আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – গলদা চিংড়ি শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য । যা ” গলদা চিংড়ির জীববিদ্যা ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।
শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
গলদা চিংড়ি শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য
গলদা-চিংড়ির পরিচয়ে কঠিন খোলার আবরণে ঢাকা প্রাণী হিসেবে অনেক ধরনের চিংড়ি রয়েছে। তন্মধ্যে – স্পাইন লবস্টার, স্লিপার লবস্টার, স্কোয়াট লবস্টার, রীফ লবস্টার অন্যতম।
- চলনপদের কারপাস মেরাসের চেয়ে যথেষ্ট লম্বা ।
- পুরুষ গলদা চিংড়ির দ্বিতীয় জোড়া চলনপদ অন্য প্রজাতির চিংড়ির চেয়ে মোটা ।
- চঞ্চু সংকেত = ১১১৪/৮-১০ ।
- টেলসনের শেষ প্রাপ্ত ইউরোপাড়ে পর্যন্ত বিস্তৃত।
- রোস্ট্রাম ইংরেজি “ঝ” অক্ষরের ন্যায় বাঁকানো, সরু, ঋজু এবং অগ্রভাগ উপরদিকে সামান্য বাঁকানো
- উপরাঞ্চলে ভীর্যক নীলাভ বর্ণের ডোরা বা দাগ দেখা যায়।
- জুভেনাইল পর্যায়ে ক্যারাগেসের উপরে কালচে নীলাভ বর্ণের লম্বালনি ডোরা বা দাগ দেখা যায় ।
গলদা চিংড়ির আবাসন:
গলদা চিংড়ি সাধারণত স্বাদুপানির পুকুর, নদী, হ্রদ, ডোবা, নালা, খাল, বিল ও হাওরে এবং নদী মোহনায় পাওয়া যায়। বেশির ভাগ প্রজাতিই সমুদ্রের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংযুক্ত আধা লবণাক্ত পানিতে তাদের প্রাথমিক জীবন অতিবাহিত করে।
চাঁদপুরের ডাকাতিয়া ও মেঘনার জুন থেকে আগস্ট মাসে কিশোর গলদা চিংড়ির গড় আকৃতি ৪০ মিমি) এবং অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বেশ বড় আকারের চিংড়ি (৮০-৩৩০ মি.মি.) জাগ বা কাঠার মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে ধরা হয়।
নোয়াখালীর ডাকাতিয়া ও মেঘনায়, ময়মনসিংহের পুরাতন ব্রহ্মপুত্রে, বাগেরহাটের পশুর, ভৈরব ও খরতানা, দাউদকান্দির গোমতি, কাঠালিয়া ও মেঘনায় বড় আকৃতিয় গলদা (১০৫-৩৩০ মি মি) প্রচুর পরিমাণে ধরা হয়।
ফেনীর মুহুরী ও ফেনী নদীতে, চট্টগ্রামের হালদা ও কর্ণফুলীতে, খুলনার সুন্দরবন মোহনায়, নরসিংদী ও ভৈরব বাজারের মেঘনায় এবং বরিশালের কীর্তনখোলায় গলদা চিংড়ি পাওয়া যায়। নদীর মোহনা হতে গলদা চিংড়ি ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উজানে হ্রস, নদী, সেচখাল এমনকি ধানক্ষেতেও পমনাগমন করে ।

খাদ্যাভ্যাস:
গলদা চিংড়ি পানির তলদেশে বিচরণ করে এবং সেখানকার জীবিত ও মৃত বিভিন্ন প্রাণিজ ও উদ্ভিদ বা ভক্ষণ করে । এ কারণে খাদ্য স্বভাবে এরা সর্বভুক। প্রাকৃতিক পরিবেশে পাওয়া যায় এমন ছোট ছোট অমেরুদণ্ডী প্রাণী, কুঁচো চিংড়ি, ছোট শামুক, পোকা-মাকড় ও লার্ভা, কৃষি, শেওলা, উদ্ভিদের টুকরা এদের প্রিয় খাদ্য। এরা খাদ্য সংগ্রহ করে বড় পারের চিমটার সাহায্যে এবং খাদ্যের উপস্থিতি অনুভব করে এন্টেনার সাহায্যে ।
পানিতে স্বাভাবিক খাদ্যের অভাব থাকলে সবল চিংড়ি দুর্বল চিংড়িকে খেয়ে ফেলতে পারে। বিশেষ করে খোলস বদলের সময় স্বজাতিভোজিতা বেশি দেখা যায়।
প্রাকৃতিক খাদ্য ছাড়াও এরা কুঁড়া, ভূষি, দাनাদার শস্য, খৈল, ফলের টুকরা, মাছের গুঁড়া, গবাদি পশুর রক্ত, শামুক-ঝিনুকের মাংস ইত্যাদি খেতে পছন্দ করে । প্রাকৃতিক পরিবেশে চিংড়ি নানাবিধ জলজ প্রাণী যেমন কাঁকড়ার বাচ্চা, চিংড়ির পোনা, ঝিনুক ও শামুকের বাচ্চা শেওলা ও জলজ উদ্ভিদ খেয়ে থাকে।
প্রজনন ক্ষেত্র:
নদী অথবা মোহনার অপেক্ষাকৃত কম লোনা পানিতে স্ত্রী ও পুরুষ চিংড়ির মিলন, টিম নিষিক্তকরণ এবং ডিমের প্রাথমিক বৃদ্ধি ঘটে। নদীর মোহনাঞ্চলের যেখানে পানির লবণাক্ততা ৫-২০ সিপিটি এবং তাপমাত্রা ২৯-৩৩° সেন্টিগ্রেড সে সব এলাকায় গলদা চিংড়ির পরিপক্ক নিষিক্ত ডিম ফুটে লার্ভা বের হয় । বাংলাদেশে গলদা চিংড়ির তিনটি সম্ভাব্য প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হলো:
(ক) মেঘনা নদীর ঈষৎ লবণাক্ততা সমৃদ্ধ অঞ্চল,
(খ) সুন্দরবন মোহনার বলেশ্বর নদী এবং
(গ) কর্ণফুলী নদীর মোহনা।
প্রজনন সময়কাল
গলদা চিংড়ি প্রায় সারা বছর প্রজননে সক্ষম। তবে মার্চ থেকে জুলাই মাসই এদের প্রধান প্রজননকাল। মে-জুন মাসে উপকূলীর নদীগুলোতে গলদা চিংড়ির পোনা বেশি পাওয়া যায় ।
এ পরিণত গদা চিংড়ি ৫-৬ মাসের মধ্যেই প্রজননে সক্ষম হয়। তবে অনুকূল পরিবেশ ও খাদ্যের ওপর এদের প্রজনন পরিপক্বতা নির্ভর করে। উপযুক্ত পরিবেশে গলদা চিংড়ি বছরে ৩-৪ বার প্রজনন করতে পারে।
মিলন ও ডিম পাড়া: গলদা চিংড়ি ৫-৬ মাসের মধ্যেই পরিপক্ক হয়। অনুকূল পরিবেশ ও খাদ্যের ওপর পরিপক্বতা নির্ভরশীল । স্ত্রী চিংড়ির জননতনত্র ক্যারাপেসের তলায় থাকে ও ডিম পাড়ার ২-৩ দিন আগে দেখতে কমলা রঙের মতো হয় । চিংড়ি নিশাচর প্রাণী।
অধিকাংশ মূল কর্মকা- রাতে ঘটে, যেমন খাদ্য গ্রহণ, খোলস পাল্টানো, সঙ্গম ও ডিম পাড়া। একটি পুরুষ চিংড়ি ৩-৪ টি স্ত্রী চিংড়ির সাথে সঙ্গমে সক্ষম। লার্ভার জন্যে আধা-লবণাক্ত পানি প্রয়োজন । তাই প্রজননকালে এরা উপকূলে চলে আসে। মিঠা পানিতে প্রজনন এবং ডিম ফুটালেও লার্ভা ৪-৫ দিনের বেশি বাঁচে না। মিলনের আগে পরিপক্ক স্ত্রী খোলস ছাড়ে। খোলস ছাড়তে সময় লাগে প্রায় ১০-১৫ মিনিট।
নতুন খোলস শক্ত হতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা। স্ত্রী-পুরুষ সঙ্গম করে খোলস ছাড়ার ৩-৬ ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ নরম খোলস বিশিষ্ট স্ত্রীর সাথে শক্ত খোলস বিশিষ্ট পুরুষের মিলন ঘটে থাকে । মিলন হয় বুকে বুকে। মিলনকালে পুরুষ চিংড়ি তার সাদা আঠালো শুক্রাধারটি (পঞ্চম ভ্রমণপদের মাঝে) স্ত্রী চিংড়ির তৃতীয় ভ্রমণপদের গোড়ায় জননছিদ্রের কাছে আটকিয়ে দেয়। এ কাজটি শেষ হতে সময় লাগে ১৫-২০ মিনিট ।
মিলনের ১০-১২ ঘণ্টার মধ্যে স্ত্রী চিংড়ি ডিম ছাড়ে। ডিমগুলো বের হওয়ার পথে শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয় । নিষিক্ত ডিমগুলো পেটের তলায় সন্তরণ পদের মধ্যে অবস্থান নেয় এবং এক প্রকার আঠালো রসের সাথে আটকে থাকে। এ অবস্থায় এরা সন্তরণ পা নেড়ে ডিমে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করে। ডিমগুলো এখানে সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। ৫০-১০০ গ্রাম ওজনের একটি প্রাপ্ত বয়স্ক চিংড়ি ৫০,০০০-১,০০,০০০ ডিম পাড়তে পারে। তবে পরিপক্বতার প্রাথমিক স্তরে এ সংখ্যা ৫,০০০-২০,০০০টি।
আরও দেখুনঃ