আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় থাই কৈ মাছের গুরুত্ব – যা থাই কৈ মাছ চাষ পদ্ধতি এর অন্তর্ভুক্ত।
থাই কৈ মাছের গুরুত্ব
থাই কৈ মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মাছ। এতে ১৪.৮৪% প্রোটিন, ৮.৮% ফ্যাট এবং ২.০% খনিজ পদার্থ বিদ্যমান । দেশী কৈ মাছ পুকুরে বদ্ধ পানিতে অধিক ঘনত্বে চাষ করলে তেমন বড় হয় না এবং স্বাদও নিম্নমুখী হয় । কিন্তু থাই কৈ পুকুরে অধিক ঘনত্বে চাষ করলেও স্বাদ ও বৃদ্ধিতে কোনো ব্যতিক্রম ঘটে না ।
অতিরিক্ত শ্বসন অঙ্গ থাকায় এরা বাতাস থেকে অক্সিজেন নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে। ফলে জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা যায়। অথবা বেশ কিছু দিন জিইয়ে রেখে খাওয়া যায় । স্বল্প গভীরতা সম্পন্ন পুকুরে অধিক ঘনত্বে এ মাছ চাষ করা যায় । আমাদের দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু থাই কৈ মাছ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
সঠিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অবলম্বন করলে এ মাছটি ৪-৫ মাসে বাজারজাতকরণ উপযোগী হয়। এ সময় প্রতিটি মাছ গড়ে কমপক্ষে ১০০ গ্রাম ওজনের হয়। অন্যান্য মাছের তুলনায় এ মাছের চাহিদা ও বাজার মূল্য বেশি। রোগীর পথ্য হিসেবে এ মাছ বেশ সমাদৃত । বিদেশে এ মাছের ব্যাপক চাহিদা থাকায় রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
থাই কৈ মাছ চাষের পদক্ষেপসমূহ :
অন্যান্য মাছ চাষের ক্ষেত্রে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয় এখানেও ঠিক সেইরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তবে এখানে বাড়তি কিছু কাজ করতে হয়। যেমন- পাড়ে কমপক্ষে ২ ফুট উঁচু করে বাঁশের বা ইটের গাঁথুনি অথবা ঘন জালের সাথে বাঁশের চাটাই দিয়ে বেড়া দিতে হবে। নিচে এ মাছ চাষের পদক্ষেপসমূহ আলোচনা করা হলো ।

পুকুর নির্বাচন :
যেকোনো আকার ও আয়তনের পুকুরে কৈ মাছ চাষ করা যেতে পারে। তবে পুকুরটি আয়তকার এবং আয়তন ৩০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ হলে ব্যবস্থাপনায় সুবিধা হয়। যে পুকুরে সারা বছর পানি থাকে বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে কমপক্ষে ৪-৫ ফুট পানি থাকে এমন পুকুর এ মাছ চাষের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। পানির গভীরতা ৩ ফুটের কম হলে ফলন আশানুরূপ হবে না। পুকুরের মাটি এটেল বা দোঁআশ এবং তলদেশে সামান্য নরম মাটি থাকলে ভালো হয়। পুকুর অবশ্যই বন্যামুক্ত হতে হবে। অধিক বৃষ্টিপাতে পুকুর পাড়ের সামান্যতম অংশ ডুবে গেলেও পুকুরে কৈ মাছ রাখা কষ্টকর হবে ।
কৈ মাছ বৃষ্টির সময় পাড় বেয়ে আশে পাশের জলাশয়ে চলে যেতে পারে। সুতরাং কৈ মাছ চাষের পুকুর পাড় অবশ্যই উঁচু হতে হবে। সম্ভব হলে বাঁশের বানা বা ইট দিয়ে চতুর্দিক ঘিরে দিতে হবে। বাইরের কোনো পানি পুকুরে প্রবেশ করতে পারবে না। প্রয়োজনে পানি প্রবেশের সব পথ স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে হবে এবং পুকুরে যাতে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ে ও বাতাস চলাচল করতে পারে এমন পুকুর নির্বাচন করতে হবে। এভাবে পুকুর নির্বাচনের পরে নির্বাচিত পুকুর কৈ মাছ চাষের উপযোগী করে প্রস্তুত করতে হবে।
পুকুর প্রস্তুতি :
থাই কৈ মাছ চাষে আশানুরূপ ফলন পেতে হলে মাছ চাষের শুরুতে পাড় মেরামত ও তলা সমতল করতে হবে যেন জাল টানতে কোনো অসুবিধা না হয় । পুকুরে অতিরিক্ত কাদা থাকলে তা তুলে ফেলতে হবে। পুকুর পাড়ে ঝোঁপ-ঝাড় ও গাছের বড় বড় ডালপালা থাকলে তা কেটে ছোট করে দিতে হবে। যাতে পুকুরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস পাওয়া যায় । পুকুরে কোনো জলজ আগাছা ও রাক্ষুসে এবং অনাকাক্ষিত মাছ রাখা যাবে না।
পুকুর সেচের মাধ্যমে শুকিয়ে এসব মাছ সম্পূর্ণরূপে দূর করতে হবে। পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে বার বার ঘন ফাঁসের জাল টেনে পুকুর হতে সম্পূর্ণরূপে অনাকাক্ষিত মাছ দূর করতে হবে। এর পরেও অবাঞ্ছিত মাছ থাকলে প্রতি শতাংশে ১ ফুট গভীরতার জন্য ২৫ গ্রাম হারে রোটেনন প্রয়োগ করতে হবে।
রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দমনের ৩-৪ দিন পর পুকুরে শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরের মাটি যদি খুব বেশি অম্লীয় হয় তাহলে প্রতি শতাংশে ২ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। শুকনো পুকুরে চুন প্রয়োগ করতে হলে প্রয়োজনীয় পরিমাণ চুন পুকুরের বিভিন্ন স্থানে রেখে তাতে অল্প অল্প করে পানি দিয়ে কয়েক ঘণ্টা রেখে দিলে আপনা আপনি চুন পাউডারে পরিণত হবে। যখন চুনের পাউডার ঠাণ্ডা হয়ে যাবে তখন একটি পাত্রে চুন নিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। চুন প্রয়োগের পর পরিমাণ মতো পানি সরবরাহ করতে হবে ।
আরও দেখুনঃ