আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হিমায়ন যন্ত্রের প্রকারভেদ – যা মাছ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এর অন্তর্ভুক্ত।
হিমায়ন যন্ত্রের প্রকারভেদ
মৎস্য হিমায়নে নিম্নলিখিত হিমায়ন যন্ত্রসমূহ ব্যবহার করা হয়।
১. এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজার ( Air blast freezer )
২. কন্টাক্ট প্লেট ফ্রিজার (Contact plate freezer )
৩. ইমারশান ফ্রিজার ( Immersion freezer )
১. এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজারে হিমায়িত করার পদ্ধতি :
এয়ার ব্লাস্ট ফ্রিজার একটি তাপ পরিবাহী সুড়ঙ্গ বা কক্ষ যেখানে মাছকে ট্রলিতে সাজিয়ে ভিতরে ঢুকানো হয়। কক্ষের ভিতর পাখার সাহায্যে -৩৫°সে. থেকে – ৪০°সে. তাপমাত্রায় বায়ু প্রবাহিত করা হয়। প্রবাহিত বাতাসের গতিবেগ থাকে ৫ থেকে ৭ মি./সে.। এয়ার ব্লাষ্ট ফ্রিজারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ এর বেশি হলে মাছের দেহে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এ ধরনের প্রভাবকে “ফ্রিজার বার্ন’ বলে।
এ অবস্থায় মাছের পারিপার্শ্বিক জলীয় বাষ্পের চাপ কমে যায় ফলে মাছের দেহ থেকে পানি বের হয়ে যেতে থাকে । এতে মাছের বর্ণ ও গঠন নষ্ট হয়ে যায়। এই পদ্ধতির অসুবিধা হলো এতে সময় বেশি লাগে বেশি জায়গা দখল করে এবং অন্য পদ্ধতির চেয়ে জ্বালানি খরচ বেশি।

২. কন্টাক্ট প্লেট ফ্রিজার :
মাছ ও চিংড়ি হিমায়নের এটি একটি বহুল প্রচলিত পদ্ধতি । এই যন্ত্রে মাছকে সরাসরি হিমায়িত প্লেটের উপর রেখে হিমায়িত করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াকরণ কক্ষের মধ্যে এক পাশে এক বা একাধিক কন্টাক্ট ফ্রিজার থাকে । এই ফ্রিজের ভিতর কয়েকটি প্লেট বসানো থাকে যার উপর মাছ ভর্তি ট্রেগুলো সাজিয়ে দেয়া হয়। যন্ত্রের সাহায্যে উক্ত ট্রেগুলো পরস্পরের খুব কাছাকাছি এসে একে অপরের সাথে লেগে থাকে। এ কারণে এ ফ্রিজকে কন্টাক্ট ফ্রিজ বা প্লেট ফ্রিজ বলে। এটা স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি হয়ে থাকে।
এই ফ্রিজের ধারণক্ষমতা প্রতি লোডে ৩০০ কেজি থেকে ১ টন পর্যন্ত হতে পারে। এই ফ্রিজের তাপমাত্রা -৩৫°সে. থেকে -৪০°সে. পর্যন্ত হয়। ফ্রিজিং সময় নির্ভর করে মাছের পুরুত্বের উপর। সাধারণত ফ্রিজিং সময় ২-৩ ঘণ্টা। মাছের গুণগতমান ঠিক রাখার জন্য এই ফ্রিজের তাপমাত্রা – ৩৫°সে. থেকে ৪০°সে. বজায় রাখা আবশ্যক। বাংলাদেশে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে মাছ এবং চিংড়ি হিমায়িত করা হয় ।
৩. ইমারশান পদ্ধতি :
এক্ষেত্রে নিম্ন তাপমাত্রায় তরল পদার্থে মাছকে নিমজ্জিত করা হয় । এ ধরনের ঠাণ্ডা তরল পদার্থের মধ্যে মাছকে রেখে সরাসরি দেহের তাপমাত্রা কমানোর পদ্ধতি এয়ারব্লাষ্ট ফ্রিজারের চেয়ে উন্নত। পানির চেয়ে এ ধরনের তরলের ফ্রিজিং পয়েন্ট অনেক বেশি হয়ে থাকে। ইমারশান ফ্রিজারের কোন আদর্শ নক্শা নেই । প্রকৃতপক্ষে এই পদ্ধতিতে ঠাণ্ডা লবণ দ্রবণ অথবা এ জাতীয় রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করা হয় ।
মাছকে সরাসরি এই জাতীয় দ্রবণে নিমজ্জিত করা হয় । যেহেতু মাছ লবণ দ্রবণের সরাসরি সংস্পর্শে আসে সেহেতু মাছের দেহ থেকে খুব দ্রুত তাপ অপসারিত হয়। এক্ষেত্রে লবণ দ্রবণের তাপমাত্রা থাকে -২১°সে.। এই দ্রবণ ০.২মি./সেকেন্ড বেগে ঘুরতে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে মাছকে – ৩০°সে তাপমাত্রায় হিমায়নের প্রয়োজন হয়। এই পদ্ধতিতে মাছ কিছুটা লবণ শোষণ করে থাকে ।
আরও দেখুনঃ