চিংড়ি আহরণ সরঞ্জাম | অধ্যায়-১ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – চিংড়ি আহরণ সরঞ্জাম। যা ” বাগদা চিংড়ি আহরণ ও বাজারজাতকরণ ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।

শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।

চিংড়ি আহরণ সরঞ্জাম

 

চিংড়ি আহরণ সরঞ্জাম | অধ্যায়-১ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

 

চিংড়ি আহরণ সরঞ্জাম

বাগদা চিংড়ি ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যেই আহরণের উপযুক্ত হয়ে থাকে। মুক্ত জলাশয় বিশেষ করে খাল-বিল, নদী-নালা, প্রবিত ধানক্ষেত, হাওর-বাওড়, সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল ও গভীর সমুদ্র থেকে চিংড়ি আহরণের ক্ষেত্রে আহরণ নীতিমালায় উপকরণ ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেক সময় এ সকল নীতিমালা পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।

জলাশয়ের উৎসের বৈচিভাতা ও চিংড়ি আহরণ উপকরণের কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের বাহন ও উপকরণ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। চিংড়ি আহরণ বলতে প্রধানত বাজারজাতকরণের উপযোগী চিংড়ি ধরাকে বোঝানো হয় এবং চিংড়ি ধরার জন্য যেসব উপকরণ ব্যবহার করা হয় তাকে আহরণ উপকরণ বলা হয়। চিংড়ি আহরণ উপকরণসমূহকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, যেমন- ক. চিংড়ি আহরণ বাহন বা ক্রাফট (Crafts) এবং খ. চিংড়ি আহরণ উপকরণ বা গিয়ার (Gears)।

চিংড়ি আহরণ উপকরণসমূহকে এক কথায় ক্রাফট ও গিয়ার বলা হয়। মূলত একটি অপরটির সাথে সম্পর্কযুক্ত। চিংড়ি আহরণ পদ্ধতি সাধারণত জলাশয়ের প্রকৃতি ও ধরনের উপর নির্ভর করে। আমাদের দেশে চিংড়ি বিপণন প্রক্রিয়ায় চিংড়ি সম্পদযুক্ত জলাশয় ও চাষকৃত জলাশয় থেকে বাজারে আসে।

জলাশয়ের ধরন, প্রকৃতি ও কারিগরি বৈশিষ্ট্য ও উপযািেগতা অনুসারে চিংড়ি আহরণ বাহন ও উপকরণ উভয়েরই প্রয়োজন হয়। কখনও কখনও বাহনের প্রয়োজন হয় না। বাণিজ্যিকভাবে মুক্ত জলাশয় ও বৃহৎ চিংড়ি ঘের থেকে চিংড়ি আহরণের ক্ষেত্রে বাহন ও উপকরণ উভয়েরই প্রয়োজন হয়।

বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই চিংড়ি ধরার বা আহরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ, জাল ও বড়শি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কৌশলগত দিক থেকে এসব আহরণ উপকরণের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। বাংলাদেশে ব্যবহৃত কতিপয় চিংড়ি আহরণ উপকরণের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. ফাঁদ: ফাঁদের মাধ্যমে চিংড়িকে জীবন্ত অবস্থায় কাঁদের অভ্যন্তরে আটকে রেখে পানির উপরিভাগে তুলে চিংড়ি আহরণ করা হয়। সাধারণত অগভীর জলাশয়ে বা জোয়ার-ভাটার অঞ্চল বা জলাশয়ে পানি প্রবেশের মুখে ফাঁদ পেতে মাছ বা চিংড়ির পরিভ্রমণ পথে বাধার সৃষ্টি করা হয়।

ফাদ তৈরির মৌলিক দিক হিসেবে ফাঁদের মধ্যে চিংড়ি পানির গতির মাধ্যমে সহজেই ফাদের মুখ দিয়ে ফাঁদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু চিংড়ি পুনরায় উক্ত প্রবেশ পথ দিয়ে বের হতে পারে না। উল্লেখ্য ফাঁদের পশ্চাদ্ভাগ বন্ধ থাকে এবং চিংড়ি সংগ্রহের সময় কাঁদের পিছন দিক খুলে বা নির্দিষ্ট পথে চিংড়ি সংগ্রহ করা হয়। ফাঁদের মাধ্যমে সাধারণত পারিবারিক মৎস্য চাহিদা মিটানো হয়। চিংড়ির প্রাপ্যতার উপর ভিত্তি করে কখনও কখনও তা সংশিষ্ট আহরণকারীর পেশা হিসেবেও গণ্য হয়।

বাংলাদেশে ব্যবহৃত অধিকাংশ ফাঁদই বাঁশের সাহায্যে তৈরি করা হয়। উন্নত বিশ্বে প্লাস্টিক নির্মিত সরু দণ্ডের মাধ্যমে ফাঁদ নির্মাণ করা হয়। এলাকা বা অঞ্চলভেদে এবং চিংড়ি আহরণ উৎসের ধরন অনুসারে ফাঁদের আকৃতি ও প্রকৃতি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বাংলাদেশে চিংড়ি ধরার জন্য প্যারন, ডারকি, বেনকি, ইচা চাই, আহুকা প্রভৃতি ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিচে চিংড়ি ও অন্যান্য ছোট আকৃতির মাছ আহরণের ফাদের বিবরণ দেয়া হলোঃ

ক. অ্যান্টা (Anta)

গঠন প্রকৃতি: আকৃতিতে আয়তকার এবং সাধারণত উচ্চতা প্রন্থের চেয়ে কিছুটা বেশি। মূলত বাশ দিয়ে অ্যান্টা তৈরি করা হয়। ফাঁদের উচ্চতা অংশের একদিকে চিংড়ি ও অন্যান্য জলজ প্রাণী প্রবেশের জন্য এমনভাবে প্রবেশ পথ তৈরি করা হয়, যাতে অতি সহজেই পানির গতির মাধ্যমে চিংড়ি ফাঁদের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু সহজে বের হতে পারে না। প্রবেশ পথ লম্বায় প্রায় অ্যান্টার মোট দৈর্ঘ্যের সমান হয়ে থাকে। ফাঁদের একাংশে চিংড়ি আহরণের জন্য নির্দিষ্ট স্থান রাখা হয়। নির্দিষ্ট স্থান বন্ধ ও খালোর জন্য সহজ ব্যবস্থা রাখা হয়।

ব্যবহার পদ্ধতি: সাধারণত, এ ধরনের কাদের মাধ্যমে ছোট মাছ ও চিংড়ি ধরা হয়। গতিশীল পানিতে চিংড়ি ধরার জন্য এ ধরনের ফাঁদ জলাশয়ে পানি প্রবেশের মুখে বা মোহনাঞ্চলের নদী-নালা বা মক্ত জলাশয়ে পানির গতির। বিপরীত দিকে মুখ করে প্রতিস্থাপন করা হয়।

নির্দিষ্ট সময় পরে ফাঁদ পানির উপরে তুলে চিংড়ি আহরণ করা হয়। যুক্ত জলাশয়ে ফাঁদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাঁশের খুঁটির মাধ্যমে নির্দিষ্ট গভীর- তায় স্থাপন করা হয়। কোথাও কোথাও চিংড়ির গতি নির্দিষ্ট পথে পরিচালনার জন্য ফাঁদের দু’পাশে ১২০° কোণ করে বানার ব্যবস্থা করা হয়। এক্ষেত্রে একই সাথে অনেকগুলো ফাঁদ বিভিন্ন গভীরতায় স্থাপন করা হয়।

বিস্তৃতঃবাংলাদেশের প্রায় সকল জেলায় এ ধরনের ফাঁদ ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। এছাড়া ভারত, পাকিস্তান, খাইল্যান্ড, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশে এ ধরনের ফাঁদের প্রচলন রয়েছে।

খ. বেনকি (Benki)

গঠন প্রকৃতিঃ আকৃতিতে আয়তকার, নিচের অংশ বেশ চ্যাপ্টা, তবে উপরের অংশ সরু হয়ে থাকে। অগ্রবর্তী ও পশ্চাত্ত্বতী অংশ কিছুটা লম্বা এবং চিংড়ি প্রবেশের জন্য এক। বা একাধিক প্রবেশ শখ থাকে। ফাঁদের উপরের অংশ কিছুটা লম্বা এবং চিংড়ি প্রবেশের অংশে চিংড়ি আহরণ পথ এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে পথের ঢাকনা সহজেই খালো, এবং কঙ্গ করা যায়।

ব্যবদায় পদ্ধতিঃ বেনকি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সহজপ্রাপ্য বাঁশের ফালি দিয়ে বিভিন্ন আকারের তৈয়ি করা হয়। ফাঁদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে জলাশয়ের ধরন ও প্রকৃতি আন্টা ফাঁদের অনুরূপ। তবে এ ধরনের ফাঁদ এককভাবে বা একাধিক ফাঁদ কৌণিকভাবে সংযাগে করে একত্রে মাছ আহরণের জন্য স্থাপন করা হয়। সাধারণত এ ফাঁদের মাধ্যমে চিংড়ি ও ছোট প্রজাতির মাছ ধরা হয়।

বিস্তৃত্তি: বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলায় এ ধরনের ফাদ ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে বেনকি ফঁদের বিভিন্ন নাম লক্ষ্য করা যায়, যেমন- বেঞ্চি (Benchi), দেউর (Dheur), ধাইর (Dhiar) ইত্যাদি।

গ. ডায়কি (Darkd)

গঠন প্রকৃতি: আকৃতিগত দিক থেকে এটি আয়তকার হয়ে থাকে এবং এলাকাভেদে বিভিন্ন আকারের ছারকি প্রধানত বাশের চর সাহায্যে তৈরি করা হয়। ফাঁদের দরজা এর বক্ষ পাশের (উত্তরদিকে) তলদেশে অবস্থিত। ফলে উভয়দিক থেকেই অর্থাৎ পানির গতিপথ পরবর্তীত হলেও এ ফাঁদ লম্বালম্বিভাবে তলদেশ থেকে উপরিভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। পার্শ্বভাগে মাছ আহরণের দরজা বিদ্যমান।

ব্যবহার পদ্ধতি: হাওর-বাঁওড়, নদী-নালা, খাল-বিল প্রভৃতি জলাশয়ে পানি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে এই ফাঁদ পেতে চিংড়ি সগ্রহ করা হয়। প্রবহমান পানিতেও চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ ধরার ক্ষেত্রে এ ফাঁদের ব্যাপক প্রচলন দেখা যায়।

বিস্তৃতিঃবাংলাদেশের সকল জেলায় এ ধরনের ফাঁদ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, গাপোলগঞ্জ প্রভৃতি জেলাসমূহে এ ফাঁদের প্রচলন বেশি দেখা যায়।

ঘ. দোয়ার

গঠন প্রকৃতিঃ দেখতে অনেকটা আয়তকার, তলদেশ প্রশস্ত ও শীর্ষদেশ সরু এবং পাশের দু গ্রান্ড একই রেখা বরাবরে অবস্থান করে। এ ধরনের ফাঁদে দুটি ফাঁদ দরজা থাকে। ফাঁদ দরজা দুটো একই পাশে বা উভয় পাশে হতে পারে। ফাঁদ দরজা ফাঁদের তলদেশ থেকে শীর্ষদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। ফাঁদের উপরিভাগে মাছ আহরণের একটি ছিদ্র থাকে, যা অতি সহজেই খালো এবং বন্ধ করা যায়।

ব্যবহার পদ্ধতিঃ সাধারণত প্রবহমান পানি এবং পাবনভূমি থেকে চিংড়ি আহরণের ক্ষেত্রে দোরার ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ফাঁদ নালা বা জলাশয়ে পানি উঠা-নামার স্থানে প্রতিস্থাপন করা হয়। ফাঁদের সম্মুখভাগের দিকে গাছের ডাল-পালা বা বানা দিয়ে এমনভাবে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়, যাতে মাছ ও চিংড়ি প্রবহমান পানির পতির মাধ্যমে ফাদে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়। প্রামাঞ্চলে বানার পরিবর্তে খেজুর গাছের শাখা-প্রশাখাও ব্যবহার করা হয়।

বিস্তৃক্তিঃ বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে এ ধরনের ফাঁদের সাহায্যে পাবনভূমির মাছ আহরণ করা হয়।

ঙ. ইচা চাই (Icha chal)

গঠন প্রকৃতি: ইচা চাই অনেকটা ড্রাম আকৃতির এবং স্থানীয়ভাবে এটি বাঁশের চঞ্চ দিয়ে তৈরি করা হয়। পশ্চান্তাগ অগ্রভাগের চেয়ে কিছুটা সরু। এ ফাঁদে পর পর দুটি ফাঁদ দরজা থাকে। ফাঁদের পশ্চাৎ দিকে মাহ। আহরণের দরজা থাকে।

ব্যবহার পদ্ধতিঃসাধারণত প্রবহমান পানি ও পাবদতুমি থেকে চিংড়ি আহরণ করার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয়। নালা ও জলাশয়ের পানি উঠানামার স্থানে এ ধরনের ফাঁদ ব্যবহার হয়। ফাঁদের সম্মুখভাগের দিকে গাছের ডালপালা বা বানা দিয়ে এমনভাবে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয় যাতে চিংড়ি ও অন্যান্য প্রাণী প্রবহমান পানির পতির মাধ্যমে কনে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়।

বিবৃদ্ধি বাংলাদেশের সকল জেলায় এ ফাঁদের ব্যবহার দেখা যায়। তবে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এ চাইয়ের প্রচলন বেশি। সাধারণত এ চাইয়ের মাধ্যমে ইচা ও অন্যান্য ছোট মাছ ধরা হয়।

চ. খাংকা (Abuke)

স্থানীয় নাম: বরিশাল, পটুয়াখালী, বরুড়া, চট্টগ্রাম, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া ও রাজশাহী এবং পাবনা অঞ্চলে হানেচা (Honcha), ময়মনসিংহ অঞ্চলে উচা (Ucha), নোয়াখালী এবং রংপুর অঞ্চলে ঝাই (Jhaoi) নামে পরিচিত।

গঠন প্রকৃতিঃ আকৃতিগত দিক থেকে ত্রিকোণাকৃতির এবং বাঁশের মাদুরের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এটি লম্বায় ১.২৫ থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত এবং প্রন্থে ৮০ সেমি থেকে ১২০ সেমি পর্যন্ত হতে পারে। মূল ফাঁদের পশ্চাৎভাগ কন্ধ থাকে। ফাঁদ হাতের মাধ্যমে পরিচালনার জন্য এক খণ্ড বাঁশ মূল ফাঁদের সম্মুখভাগের মধ্যবর্তী অংশে এবং পশ্চাৎভাগের সাথে সংযুক্ত থাকে। বাঁশ খণ্ডের পিছনের অংশ ফাঁদের হাতল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফাঁদের হাতল ফাঁসের মোট দৈর্ঘ্যের প্রায় অর্ধেকের সমান।

ব্যববার পদ্ধতিঃস্বল্প গর্তীর জলাশয়ে চিংড়ি ধরার ক্ষেত্রে এ ধরনের ফাঁদ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ ফাঁদের মাধ্যমে চিংড়ি ধরার ক্ষেত্রে প্রধানত হাতের মাধ্যমে ফাঁদ পরিচালনা করা। ফাঁদের অগ্রভাগ মাটির সাথে বা পানির তলদেশে পানির কাছাকাছি স্থাপন করে দ্রুত গতিতে সম্মুখের দিকে টানা হয় এবং কিছু সময় পর পর ফাঁদের মাখা পানির উপরিভাগে তুলে ফাঁদে চিংড়ি বা মাছ ধরা পড়েছে কি-না তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। সাধারণত ছোট আকৃতির চিংড়ি দয়ার জন্য এ ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করা হয়। পারিবারিক পর্যায়ে চিংড়ি বা মাহু আহয়ণের ক্ষেত্রে এ ধরনের ফাঁস ছোট-বড় সকসেই ব্যবহার করতে সক্ষম।

বিস্তৃতিঃ বরিশাল, পটুয়াখালী, বগুড়া, চট্টগ্রাম, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, পাবনা, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী এবং রংপুর অঞ্চলে এটি পাওয়া যায়।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

২. জালঃ চিংড়ি আহরণে জন্য বিন্নি ধরনের জাল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে চিংড়ি/মাছ ধরার জন্য সাধারণত যে সমস্ত জাল ব্যবহৃত হয়ে থাকে তার বিবরণ নিচে দেয়া হলোঃ

ক. বেহুন্দি জাল

স্থানীয় নামঃ বেহুন্দি জাল, বিন্দি জাল, বিউটি জাল, খারে জাল ইত্যাদি।

ব্যবহারিক উপযািেগতা ও স্থান খুলনা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী এবং বরিশাল অঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকায় এর সর্বাধিক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। মূলত এ জালের সাহায্যে জুন থেকে অক্টোবর মাস। পর্যন্ত চিংড়ি ও চিংড়ির পোনা ধরা। হয়।

জাল তৈরি উপকরণঃ সাধারণত নাইনল সুতা জাল তৈরি করা হয়।

জালের ধরন ও প্রকৃতি: আকৃতিগত দিক থেকে এ ধরনের জাল মাচোকৃতি বা নলাকৃতির। লম্বায় বা দৈর্ঘ্যে ১৫ মিটার থেকে ৬০ মিটার এবং প্রন্থ ১৮ থেকে ৪৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ জালের ফাঁসের আকার ১.২৫ সেমি থেকে ২.৫ সেমি হয়ে থাকে। অন্যান্য থলে জালের মতো এ জালের মুখের অগ্রভাগে পাখনা বা জানা বিদ্যমান এবং ডানার দৈর্ঘ্য ৯ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। জালের খলের দৈর্ঘ্য ২০ মিটারের অধিক এবং জালের মুখের দিকের ফাসের আকৃতি ৪ সেমি পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ব্যবহার পদ্ধতিঃ মাছ ও চিংড়ি আহরণের কৌশল হিসেবে এ ধরনের জাল উপকূলবর্তী অঞ্চলের জোয়ার-ভাটা প্রভাবিত নদ নদীসমূহে স্রোতের বিপরীতে নৌকার মাধ্যমে স্থাপন করা হয়। একটি বড় ধরনের জাল প্রতিস্থাপনে ২০ থেকে ৩০ জন জেলের প্রয়োজন হয়। অগভীর অঞ্চলে জাল প্রতিস্থাপনের জন্য দুটি বাঁশ বা কাঠের খুঁটি ব্যবহার করা হয়।

জলের ভানা প্রতিস্থাপনের জন্য দৃঢ় কাঠের ফ্রেমের প্রয়োজন হয়। অপেক্ষাকৃত গতীয় পানিতে এ ধরনের জাল প্রতিস্থাপনের জন্য নাঙের ব্যবহার করা হয়। জালের মুখ খালো রাখার জন্য বাঁপের পুল বা খুঁটি ব্যবহার করা হয়।

আ্যাণকৃত চিংড়ি প্রজাতি: বন্নি চিংড়ি, ছটকা চিংড়ি, কুষ্ণ চিংড়ি, রোপ্লাই চিংড়ি, চাকা চিংড়ি, বাগদা চিংড়ি, ইত্যাদি।

খ. বেহুতি জাল

স্থানীয় নাম: বিউটি জাল।

ব্যবযারিক উপবািেদকা ও স্থান: বরিশাল, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও খুলনা অঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকায় এ ধরনের জালের মাধ্যমে চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ আহরণ করা হয়। জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ জালের প্রচলন অধিক পরিমাণে দেখা যায়।

জাল তৈরির উপকরণ: সুতা বা নাইলন তত্ত্ব দিয়ে এ ধরনের জাল তৈরি করা হয়।

জালের ধরন ও প্রকৃতি: আকৃতিগত দিক থেকে এটি নলাকৃতি বা মোচাকৃতির। এ জালের মুখের দু’পাশে মুখের ব্যাসের সমান গ্রন্থ বিশিষ্ট পাখনা বা ডানা বিদ্যমান। ডানা দৈর্ঘ্যে উভয়দিকে ৪ থেকে ৬ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এ ধরনের জলের দৈর্ঘ্য ১২ থেকে ১৫ মিটার এবং প্রন্থ ১১ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।

ব্যবহার পদ্ধতিঃএ জালের ফাঁসের আকার সম্মুখভাগে প্রায় ১.২৫ সেমি। জাল পরিচালনা ও প্রতিস্থাপনের জন্য ৩ থেকে ৪ জন আহরণকারী প্রয়োজন হয় এবং বাঁশের খুঁটি ও কাঠের ফ্রেমের মাধ্যমে স্রোতের বিপরীতে প্রতিস্থাপন করা হয়।

গ. টায় জাল

ব্যবহারিক উপযািেগতা ও স্থান: সাধারণত মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ জাদের সাহায্যে চিংড়ি ধরা হয়। চট্টগ্রাম, খুলনা, পটুয়াখালী ও বরিশাল অঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকায় এ ধরনের জাল নিয়ে চিংড়ি পোনা ধরা হয়।

জালের নরম ও প্রকৃতিঃ আকৃতিগত দিক দিয়ে এ জাল আয়তকার এবং নৌকার সাহায্যে পরিচালনা করা হয়। জালের লম্বা দিক বাঁশের খুঁটির সাহায্যে দৃঢ় করা হয় এবং জালের খর্বাকার দিক নৌকার সম্মুখভাগের সাথে সংযুক্ত থাকে। আয়তনগত দিক থেকে এ জলের দৈর্ঘ্য ৪.৬ থেকে ৫.৫ মিটার, গ্রন্থ ৩.৬ থেকে ৪.৬ মিটার এবং জালের ফাঁসের আকার ০.৬ থেকে ১.২৫ সেমি হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম ও খুলনা অঞ্চলে মশারির নেট দিয়ে এ জাল তৈরি করা হয়।

জাল ব্যবহার পদ্ধতি: চিংড়ি ও অন্যান্য ছোট মাছ ধরার সময় আলের খুঁটি হাতের সাহায্যে জলের অগ্রভাগ পানির নিচে পেতে রাখা হয় এবং কিছু সময় পর পর মাছের উপস্থিতির উপর নির্ভর করে পানির উপরিভাগে তোলা হয় এবং মাছ আহরণ করা হয়। প্রকৃতিগতভাবে এ ধরনের জাল ছাঁকি জানের (Dip net) অন্তর্ভুক্ত।

ঘ. খুচইন জাল

ব্যবহারিক উপযািেগতা ও স্থান। বরিশাল, পটুয়াখালী ও অন্যান্য উপকূলবর্তী অঞ্চলে এ ধরনের জাল দিয়ে অগভীর জলাশয়ের মাছ ও চিংড়ি এবং চিংড়ি পোনা ধরা হয়।

জালের ধরুন ও প্রকৃতি: আকৃতিগত দিক থেকে এ ধরনের জাল ইংরেজি অক্ষর এর অনুরূপ। সাধারণত তিনটি বাঁশের খুঁটি সংযুক্ত করে এ জাদের অবকাঠামো বা ফ্রেম তৈরি করা হয় এবং অবকাঠামোর সাথে অন ফাঁসের মশারি নেট বা নাইলনের সুতা দিয়ে জাল তৈরি করা হয়।

আকৃতিগত দিক থেকে জালের মুখ ফ্রেমের আয়তন অনুসারে ত্রিকোণাকার হয়ে থাকে। জালের দৈর্ঘ্য সাধারণত ১.০ থেকে ১.৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

জাল ব্যবহার পদ্ধতিঃ এ জলে সাধারণত জলজ অসমান উদ্ভিদের তলদেশে স্থাপন করে হঠাৎ করে উপরের দিকে তুলে জালের মধ্য থেকে জলজ উদ্ভিদসমূহ সরিয়ে ফেলে মাছ আহরণ করা হয়। চিংড়ির পোনা আহরণের জন্য খুলনা অঞ্চলে জালের আকৃতি ডিম্বাকার বা চামুচাকৃতি হয়ে থাকে।

ঙ.আটনা জাল

ব্যবহারিক উপযািেগতা ও স্থাক উপকূলবর্তী অঞ্চলে বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে এ ধরনের জালের প্রচলন অধিক দেখা যায়। সাধারণত এ জালের সাহায্যে ছোট আকৃতির মাছ ও চিংড়ি ধরা হয়।

জালের ধরন ও প্রকৃতিঃ আকৃতিগত দিক থেকে এ ধরনের আল আয়তকার। জাল দৈর্ঘ্যে ও প্রছে যথাক্রমে ৪.৬ মিটার ও ৩.০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ জালের ফাঁসের আকুতি ০.৬০ সেমি এর মধ্যে বিদ্যমান থাকে।

ড. চরপাতা আপ

ব্যবহারিক উপযািেলকা ও স্থান। খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে এ জালের প্রচলন বেশি। দেখা যায়। সাধারণত জোয়ার-ভাটা বাহিত অগভীর নদীসমূহে পানির পতিপথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এ জাদের সাহায্যে মাছ ধরা হয়।

জালের ধরন ও প্রকৃতিঃ এ ধরনের জাল দৈর্ঘ্যে ৬.০ থেকে ১২.০ মিটার এবং প্রন্থে ৩.০ থেকে ৩.৬ মিটার হয়ে থাকে। জালের ফাঁসের আকার ১.২৫ থেকে ২.৫৪ সেমি হয়ে থাকে। জালের উপরিভাগে ও পার্শ্বদেশে শক্ত দড়ি লাগানো থাকে, যাতে পানির অধিক পতিবেগের কারণে জাল ছিড়ে না যায়।

কাটার সময় এ জালের নিম্নপ্রাপ্ত জলাশয়ের তলদেশে খুঁটির সাহায্যে স্থাপন করা হয় এবং উপরের অংশ প্রাক্ততুমির উপর ফেলে রাখা হয়। জোয়ারের সময় জাদের উপরের প্রাত তুলে খুঁটির উপরের প্রান্ডের সাথে বাঁধা হয়। পানি কমিয়ে হাতের সাহায্যে জালের মধ্য থেকে মাছ/চিংড়ি সংগ্রহ করা হয়।

 

চিংড়ি আহরণ সরঞ্জাম | অধ্যায়-১ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

 

চিংড়ির আহরণ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা

চিংড়ি অত্যন্ত পচনশীল পদার্থ। সাধারণত চিংড়ি করার ৩ থেকে ৫ ঘন্টার মধ্যেই চিংড়ির পচনক্রিয়া শুরু হয়। সেজন্য আহরণকৃত চিংড়ি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাজারজাত করা উচিভ। তবে চিংড়ি ধরায় পরে বাজারজাতকরণের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত চিংড়ির গুণগতমান বজায় রাখার জন্য নিচে উল্লিখিত পদক্ষেপসমূহ অনুসরণ। করা যেতে পারেঃ

১. আহরণকৃত চিংড়ির সামরিক সক্ষণ ধানের ঘরের মেঝে অবশ্যই পাকা হওয়া উচিত।

২. সংরক্ষণ স্থানে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা রাখতে হয়। 

৩. চিংড়ি বাজারজাত করতে যা বিক্রয় স্থানে পৌছাতে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা দেরি হলে পূর্ব থেকেই বরফের ব্যবস্থা করে রাখতে হয়।

৪. চিংড়ি পরিবহনের জন্য ঝুঁড়ি, পাতা, দড়ি ও চটের ব্যবস্থা করতে হয়।

৫. ধৃত চিংড়ি পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হয়।

৬. ছোট বড় অনুযায়ী চিংড়ি গ্রেড আলাদা করতে হয়।

৭. চিংড়ির মাথায় মূলত ব্যাকটেরিয়া অবস্থান করে। কোনো কারণে চিংড়ি দুর্বল হয়ে পড়লে বা মারা গেলে, ব্যাকটেরিয়াজনিত পচনক্রিয়া শুরু হয় এবং ধৃত চিংড়ির পচন ধরে। এ কারণেই যথাশীঘ্র চিংড়ির মাথা আলাদা করতে হয়।

৮. পরিষ্কার ঠান্ডা (৬ থেকে ৮ সে) পানিতে ৫ থেকে ১০ মিনিট চিংড়ি ভিজিয়ে রাখলে চিংড়ির গুণগত মান। ভালো থাকে। এ প্রক্রিয়াকে চিলিং বলা হয়।

৯. চিলিং করার পর পরিবহন করার পূর্বে পরিবহন পাত্র ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হয়।

১০. চিংড়ি বরফজাত করার পূর্বে পাত্রের তলায় ও পাশে নরম জাতীয় কলার পাতা কিংবা ভেজা চট বিছিয়ে। দিতে হয়, যাতে করে চিংড়ির গায়ে চাপ না লাগতে পারে।

১১. পাত্রে চিংড়ি ভরার সময় পাত্রের তলায় প্রথমে বরফ এবং পরে চিংড়ি পর্যায়ক্রমিকভাবে সাজাতে হবে। এ। ক্ষেত্রে চিংড়ি ও বরফের অনুপাত ২৪১ হওয়া উচিত।

১২. পাত্রের মুখ ভেজা চট দিয়ে ভালোভাবে বেঁধে দিতে হয়।

১৩. অতঃপর স্থানীয় বাজারে বা চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অল্প সময়ের মধ্যে পাঠাতে হবে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment