আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মুক্ত জলাশয় ব্যবস্থাপনা।
মুক্ত জলাশয় ব্যবস্থাপনা
যেসব জলাশয়ের পানির নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল এবং পানি নিয়ন্ত্রণে মানুষের করণীয় খুব বেশি কিছু থাকে না সেগুলোকে মুক্ত জলাশয় বলে। বন্যার পানি, নদী, খাল, বিল, হাওর, বাঁওড়, হ্রদ, মোহনা ইত্যাদি মুক্ত জলাশয়ের শ্রেণিভুক্ত। মুক্ত জলাশয়ের পরিসীমা কোন পাড় বা বাঁধ দ্বারা সীমিত নয় বিধায় এসব জলাশয়কে মুক্ত জলাশয় বলে।
আমাদের দেশে ৪৩.৪৭ লক্ষ হেক্টর অভ্যন্তরীণ জলাভূমি রয়েছে। এর মধ্যে মুক্ত-জলাশয়ের পরিমাণ প্রায় ৪০.৪৭ লক্ষ হেক্টর। নানাবিধ প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট কারণে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাভূমি অর্থাৎ নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, প্লাবনভূমি ইত্যাদি অবক্ষয়ের ফলে ক্রমান্বয়ে মাছের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। একই সঙ্গে অনেক মূল্যবান মৎস্য প্রজাতির অবলুপ্তিসহ সামগ্রিকভাবে জীববৈচিত্র্যের দ্রুত অবক্ষয় ঘটছে ।

পানি সম্পদ প্রকৌশলে মুক্ত-জলাশয়ের পানি প্রবাহের অবস্থা ও জলাশয়ের সংকট গভীরতা নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনাবৃত বা উন্মুক্ত বা মুক্ত-জলাশয়ে পানির প্রবাহ সান্দ্রতা, পানির ঘনত্ব, পৃষ্ঠটান এবং অভিকর্ষ বলের ওপর নির্ভর করে। প্রবাহের আচরণ পানির প্রবাহের অবস্থার উপর নির্ভর করে।
নদী-নালা, খাল-বিলে কোন স্থাপনা নির্মাণ ও নদীর বৈশিষ্ট্যাবলির পূর্বাভাস পেতে এ বিষয়ক জ্ঞান খুবই জরুরী। প্রবাহ সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা ব্যাখ্যায় সংকট গভীরতা নির্ণয় তাৎপর্যপূর্ণ। জড়তা ও সান্দ্রতার প্রভাবের উপর ভিত্তি করে, একটি উন্মুক্ত জলাশয়ের প্রবাহ তিন ধরনের হতে পারেঃ শান্ত, অশান্ত, ও অন্তর্বর্তী প্রবাহ। জড় বল ও সান্দ্র বলের অনুপাতকে রেনল্ডসের সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
মৎস্য অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা :
মুক্ত-জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে অভয়াশ্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধভাবে মৎস্য আহরণের কারণে মাছের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। আবার অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। ইতোমধ্যে ৫৪টি প্রজাতি বিপন্নতার বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এবং বিলুপ্তপ্রায় এসব মৎস্য প্রজাতি সংরক্ষণে অভয়াশ্রম তাই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। অভয়াশ্রম হলো কোনো জলাশয় বা তার অংশবিশেষ যেখানে মৎস্য শিকার বা আহরণ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকে এবং মাছ যেখানে নিরাপদে বা নির্ভয়ে বিচরণ ও প্রজনন করতে পারে ।
আরও দেখুনঃ