Site icon Fisheries Gurukul [ মৎস্য গুরুকুল ] GOLN

গলদা চিংড়ির খামারের স্থান নির্বাচন ও নির্মাণ কৌশল | অধ্যায়-৩ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২

গলদা চিংড়ির খামারের স্থান নির্বাচন ও নির্মাণ কৌশল | অধ্যায়-৩ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – গলদা চিংড়ির খামারের স্থান নির্বাচন ও নির্মাণ কৌশল । যা ” গলদা চিংড়ির খামারের স্থান নির্বাচন ও নির্মাণ কৌশল ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।

শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।

গলদা চিংড়ির খামারের স্থান নির্বাচন ও নির্মাণ কৌশল

 

 

গলদা চিংড়ি চাষের উপযোগী পরিবেশ বলতে এমন একটি পরিবেশকে বুঝায় যেখানে অবকাঠামোগত সুবিধা, পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, পানির প্রাচুর্য, উৎপাদন সামগ্রীর সহজলভ্যতা এবং উৎপাদিত চিংড়ির সঠিক গুণগতমাণ বজায় রেখে রপ্তানি নিশ্চিত করা যায়। বাণিজ্যিক গুরুত্ব সম্পন্ন গলদা চিংড়ি দেশের নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর জোবা ও ধানক্ষেতসহ প্রায় সর্বত্রই কম-বেশি চাষ করা হয়ে থাকে।

এই চাষ এলাকা প্রতিবছরই বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন চাষ পদ্ধতির জন্য চিংড়ি খামারের সুযোগ-সুবিধা বিভিন্ন রকম হলেও কিছু কিছু সুবিধাদি সকল ক্ষেত্রেই একই রকম এবং বিবেচ্য বিষয়সমূহও প্রায় একই ধরনের। উপযুক্ত স্থানে চিংড়ি খামার স্থাপন ও নিম্নলিখিত সুবিধাদি পাওয়া যায়।

– খামার ব্যবস্থাপনা সহজ হয় এবং ব্যবস্থাপনা খরচও কম হয়।

– পানি ব্যবস্থাপনায় কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় না এবং উপযুক্ত লাগসই প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে সহজ হয়।

স্থান নির্বাচনের সুবিধা

উপযুক্ত স্থানে গলদা চিংড়ির খামার/পুকুর স্থাপন করা গেলে নিম্নবর্ণিত সুবিধাগুলো পাওয়া যায়।

(১) খামার/ পুকুর নির্মাণের খরচ কম হয়।

(১) খামার ব্যবস্থাপনা সহজ হয় এবং, ব্যবস্থাপনা খরচ কম হয়।

(৩) পানি ব্যবস্থাপনার কোনো সমস্যা হয় না।

(৪) সহনশীল লাগসই প্রযুক্তি প্রয়োগ সহজতর হয়।

(৫) প্রাকৃতিক ভারসাম্যের ওপর প্রভাব ফেলে না।

(৬) চিংড়ির আশানুরূপ উৎপাদন পাওয়া যায়।

স্থান নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয়সমূহ

লাভজনকভাবে গলদা চিংড়ি চাষের জন্য খামার নির্মাণের লক্ষ্যে স্থান নির্বাচনের সময় নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোর ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে:

(১) মাটির গুণাগুণ

(২) পানির গুণাগুণ

(৩) বন্যা, প্লাবন ও দূষণমুক্ত এলাকা

(৪) পানির উৎস

(৫) পোনা ও চাষ উপকরণাদির প্রাপ্যতা

(৬) অবকাঠামোগত সুবিধাদি

(৭) ভূমির উচ্চতা ও বন্ধুরতা

(৮) বিদ্যুৎ সরবরাহ

(৯) দক্ষ জনশক্তি

(১০) বিবিধ

 

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

(১) মাটি

মাটির গুণাগুণ জেনে গলদা খামারের জন্য স্থান নির্বাচন করা উচিত। কারণ মাটির গুণাগুণ ও উর্বরতার ওপর পানির গুণাগুণ ও উর্বরতা নির্ভরশীল আর পানির উর্বরতার ওপর চিংড়ির উৎপাদন নির্ভরশীল। তাই খামার বা পুকুর নির্মাণের স্থান নির্বাচনের পূর্বে মাটির গুণাগুণ জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মাটি হচ্ছে প্রাকৃতিক বস্তুর সমষ্টি যা ভূপৃষ্ঠকে স্তূপাকারে আহরিত করেছে, যেখানে গাছ জন্মায়, যা শিলা থেকে জলবায়ু ও বীজ কার্যের সমন্বিত প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়েছে এবং সময়ের ব্যবধানে নিষ্কাশন অবস্থাভেদে বর্তমান রূপ লাভ করেছে অথাৎ উদ্ভিদ ও জীব উৎপাদন সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার মাধ্যম তথা এসব কর্মকাণ্ডের উপযোগী ভূপৃষ্ঠের নরম অংশকে মৃত্তিকা বা মাটি বলা হয়।

মাটি পরিবর্তনশীল প্রাকৃতিক বস্তু বিশেষ। ক্ষয়ীভূত শিলা ও খনিজের সাথে জৈব পদার্থ ও পানির মিশ্রণের ফলে মাটি তৈরি হয়। কঠিন, তরল ও বায়বীয় আকারে খনিজ দ্রব্য, জৈব দ্রব্য এবং জলীয় ও বাহুবীয় অংশ সমন্বয়ে মাটি গঠিত। মাটির বিভিন্ন রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অনুমান ও লবণাক্ততা চিংড়ি চাষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১ থেকে ১৪ সংখ্যা দ্বারা অম্লমান (পিএইচ) প্রকাশ করা হয়। মাটির অগ্নমান পানির গুণাগুণকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কোনো মাটির অনুমান ৭ এর কম হলে তাকে অনুমাটি বলে।

মাটিতে সালফার লৌহ ও অ্যালুমিনিয়ামের পরিমাণ বেশি হলে মাটিতে অম্লত্ব দেখা দেয়। বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকা, মধুপুর ও বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটির অম্লত্ব বেশি। এসব অঞ্চলের মাটিতে লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকা ও চকোরিয়ায় জোয়ার প্লাবিত অঞ্চলের মাটিডে পাইরাইটিক সালফাইড বেশি থাকে।

এই পাইরাইটিক সালফাইডের জারণের ফলে সালফিউরিক অ্যাসিডের সৃষ্টি হয়। সালফিউরিক অ্যাসিডের কারণে মাটির অম্লত্ব বেশি হয়। এ ধরনের মাটিকে কমযুক্ত মাটি বলে। এই মাটি চিংড়ি চাষের অনুপযোগী।  মাটির এই অম্লত্ব প্রতিরোধের জন্য সাধারণত ও প্রকারের চুন ব্যবহার করা হয়, যেমন (ক) কার্বনেট চুন (পাথুরে চুন)- (ডলোমাইট) (খ) অক্সাইড চুন- (পোড়া চুন/কুইক লাইম) (গ) হাইড্রোক্সাইড চুন

মৃদু অণুযুক্ত মাটির এলাকায় চিংড়ি খামারের জন্য স্থান নির্বাচন করা ভালো। কারণ মৃদু অম্লযুক্ত মাটি চিংড়ি চাষের জন্য অত্যন্ত ভালো। অধিক অম্লযুক্ত মাটি চিংড়ি চাষের অনুপযোগী। এজন্য ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ জেনে গলদা খামারের জন্য স্থান নির্বাচন করা উচিত।

দোআঁশ, এঁটেল, বা বেলে দোআঁশ মাটি সাধারণত গলদা চিংড়ির পুকুরের জন্য উত্তম। এ ধরনের মাটির পানিধারণ ক্ষমতা বেশি এবং এই মাটি দিয়ে তৈরি পুকুরের পাড় শক্ত ও মজবুত ও স্থায়ী হয় গলদা চিংড়ি চাষের জন্য মাটিবা গুণাগুণ নিম্নরূপ হওয়া উচিতঃ

 

উপাদান পরিমাণ
মাটির বুনট এঁটেল-দোআঁশ
পিএইচ ৫.০-৬.৫
নাইট্রেট
৫০-৭৫ (মিগ্রা/১০০ গ্রাম)
ফসফেট
১০-১২ (মিগ্রা/১০০ গ্রাম)
ক্যালসিয়াম ২.৫-৫%
জৈব পদার্থ
৪০-৫০ (মিগ্রা/১০০ গ্রাম

 

(২) পানি

পানির গুণাগুণের ওপর চিংড়ির উৎপাদন নির্ভরশীল। গলদা খামারের জন্য এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে যেখানে উন্নত গুণাগুণ সম্পন্ন স্বাদু পানি সহজেই পাওয়া যায়। মিঠা পানিতে সাধারণত গলদা চিংড়ি চাষ করা হয়। তবে ৪ পিপিটি পর্যন্ত লবণাক্ত পানিতে গলদা চাষে কোনো সমস্যা হয় না।

পানির তাপমাত্রা ১৮° সে এর নিচে এবং ৩৫° সে এর উর্ধ্বে হলে চিংড়ির মৃত্যু ঘটে। পানির তাপমাত্রা ২৪° সে এর নিচে নামলে এবং ৩১° সে এর বেশি হলে চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। জোয়ার ভাটা প্রভাবিত এলাকায় গলদা খামার স্থাপন করলে পানি ব্যবস্থাপনা সহজতর হয়। এর ফলে নলকূপের পানির ওপর নির্ভরশীলতা অনেকাংশে কমে যায় এবং এতে চাষির অনেক অর্থেরও সাশ্রয় হয়। গলদা চিংড়ি চাষে ব্যবহৃত পানির গুণাগুণ নিম্নরূপ হওয়া দরকার।

১. তাপমাত্রা: ২৬-৩০° সে

২. দ্রবীভূত অক্সিজেন: ৪ পিপিএম এর বেশি

৩. পিএইচ: ৭.৫-৮.৫

৪. লবণাক্ততা: ০-৪.০ পিপিটি

৫. সম্পূর্ণ হার্ডনেস: ১০০ পিপিএম এর কম

৬. লৌহ: ১.০ পিপিএম এর কম

৭. হাইড্রোজেন সালফাইড: ০.০৩ পিপিএম এর কম

৮. অআয়নিত অ্যামোনিয়া: ০.১ পিপিএম এর কম।

কীটনাশক দূষণমুক্ত এবং ভারী ধাতুমুক্ত পানি গলদা চিংড়ি চাষের জন্য উপযুক্ত। এছাড়া কল-কারখানার বর্জ্য পদার্থজনিত দূষণমুক্ত পানির উৎসের কাছাকাছি গলদা খামারের জন্য স্থান নির্বাচন করা ভাল।

(৩) বন্যা, প্লাবন ও দূষণমুক্ত এলাকা

হঠাৎ বন্যা, প্লাবন বা ঢলে খামার যেন তলিয়ে না যায় এমন স্থানে খামার স্থাপন করতে হবে। বন্যা, প্লাবন বা ঢলে খামার তলিয়ে গেলে সমস্ত চিংড়ি বের হয়ে যায়, খামারের পাড় ও সুইস গেইট ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফলে চাষির ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। শহর এবং শিল্প এলাকায় পার্শ্বস্থ নদীতে পানি দূষণের সম্ভাবনা থাকে।

শহরের ময়লা আবর্জনা এবং শিল্প-কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ নদীর পানিতে মিশে পানি দূষণ করে। এই পানি গলদা চিংড়ি চাষের জন্য উপযুক্ত নয়। এছাড়া কৃষিকাজে ব্যবহৃত পানি গলদা খামারে ব্যবহার করা উচিত নয়।

(৪) পানির উৎস

বৃষ্টির পানি, নদী-খাল বা ভূগর্ভস্থ নলকূপ থেকে পানি গলদার খামারে সরবরাহ করা যায়। খামার এমন জায়গায় স্থাপন করতে হবে যেখানে স্বচ্ছ, দূষণমুক্ত ও অক্সিজেন সমৃদ্ধ মিঠা পানি সহজেই পাওয়া যায়। নদী বা খালের পানিতে জৈব ও অজৈব ভাসমান পদার্থ কম থাকতে হবে এবং পানি দূষণমুক্ত হওয়া একান্তভাবে দরকার। নলকূপের পানিতে সাধারণত লৌহ বা ভারী ধাতুর পরিমাণ বেশি থাকে। তাই এসব উৎসের পানি সরাসরি পুকুরে সরবরাহ করা ঠিক নয়। এই পানি থিতানারে পর খামারে সরবরাহ। করা উচিত।

(৫) পোনা ও চাষ উপকরণাদির প্রাপ্যতা

গলদা খামার এমন জায়গায় স্থাপন করা উচিত যেখানে চিংড়ি পোনা সহজে সংগ্রহ করা যায় এবং চিংড়ি চাষের বিভিন্ন উপকরণ যেমন- চুন, সার, খাদ্য ও অন্যান্য উপকরণাদি সহজে সংগ্রহ ও ব্যবহার করা যায়।

(৬) অবকাঠামোগত সুবিধাদি

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, সড়ক যোগাযোগ, বিপণন বাজার ইত্যাদি অবকাঠামোগত সুবিধাদি আছে এমন এলাকায় চিংড়ি খামার স্থাপন করতে হবে।

(৭) ভূমির উচ্চতা ও বন্ধুরতা

খামারের জন্য নির্বাচনকালে জমির এবং বন্ধুরতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। পুকুর নির্মাণের জন্য কতটা মাটি খনন করতে হবে, বাঁধের উচ্চতা কত হবে এবং পুকুরে কি পরিমাণ পানি ধারণ করা যাবে, পানি সরবরাহ এবং নিষ্কাশন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভূমির উচ্চতা ও বনধুরতা সম্পর্কে পূর্বধারণা থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন।

(৮) বিদুৎ সরবরাহ

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের জন্য খামার এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা দরকার। বিদ্যুৎ সরবরাহ ছাড়া আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করা সম্ভব নয়। চিংড়ি খামারে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিত করতে থামার এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকা প্রয়োজন।

 

 

(৯) দক্ষ জনশক্তি

দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনশক্তি ছাড়া সফলভাবে চিংড়ি চাষ করা যেমন সম্ভব নয় ঠিক তেমনিভাবে চাষের নিবিড়ঝা বৃদ্ধি করার সম্ভব নয়। এজন্য সহজে দক্ষ জনশক্তি পাওয়া যায় এবং নিয়োগকৃত কর্মচারীগণ যেন বসবাসের ভালো পরিবেশ পায় এমন স্থানে খামার স্থাপন করা উচিত যাতে কর্মচারীদের দক্ষতা আলোভাবে কাজে লাগানো যায়।

(১০) বিবিধ

নিরাপত্তা, সামাজিক পরিবেশ, চিকিৎসা সুবিধা ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা খামার স্থাপনকালে বিবেচনায় রাখা উচিত। প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ যাতে বিঘ্নিত না হয় এমন এলাকায় খামার স্থাপন করতে হবে।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version