আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় – অপুষ্টিজনিত রোগসমূহ এবং তার প্রতিকার
অপুষ্টিজনিত রোগসমূহ এবং তার প্রতিকার
অপুষ্টিজনিত রোগসমূহ এবং তার প্রতিকার
মাছের খাদ্যে বিশেষ কোন পুষ্টি উপাদানের অভাব ঘটলে মাছে অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। এ সমস্ত রোগের শুরু ধীরে ধীরে হয়ে থাকে। এসব উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এসব উপসর্গের ফলে নিম্নমাত্রার মৃত্যু হার, খাদ্যের রূপান্তর দক্ষতা হ্রাস, মাছের বিভিন্ন অভ্যন-রীণ অঙ্গসম হের যেমন- যকৃৎ, বৃদ্ধ ইত্যাদিতে বিরূপ পরিবর্তন ঘটে। অপুষ্টিজনিত রোগসম হকে নিলিখিত ভাগে ভাগ করা যেতে পারে :
ভিটামিনের অভাবজনিত রোগসমূহ
চর্বিতে দ্রবীভূত ভিটামিনের অভাবজনিত রোগসমূহ
ভিটামিন A, D, E, এবং K এর অভাব হলে সাধারণতঃ মাছের বৃদ্ধি এবং রক্তশ ন্যতা দেখা দেয়। ভিটামিন উ চর্বির পরিপাক এবং মাংশপেশী গঠনে সহায়তা করে। খাদ্যে বেশি চর্বি থাকলে ভিটামিন E এর অপর্যাপ্ততা দেখা দেয়। খাদ্যে ভিটামিন A D এবং K এর অভাব হলে মাছের অন্ধত্ব, হাড়ের অপগঠন এবং রক্ত জমাট বাঁধা, ক্ষতি ইত্যাদিরূপ হয়।
পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিনের অভাবজনিত রোগসমূহ
থায়ামিনের (B) অভাবজনিত উপসর্গসমূহ
মাছের খাদ্যে সয়াবিন বা ভিটামিন বি, এর অভাব হলে ক্ষুধামান্দ্য, স্নায়ুবিক বিশ্ব খলা (nervous disorder) এবং শর্করার বিপাকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কার্প জাতীয় মাছের খাদ্যে ভিটামিন বি, এর অভাব হলে মাছের পাখনায় রক্তক্ষরণ, ক্ষুদামান্দ্য, দেহ রং এর বিবর্ণতা দেখা দেয় এবং গলগন্ড রোগ দেখা দেয়।
রাইবোফ্লোবিন (বি২)এর অভাবজনিত উপসর্গসমূহ
খাদ্যে রাইবোফ্লেবিন এর অভাব ঘটলে মাছের চোখে অস্বচ্ছতা এবং রক্তক্ষরণ হয়। আক্রান্ত মাছের বর্ণ সাধারণত কালচে হয়ে যায়। তাছাড়া ত্বক এবং পাখনায় রক্তক্ষরণ হয়।
পেন্টোথেনিক এসিড-এর অভাবজনিত উপসর্গসমূহ
এই ভিটামিনের অভাবে মাছের ফুলকা আক্রান্ত হয়। মাছের ক্ষুধা হ্রাস পায়। ফুলকার ফলকসমূহ একত্রে জোড়া লেগে যায়। ফলে মাছের শ্বসনক্রিয়াও বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
অন্যান্য বি ভিটামিনের অভাবজনিত উপসর্গসমূহ
খাদ্যে পাইরিডক্সিন, নিয়াসিন বা নায়াসিন এবং বায়োটিন এর অভাব ঘটলে মাছে স্নায়ুবিক বিশ্ব খলা (nervous disorder), ফুলকা ফুলে যাওয়া, ত্বকে ঘা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
খনিজ লবণ এবং গৌন উপাদানসম হের অভাবজনিত রোগসমূহ
মাছের জন্য অনেক খনিজ লবণ বা মিনারেলস অত্যাবশ্যক। মাছ অনেক খনিজ লবণ সরাসরি পানি হতে গ্রহণ করতে পারে। আবার ত্বক এবং ফুলকার সাহায্যে অনেক খনিজ আয়ন (ion) ব্যাপন ক্রিয়ার মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। তাই খাদ্যে এসব খনিজ লবণ পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা প্রয়োজন। সারণি ২৩ এ খনিজ লবণের অভাবে মাছের বৃদ্ধি হ্রাস ও বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।
সারণি ২৩: খনিজ লবণের অভাবে মাছের বিভিন্ন উপসর্গসমূহ
চর্বি বা তৈলের অভাবজনিত রোগসমূহ
মাছের খাদ্যে সাধারণত অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড থাকে। বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে এই ফ্যাটি এসিডসমূহ জারিত হয়ে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। এই ধরনের খাদ্য গ্রহণ করলে মাছের যকৃতে চর্বি জমা হয় এবং আস্তে আস্তে যকৃৎ ফুলে যায়। শেষ পর্যন্ত রক্ত উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে রক্তশ ন্যতা দেখা দেয়। কোন কোন মাছের অন্তে রক্তক্ষরণ দেখা দেয় এবং মাছ দুর্বল হয়ে মারা যায়।
প্রোটিনের অভাবজনিত রোগসমূহ
খাদ্যে প্রোটিন বা অ্যামাইনো এসিড কম থাকলে মাছের দেহে এনজাইম এবং হরমোনের জৈব- সংশ্লেষণ ব্যাহত হয়। প্রোটিন বা অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিডের অভাব হলে মাছের বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি ব্যাহত হয়। লাইসিন নামক অত্যাবশীয় অ্যামাইনো এসিডের অভাব হলে মাছের পৃষ্ঠদেশীয় পাখনায় ক্ষত দেখা দেয় এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট-এর অভাবজনিত রোগ
খাদ্যে শর্করার অভাব হলে মাছের স্বাভাবিক চলাচল হ্রাস পায়। মাছের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
প্রতিকার
মাছের খাদ্যে বিভিন্ন পুষ্টির অভাবজনিত রোগসমূহ বা উপসর্গ দেখা দিলে উল্লিখিত উপাদানসমূহ মাছের খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করতে হবে। যেমন, খাদ্যের সাথে আয়োডিন যোগ করে অথবা পটাশিয়াম আয়োডাইড যোগ করে গলগন্ড রোগের প্রতিকার করা যেতে পারে।
আরও দেখুন :