আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পুকুর নির্বাচন ও পুকুর প্রস্তুতি – যা শিং কার্প মাছের মিশ্রচাষ প্রযুক্তি এর অন্তর্ভুক্ত।
পুকুর নির্বাচন ও পুকুর প্রস্তুতি
পুকুর নির্বাচন ও পুকুর প্রস্তুতি
- ৪ ফুট গভীরতা সম্পন্ন ৪০-৫০ শতাংশ পুকুর শিং মাছ চাষের জন্য সর্বাধিক উপযোগী। পুকুরটি আরতকার হলে ব্যবস্থাপনার সুবিধা হয়। চাষের অভিজ্ঞতা থেকে জানা বার বর্গাকার পুকুরের চেয়ে আয়তাকার পুকুরে একই হারে খাদ্য ও ব্যবস্থাপনার কমপক্ষে ১০ গুণ বেশি উৎপাদন পাওয়া যায়,
- নতুন ও পুরাতন উভয় পুকুরে শিং মাছ চাষ করা যায়। তবে পুরাতন কাদাযুক্ত পুকুরে শিং মাছ দ্রুত বড় হয়। যে পুকুরে মোটেই কালা নেই এবং ভলা শক্ত সে পুকুরে উৎপাদন আশানুরূপ হবে না । নতুন পুকুরে শিং মাছ চাষ করতে হলে পুকুরের তলা ভালোভাবে চাষ দিয়ে শতাংশ প্রতি কমপক্ষে ২০ কেজি গোবর সার প্রয়োগ করে মই দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
- পুকুরটি অবশ্যই প্লাবন ও জলাবদ্ধতামুক্ত হতে হবে। বর্ষাকালে যেসব পুকুরের পাড় থেকে অন্তত দুই ফুট নিচে পানি থাকে সে রকম পুকুরই নির্বাচন করা উচিত। পাড়ে কোনো প্রকার ছিদ্র থাকলে সমস্ত শিং মাছ ছিদ্রপথে চলে যাবে।
- যেসব পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ে এবং বাতাস চলাচল করে সেসব পুকুর শিং মাছ চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। শিং মাছ চাষের ক্ষেত্রে মাছ আহরণের সুবিধার জন্য পুকুরের তলদেশ একদিকে সামান্য ঢালু বা গর্ত থাকলে ঢালু অংশে বা গর্তে পুকুর শুকানোর সময় মাছ জমা হবে। যেখান থেকে সহজে মাছ আহরণ করা যাবে। তা না হলে পুকুর শুকালে সমস্ত পুকুরে মাছ ছড়িয়ে যাবে।
- টোড়া সাপ/ব্যাঙ শিং মাছের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরুপ। টোড়া সাপ/ব্যাঙ নিরবে-নিভৃতে নির্বিচারে শিং মাছ নিধন করে । শিং পোনার চলার ধীর গতির কারণে সাপ অনেক পোনা খেয়ে ফেলতে পারে। পুকুরে পানি প্রবেশ করানোর পূর্বেই তাই চারিদিকে জাল দ্বারা ভালোভাবে ঘিরে দিতে হবে। এতে সাপ বা ব্যাঙ পুকুরে ঢুকতে পারবে না।
- পুকুর পাড় মেরামত করে পুকুর থেকে রাক্ষুসে মাছ সরিয়ে ফেলতে হবে।
- পুকুর শুকিয়ে ফেলতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয় । শতাংশ প্রতি ১ কেজি চুন, ১০ কেজি গোবর, ১০০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করে পুকুর তৈরি করতে হবে।
- সার প্রয়োগের ৪-৫ দিন পর পুকুরের পানি সবুজ বা হালকা বাদামি হলে পোনা মজুদ করতে হবে। শিং মাছের পুকুর উর্বর না হলে অনেক সময় শিং মাছ মজুদের পর পোনা আঁকা বাঁকা হয়ে যায়। প্রয়োজনের সময় পুকুরটিতে পানি দেয়ার সুবিধা থাকা প্রয়োজন ।

পোনা মজুদ :
প্রাকৃতিক বা হ্যাচারি উৎস থেকে শিং মাছের পোনা সংগ্রহ করা যেতে পারে। পোনা মজুদের পূর্বে অবশ্যই ছত্রাকনাশক দ্বারা পোনা শোধন করে পরে পুকুরে ছাড়তে হবে। পোনা মজুদের ৩ দিন পরে আবার ছত্রাকনাশক দ্বারা পূনরায় চিকিৎসা করতে হবে। একক চাষ পদ্ধতির জন্য প্রতি শতাংশে ২-৩ ইঞ্চি আকারের পোনা ২৫০টি পর্যন্ত মজুদ করা যেতে পারে। উন্নতমানের খাবার ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে পোনা মজুদের পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে।
কার্প ও অন্যান্য মাছের সাথে শিং মাছের চাষ :
বর্তমানে অধিক ঘনত্বে থাই কৈ, পাঙ্গাশ ও মনোসেক্স তেলাপিয়ার একক চাষ করা হচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে যেসব পুকুরে পরিকল্পিতভাবে খাদ্য প্রয়োগ করে শুধুমাত্র কার্প জাতীয় মাছের চাষ করা হয় সেসব পুকুরে কার্প জাতীয় মাছের সাথেও এসব প্রজাতির মাছচাষ করা হয়ে থাকে ।
মিশ্রচাষ পদ্ধতিতে কার্প জাতীয় মাছের সাথে শতাংশ প্রতি ২-৩ ইঞ্চি আকারের শিং মাছের পোনা ২০-৩০টি, সিলভার কার্প ৫-৬টি, কাতলা ৪-৫টি এবং রুই মাছের পোনা ১০-১২টি মজুদ করা হয় তাহলে এরা পুকুরের তলার বর্জ্য পদার্থ খেয়ে কাদায় জমাকৃত অ্যামোনিয়া গ্যাস দূর করে পুকুরের তলার পরিবেশ মাছ চাষের অনুকূলে রাখে। বাড়তি কোনো খাদ্য ও পরিচর্যা ছাড়াই শিং পোনাগুলো দ্রুত বড় হয় । উন্নতমানের খাবার ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে পোনা মজুদের পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে।
আরও দেখুনঃ