চিংড়ি চাষে পানির প্রয়োজনীয়তা | অধ্যায়-৮ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-১

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – চিংড়ি চাষে পানির প্রয়োজনীয়তা । যা ” পোনার মজুদোত্তর ব্যবস্থাপনা ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।

শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।

চিংড়ি চাষে পানির প্রয়োজনীয়তা

 

চিংড়ি চাষে পানির প্রয়োজনীয়তা | অধ্যায়-৮ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২

 

চিংড়ি চাষে পানির প্রয়োজনীয়তা

চিংড়ির চলাফেলার জন্য, চিংড়ির নিঃশ্বাস গ্রহণের জন্য, চিংড়ির প্রাকৃতিক খাবার উৎপাদনের জন্য এবং চিংড়িকে রোগবালাই হতে মুক্ত রাখার জন্য পানি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। নিচে বিভিন্ন বিষয়ে পানি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করা হলো:

ক. চলাচলের জন্য পানি ব্যবস্থাপনা

বেশিরভাগ উপকূলীয় ঘেরের তলদেশ অসমতল হওয়ায় ঘেরের সর্বত্র সমানভাবে পানি থাকে না। এমনকি কোনো কোনো ঘেরে দুই গােেণর মাঝামাঝি সময়ে ঘেরের প্রায় ৩০-৪০ ভাগ এলাকায় কোনো পানিই থাকে না। পানির গভীরতা কম ও স্বচ্ছতা বেশি থাকার ফলে ঘেরের তলদেশ পর্যন্ত সূর্যালাকে পৌঁছায়।

ফলে, নানান ধরনের উচ্চতর জলজ উদ্ভিদ (নাজাজ, কারা ইত্যাদি) জন্মে চিংড়ির চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে। এসব বিষয়সমূহ বিবেচনা করলে অনেক সময় দেখা যায় যে, ঘেরের অধিকাংশ এলাকা চাষের আওতার বাইরে থাকে। ফলে, চিংড়ির উৎপাদনের হারও অনেক কম হয়। অতএব ঘেরের সম্পূর্ণ এলাকা চাষযোগ্য করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা প্রয়োজন

ক) ঘেরের সর্বত্র যাতে সমান গভীরতায় পানি রাখা যায় সেভাবে দের প্রস্তুত করতে হবে।

খ) ঘেরের পানির গভীরতা প্রায় এক মিটার এবং পানির স্বচ্ছতা ২৫-৩৫ সেমি এর মধ্যে রাখতে হবে, যেন ঘেরের তলায় সূর্যালাকে না পৌঁছায়।

গ) ঘেরে জন্মানো যেকোনো উচ্চতর উদ্ভিদ পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

খ. নিঃশ্বাস গ্রহণের জন্য পানি ব্যবস্থাপনা

চিংড়ির স্বাভাবিক শ্বাস গ্রহণের জন্য পানিতে ৪ পিপিএম-এর বেশি দ্রবীভূত অক্সিজেনের প্রয়োজন। অক্সিজেন এক ধরনের গ্যাস। পানিতে অক্সিজেন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় গ্যাস, যথা: কার্বন-ডাই-অক্সাইড, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড ইত্যাদি দ্রবীভূত থাকে।

অপ্রয়োজনীয় গ্যাসসমূহের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে মঞ্জুদকৃত চিংড়ি মারা যেতে পারে। পানির গ্যাস ধারণের একটি নির্দিষ্ট অমাতা রয়েছে। যদি কোন কারণে অখয়োজনীয় গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজনীয় গ্যাসের পরিমাণ কমে যাবে। চিংড়ি চাষের জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় গ্যাসের সহনীয় মাত্রা নিচের সারণিতে দেয়া হলো:

সারণি: পানিতে দ্রবীভূত বিভিন্ন প্রয়োজনীয় গ্যাসের সহনীয় মাত্রা গ্যাসের নাম সহনীয় মাত্রা।

গ্যাসের নামসহনীয় মাত্রামন্তব্য
দ্রবীভূত অক্সিজেন৫-১০ পিপিএম৪ পিপিএম এর কম নয়
কার্বন-ডাই-অক্সাইড<৬.০০ পিপিএমপিএইচ কম হলে পরিমাণ বেড়ে যায়
হাইড্রোজেন সালফাইড<০.০৩ পিপিএমকম পিএইচ এ অধিক ক্ষতিকর
অ্যামোনিয়া<০.০১পপিএমউচ্চ পিএইচ এবং তাপমাত্রা অধিক ক্ষতিকর

পানিতে অপ্রয়োজনীয় গ্যাস এর মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণসমূহ হলো:

ক) পানিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে।

খ) পানিতে অক্সিজেন এর উৎপাদন/পরিমাণ কমে গেলে।

গ) চিংড়ির অতিরিক্ত খোসা পাল্টানারে কারণে; এবং

ঘ) ঘেরের তলায় ল্যাব-এর পরিমাণ অধিক পরিমানে বৃদ্ধি পেলে।

জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণসমূহ হলো:

ক) অতিরিক্ত জৈব সার ব্যবহারের ফলে।

খ) চিংড়িকে অপরিমিত সম্পূরক খাবার সরবরাহ করালে। এবং

গ) কোনো কারণে পানির সব প্ল্যাংকটন হঠাৎ মরে গেলে।

পানিতে অপ্রয়োজনীয় গ্যাস ও জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে করণীয়:

ক) চিংড়ি ঘেরের পানিতে বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিরেকে জৈব সার প্রয়োগ না করা;

খ) ঘেরে খাবারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার প্রতি অধিকতর গুরুত্ব দেয়া। কারণ অপরিমিত সম্পূরক খাবার ব্যবহারে যেমন আর্থিক তি হয় তেমনি ঘেরের পানি দূষিত হয়;

গ) ঘেরে প্ল্যাংকটন উৎপাদনের সহনশীল মাত্রা বজায় রাখা;

ঘ) পানিতে প্যাডেল তুইল অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা; এবং

ঙ) অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় যথারীতি পানি পরিবর্তন করা।

গ. প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য পানি ব্যবস্থাপনা

জলাশয়ের প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা বলতে পানিতে সাধারণত ফাইটোপ্ল্যাংকটন-এর উৎপাদনের হারকে বুঝায়। ফাইটোপ্ল্যাংকটন শুধু পানিতে প্রাথমিক খাদ্যের যোগান দেয় না, সালাকেসংশেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চিংড়ির শ্বাস গ্রহণ ও অন্যান্য প্রয়োজনে পানিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং ক্ষতিকর গ্যাসসমূহের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

পর্যাপ্ত ফাইটোপ্ল্যাংকটনের উপস্থিতি মাটির তলায় জন্মানো ক্ষতিকর উদ্ভিদ জন্মাতে বাধা সৃষ্টি করে এবং পানিতে দ্রবীভূত অতিরিক্ত নাইট্রোজেন ও ফসফরাস খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে পানিকে দূষণমুক্ত রাখে। এক কথায় চিংড়ির সঠিক উৎপাদনের জন্য পানির প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা সহনশীল পর্যায়ে থাকা বিশেষ প্রয়োজন।

প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাবলি প্রয়োজনীয় মাত্রায় থাকা প্রয়োজন। এছাড়া পানিতে প্রয়োজনীয় মাত্রায় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশসহ বিভিন্ন খাদ্যোপাদানের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। চিংড়ি খামারের পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাবলি ও তার সহনীয় মাত্রা নিচের সারণিতে উল্লেখ করা হলাঃ

সারণি: পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাবলি ও তার সহনীয় মাত্রা

গুণাবলিসহনীয় মাত্রা
তাপমাত্রা২৮-৩২° সে.
লবণাক্ততা১০-৩০ পিপিটি
রংসবুজ, হলদে সবুজ অথবা বাদামি
গভীরতা>১০০
স্বচ্ছতা৩০-৪০ সে.মি.
পিএইচ৭.৫-৮.৫
অ্যাঙ্কালিনিটি৮০-২০০ পিপিএম
নাইট্রেট>২.০০ পিপিএম
ফসফেট০.১.-০.২০ পিপিএম

ক) তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা

পানির তাপমাত্রার হঠাৎ হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে চিংড়ির বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত হতে পারে, এমনকি চিংড়ি মারাও যেতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘেরসমূহে পানির গভীরতা কম থাকার ফলে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে অতিরিক্ত সূর্যতাপ কিংবা হঠাৎ বৃষ্টিপাতের ফলে পানির তাপমাত্রা অস্বাভাবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়।

তাপমাত্রার পরিবর্তনের ন্যায় লবণাক্ততার পরিবর্তনের ফলে চিংড়ির তেমন কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। তবে হঠাৎ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে লবণাক্ততা এবং তাপমাত্রা উভয়েরই অস্বাভাবিক হ্রাস চিংড়ির ক্ষতির কারণ হতে পারে। পানির গভীরতা প্রায় ১ মিটার রাখা সম্ভব হলে এ ধরনের পরিবর্তনে চিংড়ির তেমন কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না।

খ) রং ও স্বচ্ছতা

সাধারণত পানিতে ফাইটোপ্ল্যাংকটনের রঙের উপর পানির রং নির্ভর করে। ফাইটোপাংকটনের রং কম লবণাক্ত পানিতে সবুজ অথবা হলদে সবুজ থাকে এবং অধিক লবণাক্ত পানিতে বাদামি হয়। ফাইটোপ্ল্যাংকটনের ঘনত্ব যত বেশি হবে পানির স্বচ্ছতাও সেই হারে কমে যাবে। কাজেই পানির স্বাভাবিক গুণাগুন ধরে রাখার জন্য পানির রং ও স্বচ্ছতার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

গ) পিএইচ ও অ্যালকালিনিটি

পানিতে পিএইচ-এর গুরুত্ব এত বেশি যে এক কথায় পিএইচ-কে পানিব্ধ পালস্থ হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে। আর পানিতে প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতার যে সুস্ত ক্ষমতা বিদ্যমান তা নির্ভর করে পানির অ্যালকালিনি- টির উপর। চিংড়ির ভালো উৎপাদনের জন্য পানির এই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলি সঠিক মাত্রায় রাখার জন্য সর্বদা সচেষ্ট দৃষ্টি দিতে হবে।

কোনো কারণে পিএইচ এবং অ্যালকালিনিটি কমে গেলে চুন ব্যবহারের মাধ্যমে তা বাড়ানো যেতে পারে। ঘেরে চিংড়ি থাকা অবস্থায় কৃষিজ চুন বা ডলো চুন ব্যবহার করা নিরাপদ। কোনো কারণে পাথুরে কিংবা কলি চুন ব্যবহারের প্রয়োজন হলে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে।

পিএইচ-এর মান যদি ৭.৫ এর নিচে নেমে আসে কিংবা সকাল ও বিকালের পিএইচ-এর তারতম্য ০.৫ এর বেশি হয়, তাহলে অবশ্যই পানিতে চুন প্রয়োগ করতে হবে। এমতাবস্থায় একর প্রতি ৪০-৫০ কেজি (শতকে ০.৪-০.৫ কেজি) ভলো চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। চুন প্রয়োগের ফলে পিএইচ-এর সাথে সাথে অ্যালকাি লনিটিও বৃদ্ধি পাবে।

যদি কোনো কারণে পিএইচ বেড়ে ৯.০ এর অধিক হয়ে যায় তাহলে পানি পরিবর্তন করে পিএইচ কমাতে হবে। বৃষ্টির পানি অম্ল, তাই অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের ফলে পানির পিএইচ কমে যেতে পারে। সেজন্য বৃষ্টির পর পরই মেরে ডলো চুন প্রয়োগ করতে হবে।

ঘ) খাদ্যোপাদান

পানির প্রাকৃতিক উৎপাদনশীলতা তথা ফাইটোপ্ল্যাংকটনের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পানিতে প্রয়োজনীয় মাত্রায় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশসহ বিভিন্ন খাদ্যোপাদানের উপস্থিতি নিশ্চিত করা একান্ত প্রয়োজন। এই সব উপাদান সরবরাহের জন্য পানিতে সার প্রয়োগ অপরিহার্য।

চিংড়ি চাষের জন্য ঘের প্রস্তুত করার সময় পানিতে একর প্রতি ২০-২৫ কেজি (শতকে ২০০-২৫০ গ্রাম) ইউরিয়া ও ৩০-৩৫ কেজি (শতকে ৩০০-৩৫০ গ্রাম) টিএসপি সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। চিংড়ি পোনা মজুদ পরবর্তী প্রত্যেক মাসে একর প্রতি ১০-১২ কেজি (শতকে ১০০-১২০ গ্রাম) ইউরিয়া, ১৫-১৮ কেজি (শতকে ১৫০-১৮০ গ্রাম) টিএসপি এবং ২-৩ কেজি (শতকে ২০০-৩০০ গ্রাম) পটাশ সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। যদি চিংড়িকে সম্পূরক খাবার সরবরাহ করা হয়, তাহলে প্রথম দুই মাস পর সাধারণত সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না।

ঙ) প্ল্যাংকটন মৃত্যু ও তার প্রতিকার

পানিতে কোনো খাদ্যোপাদান কিংবা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের অভাব হলেই বেশিরভাগ প্ল্যাংকটন মারা যেতে পারে। প্যাকটনের এই অস্বাভাবিক মারা যাওয়াকে প্ল্যাংকটন ক্লাসও বলা হয়। এমতাবস্থায় পানি একেবারে স্বচ্ছ হয়ে যায়, পানিতে ফোম হয় এবং দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ দ্রুত কমে গিয়ে চিংড়ির জন্য সংকটময় অবস্থার সৃষ্টি করে।

এ অবস্থায় দ্রুত পানি পরিবর্তন এবং পানিতে কৃত্রিম উপায়ে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। প্ল্যাংকটন ক্রাস প্রতিরোধকল্পে পানিতে নিয়মানুযায়ী চুন ও সার ব্যবহার অব্যাহত রাখতে হবে।

 

চিংড়ি চাষে পানির প্রয়োজনীয়তা | অধ্যায়-৮ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২
চিংড়ি চাষে পানির প্রয়োজনীয়তা

 

ঘ. রোগ প্রতিরোধে পানি ব্যবস্থাপনা

যেকোনো পানিতেই চিংড়ি রোগের জীবাণু বিদ্যমান থাকে। উপযুক্ত পরিবেশ এবং চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেই কেবলমাত্র রোগ জীবাণু চিংড়িকে আক্রমণ করতে সক্ষম হয়। যে পরিবেশ চিংড়ির বসবাসের জন্য অসহনশীল, সেই পরিবেশেই রোগ জীবাণুর বংশ বৃদ্ধি বেশি হয় এবং চিংড়িকে আক্রমণ করতে সহায়ক হয়।

চিংড়ির চলাফেরা কোনো কারণে অস্বাভাবিক কিংবা চিংড়িকে রোগাক্রান্ত মনে হলে তাৎক্ষণিক ভাবে পানির পিএইচ, দ্রবীভূত অক্সিজেন ও অ্যালাকালিনিটি পরীক্ষা করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। পানি পরিবর্তনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রবেশকৃত পানির গুণগতমান সহনীয় পর্যায়ে থাকে।

উন্নত পদ্ধতির চিংড়ি চাষে জলাধারে পানি পরিশোধনপূর্বক ঘেরে সরবরাহ করা যেতে পারে। পানি পরিশোধনের জন্য ২০-২৫ পিপিএম হারে ব্লিচিং পাউডার ট্রিটমেন্ট করা যেতে পারে। রোগ প্রতিরোধের জন্য পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলি সহনশীল মাত্রায় বজায় রাখতে হবে।

ঙ. পানির গুণাগুণ সংরক্ষণে পানি ব্যবস্থাপনা

পানির গুণাগুণ সঠিক মাত্রায় বজায় রাখা চিংড়ি চাষের সফলতার ক্ষেত্রে অন্যতম মূল চাবিকাঠি। সাধারণত পানি ব্যবস্থাপনা তথা পানির গুণাগুণ বজায় রাখার প্রধান কারণ হচ্ছে চিংড়ির বেঁচে থাকার হার বাড়ানো এবং স্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধি। পুকুরের পানির ভালো অবস্থা বলতে সাধারণত পানিতে পরিমিত অক্সিজেন ও অত্যন্ত কম বর্জ্যের উপস্থিতিকে বুঝায়।

এই বর্জ্যের উৎস হচ্ছে চিংড়ির মল, অভুক্ত খাদ্য, শেওলা এবং অন্যান্য অণুবীক্ষণিক জীব। চিংড়ি চাষকালে তৃতীয় মাস ভূক্ত খাদ্যের প্রায় ৩০% এবং চতুর্থ মাস বা শেষ পর্যায়ে প্রায় ৫০% বর্জ্য হিসেবে পুকুরের তলায় জমা হয়। এর ফলে ক্ষতিকর শেওলার উৎপাদন ত্বরান্বিত হয় এবং একটা পর্যায়ে এসব ক্ষতিকর।

শেওলা মারা গিয়ে পানি দূষিত করে তােেল। ফলে চিংড়ির স্বাভাবিক জীবনযাপন এবং দৈহিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই পানির গুণগতমান বজায় রাখার উত্তম পদ্ধতি হলো নিয়মিতভাবে পুকুরের পানি পরিবর্তন করা। এর ফলে পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ বজায় থাকে, বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ, অতিরিক্ত শেওলা ইত্যাদি দূরীভূত হয় এবং নতুন পানির সাথে নতুন পুষ্টিকর পদার্থসমূহ পুকুরে সঞ্চালিত হয়।

চিংড়ির পোনা মজুদের পর এক সপ্তাহ পর্যন্ত কোনো পানি পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় না। তবে প্রথম মাসে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় একবার বা দু বার পানি পরিবর্তন করা ভাল। চিংড়ি চাষের পুরো সময়ে পোনা মজুদের ঘনত্ব, পানির গুণগতমান, লবণাক্ততা, প্ল্যাংকটনের ঘনত্ব, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পিএইচ, রোগের প্রাদুর্ভাব, খাদ্য প্রয়োগের পদ্ধতি ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে পানি পরিবর্তনের মোট পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।

সাধারণত প্রত্যেকবার পানি পরিবর্তনের সময় মোট পানির ২০-৫০% পরিমাণ পানি পরিবর্তন করা হয়। অনেক সময় প্রয়োজনানুসারে প্রতিদিন ১০% পানি পরিবর্তন করা হয় এবং নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে সাধারণত প্রতিদিনই ৩০% পানি পরিবর্তন করা হয়। পুকুরে চিংড়ির দেহের মোট ওজন অনুসারে কী পরিমাণ পানি পরিবর্তন করা উচিত তার তালিকা নিচের সারণিতে দেয়া হল।

সারণি: চিংড়ির মোট ওজন অনুসারে পানি পরিবর্তনের হার

চিংড়ির মোট ওজন (গ্রাম/বর্গমিটার)প্রতিদিন পানি পরিবর্তনের পরিমান (%)
২ গ্রামের কম0
২-১০ গ্রাম
১১-২০ গ্রাম
২১-৪০ গ্রাম
৪১-৬০ গ্রাম
৬১-৮০ গ্রাম
৮১-১০০ গ্রাম১২
১০১-১২০ গ্রাম১৫
১২১-১৪০ গ্রাম১৮
১৪১ গ্রামের বেশি২০% বা তার বেশি

প্রচলিত চাষ পদ্ধতিতে ভাটার সময় প্রয়োজনে পুকুরের অর্ধেক পানি বের করে দিয়ে জোয়ারের সময় পানি ঢুকানা েহয়। সাধারণত জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে মাত্র ৫-৬ দিনে ৫০-১০০% পানি পরিবর্তন করা সম্ভব। আধা-নিবিড় বা নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে পানি পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন রকমের পাম্প ব্যবহার করা হয় এবং জোয়ারের পানির ওপর কম নির্ভর করা হয়।

আধা-নিবিড় চাষ পদ্ধতিতে জোয়ারের সময় স্বাভাবিকভাবে পানি পরিবর্তন করা হয় তবে ভাটার সময় প্রয়োজনে পাম্প ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে পানি দুভাবে পরিবর্তন করা যায়। প্রথম পদ্ধতিতে প্রয়োজন মত কিছুটা পানি বের করে দেয়া হয় এবং পরে সেই পরিমাণ পানি ঢুকানা েহয়।

দ্বিতীয় পদ্ধতিতে পুকুর/ঘেরের একদিক দিয়ে পানি প্রবেশ করানো হয় এবং অপরদিক দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হয়। এভাবে পানি পরিবর্তন করার পদ্ধতিকে Flow through system বলা হয়। অধিক বৃষ্টিপাতের সময় পানি পরিবর্তন না করে পানি নিষ্কাশন গেটের মুখে ফল বোর্ড স্থাপন করে পুকুরের ওপরের স্তরের পানি বের করে দেয়া উত্তম। এতে লবণাক্ততা হ্রাসের ঝুঁকি কমে যায়। সাধারণত পুকুর/ঘেরে নিম্নবর্ণিত অবস্থাদি পরিলক্ষিত হলে পানি পরিবর্তন করার বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

ক) সকাল (৬-৭ টা) ও বিকাল (৩-৪ টা) এই দুই সময়ে পর্যবেক্ষণকৃত পিএইচের পার্থক্য ০.৫ থেকে অধিক বা পিএইচের মান ৮.৫ এর বেশি অথবা ৭.৫ এর কম হলে।

খ) পানির স্বচ্ছতা ৮০ সেমি (৩২ ইঞ্চি) এর বেশি অথবা ৩০ সেমি এর কম হলে।

গ) পানি অত্যধিক ভারী ও গাড় হয়ে গেলে।

ঘ) পানিতে অজৈব কণার পরিমাণ অধিক প্রতীয়মান হলে।

ঙ) পানির উপরিভাগে দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী বুদবুদ দেখা গেলে।

চ) পানিতে আন-আয়োনোইজ অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে।

ছ) এয়ারেটর চালানো অবস্থায় দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কম হলে।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

পানির গুণাগুণ সংরক্ষণ

পানির গুণাগুণ রক্ষার জন্য প্রধাণত তাপমাত্রা, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পানির লবণাক্ততা, অ্যামোনিয়া, নাইট্রাইট, নাইট্রেট, খরতা ও ক্ষারত্ব, পিএইচ, হাইড্রোজেন সালফাইড প্রভৃতির ওপর বিশেষ নজর রাখা হয়। পানিতে এসব প্রয়োজনীয় গুণাগুণ না থাকলে চিংড়ির বৃদ্ধি ও বাঁচার হার কমে যায়।

ক. তাপমাত্রা: সাধারণত তাপমাত্রা সমস্ত প্রাণীর জৈব-বিপাক (Metabolism) ক্রিয়ায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ১৭ সে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে চিংড়ির বিপাকীয় কার্যক্রম প্রায় ১০% বৃদ্ধি হয়। একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জৈব ও রাসায়নিক ক্রিয়া যেমন বাড়ে ঠিক তেমনি তাপমাত্রা কম হলে সমস্ত ক্রিয়া কমে যায়। এই জন্য দেখা যায় ২০° সে তাপমাত্রার চেয়ে ৩০° সে তাপমাত্রায় জলজ প্রাণীসমূহের অক্সিজেন চাহিদা, খাদ্যের চাহিদা, দৈহিক বৃদ্ধির হার ইত্যাদি প্রায় দ্বিগুণ দ্রুততার সাথে বেড়ে যায়।

বাগদা চিংড়ির উৎপাদনের জন্য ২৫-৩০° সে তাপমাত্রা উত্তম। ২৫° সে তাপমাত্রার নিচে চিংড়ির বৃদ্ধির হার কমতে থাকে এবং ২০° সে এর নিচে প্রায় থেমে যায়। পানির তাপমাত্রা ১৩° সে এর নিচে এবং ৩৪° সে এর উপরে হলে চিংড়ির ব্যাপক মড়ক দেখা দিতে পারে। তাপমাত্রা অত্যধিক হলে খাদ্য ও সার প্রয়োগ প্রয়োজন মত কম বা বেশি অথবা বন্ধ করে দিতে হবে এবং প্রয়োজন অনুসারে পানি পরিবর্তন করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

সনাতন ও হালকা উন্নত পদ্ধতির চিংড়ি চাষের পুকুরে পানির গভীরতা ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। ফলে এ সমস্ত খামারে গরমের সময় পানির তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় চিংড়ির আশ্রয়ের জন্য খামারের ভিতরের পার্শ্বে চারদিকে বা কোণাকুণিভাবে নালা থাকা প্রয়োজন। এছাড়া প্রয়োজনমত পানি পরিবর্তন করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। নার্সারিতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ৪-৬% এলাকাতে কচুরিপানা দেয়া যেতে পারে।

খ. দ্রবীভূত অক্সিজেন: চিংড়ি চাষের জন্য পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাগদা চিংড়ির অক্সিজেন চাহিদা তুলনামূলকভাবে বেশি। চিংড়ি চাষের পুকুরে ৫-৭ পিপিএম অক্সিজেন থাকা উত্তম। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ২.৫ পিপিএম এর নিচে নামলে চিংড়ি মারা যেতে শুরু করে এবং ১ পিপিএম এর কম হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সমস্ত চিংড়ি মারা যাবে।

পানিতে অক্সিজেন দ্রবীভূত হওয়ার পরিমাণ নির্ভর করে পানির তাপমাত্রা, লবণাক্ততা ও বায়ুচাপের ওপর। সাধারণত তাপমাত্রা, লবণাক্ততা ও বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে গেলে পানিতে অক্সিজেনের দ্রবণীয়তা কমে যায়। পানিতে অক্সিজেনের উৎস দু’টি, যথা- বাতাস ও সালাকেসংশেষণ।

আর পানিতে অক্সিজেন ঘাটতি তিন ভাবে হয়ে থাকে, যথা- রাত্রিকালে উদ্ভিদের শ্বাস গ্রহণ, প্রাণীকূলের শ্বাস গ্রহণ এবং পচনশীল জৈব পদার্থের পচন। অক্সিজেন হ্রাসের কারণে চিংড়ির দৈহিক ক্লেশ, ক্ষুদামন্দা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস এবং দৈহিক বৃদ্ধির ব্যাঘাত ঘটে থাকে। পুকুরে অক্সিজেন হ্রাসের লক্ষণসমূহ হলো:

ক) পানির উপর সরের মত বুদ্বুদ জমা হয়।

খ) পুকুরের তলা থেকে বুদ্বুদের আকারে গ্যাস ভেসে উঠে।

গ) অধিকাংশ শামুক ও ঝিনুক পুকুরের কিনারায় চলে আসে।

ঘ) সমস্ত চিংড়ি সাঁতার কাটতে থাকে।

ঙ) মিশ্রচাষের পুকুর হলে মরা মাছের মুখ হা করা থাকবে ও ফুলকা ফেটে যাবে।

চ) সাধারণত মেঘলা দিনে, খুব গরম পড়লে এবং মধ্যরাত থেকে ভারেবেলা পর্যন্ত পুকুরে অক্সিজেনের স্বল্পতা পরিলক্ষিত হয়।

পুকুরে পানির বিভিন্ন তাপমাত্রায় অক্সিজেনের দ্রবণীয়তা ভিন্ন হয়ে থাকে। নিচের সারণিতে বিভিন্ন তাপমাত্রায় অক্সিজেনের দ্রবণীয়তা উল্লেখ করা হলোঃ

সারণি: পানির বিভিন্ন তাপমাত্রায় অক্সিজেনের দ্রবণীয়তা

তাপমাত্রা (°সে)মিঠা পানিসমুদ্রের পানি (৩৫ পিপিটি)
১৬৯.৮৬৮.০০
১৮৯.৪৫৭.৬৬
২০৯.০৮৭.৩৮
২২৮.৭৩৭.১২
২৪৮.৪০৬.৮৭
২৬৯.০৯৬.৫৪
২৮৭.৮১৬.৪২
৩০৭.৫৪৬.২২

পানিতে সবুজ উদ্ভিদ কণার (ফাইটোপ্ল্যাংকটন) উপস্থিতিতে সূর্যালোকের পভাবে সালাকেসংশ্লেষণ ঘটে থাকে। এই সালাকেসংশেষণ প্রক্রিয়ার সময় ফাইটোপ্ল্যাংকটন কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে থাকে। রাতের বেলায় যখন সালাকেসংশেষণ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে তখন এরা অক্সিজেন গ্রহণ করে ও কার্বন-ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে থাকে।

তাই যেসব পুকুরে ফাইটোপ্ল্যাংকটনের আধিক্য বেশি থাকে সে সব পুকুরে সাধারণত বিকেলবেলায় অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকে এবং ভারেবেলায় অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে। ফাইটোপ্ল্যাংকটন সমৃদ্ধ পুকুরের উপরিভাগে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকে এবং তলদেশে কম থাকে। তবে নিম্নেক্ত উপায়ে পুকুরের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যেতে পারেঃ

ক) পানিতে ঢেউ এর সৃষ্টি করে, যেমন- সাঁতার কাটা, বাঁশ পেটানো ইত্যাদি।

খ) পুকুরে নতুন পানি সরবরাহ করে অর্থাৎ পানি পরিবর্তন করে।

গ) কৃত্রিমভাবে বায়ু সঞ্চালন করে। যেমন এয়ারেটর বা প্যাডেল তুইল স্থাপন করে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়। পানিতে স্তর সৃষ্টি রাধে, বর্জ্য পদার্থ বের করা এবং অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে এয়ারেটর অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।

পুকুরের চারদিকে ৪টি এয়ারেটর ব্যবহার করলে বর্জ্য পদার্থ ঠিকভাবে এক জায়গায় জমা হতে পারে। সবগুলো এয়ারেটর এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে সব এয়ারেটর একই দিকে ঘুরে। পুকুর পাড় থেকে এয়ারেটর ৫-১০ মিটার দূরে এবং একটি থেকে অন্যটি ৩০-৩৫ মিটার দূরে স্থাপন করতে হবে।

গ. পানির লবণাক্ততা: বাগদা চিংড়ি প্রায় শূন্য থেকে ৭০ পিপিটি লবণাক্ততায় বেঁচে থাকতে পারে। তবে ১০-২৫ পিপিটি লবণাক্ততায় এদের দৈহিক বৃদ্ধি ভালো হয়। পানির লবণাক্ততা ২৫ পিপিটির বেশি হলে মিঠা পানি সরবরাহ করে পানির লবণাক্ততা কমাতে হবে। রিফ্রাক্টোমিটার বা স্যালাইনোমিটারের সাহায্যে পানির লবণাক্ততা পরিমাপ করা যায়।

ঘ. অ্যামোনিয়া: সাধারণত পুকুরের তলদেশে পুঞ্জিভূত জৈব পদার্থের পচন ও জলজ প্রাণীর বিপাকীয় ক্রিয়ায় অ্যামোনিয়ার সৃষ্টি হয়ে থাকে। আধা-নিবিড় ও নিবিড় চাষের পুকুরে সাধারণত হঠাৎ করে ব্যাপক হারে ফাইটোপ্লাংকটনের মড়ক ও অন্যান্য ময়লা-আবর্জনা পচনের কারণে অনায়নিত অ্যামোনিয়া উৎপাদিত হয়।

আয়োনিত (NH4′) ও অনায়নিত (NH) অবস্থায় অ্যামোনিয়া পানিতে বিদ্যমান থাকে। অনায়নিত অ্যামোনিয়া চিংড়ির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। পুকুরের পানিতে অনায়নিত অ্যামোনিয়ার মাত্রা ০.০২৫ মিগ্রা/লিটার এর কম থাকতে হবে যা চিংড়ির জন্য সহনীয়। এতে চিংড়ি উৎপাদনে কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। পানিতে অনায়নিত

অ্যামোনিয়ার পরিমাণ ০.১ পিপিএম এর বেশি হলে চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং ০.৪৫ পিপিএম এর বেশি হলে বৃদ্ধির হার অর্ধেকে নেমে আসে। সাধারণত পানির পিএইচ বৃদ্ধির সাথে সাথে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এজন্য পানির পিএইচ ৮.৫ এর বেশি হওয়া উচিত নয়।

অ্যামোনিয়ার বৃদ্ধি পিএইচ-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার ফলে বিকাল বেলা পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেশি থাকে এবং ভোর বেলায় কম থাকে। পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের জন্য চিংড়ির মজুদ ঘনত্ব হ্রাস এবং অত্যধিক সার ও খাদ্য প্রয়োগ সাময়িকভাবে বন্ধ করতে হবে।

ঙ. নাইট্রাইট (NO,): নাইট্রাইট হচ্ছে অ্যামোনিয়া ও নাইট্রেটের মধ্যবর্তী যৌগ। অনেক সময় এই যৌগ চিংড়ির ব্যাপক মড়ক ও দৈহিক বৃদ্ধির হার হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নাইট্রাইটজনিত কারণে চিংড়ি খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়। নাইট্রাইটের মাত্রা ০.১ পিপিএম এর নিচে থাকা চিংড়ির জন্য নিরাপদ।

তবে সাগরের পানিতে নাইট্রাইট কম বিষাক্ত। চিংড়ির ঘনত্ব হ্রাস ও পানি পরিবর্তন করে জিওলাইট এবং চরম বিপর্যয়ের সময় ৩.৩ কেজি/শতাংশ/৩০ সেমি পানির গভীরতায় লবণ প্রয়োগ করে নাইট্রাইটের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

চ. নাইট্রেট (NO,): পানিতে নাইট্রেটের মাত্রা ২০ পিপিএম-এর নিচে রাখা চিংড়ির জন্য উত্তম। নাইট্রেট চিংড়ির জন্য তেমন একটা বিষাক্ত নয়, বরং শেওলার জন্য একটি পুষ্টিকর উপাদান।

ছ. খরতা ও ক্ষারত্বঃ পানিতে দ্রবীভূত বাই-কার্বনেট ও কার্বনেট এর ঘনত্বই হলো ক্ষারত্ব। বাই-কার্বনেট ও কার্বনেট অন্য কতকগুলো উপাদানের সাথে একত্রে মিলিত আকারে থাকে। উপাদানগুলোর মধ্যে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেয়ামি অন্যতম। ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেয়ামি এর ঘনত্বকে খরতা বলে।

খরতা ও ক্ষারত্বের মান হ্রাস-বৃদ্ধি হলে পানির বাফারিং ক্ষমতা কমে যায় এবং পানির পিএইচ দ্রুত উঠা-নামা করে। এর হ্রাস বৃদ্ধির ফলে পুকুরে সার দিলে তা কার্যকর হয় না এবং চিংড়ির খোলস বদলানো বাধাপ্রাপ্ত হয়। খরতা ও ক্ষারত্বের মান ৪০-২০০ মিগ্রা/লিটার হলে চিংড়ির জন্য ভালো। পুকুরের পানি পরিবর্তন করে এবং চুন বা জিপসাম প্রয়োগ করে পানির খরতা ও ক্ষারত্ব নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

জ. পিএইচ: চিংড়ির জন্য পানির পিএইচ ৭.৫-৬.৫ হওয়াই উত্তম। পানির পিএইচ মান ৫ পিপিএম এর কম হলে এবং ৯.৫ পিপিএম এর বেশি হলে চিংড়ির জন্য ক্ষতিকর। সাধারণত খামারে পানির পিএইচ-এর উপস্থিতির মাত্রা ফাইটোপ্ল্যাংকটন, অব্যবহৃত খাদ্যের চর্বি ও ময়লা-আবর্জনা দ্বারা প্রভাবিত হয়।

দিনের বেলায় ফাইটোপ্লাংকটন সালাকেসংশেষণ প্রক্রিয়ায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করার ফলে বিকাল বেলায় পুকুরের পানিতে পিএইচ বেড়ে যায় এবং রাতের বেলায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করার ফলে ভোর বেলা পিএইচ কমে যায়। পিএইচ এর দ্রুত উঠানামা চিংড়ির জন্য মােেটও ভালো নয়। পানির পিএইচ কমে গেলে চিংড়ির উপর নিম্নেক্ত প্রভাবগুলো পরিলক্ষিত হয়

ক) চিংড়ির দেহ থেকে সোডিয়াম ও ক্লোরাইড বেরিয়ে যায়, ফলে চিংড়ি দুর্বল হয়ে মারা যায়।

খ) চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং খাবারে অরুচি ভাব দেখা দেয়।

গ) পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়।

পানির পিএইচ বেড়ে গেল চিংড়ির উপর নিমাক্তে প্রভাব পরিলক্ষিত হয়ঃ

ক) চিংড়ির ফুলকা ও চোখ নষ্ট হয়ে যায়।

খ) অভিস্রবণ (Osmoregulation) ক্ষমতা হ্রাস পায়।

গ) চিংড়ি খাদ্য গ্রহণ কন্ধ করে দেয়।

চুন ও জিপসাম প্রয়োগ করে পানির পিএইচ বাড়ানো যায় এবং অ্যামোনিয়াম সালফেট (১ কেজি/শতাংশ) অথবা কুঁতে (৬-১২ গ্রাম/শতাংশ/৩০ সেমি গভীরতা) প্রয়োগ করে পানির পিএইচ কমানো যায়।

ঝ. হাইড্রোজেন সালফাইড (H2): সাধারণত পচনশীল জৈব পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়া ও অক্সিজেনের ঘাটতির ফলে পুকুরের তলদেশের মাটিতে পচা ডিমের গন্ধের অনুরূপ পন্ধ পাওয়া যায় এবং মাটির উপরিভাগে কালো আবরণের সৃষ্টি হয়। পানিতে হাইড্রোজেন সালফাইডের মাত্রা ০.১-০.২ পিপিএম হলে চিংড়ি শরীরের ভারসাম্য হারায় ও খাদ্য গ্রহণে অনীহাভাব দেখায়, ফলে চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধির ব্যাঘাত ঘটে।

হাইড্রোজেন সালফাইডের মাত্রা ১ পিপিএম-এর বেশি হলে চিংড়ির মড়ক আরম্ভ হয়। পুকুরে অক্সিজেন বৃদ্ধি, সার ও খাদ্য প্রয়োগের মাত্রা হ্রাস ও পিএইচ এর মাত্রা বৃদ্ধি করে হাইড্রোজেন সালফাইভের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পুকুরের পানি পরিবর্তনের মাধ্যমেও হাইড্রোজেন সালফাইডজনিত সমস্যা সমাধান করা যায়।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি

সেকি ডিস্ক রিডিং নিয়ে সারের প্রয়োজনীয়তা নির্ণয় করতে হবে। সেক্কি ডিক ১২ ইঞ্চি পানিতে রাখার পর যদি সেঞ্চি ডিস্ক এর সাদা-কালো অংশ পরিষ্কার দেখা যায়, তবে শতাংশ প্রতি ৮০-১০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ২০-৩০ গ্রাম টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে। এ মাত্রায় সার প্রয়োগের ৫-৬ দিনের মধ্যে সেকি ডিক এর দৃশ্যমানতা না কমলে উপরোক্ত মাত্রার অর্ধেক পরিমাণ সার আবার প্রয়োগ করতে হবে।

সাধারণত এই পদ্ধতিতে চাষের ক্ষেত্রে প্রতি ২ সপ্তাহ অন্তর অন্তর অর্থাৎ প্রতি পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সময় পানি পরিবর্তনের পর সার প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। অজৈব সার ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হয়। জৈব সার পানিতে গুলিয়ে সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হয়। তাছাড়া জৈব ও অজৈব সার একসাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যায়।

চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা

চিংড়ির নিয়মিত নমুনায়ন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সর্বোপরি পর্যবেক্ষণ খুব জরুরি। প্রতি ১৫ দিন অন্তর চিংড়ি ধরে নমুনায়ন ও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সে সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে চিংড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধি অব্যাহত রাখার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সারণি: চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা পদ্ধতি এবং করণীয়

ক্রমিক নংপর্যবেক্ষণকরণীয়
১.শিরায়/পেটে খাবার আছে কি না।খাবার না থাকলে, কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং প্রয়োজনে খাবার প্রদান বৃদ্ধি করতে হবে।
২.খোলসের উপর সাদা চাকা চাকা দাগ আছে কিনাচিংড়ির ভাইরাস হলা েকিনা তা নিশ্চিত হতে হবে এবং প্রয়োজনে চিংড়ি আহরণের উদ্যোগ নিতে হবে
৩.ফুলকা কালা েহয়ে গেছে কিনাচিংড়ি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলে, ঘেরে হররা/পালা টেনে দিতে হবে এবং স্বল্প মাত্রায় চুন প্রয়াগে করতে হবে
8লেজ ফোলা এবং তাতে পানি জমা হয়েছে কিনাচিংড়ি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলে, বিঘা প্রতি ১.৫ কেজি হিসেবে পটাসিয়াম-পার-ম্যাঙ্গানেট পানিতে মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে
৫.চিংড়ি দুর্বল/সতেজ কিনাদুর্বল চিংড়ি বেশি হলে কারণ নির্ণয় করতে হবে এবং স্বল্প
৬.খালেস নরম/শক্ত কিনাপরিমাণে চিংড়ি আহরণের উদ্যোগ নিতে হবে নরম চিংড়ির সংখ্যা বেশি হলে কারণ নির্ণয় করতে হবে এবং চুন প্রয়াগে করতে হবে।
৭.দেহের মাংশ এবং খোলসের মধ্যে কোনো ফাকা আছে কিনাফাকা থাকলে খাবার প্রদানের তালিকা পরীক্ষা করতে হবে এবং প্রয়োজনে পরিমান বাড়াতে হবে

খামারে চিংড়ির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা

সাধারণত অস্বাস্থ্যকর জলীয় পরিবেশ, মজুদ ঘনত্ব বেশি, খাদ্যাভাব ইত্যাদি কারণে চিংড়ির শরীরে নানা রকম রোগের প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হয়। এজন্য চিংড়ির স্বাস্থ্য রক্ষায় পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাগুণ নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার। চিংড়ির ঘনত্ব বেশি হলে খাদ্যাভাবও প্রকট হয়।

ফলে কিছু কিছু চিংড়ি দ্রুত বড় হয়ে যায় এবং দুর্বল ছোট চিংড়িগুলো খাদ্য প্রতিযোগিতায় হেরে যায়। এর ফলে দুর্বল চিংড়িগুলো ধীরে ধীরে আরও দুর্বল ও রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাছাড়া অধিক ঘনত্বের কারণে জলীয় পরিবেশও দূষিত হয়ে পড়ে। চিংড়ির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিম্নরূপ:

ক) পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন।

খ) নির্ধারিত মজুদ ঘনত্ব বজায় রাখা।

গ) খামারে সুষম ও পরিমিত খাদ্য ব্যবহার।

ঘ) অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণীর অনুপ্রবেশ রাধে।

ঙ) খামারে ব্যবহৃত সকল যন্ত্রপাতি ও আহরণ সরঞ্জামাদি জীবাণুমুক্ত রাখা।

চ) স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে পুকুরে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার না করা। তবে একান্তভাবেই যদি রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার করতে হয় সেক্ষেত্রে এর ব্যবহারের মাত্রা সহনশীল পর্যায়ে রাখার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। পুকুরে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহারের মাত্রা নিচের সারণিতে দেয়া হলোঃ

রাসায়নিক দ্রব্যউদ্দেশ্যমাত্রা
ফরমালিনপ্রােেটাজোয়াসহ বাহ্যিক পরজীবী দমন১৫-২৫ পিপিএম
ম্যালাকাইট গ্রীনফাংগাস, বাহ্যিক পরজীবী ও ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণ২-৪ পিপিএম
পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেটফাংগাস, বাহ্যিক পরজীবী, শেওলা ও ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণ০.২৫-০.৫ পিপিএম
সিমাজিনশেওলা নিয়ন্ত্রণ০.২৫ পিপিএম
ফিটকারীঘালোত্ব নিয়ন্ত্রণ১০-২০ পিপিএম
জিপসামঘালোত্ব নিয়ন্ত্রণ২৫০-১০০০ পিপিএম
কলিচুনঘালোত্ব নিয়ন্ত্রণ১০০-১০০০ পিপিএম

অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ

সঠিকভাবে পানি ব্যবস্থাপনা চিংড়ি উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পানি সরবরাহ ও নির্গমন ব্যবস্থা যাতে ঠিকমত থাকে সেজন্য পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন গেট নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করতে হবে। এসব গেটে কোনো প্রকার ত্রুটি দেখা দিলে তা সাথে সাথে অপসারণ করতে হবে।

তাছাড়া গেটের পার্শ্বে বা তলা দিয়ে পানি চলাচল করলে তা সাথে সাথে বন্ধ করতে হবে। অবাঞ্চিত প্রাণী নিয়ন্ত্রণের জন্য নিষ্কাশন গেটে স্থাপিত নেট নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। এগুলো ত্রুটিপূর্ণ হলে চিংড়ি খামার থেকে বের হয়ে যেতে পারে কিংবা অবাঞ্চিত পানি খামারে প্রবেশ করার সম্ভাবনা থাকে।

 

চিংড়ি চাষে পানির প্রয়োজনীয়তা | অধ্যায়-৮ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২
চিংড়ি চাষে পানির প্রয়োজনীয়তা

 

বেষ্টনী বঁধ ও পুকুরের বাঁধ নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। বাধে কোনো প্রকার ত্রুটি থাকলে তা সঙ্গে সঙ্গে মেরামত করতে হবে। খামারের অবকাঠামোসমূহ নিয়মিত ও সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে আকস্মিক প্রাকৃতিক দূর্যোগকালীন সময়েও খামার/চিংড়ির ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment