চিংড়ির দীর্ঘকালীন সংরক্ষণ পদ্ধতি | অধ্যায়-১ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – চিংড়ির দীর্ঘকালীন সংরক্ষণ পদ্ধতি । যা ” বাগদা চিংড়ি আহরণ ও বাজারজাতকরণ ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।

শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।

চিংড়ির দীর্ঘকালীন সংরক্ষণ পদ্ধতি

 

চিংড়ির দীর্ঘকালীন সংরক্ষণ পদ্ধতি | অধ্যায়-১ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

 

চিংড়ির দীর্ঘকালীন সংরক্ষণ পদ্ধতি

সাধারণ অর্থে দীর্ঘকালীন সময়ের জন্য চিংড়ি সংরক্ষণকে প্রক্রিয়াজাতকরণ বলা হয়। এ পদ্ধতিতে গুণগত ও অবস্থানগত গঠনের কোনো পরিবর্তন হয় না। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াজাত করা গুণগত মানসমৃদ্ধ চিংড়ি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন পদ্ধতি নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ

ক. তাজা বা অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষণ (Preservation at fresh condition)

খ. সিদ্ধ করা (Cooking)

গ. কৌটাজাতকরণ (Canning)

ক. তাজা বা অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষণ

চিংড়ির মৃত্যুর পর প্রধানত দুটি কারণে চিংড়ি নষ্ট হয়ে থাকে, যেমন- (১) রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণে নষ্ট হওয়া ও (২) ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর আক্রমণে নষ্ট হওয়া। রাসায়নিক দৃষ্টিকোণ থেকে চিংড়ির মৃত্যুর পর দেহের কোষ থেকে অ্যামাইনা েঅ্যাসিড নিঃসৃত হয়।

ফলে চিংড়ির খাদ্যগুণ ও স্বাদ বিনষ্ট হয় এবং ওজন হ্রাস পায়। অপরদিকে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর আক্রমণে চিংড়ির মাংসল অংশে এনজাইমের জলায়ন (hydrolysis) ক্রিয়ার সাহায্যে নানা ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড নিঃসৃত হয়, যা বজারণ পদ্ধতিতে (Auto oxidation) কার্বনিল যৌগ উৎপন্ন করে, ফলে মাংসল অংশের পচনক্রিয়া শুরু হয় ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়।

এ কারণেই চিংড়ি ধরার ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে চিংড়ির প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা উচিত। বরফের সাহায্যে দীর্ঘমেয়াদিভাবে চিংড়ি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে চিংড়ি ও বরফের অনুপাত ১০১ (ওজনে) হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজে ব্রফ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বরফের টুকরো অত্যন্ত ছোট বা পাতলা আবরণের মত হওয়া উচিত।

অনেক সময় ব্যাকটেরিয়াযুক্ত অপরিশোধিত পানি দিয়ে তৈরি বরফ ব্যবহারে বা ব্যাকটেরিয়াযুক্ত পাত্র ব্যবহারে চিংড়ির মান নষ্ট হতে পারে। এক্ষেত্রে চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণে ক্লোরিন মিশ্রিত পরিশোধিত পানির সাহায্যে তৈরি বরফ ব্যবহার করা উচিত এবং চিংড়ি সংরক্ষণ ও পরিবহনে ব্যবহৃত সকল প্রকার প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ ক্লোরিন মিশ্রিত পানি (৫ থেকে ১০ পিপিএম) দিয়ে ধায়ো উচিত।

এ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিত চিংড়ির ব্যাকটেরিয়াধারা আক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকে। চিংড়ি দীর্ঘকালীন সময়ের জন্য সংরক্ষণে সমুদ্রের পরিষ্কার লোনা পানি ০° থেকে ১° সে তাপমাত্রায় ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যায়। অনেক সময় গ্লুকোজ সিরাপ বা কর্ন সিরাপ প্রয়োগ করে তাপমাত্রা আরও কমানো হয়। এ ধরনের সংরক্ষণ পদ্ধতিতে চিংড়ির আকার অপরিবর্তিত থাকে এবং খরচও অপেক্ষাকৃত কম হয়।

বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জেট ক্লিজিং পদ্ধতিতে চিংড়ি সংরক্ষণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে ক্রায়ােেজনিক নাইট্রোজেন (Cryogenic nitrogen) মাইনাস ৩২ক ফারেনহাইট তাপমাত্রায় মাল্টিজুম (Multi-zoomed) ফ্রিজারের মাধ্যমে প্রতি মিনিটে সাত হাজার ফুট হারে সঞ্চালিত করা হয়। ফলে ঠান্ডা জমানো হাওয়া এক মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে চিংড়ি কোষের মধ্যে সঞ্চালিত হয় এবং অতি দ্রুত চিংড়ি সংরক্ষিত হয়।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

খ. সিদ্ধ করা

এ পদ্ধতিতে প্রতি পাউন্ডে ১০০ টির অধিক সংখ্যক চিংড়ি লবণ জলে সিদ্ধ করা হয় এবং পরে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় এক সাথে বেশ কিছু পরিমাণ চিংড়ি বড় তারের ঝুড়িতে রেখে সেগুলো ফুটন্ত ব্রাইন বা লোনা জলে ১ থেকে ২ মিনিট সিদ্ধ করা হয় এবং পরে তারের পাত্রটি তুলে কোন বড় তারের জালের উপর ভালভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

ফলে অতি দ্রুত সেগুলো ঠান্ডা হয়। এ প্রক্রিয়াকে বাঞ্চিং (Blanching) বলা হয়। বঞ্চিৎ চিংড়িগুলো অল্প সময়ের জন্য ২০° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ঠান্ডা জলে ডুবানো হয়। এ প্রক্রিয়াকে গেজিং (Glazing) বলা হয়।

গ. কৌটাজাতকরণ

মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণে কৌটাজাতকরণ একটি প্রচলিত প্রথা। এ প্রক্রিয়ায় ঠান্ডা করা চিংড়ি ব্রাইন বা লবণ জল সহযোগে বায়ু নিরোধক পাত্র বা ক্যান-এ আবন্ধ করে রপ্তানি করা হয়। ক্যান বা আবদ্ধ পাত্রে চিংড়ির গুণগতমান অবিকৃত রাখার উদ্দেশ্যে লবণ জলে সাইট্রিক অ্যাসিড (০.২%) মিশানো হয়।

এ সময়ে দ্রবণের পিএইচ (pH) এর মান ৬.৪ থেকে ৬.৬ হয়ে থাকে। ক্যানগুলো পরবর্তী ধাপে প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে ০.৭ কিলোগ্রাম ব্যাসযােেগ ও ১১৫.৩৭ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ১৮-২০ মিনিট প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। কৌটাজাতকরণের ক্ষেত্রে লাহো বা তামার তৈরি ক্যান পরিহার করা উচিত।

আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার উদ্দেশ্যে কৌটাজাতকরণ প্রক্রিয়ায় বা লবণ জলে প্রতি কিলোগ্রাম চিংড়ির জন্য ২৫০ মিলিগ্রাম ডাইসািেডয়াম যৌগ ব্যবহার করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াজাতকৃত চিংড়ি বা মাছ বিভিন্ন অবস্থায় রপ্তানি করা হয়, যেমন- মস্তকবিহীন, সম্পূর্ণ খোসা ছড়ানো, লেজ ছাড়া বাকি অংশের খোলস ছড়ানো, প্রভৃতি। মস্তকবিহীন চিংড়ি গ্রেড অনুসারে প্যাকিং করা হয়।

 

চিংড়ির দীর্ঘকালীন সংরক্ষণ পদ্ধতি | অধ্যায়-১ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

 

গ্রেডঃ গ্রেড হলো প্রতি পাউন্ড চিংড়িতে কত সংখ্যক চিংড়ি বিদ্যমান। যেমন: গ্রেড ইউ-৫ এর অর্থ হলো প্রতি পাউন্ডে ৫ টি বা তার কম সংখ্যক চিংড়ি বিদ্যমান। রপ্তানিতে চিংড়ির প্রচলিত গ্রেডগুলো হলো- ইউ-১০, ইউ-১১ থেকে ১৫, ইউ-১৬ থেকে ২০, ইউ-২১ থেকে ২৫, ইত্যাদি।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment