আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – রুপান্তরিত আবদ্ধ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ ।যা ” বাগদা চিংড়ির চাষ ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।
শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
শিক্ষাক্রম উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত পাঠ্যপুস্তকসমূহ পরিবর্তনশীল চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগী হওয়াসহ উচ্চশিক্ষার পথ সুগম হবে। ফলে রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী জাতিকে বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রশিক্ষিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে আমরা উজ্জীবিত।
রুপান্তরিত আবদ্ধ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ
সত্তর দশক থেকে শুরু করে নব্বই দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশের চিংড়ি চাষ পদ্ধতির একটি ক্রমবিকাশ পরিলক্ষিত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৯৪ সাল পরবর্তী সময়ে ভাইরাসজনিত রোগের কারণে চিংড়ি চাষ বিশেষভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং এতে চিংড়ি শিল্পে চরম ক্ষতি সাধিত হয়েছে। চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই ক্ষতির কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যথাযথ প্রযুক্তি উদ্ভাবন একান্ত প্রয়োজন।
রোগের সংক্রমণ প্রতিহত করার জন্য গতানুগতিক পদ্ধতির ন্যায় ঘেরের পানি পরিবর্তন না করে পানিকে মেরে আবদ্ধ রেখে উক্ত পানিতে চিংড়ি চাষের পদ্ধতিকে আবদ্ধ পদ্ধতিকে চিংড়ি চাষ নামে অজিহিত করা হয়। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কোনো কোনো দেশে আবদ্ধ পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষের প্রচলন রয়েছে।
এই পদ্ধতিতে গতানুগতিক আধানিবিড় চিংড়ি চাষ পদ্ধতির সাথে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ সংযোজন করে চাষ পদ্ধতির উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে।
ক) কোনো পানি পরিবর্তন না করা। প্রয়োজনে জলাধার হতে পরিশোষিত পানি ব্যবহার করা।
খ) পানির গভীরতা ১.০-১.২ মি রাখা।
গ) ঘেরে জমাকৃত জৈব পদার্থের বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রতিহত করার জন্য পর্যাপ্ত বাতাস সরবরাহ করা।
ঘ) ঘেরের পানির বাফার ক্ষমতা, পিএইচ ও অ্যালকালিনিটিসহ অন্যান্য ভৌত-রাসায়নিক সূচকসমূহ স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী চুন ও সার প্রয়োগ করা।
ঙ) পানিতে চাষকালীন সময়ে পর্যাপ্ত প্ল্যাংকটনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
চ) খাদ্য সীমিত আকারে প্রয়োগ করা, যাতে অতিরিক্ত জৈব পদার্থ না জমে।
রূপান্তরিত আবদ্ধ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের বৈশিষ্ট্য
আবদ্ধ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের আলোকে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চিংড়ি চাষের ওপর গবেষণা পরিচালনা করে এবং কিছু বৈশিষ্ট্য সংযোজনের মাধ্যমে পদ্ধতির উন্নয়ন সাধন করে। উন্নত পদ্ধতিকেই। রূপান্তরিত আবদ্ধ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। গবেষণায় প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য দিকসমূহ হলো:
ক) দেখা যায় চিংড়ি ছাড়াও অন্য অনেক প্রাণি ভাইয়োগর সম্ভাব্য বাহক হতে পারে। আবদ্ধ পদ্ধতিতে এসব প্রাণী নিখনের কোন ব্যবস্থা ছিল না। তাই রূপান্তরিত পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ এবং চিংড়ি মজুদের কমপক্ষে ১০ দিন পূর্বে উদ্ভিদ প্ল্যাংকটন ছাড়া সব প্রাণি ধধ্বংস করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
খ) আবদ্ধ পদ্ধতিতে যেরের পানিয় গভীরতা ১.০-১.২ মিটার রাখার কথা বলা হয়েছে। এতে বাইরের জোয়ারের পানি এবং পানির সাথে বাহক প্রার্থী ঘেরে ঢুকে যেতে পারে। তাই রুপান্তরিত পদ্ধতিতে পানির গভীরতা কমপক্ষে ১.৫-২.০ মিটার কিংবা যাতে বাইরের জোয়ারের পানি ঢুকতে না পারে, সেই উচ্চতার উপরে পানি রাখতে হবে।
গ) অতিরিক্ত জৈব পদার্থ ক্ষতিকর গ্যাস সৃষ্টি করে। এজন্য রূপান্তরিত পদ্ধতিতে কোনো জৈব সার ব্যবহার করা হয় না।
ঘ) চিংড়ি কোনো কারণে পীড়িত হলে স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে এবং পরবর্তীতে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই চিংড়িকে পীড়নমুক্ত রাখার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
রূপান্তরিত আবদ্ধ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের কারণ
ক) মজুদকৃত পোনা যদি ভাইরাস মুক্ত থাকে, তাহলে এই পদ্ধতিতে একটি নিশ্চিত উৎপাদন পাওয়ার আশা করা যায়।
খ) এই পদ্ধতিতে বাইরের পানিতে দ্রবীভূত বর্জ্য ও অণুজীবসহ অন্যান্য রোগের জীবাণুর আক্রমণ হতে ঘেরের চিংড়িকে রক্ষা করা যায়।
গ) ঘেরে নিজস্ব দূষণ ও রোগ জীবাণু বাইরে ছড়িয়ে পড়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। আবদ্ধ পদ্ধতিতে কৃত্রিম খাবার প্রয়োগের ফলে পানি দূষণের সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু রূপান্তরিত আবদ্ধ পদ্ধতিতে পানির গভীরতা বেশি থাকার ফলে দূষণের সম্ভাবনা কমে যায় এবং তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকে।
ঘ) চিংড়ির বসবাস উপযোগী স্থানের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
ঙ) সূর্যালাকে মাটিতে পৌঁছাতে পারে না বিধায় কোনো জলজ আগাছা জন্মাতে পারে না।
চ) পানির তাপমাত্রাসহ অন্যান্য ভৌত-রাসায়নিক সূচকসমূহ স্থিতিশীল থাকার ফলে চিংড়ি পীড়নমুক্ত থাকে।

রূপান্তরিত আবদ্ধ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ পদ্ধতি
ক. ঘের প্রস্তুতি
ক) সেরের পাড় নির্মাণ: ঘেরের পাড় শক্ত ও উঁচু হতে হবে যাতে ১.৫-২.০ মিটার উচ্চতায় পানি ধরে রাখা যায়। পাড়ে কাকড়া বা ইঁদুরের গর্ত থাকলে তা ভালভাবে বন্ধ করতে হবে।
খ) জলাধার নির্মাণ। মোট চাষ এলাকার ১৫-২০ শতাংশ এলাকায় একটি জলাধার নির্মাণ করতে হবে, যাকে প্রয়োজনে জলাধার হতে পরিশোধিত পানি সহজে চাষের ঘেরে সরবরাহ করা যায়।
গ) ঘের শুকানো: সমস্ত জলজ আগাস্থ্য পরিষ্কার করে ঘের এমনভাবে শুকাতে হবে, যাতে ঘেরের মাটি ফেটে না যায় এবং যে কেউ ঘেরের উপর দিয়ে হাঁটলে পায়ের হালকা ছাপ মাটিতে পড়ে।
ঘ) তলায় মাটি সরানো। মাটির উপরে জমাকৃত ৬-৮ ইঞ্চির অতিরিক্ত তলানি সরিয়ে ফেলতে হবে।
ঙ) চুন প্রয়োগ: শতকে ১ কেজি হারে পাদুরে চুন খুব সকালে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরের তলা হতে পাড়ের উপরিভাগ পর্যনত ছিটাতে হবে।
চ) মাটি চাষ। ঘেরের উপরের ৬-৮ ইঞ্চি মাটি চাষ করে চুন ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
ছ) খাবার ট্রে স্ট্যান্ড স্থাপন: খাবার ট্রে ঝুলানো এবং চিংড়ি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সুবিধার্থে এক একরের। একটি ঘেরের চার পাশের পাড়ে চারটি ট্রে স্ট্যান্ড স্থাপন করতে হবে।
জ) পানি সরবরাহ। পার্শ্ববর্তী নদী বা খাল থেকে প্রয়োজনীয় লবণাক্ত পানি (১.৫-২.০ মিটার) ঘেরে প্রবেশ করাতে হবে।
ঝ) প্রাণীকূল নিধন: প্রতি ২০ ঘন মিটার পানিতে ১টি ফসটক্সিন ট্যাবলেট ব্যবহার করে পুকুর হতে সমুদয় প্রাণীকূল। নিধন করা যেতে পারে। নিধনকৃত সব প্রাণী যথাশীঘ্র পানি হতে তুলে ফেলতে হবে। ক) সার প্রয়োগ প্রাণীকূল নিধনের ৪-৫ দিন পর পানির স্বচ্ছতা যদি ৩০-৩৫ সেমি-এর বেশি হয় তাহলে ইউরিয়া ২.০-৩.০ পিপিএম, টিএসপি ৩.০-৩.৫ পিপিএম এবং পটাশ ০.৬৮-০.৮ পিপিএম হারে প্রয়োগ করা যেতে পারে। ইউরিয়া ও পটাশ ছিটিয়ে এবং টিএসপি অবশ্যই পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করাতে হবে।
ট) পেডেল তুইল স্থাপন। ঘেরের চারপার্শ্বে পাড় হতে ২.৫-৩.০ মিটার দূরত্বে একটি করে পেডেল হইল স্থাপন করতে হবে।
খ. পোনা মজুদ
ক) প্রতি শতকে ২৪০-২৯০ টি সুস্থ-সবল পোনা মজুদ করা অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বেশি লাভজনক এবং পরিবেশ টেকসই।
খ) এই ঘনত্বে চিংড়ি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ১২০ দিনে বাজারজাত উপযোগী হয়।
গ) পোনা মজুদের পূর্বে পোনার সুস্থতা ও সবলতা পরীক্ষা এবং ঘেরের পানিতে গানোকে খাপ খাইয়ে নেয়া বিশেষ প্রয়োজন।
গ. খাবার সরবরাহ
পোনা মজুদের দিন হতে আনুমানিক দৈনিক চার বার খাবার সরবরাহ করতে হবে। পিএল ২০-৩৬ এর ক্ষেত্রে ৫০০ গ্রাম/লক্ষ পোনা/দিন এবং পিএল ৩৯-৪২ এর ক্ষেত্রে ৮০০ গ্রাম/লক্ষ পোনা/দিন খাবার দিতে হবে। চিংড়ির ওজন অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহের পরিমাণ নিচের সারণিতে উল্লেখ করা হলো।
সারণিঃ চিংড়ির ওজন অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহের পরিমাণ
চিংড়ির ওজন (গ্রাম) | খাবারের পরিমাণ (চিংড়ির মোট ওজনের শতকরা হার) | মোট খাবার (কেজি/লক্ষ পোনা/দিন) |
২ | ৬-৬.৫ | ১২-১৩ |
৫ | ৫.৫ | ১৭.৫ |
১০ | ৪.৫ | ৪৫ |
১৫ | ৩.৮ | ৫৭ |
২০ | ৩.৫ | ৭০ |
২৫ | ৩.২ | ৮০ |
৩০ | ২.৮ | ৮৪ |
৩৫ | ২.৫ | ৮৭ |
এছাড়াও খাবার ট্রেতে চিংড়ির খাদ্য গ্রহণের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে খাবার সরবরাহের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
সতর্কতা
> খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনভাবেই ঘেরে অতিরিক্ত জৈব পদার্থ না জমে।
> পরিমিত খাবার ঘেরে সরবরাহ করতে হবে, যাতে কোন খাবার অবশিষ্ট না থাকে। এতে চাষের ব্যয়ও কমে যাবে এবং ঘেরের পানি দূষণেরও সম্ভাবনা থাকবে না।
> খাদ্য প্রয়োগের পর থেকে আনুমানিক এক ঘন্টা প্যাডেল হুইল চালানো যাবে না।
> বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে ১-২ ঘন্টা প্যাডেল তুইল চালানোর পর খাবার সরবরাহ করতে হবে।
ঘ. বাতাস/অক্সিজেন সরবরাহ
ক) ঘেরে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ৩ পিপিএম এ নেমে এলে প্যাডেল তুইল চালিয়ে বাতাস সরবরাহ করতে হবে।
খ) জমাকৃত জৈব পদার্থসমূহ যাতে না পচে তাড়াতাড়ি প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনে সহায়তা করতে পারে, সেজন্য অতত দিনে একবার কয়েক ঘণ্টা পেডেল তুইল চালাতে হবে।
গ) পানিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের ফলে অ্যামোনিয়াসহ অন্যান্য উদ্বায়ী গ্যাসসমূহ দূরীভূত হবে।
ঙ. পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন
ক) পানি সরবরাহের প্রয়োজন হলে জলাধারের পানি ফসটক্সিন দিয়ে ট্রিটমেন্ট করে ৩-৪ দিন পর ঘেরে সরবরাহ করতে হবে।
খ) ঘেরের পানি পরিবর্তন করা যাবে না।
গ) আবদ্ধ পদ্ধতিতে প্রবল বৃষ্টিপাতের সময় ঘেরের পানি উপচিয়ে বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে এবং ঘেরের লবণাক্ততাও হ্রাস পেতে পারে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চতার কয়েক ইঞ্চি উপরে পাড়ের মাঝে আড়াআড়িভাবে কয়েকটি পিভিসি পাইপ বসিয়ে রাখতে হবে, যাতে বৃষ্টির কম লবণাক্ত পানি সহজেই পাইপের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে।
চ. চুন ও সার প্রয়োগ
ক) আবদ্ধ পদ্ধতিতে পানির পিএইচ এবং অ্যালকালিনিটি স্থিতিশীল রাখা অত্যন্ত জরুরি।
খ) পিএইচ ৭.৫ এর নিচে নেমে গেলে কিংবা সকাল ও বিকালের পিএইচ-এর পার্থক্য ০.৫ এর বেশি হলে অবশ্যই চুন প্রয়োগ করতে হবে। এ পর্যায়ে ১ কেজি/শতক হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে।
গ) পানির স্বচ্ছতা ৩৫ সেমি এর বেশি হলে ১০০ গ্রাম/শতক ইউরিয়া, ৫০ গ্রাম/শতক টিএসপি এবংণ ২৫ গ্রাম/শতক পটাশ প্রয়োগ করা যেতে পারে।
ছ. চিংড়ির বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা
ক) চাষকালীন সময়ে সপ্তাহে একবার চিংড়ির বৃদ্ধি পরীক্ষা এবং দৈনিক অন্তত একবার চিংড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন।
খ) খাবার প্রয়োগের এক ঘন্টার পর চেক ট্রে চিংড়ির ওজন স্বাভাবিক আছে কিনা এবং চিংড়ির খাদ্যনালিতে পর্যাপ্ত খাদ্য আছে কিনা তা পরীক্ষা করা যেতে পারে।
গ) এ সময়ে চিংড়ির গায়ে কোনো রোগের চিহ্ন আছে কিনা তাও পরীক্ষা করা যেতে পারে।
ঘ) কোনো চিংড়ি পাড়ের কাছাকাছি স্থিরভাবে বসে থাকলে বুঝতে হবে ঘেরে কোন অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায়, অবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য তড়িৎ পদক্ষেপ নিতে হবে এবং পাড়ে বসে থাকা চিংড়িটি ধরে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
ড) রোগ প্রতিরোধের স্বার্থে পরিশোধন ব্যতীত কোনোক্রমেই এক ঘেরে ব্যবহৃত কোনো জিনিষপত্র অন্য ঘেরে ব্যবহার করা উচিত হবে না।
জ. চিংড়ি আহরণ
ক) এই পদ্ধতির চাষকে পরিবেশ সহনীয় ও টেকসই পর্যায়ে রাখার নিমিত্ত চিংড়ি আহরণের জন্য ঘেরের পানি কোনোভাবেই বাইরে ছাড়া উচিত হবে না। যথাসম্ভব বেড জাল ও ঝাঁকি জাল দিয়ে ঘেরের চিংড়ি আহরণ করতে হবে।
খ) এই পদ্ধতিতে ১২০ দিন লালন করার পর প্রতিটি চিংড়ির গড় ওজন ৩০ গ্রাম এবং বাঁচার হার ৭৫%। হিসেবে প্রতি একরে মোট প্রায় ১৬০০ কেজি চিংড়ির উৎপাদন পাওয়া যাবে। শতকরা ২০ ভাগ জলাধারের আয়তন বিবেচনা করলে একর প্রতি উৎপাদন দাঁড়াবে প্রায় ১৫০ কেজি।
ঝ. আয় ও ব্যয়
ক) প্রতি কেজি (প্রতিটি ৩০ গ্রাম) চিংড়ির বাজার মূল্য ৩৭৫-৪০০ টাকা হিসেবে উৎপাদিত চিংড়ির মোট মূল্য হবে প্রায় ৫.১০ লক্ষ টাকা।
খ) প্রতি একরে সম্ভাব্য মোট উৎপাদন খরচ ২.১০ লক্ষ টাকা বাদ দিলে নিট মুনাফা হবে প্রায় ৩.০০ লক্ষ টাকা।
রূপান্তরিত আবদ্ধ পদ্ধতির সুবিধা
ক) চাষের সময় চিংড়িতে ভাইরাস আক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকে। মজুদকৃত পোনার শরীরে ভাইরাসের অনুপস্থিতি নিশ্চিত হতে পারলে এই পদ্ধতিতে ভাইরাসমুক্ত চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব।
খ) পানির গভীরতা বেশি থাকার ফলে তাপমাত্রা স্থিতিশীল থাকে, দ্রবীভূত অক্সিজেন বেশি থাকে, পানি দূষণ কম হয় ও চিংড়ির বসবাসের উপযোগী স্থানের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
গ) কোনো কারণে চিংড়ি রোগাক্রান্ত হলে তা বাইরে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ থাকে না।
ঘ) কোনো পানি পরিবর্তন না করার ফলে চিংড়ি তুলনামূলকভাবে কম পীড়নমুক্ত থাকে।
রূপান্তরিত আবদ্ধ পদ্ধতির অসুবিধা
ক) অধিক অম্লযুক্ত মাটিতে এই পদ্ধতিতে চাষ করা যুক্তিযুক্ত হবে না।
খ) দীর্ঘ সময় প্যাডেল তুইল ব্যবহারের ফলে খরচ কিছুটা বেশি হয়।
গ) চুন ও রাসায়নিক সার তুলনামূলকভাবে বেশি লাগে।
ঘ) চিংড়ির পোনার সাথে ভাইরাস থাকলে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না।
পরামর্শ
- চিংড়ি আহরণের পর ঘেরের জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ পানি ও তলায় পুঞ্জিভূত জৈব পদার্থ বাইরে বের না করে পুকুরেই রিসাইকিং করার জন্য ফসলচক্রভিত্তিক চাষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এজন্য দ্বিতীয় ফসলে আবর্জনা ও উদ্ভিদভাজেী মাছ চাষ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
- অর্থনৈতিক দৃষ্টকোণ থেকে ফসলচক্রভিত্তিক চাষ ততটা লাভজনক না হলেও পরিবেশ সহনীয় ও টেকসই প্রযুক্তি হিসেবে রূপান্তরিত আবদ্ধ পদ্ধতির চাষে ফসলচক্রের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও দেখুনঃ