আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় খাঁচায় চাষযোগ্য মাছের প্রজাতি নির্বাচন – যা খাঁচায় মাছচাষ এর অন্তর্ভুক্ত।
খাঁচায় চাষযোগ্য মাছের প্রজাতি নির্বাচন
খাঁচায় চাষযোগ্য মাছের উল্লেখযোগ্য প্রজাতিগুলো হলো- মনোসেক্স তেলাপিয়া, গিফট তেলাপিয়া, পাঙ্গাশ, কার্পিও, মিররকার্প ইত্যাদি।
পানিতে খাঁচা ভেজানো :
খাঁচায় পোনা মজুদের কমপক্ষে ১ সপ্তাহ পূর্বে অবশ্যই খাঁচাকে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এতে জালের গায়ে সামান্য শ্যাওলা জমে জালের মসৃণতা বেড়ে যাবে। তা না হলে নতুন অবস্থায় জালে পোনা মজুদ করলে জালের গিটের ঘষায় মাছের গায়ের পিচ্ছিল আবরণ (মিউকাস) সহ আঁইশ উঠে ঘা হয়ে যাবে। ফলে মাছের মড়ক দেখা দিতে পারে।
পোনার মজুদ ঘনত্ব নির্ধারণ ও পোনা মজুদ :
পানির স্রোত, জালের ফাঁসের আকার, পানির গভীরতা, প্রত্যাশিত আকারের মাছ উৎপাদন, খাদ্যের গুণগতমান এবং বিনিয়োগ ক্ষমতা ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে খাঁচায় মাছের মজুদ ঘনত্ব নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত প্রতি ঘন মিটার খাঁচায় ২০-২৫ গ্রাম ওজনের ৩০-৪০ টি মনোসেক্স তেলাপিয়ার পোনা মজুদ করা যেতে পারে।
সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ :
বাণিজ্যিকভাবে খাঁচায় মাছচাষ পরিচালনার জন্য প্রবহমান পানিতে ভাসমান পিলেট খাদ্যের বিকল্প নেই । বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির ভাসমান পিলেট খাদ্য পাওয়া যায় যা পোনা মজুদের পর থেকে মাছ বাজারজাতকরণের পূর্ব পর্যন্ত দৈহিক ওজনের ৮ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ হারে প্রতিদিন একই সময়ে দিনে ২ বার খাঁচায় প্রয়োগ করতে হবে। সম্প্রতি মেঘনা নদীতে খাঁচায় মাছ চাষের উপর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, শুরু থেকে মাছ বাজারজাতকরণ পর্যন্ত মানসম্পন্ন সুষম ভাসমান পিলেট জাতীয় খাদ্য প্ৰয়োগ করে ১ কেজি তেলাপিয়া মাছ উৎপাদনে ২ কেজি খাদ্যের প্রয়োজন হয় ।

খাঁচায় তেলাপিয়া বাছাইকরণ :
প্রত্যাশিত উৎপাদনের জন্য খাঁচায় পোনা মজুদের তিন সপ্তাহের পর প্রথম বার খাঁচার মাছ বাছাই করতে হবে। অপেক্ষাকৃত বড় আকারের মাছগুলো এক খাঁচায় রাখতে হবে। এভাবে তিন থেকে চার বার মাছ বাছাই করলে ছোট আকারের মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। ফলে লাভের অংশ অনেক বেড়ে যাবে । যখন নদীর পানি বেশি প্রবহমান থাকে তখন খাঁচার পানি দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে এমন সময় সকালে কিংবা পড়ন্ত বিকালে মাছ বাছাইয়ের কাজটি করতে হবে।
খাঁচা পরিচর্যা :
খাঁচা, খাঁচার জাল এবং খাঁচায় মাছের নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে। খাঁচার ভিতরে ট্রে বা খাদ্য দানিতে জমে যাওয়া তলানি বা ময়লা পরিষ্কার, খাঁচার জাল ঠিক আছে কিনা কিংবা কাঁকড়া বা অন্য কোনো প্রাণী জাল কেটেছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। এছাড়া অনেক সময় পানির গভীরতা কম-বেশি হলেও খাঁচা ওঠা-নামা করা প্রয়োজন । এই বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। তাহলেই খাঁচায় মাছ চাষে ভালো ফল পাওয়া যাবে ।
উৎপাদন ও আয়-ব্যয় :
উল্লেখিত ব্যবস্থাপনা কৌশল অবলম্বন করলে ৫০টি খাঁচা হতে বছরে আয়ের প্রাক্কলন নিচে সারণি-১৮ দেয়া হলো :
সারণি-১৮ : ৫০টি খাঁচা স্থাপনে স্থায়ী খরচ
সারণি-১৯ : ৫০টি খাঁচায় এক ফসলের উৎপাদন খরচ
মাছের উৎপাদন
প্রতিটি খাঁচায় এক ফসলে সর্বনিম্ন উৎপাদন = ৩৫০ কেজি
৫০টি খাঁচায় উৎপাদন ( ৩৫০x৫০ ) = ১৭৫০০ কেজি
প্রতি কেজি মাছের গড় বাজারমূল্য = ১২৫ টাকা
সুতরাং মোট আয় (১৭,৫০০ x ১২৫ ) = ২১,৮৭,৫০০টাকা
নিট লাভ (২১,৮৭,৫০০-১৩,৯৯,০০০) = ৭,৮৮,৫০০ টাকা
আরও দেখুনঃ