আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় খাদ্যের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ
খাদ্যের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ
খাদ্যের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ
খাদ্য
প্রাচীনকালে মনে করা হতো তৃণ জাতীয় উদ্ভিদের বীজ, বৃক্ষরাজির ফল এবং আকাশ ও ভূভাগের যেসব পশুপাখির ওপর মানুষের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, সেগুলোই খাদ্য। এ বিবেচনায় খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষ বিষক্রিয়া ও অনুরূপ নানাপ্রকার অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে। এভাবে প্রায় একশ বছর ধরে চলার পর মানুষ জানতে পারে যে, কোন জিনিসটি খাওয়ার উপযোগী এবং কোনটি তার জন্য উপকারী।
এভাবে চলতে চলতে ঊনবিংশ শতাব্দীতে মানুষ খাদ্য দ্রব্যের পুষ্টিমান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। এর পূর্বে সহজাত বুদ্ধি, প্রচলিত বিশ্বাস ও বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে কোন দ্রব্যের খাদ্যমান সম্পর্কে ধারণা করা হতো। সে সময়ে মানুষের মনে বদ্ধম ল সংস্কার প্রচলিত ছিল যে, প্রকৃতি হতে যা পাওয়া যায় তাই সর্বোৎকৃষ্ট।
যেসব দ্রব্য গ্রহণের ফলে জীবদেহের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি সাধন হয় এবং জীব বংশবৃদ্ধি করার উপযোগী। হয়, সেগুলোকেই খাদ্য বলা হয়। খাদ্যদ্রব্য বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক (natural) ও সংশ্লেষী (synthetic) রাসায়নিক উপকরণের সমন্বয়ে গঠিত। জীবনধারণের জন্য অক্সিজেন ও পানির ন্যায় খাদ্যও অতি প্রয়োজনীয়। অক্সিজেন ও পানি খাদ্যের অন্যতম উপকরণ।
মাছের খাদ্য
যেসব দ্রব্য গ্রহণের ফলে মাছের দেহের বৃদ্ধিসাধন, ক্ষয়প রণ, তাপ ও শক্তি উৎপাদন হয় এবং বংশবৃদ্ধি ঘটে সেগুলোকে মাছের খাদ্য বলা হয়। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য খাদ্য একটি অপরিহার্য উপাদান। পরিমিত পরিমাণে খাদ্যের যোগান দিয়ে মাছের অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করা যায়। মাছের বংশ বৃদ্ধিতে খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুষম খাদ্য গ্রহণে মাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং মাছ যথাসময়ে যৌন পরিপক্কতা লাভ করে।
এতে মাছের জনন গ্রন্থি (gonad) পরিপ র্ণভাবে বিকশিত হয় এবং ডিম্বাণু ও শুক্রাণু উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মাছের জীবন যাত্রার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি, যথা- রক্ত সংবহন, শ্বাসকার্য পরিচালনা, অভিস্রবনীয় চাপ নিয়ন্ত্রণ, প্রলম্বন ( suspension) ও পানির ভিতরে স্থিতাবস্থায় অবস্থানের জন্য প্রচুর পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন হয়। মাছ গৃহীত খাদ্য থেকে এ শক্তি পায়। এ কারণে শৈশবাবস্থা থেকেই মাছকে নিয়মিত ও সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।
খামারের মাছের ক্ষেত্রে খাদ্য সরবরাহ হঠাৎ ব্যাহত হলে এবং দীর্ঘ সময় খাদ্য প্রদান বন্ধ থাকলে মাছ বন্ধ্যাত্বের শিকার হতে পারে। সুস্থ সবল পোনা উৎপাদনের জন্য পরিপক্ক মাছকে পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান করা দরকার।
খাদ্যের প্রকারভেদ
প্রকৃতিতে মাছের বহু ধরনের খাদ্য বিদ্যমান। এর মধ্যে যেমন রয়েছে জলজ ক্ষুদে উদ্ভিদ ও প্রাণী, তেমনি রয়েছে দ্রবীভূত (solution) পুষ্টি উপাদানসহ অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণীর পোষক। স্থল ভাগেও অসংখ্য উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ দ্রব্য রয়েছে, যেগুলো মাছের সুষম খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিছু সংখ্যক মাছ প্রধানত উদ্ভিজ্জ খাদ্য গ্রহণ করে থাকে।
আবার কিছু সংখ্যক মাছ শুধুমাত্র প্রাণিজ খাদ্য গ্রহণ করে। কিন্তু অধিকাংশ মাছ দেহের ক্ষয়প রণ ও বৃদ্ধি সাধনের জন্য প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ উভয় ধরনের খাদ্যই গ্রহণ করে থাকে। মাছের এসব খাদ্য আসে মূলত দুটি পরিবেশ বা উৎস থেকে। যথা-
- মাছ যে পরিবেশে বা মাধ্যমে বাস করে, অর্থাৎ জলজ পরিবেশ থেকে এবং
- জলজ পরিবেশের বাইরে অর্থাৎ পৃথিবীর স্থলভাগ থেকে।
খাদ্যদ্রব্যের উৎসের এ ভিন্নতা অনুসারে মাছের খাদ্যকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
- প্রাকৃতিক খাদ্য (natural food) এবং
- সম্পূরক খাদ্য (supplemental food)
প্রাকৃতিক খাদ্য
মাছের জীবনধারণের মাধ্যম পানি। কোন জলাশয়ের পানিতে স্বাভাবিকভাবে যে সব খাদ্যদ্রব্য উৎপন্ন হয়, সেগুলোকে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য বলা হয়। প্ল্যাঙ্কটন, জলজ কীটপতঙ্গ ও উদ্ভিদ, পুকুরের তলদেশের পচা জৈব পদার্থ, ইত্যাদি মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য ।

সম্পূরক খাদ্য
অধিক উৎপাদনের জন্য প্রাকৃতিক খাদ্য যোগানের পাশাপাশি পুকুরের বাইরে থেকে মাছকে কিছু খাদ্য দেওয়া হয়। বাইরে থেকে দেওয়া এসব খাদ্যদ্রব্যকে সম্পূরক খাদ্য বলা হয়। চাউলের কুঁড়া, গমের ভূষি, সরিষার খৈল, ইত্যাদি মাছের সম্পরক খাদ্য ।
উপরিউক্ত ভাগ ছাড়া মাছের ধান্যকে সাধারণভাবে নিম্নোক্ত কয়টি ভাগেও ভাগ করা যায়। যথা-
- উদ্ভিজ্জ খাদ্য (Plant feed )
- প্রাণিজ খাদ্য (Animal feed)
- মিশ্র খাদ্য (Mixed feed) এবং
- তৈরি খাদ্য (Formulated feed)।
উদ্ভিজ্জ খাদ্য
উদ্ভিদ বা উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে যেসব খাদ্য পাওয়া যায় তাদেরকে উদ্ভিজ্জ খাদ্য বলা হয়। যথা- ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন, ক্ষুদে পানা, সবুজ ঘাস, নরম জলজ উদ্ভিদ, চালের কুঁড়া, সরিষার খৈল, গমের ভূষি ইত্যাদি।
প্রাণিজ খাদ্য
প্রাণী বা প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত খাদ্যকে প্রাণিজ খাদ্য বলা হয়। যথা- জুওপ্ল্যাঙ্কটন, ক্ষুদে জলজ কীটপতঙ্গ, গবাদি পশুর রক্ত, রেশমকীট, ফিশ মিল ইত্যাদি।
অনুশীলন ( Activity) : আপনার এলাকায় মাছের যে সকল উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ খাদা পাওয়া যায় তাদের নাম লিখুন।
মিশ্র খাদ্য
উদ্ভিদ ও প্রাণী বা উভয় উৎসের খাদ্য দ্রব্য একত্রে মিশিয়ে যে খাদ্য তৈরি হয় তাকে মিশ্র খাদ্য বলা হয়। যথা- চালের কুঁড়া, গবাদি পশুর রক্ত, পুকুরের তলদেশের পচা জৈব পদার্থ ইত্যাদি।
তৈরি খাদ্য
বিভিন্ন খাদ্য উপাদান একত্রে মিশিয়ে যে সুষম খাদ্য তৈরি করা হয় তাকেই তৈরি খাদ্য বলা হয়। দানাদার, বড়ি বা পিলেট আকারে তৈরি খাদ্য উৎপাদন করা হয়। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের তৈরি খাদ্য পাওয়া যায়। এগুলো বিভিন্ন বাণিজ্যিক নামে পরিচিত। যথা- স্টার্টার, গ্রোয়ার, ফিনিশার ইত্যাদি।
আরও দেখুন :