আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-প্রাকৃতিক উৎস থেকে রেণু সংগ্রহ করে ব্রুড তৈরির ক্ষেত্রে সতর্কতা সমূহ
প্রাকৃতিক উৎস থেকে রেণু সংগ্রহ করে ব্রুড তৈরির ক্ষেত্রে সতর্কতা সমূহ
প্রাকৃতিক উৎস থেকে রেণু পোনা সংগ্রহ করার সময় অবশ্যই উৎসস্থলে উপস্থিত থেকে নদী থেকে আহরণের সময় সংগ্রহ করতে হবে। কোনোক্রমেই আহরণকারীদের পূর্বের সংগৃহীত রেণু নেয়া যাবে না কেননা প্রায়শই বিক্রেতাগণ প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকে ।
প্রতিটি ধাপে ধাপে মাছ বাছাইয়ের জন্য খামার ব্যবস্থাপকগণকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যেন, মাছ আহত না হয় ।
মাছ বাছাইয়ের সময় মাছকে যদি বেশি নড়াচড়া করা হয় তাহলে এদের দেহের বৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে । প্রতিটি পর্যায়ে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী যথাযথভাবে পুকুর প্রস্তুতি, মাছের স্বাস্থ্য পরিচর্যা, সুষম খাবার সরবরাহ করতে হবে । যারা প্রথম ধাপের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন না তাঁরা অবশ্যই প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনাধীন কোনো খামারের সাথে যোগাযোগ করে প্রাকৃতিক উৎস থেকে মজুদকৃত রেণু থেকে উৎপন্ন ভালো পোনা সংগ্রহ করে ধাপ-২ থেকে কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন ।
উপরে বর্ণিত ধাপে ধাপে নির্দিষ্ট হারে পোনা এবং মাছ বাছাই করাই কৌলিতাত্ত্বিক উন্নত ব্রুড মাছ উৎপাদনের আদর্শ পদ্ধতি তবুও প্রাকৃতিক উৎস থেকে রেণু পোনা সংগ্রহ করে পোনা উৎপাদন করা অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ বিষয় হওয়ায় এবং প্রাকৃতিক উৎসের সকল পোনা মাছই কৌলিতাত্ত্বিক দিক থেকে বৈচিত্র্যময় এবং ভালো গুণাগুণ সম্পন্ন মাছ।
সেজন্য বাছাইকৃত মাছের পর অবশিষ্ট মাছগুলোকে বাতিল না করে অন্যান্য খামার/হ্যাচারিতে ব্রুড মাছের জন্য বিতরণ বা সংরক্ষণ করাই উত্তম কেননা উক্ত ব্রুড মাছ অবশ্যই হ্যাচারিতে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবহৃত ক্রুডের চেয়ে উন্নততর। তবে অবশ্যই বিকলাঙ্গ এবং তুলনামূলকভাবে খুব ধীর গতির বৃদ্ধির পোনাকে বাতিল করতে হবে ।
১০০০টি পরিপত্ত্ব ব্রুড মাছ উৎপাদনের জন্য নিম্নোক্তভাবে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে : উপরে বর্ণিত পদ্ধতিতে ১০০০ টি ২ কেজি ওজনের উন্নত ব্রুডমাছ উৎপাদনের জন্য প্রথম ধাপে কমপক্ষে ৫০০০০ টি পোনা উৎপাদন করতে হবে । উক্ত পোনা উৎপাদনের জন্য প্রাকৃতিক উৎস থেকে ২ থেকে ৩ কেজি রেণু পোনা সংগ্রহ করতে হবে।
আপাতদৃষ্টিতে রেণু পোনার পরিমাণ বেশি মনে হলেও বাস্তবতার আলোকে অনেক সময়ই রুই জাতীয় মাছের পোনার হার খুবই নগন্য হতে পারে (অন্যান্য অবাঞ্ছিত মাছের পোনার উপস্থিতি বেশি এমনকি বিভিন্ন ধরনের প্রাণীকণাসহ অন্যান্য প্রাণীও থাকতে পারে), তাছাড়া ওজনের তারতম্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা এবং বাস্তবতা বিবেচনায় আনতে হবে। প্রথম ধাপে রেণু পোনা মজুদের ৩৫ দিন পর প্রাপ্ত ৫০০০০টি (বেশিও হতে পারে) পোনা হতে ২৪% অর্থাৎ ১২০০০টি সবচেয়ে ভালো পোনা দ্বিতীয় ধাপের জন্য বাছাই করতে হবে ও পুকুরে মজুদ করতে হবে ।
ধাপ-১ হতে বাছাইকৃত ১২০০০টি পোনা দ্বিতীয় ধাপে ৬০ দিন পরিচর্যা করার পর সাধারণত ৯৬০০টি পোনা (সম্ভাব্য বাঁচার হার প্রায় ৮০%) পাওয়া যেতে পারে । উক্ত পোনা থেকে ৫৮% অর্থাৎ প্রায় ৫৫৭০টি সবচেয়ে ভালো পোনা তৃতীয় ধাপের জন্য বাছাই করতে হবে ও পুকুরে পুনরায় মজুদ করতে হবে ।
ধাপ-২ থেকে বাছাইকৃত ৫৫৭০টি পোনা তৃতীয় ধাপে ১২০ দিন পরিচর্যা করার পর সাধারণত ৫০০০টি নলা মাছ (সম্ভাব্য বাঁচার হার প্রায় ৮০%) পাওয়া যেতে পারে । উক্ত নলা মাছ থেকে ৫০% অর্থাৎ প্রায় ২৫০০টি সবচেয়ে ভালো নলা মাছ চতুর্থ ধাপের জন্য বাছাই করতে হবে ও পুকুরে পুনরায় মজুদ করতে হবে ।
ধাপ-৩ হতে বাছাইকৃত ২৫০০টি পোনা চতুর্থ ধাপে ২৪০ দিন পরিচর্যা করার পর সাধারণত ২২৫০টি গড়ে ১ কেজি ওজনের মাছ (সম্ভাব্য বাঁচার হার প্রায় ৯০%) পাওয়া যেতে পারে। উক্ত নলা মাছ হতে ৬৫% অর্থাৎ ১৪৬২টি সবচেয়ে ভালো মাছ পঞ্চম ধাপের জন্য বাছাই করতে হবে ও পুকুরে পুনরায় মজুদ করতে হবে ।
ধাপ-৪ থেকে বাছাইকৃত ১৪৬২টি পোনা পঞ্চম ধাপে ২৭৫ দিন পরিচর্যা করার পর সাধারণত ১৩১৬টি গড়ে ২ কেজি ওজনের মাছ (সম্ভাব্য বাঁচার হার প্রায় ৯০%) পাওয়া যেতে পারে । উক্ত মাছ হতে ৭৬% অর্থাৎ ১০০০টি সবচেয়ে ভালো মাছ বাছাই করতে হবে ও ব্রুডমাছের পুকুরে পুনরায় মজুদ করতে হবে।
এই ১০০০টি মাছই হবে কৌলিতাত্ত্বিক গুণাগুণসম্পন্ন উন্নত ব্রুড মাছ । এদের ব্রুডমাছ হিসাবে পরবর্তী বছর থেকে প্রজননে অংশ গ্রহণের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে ।

প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগৃহীত বন্য স্টক এবং জিন পুল পৃথকভাবেক সংরক্ষণের ব্যবস্থাকরণ :
নির্বাচিত সরকারি ও বেসরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের অপারেটরদের নিকট উন্নত ব্রুড মাছ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান ।
আরও দেখুন: