ঘোলাত্ব প্রতিকারের উপায়

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ঘোলাত্ব প্রতিকারের উপায় – যা মাছ চাষকালে উদ্ভূত সমস্যা ও তার সম্ভাব্য সমাধান এর অন্তর্ভুক্ত।

ঘোলাত্ব প্রতিকারের উপায়

 

ঘোলাত্ব প্রতিকারের উপায়

 

ঘোলাত্ব প্রতিকারের উপায়

  • স্বাভাবিক গভীরতায় ১০ কেজি/একর হিসেবে জিয়োলাইট ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। শতাংশ প্রতি ১-২ কেজি চুন বা একই মাত্রায় জিপসাম ঘোলাত্ব না কমা পর্যন্ত ১-২ মাস অন্তর অন্তর
    ব্যবহার করা যায় ।
  • নিয়মিত গোবর ব্যবহার করলে স্থায়ী ঘোলাত্ব দূর হয় এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি দৈনিক ১৫০-২০০ গ্রাম হারে গোবর পানিতে গুলে সারা পুকুরে ঘোলাত্ব না কমা পর্যন্ত প্রয়োগ করা যেতে পারে ।
  • উদ্ভিদ প্ল্যাংকটনজনিত ঘোলাত্ব সৃষ্টি হলে পানি পরিবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে অথবা প্ল্যাংকটন ভোজী মাছের সংখ্যা বাড়িয়ে জৈবিক পদ্ধতিতে এ সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। পানি পরিবর্তন সম্ভব না হলে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ কমিয়ে দিতে হবে অথবা সপ্তাহে ১ দিন সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে,
  • পুকুর পাড়ের নিকটবর্তী কোণার দিকে পানিতে শতাংশ প্রতি ২/৩টি খড়ের চিকন আটি বেঁধে রেখে দিয়ে পলিঘটিত ঘোলাত্ব অনেকাংশে কমানো যায়। এছাড়াও কলার পাতা পুকুরের পানিতে পরিমাণমতো রাখলে পাতায় পলি জমে এবং খুব সাবধানে এ পাতা তুলে ফেললে পানির ঘোলাত্ব অনেকটা কমে যায়,
  • পুকুরের কোনায় একটি নির্দিষ্ট অংশে বানা দিয়ে কিছু কচুরিপানা অল্প কয়েক দিনের জন্য রেখে দিলে কচুরি পানার মূলে ঘোলাত্ব সৃষ্টিকারী পদার্থ জমে যায় এবং পুকুরের পানির ঘোলাত্ব কমে যায় ।
  • নতুন খননকৃত পুকুরের ক্ষেত্রে পাড়ের ঢালে দূর্বা ঘাস না থাকলেও এ ধরনের সমস্যা আসতে পারে। তাই পাড়ে দূর্বা ঘাস লাগিয়ে এ সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে ।
  • শতাংশ প্রতি ১ ফুট গভীরতার জন্য ১০০ গ্রাম হারে পটাশ অ্যালাম বা ফিটকিরি ব্যবহার করেও পানির ঘোলাত্ব কমানো যেতে পারে। তবে এটা যেহেতু পানির উৎপাদনশীলতা অনেকাংশে কমিয়ে দেয় তাই এর ব্যবহার না করাই উত্তম।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

পানির উপর সবুজ স্তর :

পুকুরে অতিরিক্ত প্ল্যাংকটন বিশেষ করে ফাইটোপ্ল্যাংকটন জন্মানোর জন্য পানির রং ঘন সবুজ হয় । এ অবস্থায় বেশি দিন থাকলে প্ল্যাংকটন মরে এবং পচে গিয়ে পানির উপর সবুজ স্তর তৈরি হয়। এক সময় এগুলো পচে দুর্গন্ধ বের হয় এবং পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। পানিতে শ্যাওলার এই আধিক্য কে ব্লুম (Bloom) বলে।

শ্যাওলা নিয়ন্ত্রণের উপায়

  • পুকুরে শতাংশ প্রতি ০.৫-১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে।
  • সম্ভব হলে পানি পরিবর্তন করতে হবে। মাছের খাদ্য প্রয়োগ কমিয়ে দিতে হবে।
  • উদ্ভিদ প্ল্যাংকটনভোজী মাছ, যেমন- সিলভার কার্প, সরপুঁটি ইত্যাদি অধিক সংখ্যক পুকুরে ছেড়ে পুকুরের সবুজ স্তর জৈবিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  • পুকুরে মাত্রাতিরিক্ত শ্যাওলার ঘনত্বে শতাংশ প্রতি ১০-১২ গ্রাম তুঁতে (কপার সালফেট) কয়েক ভাগ করে পানির উপরি স্তর থেকে ১০-১৫ সে.মি. নিচে কাপড়ের পোঁটলায় বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখতে হবে।
  • এতে পোঁটলার তুঁতে গলে পানিতে মিশে ২-৩ দিনের মধ্যে শ্যাওলা দূর হয়ে যাবে।

 

ঘোলাত্ব প্রতিকারের উপায়

 

পানির উপর লাল স্তর :

পানিতে ইউগ্লিনা জাতীয় এক ধরনের প্ল্যাংকটনের আধিক্য বেশি থাকলে অথবা পানিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকলে অথবা পুকুরে যদি অতিরিক্ত পচা কাদা থাকে তাহলে পানির উপর লাল সরের মত স্তর তৈরি হয়। এ ধরনের স্তর রোদের সময় লাল রং ধারণ করে। রোদ না থাকলে অথবা সকালের দিকে ধূসর বা সবুজাভ দেখায়। পুকুরে এ রকম লাল স্তর সৃষ্টি হলে পানিতে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না। ফলে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয় ও অক্সিজেন ঘাটতি দেখা দেয়। তাই পুকুরের পানিতে লাল স্তরের সৃষ্টি হলে তা তুলে ফেলতে হবে বা অন্য কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment