Vibriosis এর আক্রমণে উপাঙ্গের উপরের অগ্রভাগে পচন ধরে। বেশির ভাগ খামারে চিংড়ির মড়কের প্রধান কারণ bacterial septicemia এর জন্য। এক রিপােের্ট উল্লেখ করা হয় যে ২০৪ টি রোগাক্রানত চিংড়ির মধ্যে V. parahaemolyticus ৮৩ শতাংশ এবং V. vulin- ifictus ৩৬ শতাংশদ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।
Vibrio প্রজাতি দমনে Quinoline antibiotic দেয়া হয়। Chloramphenical যদিও রোগ নিরাময়ের জন্য অনেক উপকারী তথাপি চিংড়ির রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয় না, কারণ খাদ্যে এটির উপস্থিতি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। এছাড়া শুধু হ্যাচারি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, যেমন- ট্যাংকের স্বাস্থ্য পরিবেশ রক্ষা করে। ক্লোরিনদ্বারা পানি জীবাণুমুক্ত রাখা এবং হ্যাচারির তলদেশের সৃঞ্চিত মল ও উদ্বৃত্ত খাদ্য পরিষ্কার রাখা।
হ্যাচারিতে Monodon Baculo Virus এর আক্রমণ
হ্যাচারিতে সুষ্ঠু চাষ ব্যবস্থাপনার অভাবে চিংড়ির পোনা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। পোনা অবস্থায় সঠিক ঔষধের মাত্রা প্রয়োগ করা দুরুহ ব্যাপার। বেশির ভাগ হ্যাচারিতে চিংড়ি সার্ভা মজুদের পরিমাণ অত্যধিক বেশি, তাই এই ভাইরোগ আক্রান্ত চিংড়ি পোনার বেশির ভাগই মারা যায়।
প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চাষ করলে মোটামুটি ভালো ফল পাওয়া যায়। কিন্তু লার্ভার দেহে ভাইরোগর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেলে খামারে কখনও এই চিংড়ি চাষ করা উচিত নয়। এই রোগের কোন সঠিক চিকিৎসা নেই। তবে সুষ্ঠু চাষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

Baculovirus Penaci (BP)
চিংড়ির লার্ভা, পোস্ট লার্ভা এবং জুভিনাইল ধাপে এই ভাইরাস রোগ মহামারি আকারে দেখা দেয়। হ্যাচারিতে অনেক সময় এই ইচ ভাইরাস মাত্মক আক্রমণ করে, ফলে হ্যাচারিতে সব পোনা মারা যায়। ইচ প্রথম প্রােেট- াজুইয়া (P2) ধাপে (ধাপ-২) এবং মাইসিস ধাপে আক্রানত করে।
কিন্তু মাইসিস ধাপে রোগের ব্যাপকতা এত বেশি যে ৯০% পোনা মারা যায়।পোস্ট লাভা ধাপে আস্তে আস্তে রোগের ব্যাপকতা কমতে থাকে। এই রোগ ব্যাপক আক্রমণের ফলে চিংড়ির মাইসিস এবং পোস্ট লার্ভা ধাপে উপরের মধ্য আন্ত্রিক নালী বরাবর সাদা লম্বা টান দেখা দেয়। এই রোগের আক্রমণের ফলে চিংড়ি খাদ্য কমিয়ে দেয় ফলে দেহ বৃদ্ধি ঘটে না।
লার্ভাল মাইকোসিস (Larval mycosis)
প্রায় সব পিনাইড চিংড়ি হ্যাচারিতে এই রোগের আক্রমণ ঘটে। চিংড়িতে লার্ভাল মাইকোসিস রোগ প্রধানত Phycomycetous fungi, Lagenidium (1.Callinectes), Sirolpidium, Phythium, Leptolegoina mania
Ges Haliphthros milfordensis ছত্রাকদ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। Lagenidium চিংড়ির ডিম, নাপ্লিয়াস, প্রটোসসুইয়া এবং মাইসিস ধাপে আক্রমণ করে। Sirolpidium চিংড়ির মাইসিস (শেষ ধাপ) এবং পিএল এর শুরু পর্যায়ে আক্রমণ করে।
প্রতিষেধক ঔষধ এবং প্রয়োগ মাত্রা
লার্ভার ক্ষতি হয় বিধায় হ্যাচারিতে ক্লোরামেফেফিনিকল ঔষধ প্রয়োগ করা উচিত নয়, তবে অক্সিট্রোসাইক্লিন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ব্যবহারের আগে এর কার্যক্ষমতা সম্পর্কে অবগত হতে হবে। সাধারণত ১০-২০ পিপিএম মাত্রায় অক্সিটেট্রাসাইক্লিন প্রয়োগ করা হয়। নিচের সারণিতে রোগ দমনের জন্য কয়েকটি ঔষধ ও তার মাত্রা উল্লেখ করা হলো।
সারণি: প্রতিষেধক ঔষধ এবং প্রয়োগমাত্রা
ক্রমিক নং | ঔষধ | ঔষধ |
১ | Parazine (Oxoline acid) | ০.১-০.৫ ppm |
২ | Furasol | ১.০-২.৫ ppm |
৩ | Gentin Violot | ০.১-০.২ ppm |
৪ | Formalin | ২৫-৫০ ppm |
Oomycetes জাতীয় ছত্রাক হ্যাচারিতে আক্রমণ ঘটায়। এ রোগ থেকে চিংড়ির পোনাকে রক্ষার জন্য Trifluratin Treflan ১০ পিপিএম মাত্রায় সরাসরি প্রতিপালন ট্যাংককে চার ঘণ্টা অন্তর রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত প্রয়োগ করতে হবে। লজিনিডিয়াম (Legenidium) ছত্রাক সাধারণত হ্যাচারিতে চিংড়ির পোনাতে আক্রমণ ঘটায়।
খামারে অধিক বৃষ্টিপাতের ফলে লবণাক্ততা ১৮ পিপিটিতে নেমে আসে, ফলে লেজিনিডিয়াম ছত্রাকের আক্রমণ ঘটে। ম্যাগনেসিয়াম আয়ন লেজিনিডিয়াম ছত্রাক দমনের জন্য প্রতিষেধক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। NaCl, KCI Ges MgCl, এর বিভিন্ন মিশ্রণে প্রয়োগ করে দেখা যায় যে Legenidium এর আক্রমণ কমে যায়।
কিন্তু এর সঠিক তথ্য বিশেষণ করা সম্ভব হয় নি। KCI এবং MgCl₂, এর মধ্যে কোনোটি এর নিরাময়ে ভূমিকা পালন করেছে কিংবা দুইয়ের মিশ্রণের ফলে কোন অনুপাতে এ নিরাময় ঘটেছে, এর জন্য আরও গবেষণা দরকার।
আরও দেখুনঃ