আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- পোনার চাহিদা
পোনার চাহিদা
জনসংখ্যা বাড়ছে ফলে মাছের চাহিদাও বাড়ছে কিন্তু চাহিদার তুলনায় মাছের উৎপাদন বাড়ছে না। ফলে বাজার মূল্য বেশি হওয়ার মাছ চাষ একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। লাভজনক বা পরিকল্পনা
মাফিক মাছ চাষের ক্ষেত্রে আংশিক আহরণ ও পূনঃমজুদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সারা বছরের এই পোনার চাহিদার তুলনায় প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগৃহীত পোনার পরিমাণ খুবই কম । অনুমান করা হয় যে, বর্তমানে উৎপাদিত রেণু থেকে বছরে প্রায় ৮০০-৯০০ কোটি ৮-১০ সেন্টিমিটার আকারে পোনা উৎপাদিত হচ্ছে যদি মৎস্য চাষে সম্ভাবনাময় সকল জলাশয়ে পোনা মজুদ করতে হলে প্রায় ১৭০০-১৮০০ কোটি আঙ্গুলে পোনা (৮-১২ সেন্টিমিটার আকারের) প্রতি বছর উৎপাদন করা প্রয়োজন ।
মৎস্য অধিদপ্তরের (২০১৬) পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, রেণু থেকে আঙ্গুলে পোনা (৫-১০ সে. মি. আকারের) বাঁচার হার হলো প্রায় ১০% এবং এটা হওয়ার কারণ হলো যথোপযুক্ত নার্সারি ব্যবস্থাপনা এবং গুণগত মানসম্পন্ন ব্রুড মাছের অভাব। মাছের বয়স, আকার, পরিপক্বতা, ব্রুডমাছের উৎস এবং বংশগত । বর্তমানে অধিকাংশ হ্যাচারিতে নিম্ন মানের পোনা উৎপাদিত হচ্ছে যা মাছ চাষের ক্ষেত্রে বিষয়টি হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে । নিম্নে জলাশয় অনুযায়ী পোনার চাহিদা দেওয়া হলো:
পুকুর দীঘিতে মৎস্য চাষ ও মুক্ত জলাশয়ে পোনা মজুদ কার্যক্রম সম্প্রসারিত হওয়ায় দেশে রুই জাতীয় মাছের পোনার চাহিদা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশের সকল পুকুর দীঘির শতকরা ৬০-৮০ ভাগ বর্তমানে মৎস্য চাষের আওতায় আছে। প্রায় অধিকাংশই বাঁওড়েই মৎস্য চাষ করা হচ্ছে। শতকরা ২০-৩০ ভাগ বিলে ইতিমধ্যে মাছ ছাড়া হয়েছে। কিছু পরিমাণ প্লাবন ভূমিতে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বা সমাজভিত্তিক অংশগ্রহণের মাধ্যেমে পোনা মজুদ করা হচ্ছে । ব্যবস্থাপনার উপর ভিত্তি করে মাছ চাষ তিন প্রকার :
১। সম্প্রসারিত চাষ ।
২। আধা নিবিড় চাষ ।
৩ । নিবিড় চাষ ।
(১) সম্প্রসারিত চাষ : অল্প ব্যবস্থাপনার মাধ্যেমে মাছের চাষাবাদকে সম্প্রসারিত চাষ বলে। এই পদ্ধতিতে মজুদ ঘনত্ব কম হয় এবং সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাদ্যের উপর নির্ভরশীল অর্থাৎ কোনো প্রকার সম্পূরক খাদ্যে প্রয়োগ হয় না ।
২) আধা নিবিড় চাষ : কোনো নিয়ন্ত্রণাধীন জলাশয়ে ধারাবাহিক কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে মাছের চাষাবাদকে আধা নিবিড় চাষ বলে। এখানে মজুদ ঘনত্ব একটু বেশি হয় এবং প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি কিছু কিছু সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হয়।
(৩) নিবিড় চাষ : কোনো আবদ্ধ জলাশয়ে সব ধরনের উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাছের চাষাবাদকে নিবিড় চাষ বলে। এক্ষেত্রে মজুদ ঘনত্ব বেশি হয় এবং প্রাকৃতিক খাদ্যের উপর নির্ভরশীল করে না। সম্পূর্ণ সুষম খাদ্যের উপর মাছের বৃদ্ধি নির্ভর করে ।
সম্প্রসারিত
পূর্ববর্তী ছকে পোনার যে সম্ভাব্য চাহিদা দেখানো হয়েছে তা সম্প্রসারিত বা আধা নিবিড় চাষ পদ্ধতির জন্য বাণিজ্যিক ভিত্তিক আজকাল যারা মৎস্য চাষে এগিয়ে আসছে, তাদের জন্য নিবিড় চাষ পদ্ধতি অধিক লাভজনক । নিবিড় চাষ পদ্ধতির জন্য পোনা মজুদের হার সম্প্রসারিত পদ্ধতি বা আধা নিবিড় চাষ পদ্ধতির চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।
নিবিড় পদ্ধতির চাষ ব্যবস্থায় আংশিক ও পুনঃমজুদের জন্য মজুদ মৌসুম ছাড়াও বছরের অন্যান্য সময়ে অতিরিক্ত পোনা প্রয়োজন এজন্য আধুনিক মৎস্য পোনা ব্যাংক স্থাপন করা হয়। পোনা ব্যাংক হলো এমন একটি স্থান বা জলাশয় যেখানে বেশি ঘনত্বে পোনা মজুদ করে রাখা হয় এবং সেখান থেকে সারা বছর পোনা মাছ আহরণ ও বিক্রি করা হয়।

পোনার ব্যাংক হিসেবে পুকুরে সারা বছর পোনা চাষ এবং বিক্রি করে অধিক লাভ করা যায়। পোনা ব্যাংকে মজুদ করা পোনা শীতের পর পর পুকুরে মজুদ করতে পারলে গরমের শুরুতে মাছের বৃদ্ধি শুরু হয় এবং গরম কাল বেশি পাওয়াতে মাছের উৎপাদন খুব ভালো হয় । পোনা ব্যাংক প্রধানত যশোর, নোয়াখালী, বগুড়া প্রভৃতি জেলায় দেখা যায় ।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, প্রাকৃতিক মৎস্য আহরণের পরিমাণ হ্রাস ও অন্যান্য কাজ তুলনামূলকভাবে কম লাভজনক হওয়ার অনেক চাষি এখন মৎস্য চাষে পুঁজি বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে। উপরন্তু, বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য মৎস্য চাষকে অনেক শিক্ষিত যুবক কর্মসংস্থানের উপায় হিসেবে বেছে নিচ্ছে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশের মানুষ মৎস্য চাষে বর্ধিত হারে আত্মনিয়োগ করবে এবং অধিক পুষ্টি, অধিক অর্থ নিশ্চিত করতে তাদের মেধা, শ্রম ও পুঁজির সম্মিলিত বিনিয়োগ ঘটবে। ভাই মৎস্য চাষের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে বছরের বিভিন্ন সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে উন্নত মানের মাছের পোনার সরবরাহ থাকা একান্তই অপরিহার্য ।
আরও দেখুন: