আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- সুস্থ ও রোগাক্রান্ত মাছের সাধারণ লক্ষণসমূহ যা ইউনিট ২ মাছের স্বাস্থ্য অংশ।
এ পাঠ শেষে আপনি-
- সুস্থ মাছের সাধারণ বৈশিষ্ট্য বলতে পারবেন।
- রোগাক্রান্ত মাছের লক্ষণ উল্লেখ করতে পারবেন।
জীব জগতের সকল প্রাণী-উদ্ভিদ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। মাছও এর ব্যতিক্রম নয়। মাছের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের অসঙ্গতি বা বিকৃতি এবং শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় বিঘ্নতা বা জটিলতা সৃষ্টির মাধ্যমে রোগের লক্ষণসমূহ প্রকাশিত হয়ে থাকে। সুস্থতা এবং রোগ এই দুটি বিষয়ের একটি অপরটির আপেক্ষিক।
সুস্থ মাছের শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও আচরণ রোগাক্রান্ত মাছের বৈশিষ্ট্য ও আচরণ থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। একটি রোগাক্রান্ত মাছ চিনতে হলে প্রথমে একটি সুস্থ মাছের বিভিন্ন শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও আচরণ সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত থাকতে হবে।
সুস্থ ও রোগাক্রান্ত মাছের সাধারণ লক্ষণসমূহ
সুস্থ মাছের সাধারণ শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও আচরণ নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- মাছের বৃদ্ধির হার স্বাভাবিক থাকবে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ে মাছ কাঙ্ক্ষিত আকার ও ওজন অর্জন
করবে। - বিভিন্ন অঙ্গের আকারগত অনুপাত ঠিক থাকবে। যেমন- দেহের তুলনার মাথা মানানসই দেখাবে, লম্বার তুলনায় প্রশস্ততা যথাযথ থাকবে।
- ত্বকের বা আঁইশ-এ স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য বজায় থাকবে।
- মাছ স্বাভাবিকভাবে খাদ্য গ্রহণ করবে। মাছ স্বাভাবিক আচরণ দেখাবে।
- পানির উপর ভেসে থাকবে না বা পাড়ের কাছে দীর্ঘ সময় বসে থাকবে না।
- ভয় দেখালে দ্রুত পানির নিচে চলে যাবে।
- দেহের কোন অংশে ঘা, ক্ষত বা রক্তক্ষরণ থাকবে না।
- পাবনা দুমড়ানো থাকবে না, বা পাখনা ও ফুলকায় পচন দেখা যাবে না।
- দেহের কোথাও কোন পরজীবী থাকবে না।
একটি রোগাক্রান্ত মাছে বিভিন্ন ধরনের অসংগতিপূর্ণ শারীরিক বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। রোগাক্রান্ত
মাছের লক্ষণসমূহকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা-
১. আচরণগত অসংগতি (behavioural signs )
২.শারীরিক বৈশিষ্ট্যগত বা শারীরবৃত্তীয় লক্ষণ (clinical symptoms )
আচরণগত অসংগতি
বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার কার্যকারণ ভিন্ন ভিন্ন। ভাই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মাছ বিভিন্ন রকম আচরণগত অসঙ্গতি প্রকাশ করে থাকে। কোন রোগাক্রান্ত মাছে নিচে লিখিত অসংগতিগুলোর কোন একটি বা একাধিক অসংগতি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে-
- মাছ সম্পূরক খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখায়। মাছ খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে নেয়।
- মাছ শারীরিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
- পানির উপর অলসভাবে ভেসে থাকে।
- দ্রুত গতিতে ও অস্থিরভাবে সাঁতার কাটে।
- মাছ পুকুরে অবস্থিত শক্ত কিছুতে গা ঘসতে থাকে।
- মাছ পানি নির্গমনের স্থানে জড়ো হয়।
শারীরিক বৈশিষ্ট্যগত লক্ষণ
রোগাক্রান্ত মাছে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলোর কোন একটি বা একাধিক লক্ষণ একত্রে প্রকাশ পেতে পারে-
দেহের তুলনায় মাথা বড় দেখায়।
মাছের দেহে অতিরিক্ত পিচ্ছিল পদার্থ নির্গত (mucus) হয়।
প্রয়োজনীয় মিউকাসের অভাবে মাছের দেহ খসে হয়।
মাছের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য থাকে না।
মাছের স্বাভাবিক বর্ণ পরিবর্তিত হয়, বর্ণ ফ্যাকাশে বা গাঢ় হয় ।
আঁইশ, ত্বক বা পাখনায় ক্ষত বা ঘা দেখা দেয়।
ফুলকায় ক্ষত বা পচন দেখা দেয়।
আঁইশ ফুলে ওঠে ৱা খসে পড়ে ।
ফুলকার বর্ণ পরিবর্তিত হয়, বর্ণ ফ্যাকাশে বা রক্তাভ হয়।
আঁইশের গোড়া, ত্বক, পায়ুপথ বা ফুলকায় রক্তক্ষরণ হয়।
মাছের পেট ফুলে ওঠে।
পায়ুপথ বা ফুলকায় প্রদাহ হয়।
মাছের চোখ বের হয়ে আসে।
মাছের দেহে সুক্ষ সুতার মত বস্তু দেখা দেয়।
মাছের ত্বক বা পাখনায় বিন্দুর মত সাদা দাগ দেখা দেয়।
মাছের দেহে বা ফুলকায় ডোরারমত দাগ দেখা দেয়।
মাছের দেহে, পাখনায় বা ফুলকায় পরজীবী বা সিস্ট পরিলক্ষিত হয়।
মাছের শরীরে ঘা বা লালচে বিন্দুর মত ক্ষত দেখা দেয়। দেহের কোন অংশ বাদামী বা ধূসর হয়ে যায়।
মাছের দেহগহ্বরে ঘোলাটে, সাদা বা পরিষ্কার তরল জমা হয়। হঠাৎ ব্যাপক হারে মাছের মড়ক দেখা দেয়।
অনুশীলন ( Activity): রোগাক্রান্ত মাছের আচরণগত অসংগতিসমূহ কী কী?
সারমর্মঃ
অঙ্গসংস্থানিক বৈশিষ্ট্যর অসঙ্গতি বা বিকৃতির মধ্যে দিয়ে মাছের রোগের লক্ষণসমূহ প্রকাশিত
হয়ে থাকে। রোগাক্রান্ত মাছের লক্ষণগুলো শণাক্ত করার জন্য সুস্থ মাছের আচরণগত ও শারীরিক বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্পর্কে পূর্বাহ্নে অবহিত থাকতে হবে।
রোগাক্রান্ত মাছের লক্ষণসমূহকে প্রধানত দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যথা- আচরণগত অসংগতি এবং শারীরিক বৈশিষ্ট্যগত লক্ষণ। সুস্থ মাছের শারীরিক বৈশিষ্ট্য যথাযথ থাকে এবং স্বাভাবিক আচরণ প্রদর্শন করে। রোগাক্রান্ত মাছে শারীরিক বৈশিষ্ট্যের অসংগতি দেখা দেয় এবং অস্বাভাবিক আচরণ প্রদর্শন করে।
আরও দেখুনঃ