আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মাছ চাষের ধরন – যা মাছচাষে পুকুরের ধরন ও পুকুর খনন এর অন্তর্ভুক্ত।
মাছ চাষের ধরন
মাছ চাষকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি, যথা-
১. এককচাষ (Monoculture) ২. মিশ্রচাষ (Poly/Composite culture)
১. এককচাষ পদ্ধতি :
পুকুরে যখন শুধুমাত্র একটি প্রজাতির মাছচাষ করা হয় তখন তাকে এককচাষ পদ্ধতি বলে। যেমন- একটি পুকুরে শুধুমাত্র নাইলোটিকা অথবা সিলভার কার্প অথবা পাঙ্গাশ মাছচাষ করা হলে এবং এর সঙ্গে অন্য কোনো প্রজাতির মাছচাষ করা না হলে তখন তাকে একক মাছচাষ পদ্ধতি বলে ৷
সুবিধা
- নিবিড়ভাবে মাছচাষ সম্ভব;
- খাদ্য গ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশঙ্কা কম;
- একটি প্রজাতির ওপর ব্যাপক জ্ঞানলাভ সম্ভব ও
- ব্যবস্থাপনা তুলনামূলক সহজ।
অসুবিধা
- পুকুরের সব স্তরের খাদ্য ব্যবহৃত হয় না;
- সার্বিক উৎপাদন কম হতে পারে ।
২. মিশ্রচাষ পদ্ধতি :
মাছের মিশ্রচাষ হলো একই পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছচাষ করে পুকুরের সব স্তরে বিদ্যমান মৎস্য খাদ্যের পূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন সর্বোচ্চ পর্যায়ে বৃদ্ধি করা। উল্লেখ্য যে, যেসব প্রজাতির মাছ রাক্ষুসে স্বভাবের নয়, খাদ্য নিয়ে একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে না, জলাশয়ের বিভিন্ন স্তরে বসবাস করে বিভিন্ন স্তর থেকে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে তাদেরকে মিশ্রচাষের প্রজাতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়ে থাকে।
যেমন- কোনো একটি জলাশয়ে প্রজাতিভিত্তিক আনুপাতিক হারে সিলভারকার্প, কাতলা, রুই, মৃগেল, গ্রাসকার্প, রাজপুঁটি প্রভৃতি মাছের একসঙ্গে চাষই হলো মিশ্রচাষ। স্বল্প পরিমাণ জলাশয় থেকে অধিক উৎপাদন পেতে হলে বর্তমানে মিশ্রচাষ পদ্ধতিতে মাছচাষ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

মিশ্রচাষের উপকারিতা :
পুকুরে সার দেয়ার ফলে প্রাকৃতিক খাদ্যকণা জন্মে যা মাছের সহজপাচ্য খাদ্য। এ খাদ্যকণা পুকুরের পানির বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে থাকে। চাষের জন্য যেসব কার্পজাতীয় মাছের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ঐ মাছগুলোও সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী পানির বিভিন্ন স্তরে বাস করতে অভ্যস্ত, ঘুরেফিরে বেড়ায়, খাদ্য খায় । যেমন- কাতলা মাছ পানির উপরিস্তরের, রুই মাঝের স্তরের এবং মৃগেল নিচের স্তর থেকে খাদ্য খায় ।
পুকুরে একটি বা দুইটি প্রজাতির পোনা ছাড়া হলে ঐ মাছগুলো এদের নির্ধারিত স্তরের খাদ্য খাবে অন্যস্তরের খাদ্য অব্যবহৃত থেকে যাবে, নষ্ট হবে- এ থেকে পানিও নষ্ট হতে পারে। তাই লাভজনক মাছচাষের জন্য পুকুরের পরিবেশ নিরাপদ রাখতে দেশী ও বিদেশী প্রজাতির মাছ একসঙ্গে চাষ করা যেতে পারে।
সুবিধা
- সব স্তরের খাদ্যের সদ্ব্যবহার হয়;
- উৎপাদন বেশি হয়;
- আয় বেশি হয় ও
- ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী মাছ যোগান দেয়া সম্ভব।
অসুবিধা
- সঠিকভাবে প্রজাতি নির্বাচন না হলে ক্ষতিও হতে পারে;
- প্রজাতিভিত্তিক খাদ্যের যোগান না হলে ভাল ফল নাও আসতে পারে;
- রাক্ষুসে প্রজাতি নির্বাচন করা যায় না;
- ব্যবস্থাপনা তুলনামূলক কঠিন;
- সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকলে মাছের রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে ও
- সব সময় সকল প্রজাতির পোনা নাও পাওয়া যেতে পারে।
মাছচাষ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পদ্ধতি : বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পরিবেশ ও উপকরণের প্রাপ্যতা, মৎস্যচাষের ব্যবস্থাপনা স্তর, চাষের ধরন, খামারী কিংবা মৎস্যচাষির আর্থিক সঙ্গতি, মাছচাষের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, বিনিয়োগ ক্ষমতা এবং সর্বোপরি উৎপাদন ও আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ইত্যাদি বিবেচ্য বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এক এক রকম মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গড়ে উঠেছে। যেমন-
ক. সনাতন মাছচাষ পদ্ধতি,
খ. আধা নিবিড় মাছচাষ পদ্ধতি, ও
গ. নিবিড় মাছচাষ পদ্ধতি ।
উপরে উল্লিখিত ৩টি চাষ পদ্ধতির প্রত্যেকটির পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সপ্তম অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আরও দেখুন: