আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – চুন প্রয়োগ । যা ” গলদা খামার প্রস্তুতকরণ ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।
শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
চুন প্রয়োগ
চুন প্রয়োগ
পুকুরে পেস্টিসাইড ব্যবহারের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে মাটিতে চুন প্রয়োগ করা। মাটির উর্বরতা শক্তির ওপর চিংড়ির ফলন নির্ভরশীল বিধায় মাটির শোধন ও উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য শুকুরে চুন প্রয়োগ করা দরকার। মাটিতে চুন প্রয়োগের উপকারিতা নিম্নরূপ।
(১) চুন মাটির অম্লত্বকে কমিয়ে আনে ফলে মাটির ক্ষারীয় গুণ বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ মাটির পিএইচ বৃদ্ধি পায়
(২) চুন বাফার প্রবণ হিসেবে মাটি বা পানির পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করে
(৩) চুন প্রয়োগের ফলে মাটিতে বিদ্যমান ক্ষতিকর জীবসহ পরজীবী, ব্যাকটেরিয়া এবং তাদের মাধ্যমিক পোষক মারা যায়।
(৪) মাটিতে চুন প্রয়োগ করলে মাটি থেকে পুষ্টিকারক উপাদানের নিঃসরণ ত্বরান্বিত হয়। ফলে মাটির প্রকৃতি উন্নত হয় এবং উর্বরতা শন্দি বৃদ্ধি পায়।
(৫) চুন প্রয়োগের ফলে মাটির ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম ও পটাসিয়ামের বিষাক্ততা দূরীভূত হয় এবং পানিতে ( নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে জলজ পরিবেশ থেকে জটিল যৌগসমূহ গ্রহণাপেযোগী হয়ে ওঠে।
(৬) চুন প্রয়োগে পানির ঘোলাত্ব দূর হয়। ফলে পুকুরে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
(৭) পুকুরে চিংড়ির চাষের অন্তরায় তন্ত্রময় শেওলা চুন প্রয়োগ করে দমন করা যায়
(৮) চুন থেকে প্রাপ্ত ক্যালসিয়াম ও কার্বনেট চিংড়ির খোলস তৈরির একটি অন্যতম উপাদান। ক্যালসিয়ামের অভাবে অনেক সময় চিংড়ির খোলস বদল হয় না বা বদল বিলম্বিত হয়। এমনকি খোলস বদল হলেও তা শক্ত হতে দেরি হয়। ফলে চিংড়ির দেহ দীর্ঘক্ষণ নরম থাকে। এর ফলে চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি হ্রাস পায়। চুনের ক্যালসিয়াম চিংড়ির বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।
(৯)চুন পানি থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে সালোকসংশেষণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সরবরাহ করতে পারে।
(১০) চুনের অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম পুকুরে সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
চুনের প্রকারভেদ
বাজারে বিভিন্ন ধরনের চুন পাওয়া যায়। এর সবগুলোই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। আমাদের দেশের স্থানীয় বাজারে যেসব চুন পাওয়া যায় তাদের নাম নিচে দেয়া হলো:
(১) পাথুরে চুন (CaCO)
(২) কলি চুন (Ca(OH),)
(৩) পোড়া চুন (CaO)
(৪) ডলোমাইট (CaMg (CO,),)
(৫) জিপসাম (CaSO,, 2H,O)
পড়া কাদাযুক্ত পুকুরে ডলোমাইট জাতীয় চুন ব্যবহার করা সবচেয়ে ভাল। কারণ পড়া কাদাযুক্ত পুকুরে এই চুনের কার্যকারিতা সবেচেয়ে বেশি। তবে এই চুন আমাদের দেশের স্থানীয় বাজারে এখনও সহজ প্রাপ্য নয়।
চুল প্রয়োগের মাত্রা
মাটির পিএইচ এর ওপর নির্ভর করে চুন প্রয়োগের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। মাটির এই পিএইচ নির্ভর করে মাটিতে বিদ্যমান জৈব পদার্থ, খনিজ ধাতব যেমন লৌহের উপস্থিতির ওপর। জৈব পদার্থ ও লৌহের পরিমাণ বেশি হলে মাটির পিএইচ মান কম হয়। মাটির পিএইচ মান ৪ এর কম হলে সেখানে চিংড়ি বা মাছ চাষের উপযোগী করে ভালো সম্ভব নয়।
আবার মাটির পিএইচ এর মান ৭.০ এর বেশি হলে সেখানে চুন প্রয়োগ করার প্রয়োজন নেই। এরূশ মাটি চিংড়ি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে মাছ চাষের সাধারণ মাত্রায় চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ মাত্রায় চুন প্রয়োগ করা উচিত। এর ফলে জলীয় পরিবেশ সম্পূর্ণ দূষণযুক্ত হয় এবং মাটির স্বাভাবিক উত্তা ফিরে আলে।
বেসন পুকুরের তলদেশে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি সেখানে বেশি পরিমাণে চুন প্রয়োগ করা দরকার। গলদা চিংড়ি চাষে জৈব সার খুব অল্প পরিমাণে প্রয়োগ করা হয় বলে পুকুরের তলদেশে সঞ্চিত প্রাকৃতিক সারকে ক্রিয়াশীল করার জন্য বেশি পরিমাণে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
এ কারণে থাইল্যান্ডে চিংড়ির পুকুরে যখনই পানি শুকিয়ে ফেলা হয় তখনই হেক্টর প্রজি এক টন কৃষি চুন প্রয়োগ করা হয়। চিংড়ি চাষ কালে পানির পিএইচ ৭.৫ এর নিচে নেমে আসলে অথবা ২৪ ঘন্টার মধ্যে পিএইচ এর তারতম্য ০.৫ এর বেশি হলে পানিতে ক্যালসিয়াম কার্বনেট বা ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট (ডলোমাইট) জাতীয় চুন প্রয়োগ করতে হবে।
পুকুরের পানির পিএইচ ৮.৫ এয় বেশি হলে পানি পরিবর্তন করতে হবে এবং পরিবর্তনের পরপরই চুন প্রয়োগ করতে হবে। মূলকথা প্রতিবার পুকুরের পানি পরিবর্তন অথবা অতিবৃষ্টির পরপরই পুকুরে চুন প্রয়োগ করতে হবে। গলদা চাষের পুকুর প্ররতির সময় নিচের ছক অনুযারী পুকুরে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সৌকর পুকুত্রের চারকোণে অথবা পুকুরের পাড়ের কাছাকাছি বাঁশের বাজায় আংশিক ডুবজ অবস্থায় রেখে দিলে ফৌজের লাখে লাখে পোষর ধীরে ধীত্রে ভলে পানিতে মিশে যায়। বিভিন্ন প্রকার লণুজীবের লাহায্যে পচন ক্রিয়ায় গোবরের নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাসিয়াম প্রভৃদ্ধি পুষ্টিকারক উপাদান পানিতে মুক্ত হয়।
পরবর্তী- ডে এই পুষ্টিকারক উপাদানসমূহ পুকুত্রে উষ্টিস ও প্রাণিজাত খাদ্যকণা উৎপাদনে সহায়কা করে থাকে যা চিড়ি খাস্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। বেশি পরিমাণ গোষয় পুজুয়ে একসাথে প্রয়োগ করলে পাদি নষ্ট হরে যাওয়ায় আশঙ্কা থাকে এবং দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ উল্লেখযোগস্ট হারে হ্রাস পায় যা চিংড়ি চান্দের জন্য ক্ষতিকর।
হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা
হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা জৈব সায় ছিলেবে চিংড়িয় পুকুত্রে প্রয়োগ করা যায়। এই সায়ে পুষ্টিকণয়ক উপাদান নাইট্রোজেন যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। এ জাতীয় সার পুকুরে প্রয়োগ করলে অল্প সময়কালের মধ্যেই উষ্টিসক্ষার কণায় সৃষ্টি হয় এবং এই লায় প্ররোখে পানি দূষণের সম্ভাবনাও কম থাকে। আহাড়া এই সার প্রয়োপের অতি অল্প সময়ের মধ্যেই এর কার্যকারিতা শুরু হয়।
কম্পোস্ট সার
মাটির গর্তে পোষর, হাঁস-মুরপির বিষ্ঠা প্রভৃতির সাথে কচুরিপার, ফমিলতা, ফাঁধি জাতীয় উদ্ভিস নানা ধরনের শেওলা রেখে দিলে পড়ন ক্রিয়ায় কলে যে মিশ্র সার তৈরি হয় তাকে কম্পোস্ট সার বলে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কম্পোস্ট সার হিসেবে ব্যবহারের প্রচলন আছে। যাছ চাষেও কম্পোস্ট সারের ব্যবহার করা যায়। তবে একসাথে বেশি পরিমাণ সার পুকুরে ব্যবহার করা নিরাপদ নয়। কর্ণয়ণ এতে অক্সিজেন ঘাটতির আশঙ্কা থাকে।
এছাড়া কৃষিক্ষেতের খ্যায় পুকুয়েও সমুদ্র সায় ব্যবহার করা যায়। পুকুরের জ্বললেপ ভালোভাবে শুকিয়ে দিয়ে চাষ দিতে হবে। তারপর ধনচে, পুঁই, কলমিলতা প্রভৃতি পুকুত্রের তলদেশে রোপণ করে চাষ করা হয়। বর্ষার পানিতে পুকুর ভরে গেলে এসব উদ্ভিস পড়ে মাহ চাষের জন্য উত্তম সায় তৈরি হয়। এই সবুজ সার প্রয়োগে পুকুরের প্রাথমিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় যা চিংড়ি ও মাছ চাষের জন্য অত্যন্ত সহায়ক।
কৈালান্তীয় সার
সরিষার খৈল, বাদামের খৈল, তিসির খৈল, তিলের খৈল প্রভৃতি বীজনদের খৈল পুকুরে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশে সাধারণত সরিষায় শৈল জৈব সার হিসেবে সবচেন্দ্রে বেশি ব্যবস্তুক হয়ে থাকে। সম্বিষায় খৈলে সাধারণত ৪.৭% নাইট্রোজেন, ২.৫% ফসফরাস ও ১.০% গন্টাসিয়াম থাকে।
সরিষার খৈল কমপক্ষে এক রাত্র পানিকে ভিজিয়ে রেখে তারপর পুকুরে সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় এই ভিজানো খৈল সায়ের সাথে গিলিয়ে পুকুতে প্রয়োগ করা হয়। এই সার প্রয়োগের কয়েক দিসের সঞ্চেই পুকুরে চিংড়ির প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে সরিষার খৈল বিড়ির পরিপুরক খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়
অজৈব সার
কলকারখানার কৃত্রিম উপায়ে যে সার তৈরি করা হয় তাকে অজৈব বা রাসায়নিক সার বলে। যথা- ইউরিয়া, টিএসপি এমপি ইত্যাদি। রাসায়নিক সারের মূল পুষ্টিকারক উপাদান হচ্ছে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাসিয়াম। এই রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই পুকুরে নানা ধরনের উদ্ভিদ কলা বা ফাইটোপ্লাংকটন জনায় ও পুকুরের উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। বাজারে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার পাওয়া যায়।
এই বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সারের মধ্যে মাছ ও চিংড়ি চাষের জন্য নাইট্রোজেনঘটিত সারের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। অ্যামোনিয়াম সালফেট প্রয়োগেই ভালো ফল পাওয়া যায়। এই সার পুকুরে প্রয়োগ করলে চিংড়ির খাদ্য উদ্ভিদ জাত সবুজ প্ল্যাংকটন প্রচুর পরিমাণে জন্যায়।
ফসফেটষটিত সার
ফসফরাসঘটিত সার বাজারে সিঙ্গেল সুপার ফসফেট (এসএমপি), ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), রক ফসফেট প্রভৃতি হিসেবে পাওয়া যায়। এই সার অল্প মাত্রায় প্রয়োগ করলে পুকুরে ফসফেটের খাটতি দূর হয় ও পুকুরের উৎপাদন শক্তি বৃদ্ধি পায়। এই সার দেখতে ছাই রঙের এবং পানিকে ব্রীভূত হতে একটু সময় লাগে। এজন্য ফসফেট জাতীয় সার পানিতে গুলে নিয়ে তারপরে পুকুরে প্রয়োগ করতে হয়। এতে সারের কার্যকারিতা দ্রুত শুরু হয়। ট্রিপল সুপার ফসফেট লায়ে প্রায় শতকরা ৪৪-৫৪ তাগ ফসফরাস থাকে।
পটাপঘটিত সার
পাটাশঘাটত যার হিসেবে পাট্টাাসয়াম অক্সাইড, পটাসয়াম সালফেট, পটাসেয়াম নাইট্রেন প্রভৃতি বাজারে পাওয়া যায়। এসব সারের মধ্যে পটাসিয়াম অক্সাইড বা মিউরেট অব পটাশ (এমপি) সার পুকুর প্রস্তুতকালে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এই সার দেখতে বানাবার লাল রঙের। মিউরেট অব পটাশ সারে প্রায় শতকরা ৩৮-৬২ ভাগ K,O থাকে। এই সার সহজেই পানিতে দ্রবণীয়। পটাশঘটিত সার অল্প বা বেশি পরিমাণ ব্যবহারে মাটির পিএইচ এর তেমন কোন পরিবর্তন ঘটে না।
অন্যান্য রাসায়নিক সার
ম্যাগনেসিয়ামঘটিত সারও অনেক সময় শুকুরে ব্যবহার করা হয়। মাটিতে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি সেখা দিলে এই সার প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক উপাদান যেমন-জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, লোহা, বোরন, মলিবডেনাম, আয়োডিন প্রভৃতি মাটিতে খুব অল্প মাত্রায় থাকা প্রয়োজন। এসব রাসায়নিক উপাদানকে ট্রেস উপাদান বলা হয়। এদের যে কোনো একটির অভাব দেখা দিলে মাটি তথা পুকুরের উর্বরতা শক্তি কমে যায়। পুকুরে উদ্ভিদকণা ও প্রাণিকণা উৎপাদনে এসব ট্রেস উপাদান এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পুকুরে সারের উৎস
সাধারণত একটি পুকুর বা জলাশয়ে নিম্নে বর্ণিত উৎস থেকে সায় আসতে পারেঃ
- পুকুর বা জলাশয়ের পানিধারণকারী মাটি থেকে
- পুকুর বা জলাশয়ে গড়িয়ে আসা প্রবাহমান পানি থেকে
- গৃহপালিত জীবজনডুর মলমূত্র ব্যবহারের ফলে
- পানিতে বসবাসকারী প্রাণীর দেহ থেকে নিষ্ক্রান্ত বর্জ্য পদার্থ থেকে
- মানুষের নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদি পুকুরের পানিতে থোয়ার দলে
- পানিতে পড়ে থাকা গুলু, লতাপাতা ইত্যাদি পচনের ফলে।
সার নির্বাচন
অন্যান্য প্রাণীর মতো চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধির জন্যও পুষ্টিকারক উপাদানের বিশেষ প্রয়াজন। চিংড়ির খোলাস তৈরি ও পেশীকলার বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকারক উপাদানের দরকার। চিংড়ির পেশীকলা গঠনের জন্য প্রধান পুষ্টিকারক উপাদান হচ্ছে ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম। এজন্য চিংড়ি খামারে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকারক উপাদান সরবরাহের জন্য উপযুক্ত সার নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে বিভিন্ন প্রকার সারের পুষ্টিকারক উপাদানের তালিকা দেয়া হলোঃ
সার | নট্রোজেন (%) | ফসফরাস (%) | পটাসিয়াম (%) |
ইউরিয়া | ৪৬ | – | – |
টিএসপি | ০ | ৪৪-৫৪ | ০ |
অ্যামোনিয়া সালফেট | ২০-২১ | ০ | ০ |
গোবর | ০.৭ | ১.৩ | ০.`৫ |
হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা | ১.২ | ১.৩ | ০.০৬ |
চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি নিয়মিত খোলন পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল। চিংড়ির খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকারক উপাদান থাকলে খোলস পরিবর্তন নিয়মিত হয় এবং শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে। খোলস পবির্তনের সময় চিংড়ির দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ যেমন, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস চলে যায়।
আবার নতুন খোলন তৈরির জন্য প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের প্রয়োজন হয়। সুতরাং এসব দিক বিবেচনা করে গলদা চিংড়ির পুকুরে গোবর, ইউরিয়া ও টিএসপি সার ব্যবহার করাই ভালো। এছাড়া পুকুর প্রস্তুতকালে পরিমিত পরিমাণে চুন প্রয়োগ করলে পরবর্তী সময়ে সাধারণত ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয় না।
সার প্রয়োগের মাত্রা নির্ধারণ
পানিতে নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের পরিমাণ একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় রেখে পুকুরে দার প্রয়োগ করা উচিত। তবে প্রার্থমিক পর্যায়ে পানিভে ০.৯৫ পিপিএম নাইট্রোজেন ৩০.১১ পিপিএম ফরফরাস থাকলে ভালো হয়। সার প্রয়োগের মূলনীতি হচ্ছে পুকুরে চিংড়ির প্রাকৃতিক খাদ্য প্যাঙ্কটন (ফাইটোপ্ল্যাংকটন ও জুপ্ল্যাংকটন) উৎপাদন করা। সুতরাং ফাইটোপ্ল্যাংকটন বৃদ্ধির জন্য পানি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়।
নিচের সূত্রের সাহায্যে ইউরিয়া ও টিএসপি সার প্রয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়।
ইউরিয়া= পুকুরের পানির আয়তন (ঘন মি.) * (০.৯৫ পিপিএম পানিতে বিদ্যমান পিপিএম নাইট্রোজেন) * ১০০/কেজি সরে নাইট্রোজেনের মাত্রা (%) * ১০০০
টিএসপি=পুকুরের পানির আয়তন (ঘন মি.)* (০.১১ পিপিএম পানিতে বিদ্যমান পিপিএম ফসফরাস) *১০০ কেজি সরে/ফসফরাসের মাত্রা (%) ১০০০
সেড়ি দিদের ব্যদয়ে
আধুনিক যন্ত্রপাক্ষিন্ন সভ্যযে উপরোক্ষে নিয়মে সুখলবে সারের পরিমাণ নির্ণাহণ করা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সম্ভব হয়। এখেত্রে পেড়ি ডিম্বের সাবানো প্যাথিতে বিগ্যবান প্যাফটদেয় গদত্ত্ব বির্ণর ভয়ে বায় প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা ও পরিমাণ মোটামুটিভাবে নির্ধারণ করা যায়। পুকুরের পানির প্রাথমিক উৎপাদনশীলভা নির্ণয়ের মণ্য চিংড়ি সানিয় করছে সেকি চিক অব্যয় করুত্বপূর্ণ।
সাধারণত গোহা যা ভারী টিদেয় মৈরি গোলাকার মাকটিকে দেরি কিক হিসেবে ব্যববার করা হয়। এই ঢাকষির উপরি পৃষ্ঠকে চারটি সমান ভাগে ভাগ করে এই লুজা বা একটি পঙ্ক কাঠের লাঠি স্থাপন করা হয়। এই সুজা বা কারিকে খেল জয়া দেশে সেন্টিমিটসয়ে যাগাজিয় করা হয়।
এই সুতা বা কারিনা ২৫ সেমি ও ৪০ সেমি দূরত্ব স্পটিফানে চিহিক করা হয়। এক্ষাবে অতি সহজেই একটি সোফি ভিয় তৈরি করা বার। সেফি রিস্ক ব্যবসূত্রের মূল উদেশ্য হচ্ছে সেকি বিক্ষ দ্বারা পানির স্বজনরা বিশ্চয় করে সান্ন প্রয়োগের প্রয়োজন্টীয়তা সম্পর্কে অবহিত হওরা।
সাধারণত সার প্রয়োগের ফলে প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাচুর্বকার কারণে শানির কড়ের পরিবর্তন ঘটে। পানির সংযান্ড যা মীলাক্ষে সরুজ বা হালকা বাদানি প্রস্তুতি ঢং, ভরা গুদুরে প্রাকৃফিক খালোয় প্রচুর্যতা সম্পর্কে ধারণা সাঙ করা যায়। এছাড়া অন্যান্য কারণে পানি খোলা বা নখজ হাস দেখাদর সেরি ডিস্ক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
প্রথমে সেকি ভিঘকে পানিতে নাজে আদাজে ডুবিত্রে দানার কিছুটা ওঠা সেঞ্চি ডিক্ষের প্রতি ভালভাবে দৃষ্টি রাখতে হবে। সেকি ডিস্ক এভাবে ওঠা-নামা করতে করতে যখন সেঞ্চি ডিস্কের দানা ও কালো রং অস্পষ্ট দেখা যাবে তখন পানির উপরিভল থেকে সুড়া বা কাঠির যে পরিমাপ পাওয়া যাবে তাকেই সেঞ্চি ডিস্ক পাঠ বলা হয়।
সেকি ডিস্ক পাঠ ২৫ সেমি হয়ে ৪০ সেমি এর মধ্যে থাকলে বুঝতে হবে পানির প্রাকৃতিক খাদ্য আছে। সেকি ডিস্ক পাঠ ৩০ সেমি বা এর কাছাকাছি থাকলে সবচেয়ে ভালো। এই অবস্থায় পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য থাকে ফলে আর সার প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয় না।
সেকি ডিস্ক পাঠ ২৫ সেমি বা তার কম হলে বুঝতে হবে পুকুরে অতিমাত্রায় প্রাকৃতিক খাদ্য বিদ্যমান যা দে কোনো মুহূর্তে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এরূপ ক্ষেত্রে পুকুরে সার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে এবং পুকুরের কিছু পানি পরিবর্তন করা ভালো। যদি সেঞ্চি ডিস্ক পাঠ ৪০ সেমি বা তার বেশি হয় তবে বুঝতে হবে শুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের যথেষ্ট ঘটিভি রয়েছে। এরূপ ক্ষেত্রে নিচের তালিকা অনুযায়ী পূর্ণমাত্রায় সার প্রয়োগ করলে সুফল পাওয়া যায়।
প্রাণী প্যাঙ্কটন উৎপাদনের জন্য পুকুতে জৈব সার যেমন গোবর সার প্রয়োগ করা যায়। পুকুরে সাধারণত ১৫ দিন পরপর ফাইটোপ্ল্যাংটন ও প্রাণী প্যাকেটনের পর্যায়ক্রমিক প্রচুর্যতা লেখা মম। এজায় ১৫ দিনের ব্যবধানে জৈব ও অজৈব সার পর্যায়ক্রমে পুকুরে প্রয়োগ করলে প্রাকৃতিক খাদ্যের অভাব হয় না।
সার প্রয়োগ
চুন প্রয়োগের এক সপ্তাহ পর শতাংশ প্রতি ২-৫ কেজি জৈব সার, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০ গ্রাম টিএসপি এবং ২০০ গ্রাম পটাশ সার পুরুর প্রস্তুতির সময় সরাসরি পুকুরের তলদেশে মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। পানিতে সার প্রয়োগ করার সময় টিএসপি সার পানিতে এক রাজ ভিজিয়ে রাখতে হবে। টিএসপি সার পানিতে আলোভাবে গুলে তার সাথে ইউরিয়া সার মেশাতে হবে। এরপর মিশ্রিত সারের দ্রবণ পুকুরের পানিতে উত্তমরূপে ছিটিয়ে দিতে হবে।
সার প্রয়োগে সতর্কতা
- রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে পুকুরে সার প্রয়োগ করতে হবে।
- পানির গভীরতার ভিত্তিতে সারের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
- দানাদার অবস্থায় সার পানিতে প্রয়োগ করা উচিত …
- সার প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণের জন্য নিয়মিত সেকি ডিস্ক ব্যবহার করতে হবে।
- মাত্রার অতিরিক্ত সার ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে পুকুরের পরিবেশ নষ্ট হবে এবং দ্রবীভূত।
- অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়।
পানি সংগ্রহ
সার প্রয়োগের পরপরই পুকুরে ৫-১০ সেমি পানি ঢুকাতে হবে। এর ফলে ক্ষতিকর গ্যাসসমূহ বের হয়ে যাবে। সার পচানোর পর পানিষ গভীরতা বাড়িয়ে ৪০-৫০ সেমি করে ১ সপ্তাহ রাখতে হবে। এরপর সেঞ্চি ডিস্ক ব্যবহার করে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাচুর্যতা পরীক্ষা করতে হবে।
যদি প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রচুর্যতা পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকে তবে পুনরায় ইউরিয়া ও টিএসপি সার পানিতে গুলে পুকুরের পানিতে সর্বত্র ছিটিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের ৪/৫ দিন পর পানির রং সবুজাভ হলে বুঝতে হবে পুকুর পোনা মজুদের উপযোগী হয়েছে।
আরও দেখুনঃ