আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১ প্রথম পত্র ব্যবহারিক । যা “বাগদা চিংড়ির খাদ্য ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।
শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১ প্রথম পত্র ব্যবহারিক
ব্যবহারিক- ১: বাগদা চিংড়ির শারীরিক গঠন পর্যবেক্ষণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
বাগদা চিংড়ির দেহকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়, যথা- (ক) শিরোবক্ষ এবং (খ) উদর
ক. শিরোবক (Cephalothorax
মাথা ও বক্ষ নিয়ে বাগদা চিংড়ির শিরোবক্ষ অঞ্চল গঠিত। শিরোবর্ম দ্বারা শিরোবক্ষ অঞ্চল আবৃত থাকে। এই শিয়োবর্ষ ক্যারাপেস নামে পরিচিত। এই ক্যারাগেসের অগ্রভাগে করাতের ন্যায় রোট্রাম অবস্থিত। রোস্ট্রামের পাড়োর উত্তর পার্শ্বে দুইটি সবৃত্তক পুঞ্জাক্ষি (Stalked compound eye) অবস্থিত। চিংড়ির শিরোবক্ষ অংশে ১৩ জোড়া উপাঙ্গ রয়েছে।
১. শিরোপাজ: বাপদা চিংড়ির শিরোদেশে ৫ জোড়া শিরোপাঙ্গ অবস্থিত। যথা- গুঙ্গানু (Antenul), ২. বক্ষ (Antena), ৩. ম্যান্ডিবুল, ৪. ম্যাক্সিলুলা ও ৫. ম্যাক্সিলা।
২. বক্ষ উপাঙ্গ: বক্ষদেশে অবস্থিত মোট ৮ জোড়া উপাদের প্রথম ৩ জোড়া উপাঙ্গকে ম্যাক্সিলিপেড এবং পরবর্তী ৫ জোড়া উপাঙ্গাকে চলন পদ বলা হয়।
১. ১ম ম্যাক্সিলিপেড;
২. ২য় ম্যাক্সিলিপেড;
৩. ৩য় ম্যাক্সিলিপেড;
৪. ১ম চলনপদ;
৫. ২য় চলনপদ;
৬. ৩য় চলনপদ
খ. উদর (Abdomen):
চিংড়ির উদর ক্রমান্বয়ে পিছনের দিকে সরু হয়ে লেজ বা টেলসনের সাথে মিশেছে। বাগদা চিংড়ির উদর অঞ্চলে অবস্থিত জোড়া উদর উপাঙ্গকে সতরণ পদ (Pleopod) বলা হয়। ১ম থেকে ৫ম উপাঙ্গ দেখতে অনেকটা একই রকমের। তবে ৬ষ্ঠ উপাঙ্গটি অনেকটা চ্যাল্টা ত্রিকোণাকৃতির। এই ৬ষ্ঠ উপাঙ্গকে ইউরোপডড় বা পুচ্ছ পাখনা বলা হয়।
১. ৩য় উদর উপাঙ্গ; ২. ১ম উদর উপাঙ্গ; ৩. ২য় উদর উপাস; ৪. ইউরোপড
জনন অঙ্গ: পুরুষ বাগদা চিংড়ির জননেন্দ্রিয়কে পেটাসমা (Petasma) ও স্ত্রী বাগদা চিংড়ির জননেন্দ্রিয়কে থেলিকাম (Thelycum) বলে। পুরুষ বাগদা চিংড়ির ১ম জোড়া সন্তরণ পদের মধ্যবর্তী স্থানে পেটাসমা এবং স্ত্রী বাগদা চিংড়ির ৪র্থ ও ৫ম সন্তরণ পদের মধ্যবর্তী স্থানে থেলিকাম অবস্থিত।
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. পুরুষ ও স্ত্রী বাগদা চিংড়ি
২. ট্রে
৩. বালতি
৪. কচি
৫. ফরসেপ বা চিমটা
৬. নিডল বা উঁচ
৭. আলপিন
৮, ম্যাগনিফাইং গাস বা আঁতশ কাঁচ
৯. পেসিমেন আর
১০. ফরমালিন
১১. ব্যালান্স
১২. বরফ
১৩. ব্যবহারিক খাতা
১৪. পেন্সিল
১৫. ইরেজার ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১. নিকটস্থ বাজার, পুকুর বা খামার থেকে স্ত্রী ও পুরুষ বাগদা চিংড়ি সংগ্রহ কর। বাগদা চিংড়ি লোনা পানির চিংড়ি বিধায় উপকূলীয় অঞ্চলের জলাশয়ে বা বাজারে এদের পাওয়া যায়।
২. নমুনা চিংড়ি সগ্রহের বিস্তারিত তথ্য, যেমন- চাষির নাম, পুকুর/খামারের অবস্থান, আয়তন, নমুনা। সংগ্রহের তারিখ প্রভৃতি তথ্য লিপিবদ্ধ কর।
৩. সংগৃহীত নমুনা চিংড়ি জীবিত হলে পানি ভর্তি বালতি এবং মৃত হলে বরফ দিয়ে বালতিতে করে বহন করে পরীক্ষাগারে আন।
৪. স্ত্রী ও পুরুষ চিংড়ি দূ টিকে আলাদা আলাদা ট্রেতে রেখে আলপিন দিয়ে চিৎড়িকে ট্রেতে অটকাও।
৫. ফরসেপ ও কাচির সাহায্যে শিরোবক্ষ ও উদর উপাঙ্গাসমূহকে চিংড়ির দেহ থেকে পৃথক করে ট্রেতে রাখ।
৬. রোস্ট্রীমের উপরিভাগ ও নিচের অংশের দাঁতগুলো আলপিনের সাহায্যে ভালভাবে গণনা কর।
৭. পুরুষ বাপদার ১ম জোড়া চলন পদের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত জনন অঙ্গ পেটাসমা ও স্ত্রী বাগদার ৪র্থ ও ৫ম জোড়া চলন পদের মধ্যবর্তী স্থানে জনন অঙ্গ থেলিকাম ম্যাগনিফাইং গাস দিয়ে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৮. ব্যবহারিক খাতায় স্ত্রী ও পুরুষ বাগদা চিংড়ির ছবি আঁক, এরপর বিভিন্ন বাহ্যিক অঙ্গ ও উপাঙ্গগুলো চিহ্নিত কর।
৯. সবশেষে অনুশীলন পদ্ধতি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
ব্যবহারিক- ২। বিভিন্ন প্রকার চিংড়ির পরিচিতি
প্রাসঙ্গিক তথ্য
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের সঙ্গীসমূহে এবং সাগরে প্রায় ৩৬ প্রজাতির লোনা পানির চিংড়ি পাওয়া যায়। লোনা পাদির অনেক প্রজাফিয় বিড়ি ৭০ পিপিটি লবণাক্ততা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পায়ে। বাগদা চিংড়ির বহিঃকঙ্কালের ২র উলয় খথকের প্রিউয়া ৩য় উদয় খণ্ডফের প্রিউন্নাবান্না আংশিক জাবৃত থাকে।
এদের প্রথম তিন জোড়া বক্ষ উপালা চিলেটে (ঈলবষধঃব) রূপান্তরিত হয়। সাধারণত লোনা পানির চিংড়ির প্রলাপু (An- tenule) দুটি ক্লাজেলাযুক্ত থাকে। অর্থনেতিক গুরুত্বসম্পন্ন ও চাইযোগ্য কতকগুলো লোনা পানির চিংড়ির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিচে দেয়া হলো।
বাপলা চিংড়ি (Penaeus monodon)
আগদা চিংড়ির গায়ের রং হালবন বাদামি বা সবুজ হয়ে থাকে। এদের গায়ে বাঘের মতো কালচে ফোরা কাটা দাগ থাকে বলে এদেরকে জায়েন্ট টাইগার প্রন (Gianttiger prawn) বলে। ইউরোপডড়ে দু’টি খন দীল বর্ণের ভোরাকাটা দাগ থাকে। এদের পাঞ্চলো বাদামি এবং গুরু (Anicans) ধূসর রঙের হয়ে থাকে। বাপলা চিংড়িয় প্রোগ্রাম শক্ত, বাকা ও প্রশস্ত। রোস্ট্রীমের উপরের দিকে ৬-৮ টি এবং নিচের দিকে ২-৪ টি দাঁত থাকে।
ঢাকা টিংকি (Penseus inclicus)
লোনা পানির এই চিংড়ির দেহে হালকা বাদামি রঙের কোটা দাগ থাকে। ঢাকা চিংড়ির প্রোগ্রামটি খুঁড়া ও যাঁক্ষা। রোস্ট্রামের উপরিভাগে ৮-১০ টি এবং নিচের দিকে ৪-৬ টি দাঁত থাকে।
হরিণা চিংড়ি (Metapenaeus monoceros)
হরিণা চিংড়ির রোস্ট্রাম সোজা এবং এতে কোনো চূড়া (Crest) নেই। এদের শুঙ্গ বাদামি রঙের এবং এন্টেনা ও ক্লাজেলা লাল। রঙের হয়ে থাকে। রাস্টোমের উপরিভাগে ৮-১২ টি দাঁত থাকে এবং নিচের অংশে কোনো দাঁত থাকে না।
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি
২. ট্রে
৩. বালতি
৪. ফরসেপ বা চিমটা
৫. আলপিন
৬. ম্যাগনিফাইং গাস
৭. স্পেসিমেন জার
৮. ফরমালিন
৯. বরফ
১০. গাম বা আঠা
১১. ব্যবহারিক খাতা
১২. পেনসিল
১৩. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১. নিকটস্থ কোনো বাজার, পুকুর বা খামার থেকে বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি, যেমন- বাগদা, ঢাকা, হরিণা চিংড়ি সংগ্রহ কর। যেহেতু লোনা পানির চিংড়ি সেহেতু উপকূলীয় অঞ্চলের কোনো বাজার বা চিংড়ি খামার বা উপকূলীয় জলাশয় থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
২. নমুনা চিংড়ি সংগ্রহের বিস্তারিত তথ্য, যেমন- চাষির নাম, খামারের নাম, খামারের আয়তন, অবস্থান, সংগ্রহের তারিখ, ওজন ইত্যাদি লিপিবদ্ধ কর।
৩. সংগৃহীত চিংড়ি বালতিতে করে উপযুক্ত বরফ দিয়ে পরীক্ষাগারে নিয়ে আসতে হবে।
৪. পরীক্ষাগারে চিংড়িগুলো আলাদা আলাদাভাবে ট্রেতে রেখে ফরসেফ দিয়ে বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলো পরীক্ষা করে দেখ।
৫. এবার আলপিন দিয়ে চিংড়িগুলোর রোস্ট্রামের উপরিভাগের ও নিচের অংশের দাঁতগুলো গণনা কর।
৬. বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়িগুলো এবার আলাদা আলাদাভাবে কাচের জারে ১০% ফরমালিনে সংরক্ষণ কর।
৭. প্রতিটি কাচের জারের গায়ে পৃথক পৃথকভাবে চিংড়ির শ্রেণিবিন্যাসসহ সংগ্রহের তারিখ সংবলিত। কাগজের লেবেল আঠা দিয়ে আটকিয়ে দাও।
৮. এবার ব্যবহারিক খাতায় বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ির শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যগুলো আলাদাভাবে লিখ।
ব্যবহারিক- ৩: চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
১. বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাশয়ে প্রায় ৬০ টি প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়। এদের ৩৬ টি লোনা পানির চিংড়ি এবং ২৪ টি মিঠা পানির চিংড়ি। আবার সবজাতের চিংড়িই বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও চাষযোগ্য নয়। লোনা পানির চিংড়ি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের নদীসমূহে এবং সাগরে পাওয়া যায়। মিঠা পানির চিংড়ি বাংলাদেশের প্রায় সকল নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওড়ে পাওয়া যায়।
২. বাজারে সাধারণত সায়েন্টিফিক স্টোর বা ঔষধের ফার্মেসিতে ফরমালিন পাওয়া যায়। বাজারে যে ফরমালিন পাওয়া যায় তা সাধারণত ৩৮-৪০% ফরমালডিহাইড এর দ্রবণ। কিন্তু এই ফরমালিনে চিংড়ি সংক্ষণ করা ঠিক নয়। চিংড়ি সংরক্ষণের জন্য এই ফরমালিন দ্রবণে পাতন পানি মিশিয়ে ১ ভাগ পানিঃ ৯ ভাগ ফরমালিন মিশিয়ে দ্রবণে পরিণত করতে হবে। মিশ্রণের সময় ফরমালিনের ঝাঝালো গন্ধ থেকে মুক্ত থাকার জন্য মুখম-লে মাস্ক পরে নেওয়া ভালো।
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি
২. ট্রে
৩. বালতি
৪. ফরসেপ বা চিমটা
৫. নিডল বা সুচ
৬. আলপিন
৭. স্পেসিমেন জার
৮.ডুপার
৯. পাতন পানি,
১০. ফরমালিন
১১. গাম বা আঠা
১২. বরফ
১৩. ব্যবহারিক খাতা
১৪. পেনসিল
১৫. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১. সম্ভব হলে নিকটস্থ বাজার বা খামার থেকে অথবা উপকূলীয় অঞ্চল থেকে বিভিন্ন প্রজাতির লোনা পানির। চিংড়ি সংগ্রহ করে আলাদাভাবে রাখ।
২. নিকটস্থ বাজার বা খামার থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মিঠা পানির চিংড়ি সংগ্রহ কর।
৩. নমুনা চিংড়ি সংগ্রহের বিস্তারিত তথ্য, যেমন- চাষির নাম, খামারের অবস্থান, আয়তন, নমুনা সংগ্রহের তারিখ, চিংড়ির ওজন প্রভৃতি লিপিবদ্ধ কর।
৪. লোনা পানির চিংড়িগুলো শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী পৃথক করে আলাদা আলাদা ট্রেতে রাখ।
৫. মিঠা পানির চিংড়িগুলো শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী পৃথক করে আলাদা আলাদা ট্রেতে রাখ।
৬. নিকটস্থ বাজার থেকে ফরমালিন সংগ্রহ কর।
৭. প্রয়োজনীয় পরিমাণ ১ ভাগ পানি: ৯ ভাগ ফরমালিন মিশিয়ে দ্রবণে পরিণত কর।
৮. প্রয়োজনীয় সংখ্যক জারে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ফরমালিন দ্রবণ লও।
৯. এবার বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি আলাদা আলাদা জারে সংরক্ষণ কর।
১০. প্রত্যেকটি জারের গায়ে কাগজ আটকিয়ে তাতে চিংড়ির শ্রেণিবিন্যাস ও সংরক্ষণের তারিখ লিখ।
১১. সবশেষে অনুশীলন পদ্ধতি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
ব্যবহারিক- ৪: বাগদা চিংড়ির অভ্যন্তরীণ গঠন পর্যবেক্ষণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
১. পরিপাকতন্ত্র: বাগদা চিংড়ির পরিপাকতনত্র পরিপাকনালি ও হেপাটোপ্যানক্রিয়াস গ্রন্থি সমন্বয়ে গঠিত।
২. পরিপাকনালি: বাগদা চিংড়ির পরিপাকনালি মুখ থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত। এই পরিপাকনালি প্রধানত অগ্র’ পরিপাকনালি, মধ্য পরিপাকনালি এবং পশ্চাৎ পরিপাকনালি এই তিনটি অংশে বিভক্ত।
অগ্র পরিপাকনালিঃ এই পরিপাকনালির প্রধান অংশ হচ্ছে মুখ গহবর, গ্রাস নালি এবং পাকস্থলী। পাকস্থলী আবার কার্ডিয়াক ও পাইলািেরক পাকস্থলীতে বিভক্ত।
মধ্য পরিপাকনালি: পাইলোরিক পাকস্থলীর পর লম্বা সরু সুতার মত অংশকে মধ্য পরিপাকনালি বলে। সাধারনত পরিপাকনালির এই অংশ অত্র নামে সমধিক পরিচিত।
পশ্চাৎ পরিপাকনালি: পরিপাক নালির সবচেয়ে ছোট এই অংশ মলাশয় ও পায়ুছিদ্র নিয়ে গঠিত।
৩. হেপাটোপ্যানক্রিয়াস গ্রন্থি: গহবরে অবস্থিত কমলা রঙের এই গ্রন্থিটিকে হেপাটোপ্যানক্রিয়াস গ্রন্থি বলে যা চিংড়ির একমাত্র পরিপাক গ্রন্থি।
৪. প্রজনন তন্ত্র: বাগদা চিংড়ি এক লিঙ্গ বিশিষ্ট প্রাণী। পুংজনন অঙ্গ ও স্ত্রীজনন অঙ্গ ভিন্ন ভিন্ন চিংড়িতে থাকে।
পুংজনন তন্ত্র: চিংড়ির পুংজনন তন্ত্র নিম্নবর্ণিত অঙ্গ নিয়ে গঠিত: ১. এক জোড়া শুক্রাশয় ২. এক জোড়া শুক্রনালি ৩. শুক্রথলি ৪. পুংজনন ছিদ্র
স্ত্রীজনন তন্ত্রঃ বাগদা চিংড়ির স্ত্রীজনন তন্ত্রে নিম্নবর্ণিত অঙ্গগুলো বিদ্যমান: ১, ডিম্বাশয় (Ovaries) ২. ডিম্বনালি (Oviaries) ৩. স্ত্রীজনন ছিদ্র (Female Genital Apertures)
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. পুরুষ ও স্ত্রী বাগদা চিংড়ি
২. ট্রে
৩. বালতি
৪. ফরসেপ বা চিমটা
৫. নিডল বা উঁচ
৬. কাঁচি
৭. আলপিন
৮. ম্যাগনিফাইং গাস
৯. স্কালপেল
১০. বরফ
১১. ব্যবহারিক খাতা
১২. পেনসিল
১৩. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
ক. পরিপাকতন্ত্র
১. নিকটস্থ বাজার, পুকুর বা খামার থেকে বাগদা চিংড়ি সংগ্রহ কর। বাগদা চিংড়ি লোনা পানিতে বাস
করে। বিধায় উপকূলীয় অঞ্চলের যে কোনো জলাশয় বা সাপরে এদের পাওয়া যায়। ২. নমুনা চিংড়ি সগ্রহের বিস্তারিত তথ্য, যেমন- চাষির নাম, খামারের অবস্থান, আয়তন, নমুনা সংগ্রহের তারিখ, ওজন প্রভৃতি লিপিবদ্ধ কর।
৩. নমুনা চিংড়ি প্রয়োজনীয় বরফ মিশ্রিত অবস্থায় বালতিতে করে পরীক্ষাগারে নিয়ে যাও।
৪. বালতি থেকে চিংড়ি তুলে ট্রেতে রাখ।
৫. চিংড়িটিকে এবার পৃষ্ঠদেশ উপরের দিকে রেখে আলপিন দিয়ে ভালোভাবে ট্রেতে আটকিয়ে রাখ।
৬. আঁতশ কাচ দিয়ে চিংড়ির মুখ ও পায়ু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৭. সাবধানে শিরোবক্ষ ও উদর উপাঙ্গগুলো কাঁচি দিয়ে কাটার পর পৃষ্ঠপার্শ্ব বরাবর টারগাম কাট।
৮. ফরসেপ দিয়ে সাবধানে টারগাম ও নিচের পেশী সরিয়ে ফেল।
৯. এবার হৃৎপিণ্ড ও যকৃৎ কচি দিয়ে কেটে ফেললে যকৃৎ-অগ্নাশয় গ্রন্থিটি দেখা যাবে।
১০. ফরসেপ ও স্কালপেল দিয়ে যকৃত-অগ্নাশয় গ্রন্থি সরিয়ে নিয়ে বাগদা চিংড়ির পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
১১. পেনসিল দিয়ে পরিপাকতনের চিত্র খাতায় আঁকি ও পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশগুলো চিহ্নিত কর।
খ. প্রজননতন্ত্র
১. নিকটস্থ বাজার, পুকুর ব্য খামার থেকে স্ত্রী ও পুরুষ বাগদা চিংড়ি সংগ্রহ কর।
২. নমুনা চিংড়ি সংগ্রহের বিস্তারিত তথ্য, যেমন- চাষির নাম, খামারের অবস্থান, আয়তন ও নমুনা।
সংগ্রহের তারিখ, ওজন প্রভৃতি লিপিবদ্ধ কর।
৩. সংগৃহীত নমুনা চিংড়ি প্রয়োজনীয় বরফ মিশ্রিত অবস্থায় বালতিতে করে পরীক্ষাগারে নিয়ে আন।
৪. বালতি থেকে স্ত্রী ও পুরুষ চিংড়ি তুলে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবচ্ছেদ ট্রেতে রাখ।
৫. চিংড়িকে এবারে পৃষ্ঠদেশ উপরের দিকে রেখে আলপিন দিয়ে ভালোভাবে ব্যবচ্ছেদ ট্রেতে আটকাও।
৬. এবার চিংড়ির পৃষ্ঠপার্শ্ব বরাবর কচি ও ফরসেপ দিয়ে টারগাম ও পেশী সরিয়ে ফেল।
৭. পেশী সরানোর পর সাবধানে হৃৎপিন্ডটি সরিয়ে ফেললে যকৃৎ-অগ্নাশয়ে জনন অঙ্গ দেখা যাবে।
৮. বাগদা চিংড়ির পুরুষ ও স্ত্রীজনন তন্ত্রের বিভিন্ন অংশগুলো পর্যবেক্ষণ কর।
৯. পেনসিল দিয়ে ব্যবহারিক খাতায় প্রজননতন্ত্রের ছবি আঁক ও জননতন্ত্রের বিভিন্ন অংশগুলো চিহ্নিত কর।
১০. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
ব্যবহারিক- ৫: পানির লবণাক্ততা পর্যবেক্ষন
প্রাসঙ্গিক তথ্য
বাগদা চিংড়ি লোনা পানিয় চিংড়ি। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের লোনা পানির জলাশয়সমূহে বাগদা চিংড়ি পাওয়া যায় এবং উপকূলীয় অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার লোনা পানিতে বাগদা চিংড়ির চাষ করা হয়। ১০ থেকে ২৫ পিপিটি লবণাক্ততাযুক্ত পানি বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য উপযোগী।
যদিও বাগদা চিংড়ি ০-৭০ পিপিটি লবণাক্ততাযুক্ত পানিকে বেঁচে থাকতে পারে। পানির লবণাক্ততা দু’টি উপায়ে পরিমাণ করা যায়, যথা- (ক) রিক্রাক্টোমিটার ব্যবহার করে ও (খ) হ্যাককীটে বিদ্যমান রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে।
ক. রিফ্লাক্টোমিটারের সাহায্যে লবণাক্ততা নির্ণয়
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. ছিপিসহ বোফস
২. বাটং পেপার
৩. রিফ্লাক্টোমিটার
৪. ড্রপার
৫. পাতন পানি
৬. ব্যবহারিক খাতা
৭. পেনসিল
৮. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১. যে জলাশয়, পুকুর বা খামারের পানির লবণাক্ততা নির্ণয় করতে হবে সেই পুকুর খামার থেকে এক পানি নংগ্রহ কর।
২. পানি সংগ্রহের বিস্তারিত তথ্য, যেমন- চাষির নাম, খামারের অবস্থান, পানি সংগ্রহের সময়, তারিখ, পানির গভীরতা, পানির রং প্রভৃতি লিপিবদ্ধ কর।
৩. এবার রিক্রাস্ট্রোমিটারের অগ্রভাগে অবস্থিত কভার প্লাইভ উঠিয়ে বটিং পেপার বা টিস্যু পেপার দিয়ে রিফাস্ট্রোমিটারের অগ্রভাগ ভালোভাবে পরিষ্কার কর।
৪. রিফ্লাক্টোমিটারের অগ্রভাগে করায় প্লাইডের নিচে ড্রপারের সাহায্যে করেক ফোঁটা পাড়িত পানি দাও।
৫. রিফ্লাক্টোমিটারের পশ্চাৎভাগে অবস্থিত আইপিসে চোখ লাগিয়ে রিফ্রাক্টোমিটারের অভ্যন্তরে অবস্থিত কেলটি শূন্যে এডজাস্ট কর।
৬. এবার রিফ্লাক্টোমিটারের অগ্রভাগে কভার স্নাইডের নিচে কয়েক ফোটা লবণাক্ত পানি দাও।
৭. অতঃপর আইপিসে চোখ লাগিয়ে পানির লবণাক্ততা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৮. রিফ্লাক্টোমিটারের অভ্যন্তরস্থ স্কেল থেকে সরাসরি লবণাক্ততার মাত্রা পরিমাপ কর।
৯. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
খ. হ্যাককীটের বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে পানির লবণাক্ততা নির্ণয় প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. ডিজিটাল টাইট্রেটর কার্টিজ (২.৫৭ CON মারকিউরিক নাইট্রেট)
২. ডাইফিনাইলকার্যাজোন পাউডারের পুরিয়া
৩. সিরিঞ্জ (৩ সিসি)
৪. ২, ৫, ১০, ২০ ও ২৫ মিলি বোতল
৫. ৪৭৩ মিমি ডিমিনারালাইজার বোতল
৬. ডিজিটাল টাইট্রেটর
৭. ডেলিভারি টিউব
৮. বড় ক্লিপারস
১০. পেনসিল
১১. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১. নিকটস্থ কোনো পুকুর বা খামার থেকে লবণাক্ত প্যান সংগ্রহ কর।
২. নমুনা পানি সংগ্রহের বিস্তারিত তথ্য, যেমন- চাষির নাম, পুকুরের অবস্থান, আয়তন, পানির সংগ্রহের সময়, তারিখ, পানির রং প্রভৃতি লিপিবদ্ধ কর।
৩. একটি পরিষ্কার ডেলিভারি টিউবকে মারকিউরিক নাইট্রেট (২,৫৭ CON) টাইট্রেশন কার্টিজের সাথে সংযুক্ত কর এবং টাইট্রেটরের চতুর্দিকে কার্টিজ লাগিয়ে দাও।
৪. ডেলিভারি টিউবের নব এবার ঘুরাতে থাক যে পর্যন্ত না টাইট্রেন্ট পড়া শুরু করে। অতঃপর ডেলিভারি টিউবের শেষপ্রাত মুছে ফেলে এবং নবকে উল্টোদিকে ঘুরিয়ে শুন্যে আন।
৫. ৩ মিলি সিরিঞ্জ দিয়ে সংগৃহীত নমুনা পানি থেকে ২ মিলি নিয়ে বোতলে রাখ।
৬. ১০ মিলি বোতলটি ডিমিনারলাইজড পানি দিয়ে পূর্ণ কর। ডিমিনারালাইজড বোতলে ট্যাপের পানি দিয়ে। ডিমিনারালাইজড পানি প্রস্তুত করা হয় এবং প্রায় ৩০ সেকেন্ড সময় এটি ঝাঁকানা েহয়।
৭. এবার ডাইফিনাইলকার্বাজোন রিএজেন্ট পাউডারের পুরিয়া বোতলে রাখ এবং ভালোভাবে এটি দ্রবণে মিশাও।
৮. মারকিউরিক নাইট্রেট দিয়ে নমুনা পানিকে টাইট্রেট করতে হবে যতক্ষণ না দ্রবণের রং হলুদ থেকে। হালকা পিংক বর্ণের হয়।
৯, ডিজিটাল কাউন্টার উইভার থেকে প্রাপ্ত রিডিংকে ১০ দিয়ে ভাগ করে নমুনা পানির লবণাক্ততা (পিপিটি)। নির্ণয় কর।
১০. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
ব্যবহারিক- ৬: পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন পর্যবেক্ষণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
বাগদা চিংড়ির অক্সিজেনের চাহিদা অন্যান্য জলজ প্রাণীর তুলনায় বেশি। চিংড়ি চাষের জন্য সর্বোত্তম অক্সিজেন মাত্রা হচ্ছে ৫-৭ মিগ্রা লিটার। কোনো পুকুরে সাধারণত দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাপ সকালে সবচেয়ে কম এবং বিকালে সবচেয়ে বেশি থাকে। পানির দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ দু’টি উপায়ে পরিমাপ করা যায়, যথা- ক. ডিও মিটারের সাহায্যে ও খ. হ্যাককীটে বিদ্যমান বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে।
ক. ডিও মিটারের সাহায্যে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ নির্ণয়
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. ডিও মিটার
৩. পেনসিল
২. ব্যবহারিক খাতা
৪. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১. নিকটস্থ কোনো চিংড়ি খামারে গমন কর।
২. খামারের যে কোনো একটি পুকুরের পানিতে ডিও মিটারাটির সংবেদনশীল অংশ অল্প সময়ের জন্য ডুবিয়ে রাখ।
৩. এভাবে পুকুরের কয়েকটি স্থান থেকে ডিওমিটারের সাহায্যে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ পরিমাপ কর এবং অক্সিজেনের পরিমাপের সময় লিখে রাখ।
৪. পেনসিল দিয়ে ডিওমিটারের রিডিংগুলো সময়সহ লিপিবদ্ধ কর।
৫. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
খ. হ্যাককীটের সাহায্যে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ নির্ণয়
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. দ্রবীভূত অক্সিজেন ১ বিকারক পাউডারের পুরিয়া।(Dissolved Oxygen 1 reagent powder pillow)
২. দ্রবীভূত অক্সিজেন ২ বিকারক পাউডারের পুরিয়া।(Dissolved Oxygen 2 reagent powder pillow)
৩. দ্রবীভূত অক্সিজেন ৩ বিকারক পাউডারের পুরিয়া।(Dissolved Oxygen 3 reagent powder pillow)
৪. ডিজিটাল টাইট্রেটর কার্টিজ।(০.০২৫ CON সোডিয়াম থায়াসোলফেট)
৫. স্টার্চ ইনডিকেটর (100 ml. MDV)
৬. বোতল (60 ml)
৭. দাগাঙ্কিত সিলিন্ডার
৮. ডিজিটাল ট্রাইট্রেটর (Digital tritrator)
৯. ডেলিভারি টিউব
১০. বড় ক্রিপারস
১১. ব্যবহারিক খাতা
১২. পেনসিল (100 ml)
১৩. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১. নিকটস্থ কোনো পুকুর বা খামারে গমন কর।
২. ছিপিযুক্ত ৬০ মিলি-এর একটি পরিষ্কার বোতলে পানি সংগ্রহ কর। এমনভাবে বোতলে পানি সংগ্রহ করতে হবে যেন বোতলটিতে পানির কোনো বুদবুদ না ঢুকে।
৩. নমুনা পানি সংগ্রহের বিস্তারিত তথ্য, যেমন- পুকুরের অবস্থান, আয়তন, পানি, পানি সংগ্রহের সময় ওতারিখ, রং প্রভৃতি লিপিবদ্ধ কর।
৪. এরপর বোতলে পানির সাথে একটি দ্রবীভূত অক্সিজেন-১ ও দ্রবীভূত অক্সিজেন-২ পাউডার মিশ্রিত কর। পাউডার মিশানোর পর খুব সাবধানে বোতলের ছিপি লাগাও যেন বোতলে বাতাস না ঢুকে।
৫. বোতলের অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাওয়ার পর তাড়াতাড়ি বোতলটিকে কয়েকবার উল্টা ও সোজা করে পাউডারকে ভালোভাবে পানির সাথে মিশ্রিত কর। এর ফলে কিছুক্ষণের মধ্যে বোতলে একটি বাদামি কমলা তলানী জমবে যা পরিমাপের ফলাফলকে প্রভাবিত করে না।
৬. এবার বোতলটিকে কিছুক্ষণ স্থির রাখ যাতে নিচে তলানি জমতে পারে। এর ফলে বোতলের উপরের অর্ধেক দ্রবণ পরিষ্কার দেখাবে। পুনরায় বোতলটিকে কয়েকবার উলট-পালট করে দ্রবণ মিশাও। এর পর আবার বোতলটিকে স্থির অবস্থায় রাখ যেন বোতলের উপরের অর্ধেক অংশ পরিষ্কার হয়।
৭. এবার ছিপি খুলে বোতলটিকে দ্রবণের সাথে দ্রবীভূত অক্সিজেন-৩ পাউডারের একটি পুরিয়া মিশ্রিত কর। পুনরায় সাবধানে ছিপি লাগাও যেন বোতলে বাতাসের বুদ্বুদ না ঢুকে। এবার কয়েকবার বোতলটিকে পুনরায় উলট-পালট করে দ্রবণের সাথে পাউডার মিশ্রিত কর। যদি পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকে তাহলে তলানী দ্রবীভূত হবে এবং দ্রবণ হলুদ বর্ণ ধারণ করবে।
৮. দাগাঙ্কিত ১০০ মিলি সিলিন্ডারে ৫০ মিলি প্রস্তুতকৃত নমুনা দ্রবণ ঢল।
৯. সোডিয়াম থায়াসোলফেট নরমাল (০.০২৫ CON) দ্রবণের সাথে একটি পরিষ্কার ডেলিভারি টিউব সংযুক্ত করে এবং টাইট্রেটরের চতুর্দিকে টাইট্রেশন কার্টিজ সংযুক্ত কর
১০. ডেলিভারি টিউরের নব এবার ঘুরাতে থাক যে পর্যন্ত ট্রাইট্রেন্ট পড়া শুরু করে। অতঃপর ডেলিভারি টিউবের। শেষ প্রান্ত মুছে ফেল এবং নবকে উল্টোদিকে ঘুরিয়ে শূন্যে আন।
১১. বোতলের বাকি ১০ মিলি প্রস্তুতকৃত দ্রবণকে সোডিয়াম খায়াসোলফেট (০.০২৫ CON) টাইট্রেন্টদ্বারা টাইট্রেট কর যে পর্যন্ত না দ্রবণটি হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
১২. দুই ফোটা স্টার্চ ইনডিকেটর দ্রবণ ঢালার পর বোতলকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মেশাতে থাক যতক্ষণ না দ্রবণ নীল রং ধারণ করে।
১৩. পুনরায় টাইট্রেশন শুরু কর যতক্ষণ না দ্রবণ ঘন নীল থেকে রং বিহীন হয়।
১৪. ডিজিটাল কাউন্টার উইন্ডা েথেকে এবার এর নম্বর সংখ্যা বের করতে হবে এবং এ সংখ্যাকে ৪০দ্বারা ভাগ। করে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা (মিগ্রা/লি) বের কর।
১৫. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
ব্যবহারিক- ৭: পানির পিএইচ পর্যবেক্ষণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
পিএইচ হচ্ছে পানিতে হাইড্রোজেন আয়নের মাত্রার পরিমাপ যা ০-১৪ পর্যন্ত হয়। পিএইচ ৭ হলো নিরপেক্ষ। পিএইচের মান হাইড্রোজেন আয়নের কার্যকারিতা নির্দেশ করে। চিংড়ি চাষের জন্য পানির আদর্শ পিএইচ হচ্ছে ৭.৫-৯.০। পানির পিএইচ কমে গেলে পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পায় এবং চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও খাবার রুচি কমে যায়।
আর পানির পিএইচ বেড়ে গেলে চিংড়ির ফুলকা ও চোখ নষ্ট হয়ে যায় এবং চিংড়ি খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়। পানির পিএইচ দু’ভাবে নির্ণয় করা যায়, যথা- (ক) পিএইচ মিটারের সাহায্যে এবং (খ) হ্যাককীট ব্যবহার করে।
ক. পিএইচ মিটারের সাহায্যে পানির পিএইচ নির্ণয়
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. পিএইচ মিটার
৩. পেনসিল
২. ব্যবহারিক খাতা
৪. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১. নিকটস্থ কোনো চিংড়ি খামারে প্রবেশ কর।
২. খামারের যে কোনো একটি পুকুরের পানিতে পিএইচ মিটারের সংবেদনশীল অংশ কিছুক্ষণের জন্য ডুবিয়ে রাখ।
৩. পিএইচ মিটারের ডিজিটাল কেল থেকে পিএইচ এর মাত্রা পরিমাপ কর। কয়েকবার রিডিং নিয়ে গড় মান বের কর এবং সময়সহ ব্যবহারিক খাতায় লিখ।
৪. অনুশীলন কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
খ. হ্যাককীটের সাহায্যে পানির পিএইচ নির্ণয়
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. ৪ মাত্রার পিএইচ ইনডিকেটর দ্রবণ
২. ১০০ এমএল গউই টিউব
৩. কালার ডিস্ক
৪. কালার ভিউং টিউব
৫. স্টপার
৬. কালার কমপারেটর বক্স
৭. ছিপিযুক্ত কাচের বোতল
৮. ব্যবহারিক খাতা
৯. পেনসিল
১০. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১. নমুনা পানি দিয়ে দুইটি টিউবের ৫ এমএল চিহ্ন পর্যন্ত পূর্ণ কর। পূর্বে ব্যবহৃত টিউব থাকলে তা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে যেন এর মাঝে অন্য কোনো দ্রবণ না থাকে।
২. একটি টিউবে ৬ ফোটা ৪ পিএইচ ইনডিকেটর দ্রবণ নিয়ে ভালাভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দ্রবণটি নমুনা পানির সাথে মিশাও। এবার উভয় টিউবের সাথে স্টপার সংযুক্ত কর।
৩. কালার বক্সের ডান পার্শ্বের ছিদ্রে ইনডিকেটর মিশ্রিত টিউবটি এবং কালার বক্সের বাম পার্শ্বের ছিদ্রে অমিশ্রিত ইনডিকেটর টিউবটি রাখ।
৪. কালার বাক্সকে আলোর দিকে যেমন- আকাশ, জানালা অথবা ল্যাম্প-এর দিকে ধর এবং সামনের দু’টি ছিদ্র দিয়ে ভালোভাবে লক্ষ্য করে রং এর চাকতিটি ঘুরিয়ে অনুরূপ রঙের সাথে মিলাও।
৫. স্কেলের ছিদ্র দিয়ে পিএইচ এর মাত্রা নির্ণয় কর।
৬. অনুশীলন কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
ব্যবহারিক- ৮: মাটির বৈশিষ্ট্য নির্ণয়
প্রাসঙ্গিক তথ্য
১. চিংড়ি চাষে মাটির পিএইচের গুরুত্ব অপরিসীম। মাটির পিএইচ এর উপর পুকুরের পানির পিএইচ অনেকাংশেই নির্ভরশীল। চিংড়ি চাষের জন্য পুকুরের মাটির পিএইচ ৫-৬.৫ এর মধ্যে থাকা উত্তম।
২. চিংড়ি খামারের জন্য দোআঁশ, বেলে দোআঁশ বা এঁটেল মাটির স্থান নির্বাচন করা দরকার। যে মাটিতে শতকরা ৮৫ ভাগের চেয়ে বেশি বালি কণা থাকে তাকে বেলে মাটি, শতকরা ৭৫ ভাগের কম বালিকণা ও শতকরা ২৫ ভাগের কম কাদাকণা যে মাটিতে থাকে তাকে দোআঁশ মাটি এবং যে মাটিতে শতকরা ৩৫ ভাগের বেশি কাদাকণা বা পলিকণা থাকে তাকে কাদা মাটি বলে।
৩. কষযুক্ত মাটি বা অ্যাসিড সালফেট সয়েল চিংড়ি চাষের জন্য সম্পূর্ণরূপে অনুপযাগেী। যে মাটির পিএইচ ৪ অথবা এর কম থাকে তাকে কষযুক্ত মাটি বা অ্যাসিড সালফেট সয়েল বলে। যেসব খামার বা পুকুরে অ্যাসিড সালফেট সয়েল থাকে সেসব খামার। পুকুরের মাটির উপরিভাগে কালো বা হলুদ লাল রঙের একটি আতরণ দেখা যায়।
ক. মাটির কণা নির্ণয়
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. দোআঁশ, বেলে দোআঁশ ও এঁটেল মাটি
২. পলিথিন ব্যাগ
৩. কাঁচ পাত্র
৪. পাতিত পানি
৫. ব্যবহারিক খাতা
৬. পেনসিল
৭. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১. নিকটস্থ খামারে গিয়ে মাটি সংগ্রহ করে পলিথিন ব্যাগের সাহায্যে পরীক্ষাগারে নিয়ে আন।
২. হাতে আধা মুঠো মাটি নিয়ে চাপ দিয়ে গুড়া করে তাতে পরিমিত পানি মিশাও।
৩. এবার মাটি দিয়ে দলা বানানারে চেষ্টা কর।
৪. দলা বানানো না গেলে অর্থাৎ মাটিকণা আলগা থেকে গেলে বুঝতে হবে এটা বেলে মাটি।
৫. রিং বানানো যায় তবে আংটি বানাতে গেলে ভেঙে যায় তবে বুঝতে হবে এটা দোআঁশ মাটি।
৬. মাটি দিয়ে ভালো রকম আংটি বানানো যায় তাহলে এটা এঁটেল মাটি।
৭. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
খ. মাটির পিএইচ নির্ণয় প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. সয়েল পিএইচ মিটার
২. ৪ টি পলিথিন ব্যাগ
৩. কাচ পাত্র
৪. পাতিত পানি
৫. ব্যবহারিক খাতা
৬. পেনসিল
৭. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১. নিকটস্থ খামার থেকে অল্প পরিমাণ (প্রায় ১ কেজি) মাটি সংগ্রহ করে পলিথিন ব্যাগে করে সংগৃহীত মাটি পরীক্ষাগারে নিয়ে আন।
২. কাচ পাত্রে এক মুঠো মাটি নিয়ে পাতিত পানি দিয়ে ভিজিয়ে দ্রবণ তেরি কর। এবার সয়েল পিএইচ মিটারের নিম্নভাগের সূচালো অগ্রভাগ দ্রবণের মধ্যে স্থাপন কর।
৩. এবার সয়েল পিএইচ মিটারের কেল থেকে মাটির পিএইচ এর মাত্রা পর্যবেক্ষণ কর।
৪. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
গ. অ্যাসিড সালফেট সয়েল চিহ্নিতকরণ প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. কষযুক্ত মাটি
২. পলিথিন ব্যাগ
৩. কাঁচ পাত্র
৪. পাতিত পানি
৫. সয়েল পিএইচ মিটার
৬. ব্যবহারিক খাতা
৭. পেনসিল
৮. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১. নিকটস্থ কোনো খামার থেকে আধা কেজি পরিমাণ মাটি সগ্রহ কর।
২. সংগৃহীত মাটি পলিথিন ব্যাগে করে পরীক্ষাগারে লও।
৩. মাটি সংগ্রহের সময় মাটির উপরের স্তরের রং ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৪. এক মুঠো সংগৃহীত মাটি একটি কাচ পাত্রে পাতিত পানি দিয়ে ভিজিয়ে কাদার মতো কর।
৫. এবার সয়েল পিএইচ মিটারের সুচালা েঅগ্রভাগ কাদার মধ্যে স্থাপন কর।
৬. সয়েল পিএইচ মিটারের কেল থেকে মাটির পিএইচ-এর মান পর্যবেক্ষণ কর।
৭. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
ব্যবহারিক- ৯: চিংড়ি খামারের বেড়ি বাঁধ নির্মাণ কৌশল
প্রাসঙ্গিক তথ্য
১. ভেড়ি বাঁধ খামারকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করে। ভেড়ি বাধের উচ্চতা সর্বোচ্চ জোয়ারের মাত্রা থেকে নূন্যতম ১ মিটার উপরে থাকা ভালো। প্রতি মিটার উচ্চতার জন্য বাঁধের ভূমির বিতার ৪-৫ মিটার হতে পারে। পুকুরের বাইরের দিকে বাঁধের ঢালু নিম্নরূপ হতে হবে।
২: ১= বাঁধের উচ্চতা ৪.২৬ মিটারের বেশি হলে এবং প্রচণ্ড ঢেউয়ের সম্ভাবনা থাকলে।
১ঃ ১= বাঁধের উচ্চতা ৪.২৬ মিটারের কম হলে এবং জোয়ারের উচ্চতা ১ মিটারের বেশি হলে।
১: ২= বাঁধের উচ্চতা ১ মিটারের কম হলে এবং জোয়ারের উচ্চতা ১ মিটার বা তার কম হলে।
২. বাধকে টেকসই এবং কার্যকর করার জন্য বাঁধের প্রকৃত উচ্চতার চেয়ে ১৫-২০% উচ্চতা বেশি করতে হবে ঘাতে মাটি সংকোচনের ফলে বাধের উচ্চতা কমে না যায়। এজন্য বাঁধ নির্মাণের সময় মাটি নিবিড়করণ (Compaction) করে ফেলা ভালো। মাটি নিবিড়করণের জন্য পানি প্রয়োগ, গুকানো এবং রোলার বা দুরমুজ ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া বৃষ্টির পানিতে বাধ যেন ধসে না যায় সে জন্য নির্মাণের পরপরই বাঁধের ঢালে ঘাসের চাপড়া লাগাতে হবে।
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. বাঁশের খুটি
২. চুন/দড়ি
৩. মেজারিং টেপ
৪. কোদাল
৫. ঝাকা
৬. রোলার বা দুরমুজ
৭. ব্যবহারিক খাতা
৮. পেনসিল
৯. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১. খামারের জন্য নির্বাচিত স্থানে গমন কর।
২. বাঁশের খুঁটি পুঁতে এবং চুন বা দড়ির সাহায্যে বাঁধ নির্মাণের স্থান চিহ্নিত কর।
৩. বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরুর আগেই বাঁধের দৈর্ঘ্য, বাঁধের চূড়া, ভিতরে ও বাইরের ঢালুতা ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধামত গ্রহণ করতে হবে।
৪. বাধের ভিতরের দিক থেকে মাটি কেটে বা অন্য জায়গা থেকে মাটি এনে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু কর।
৫. প্রতি ২০-৩০ সেমি উচ্চতা পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণের পর দুরমুজ বা রালোর দিয়ে মাটি ভালোভাবে সমান করে নিতে হবে।
৬. প্রথমে বঁধের মোট উচ্চতার ২ অংশ নির্মাণ করে কয়েকদিন অপেক্ষা কর।
৭. কয়েকদিন অপেক্ষা করার পর বাঁধের বাকি ১ অংশ নির্মাণ সম্পন্ন কর।
৮. পুকুর থেকে এমন দূরত্বে ভেড়ি বাঁধ নির্মাণ কর যেন ভেড়ি বাধের ভিতরের দিকে ১ মিটার প্রশস্ত বকচর সৃষ্টি
৯. বৃষ্টির পানিতে বাধ যাতে ধসে না যায়, সে জন্য নির্মাণের পরপরই বাঁধের ঢালে ঘাসের চাপড়া লাগিয়ে দাও।
১০. এবার বাধের চূড়া দুরমুজ বা রালোর দিয়ে সমান করে ফেল।
১১. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
ব্যবহারিক- ১০: ঘের/পুকুরের তলা শুকানো
প্রাসঙ্গিক তথ্য
১. পুকুরের তলদেশ ২-৫ সপ্তাহ সূর্যালোকে এমনভাবে শুকাতে হবে যেন তলার মাটিতে ৫-১০ সেমি ফাটল। সৃষ্টি হয়। তবে কষযুক্ত মাটি হলে ফাটল সৃষ্টি না করাই উত্তম। পুকুরের তলদেশ দিয়ে খালি পায়ে হেঁটে গেলে যদি ১-২ ইঞ্চিলা বেশি গর্ত না হয় তবে পুকুরের তলদেশ শুকানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।
২. পুকুরের তলদেশ শুকানোর ফলে রাক্ষুসে মাছ ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণী দমন করা যায়। মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মাটিতে বিদ্যমান হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস ও অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস দূরীভূত হয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. পাম্প মেশিন
২. পাম্প মেশিনের আনুষাঙ্গিক পদার্থসমূহ
৩. কোদাল ও পাত্র
৪. কোদাল
৫. ঝাকা
৬. রোলার বা দুরমুজ
৭. ব্যবহারিক খাতা
৮. পেনসিল
৯. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১. নিকটস্থ কোনো পুকুরে গমন কর।
২. পুকুরের পাড়ে পাম্প মেশিন এমনভাবে স্থাপন কর যেন মেশিনের সরবরাহ পাইপের (Delivery pipe) মুখ পাড়। থেকে দূরে অবস্থান করে।
৩. এবার মেশিন স্টার্ট দিয়ে পুকুরের পানি নিষ্কাশন কর।
৪. পুকুরের তলদেশের নিচু এলাকায় পানি জমে থাকলে কোদাল দিয়ে নালা কেটে পানি মেশিনের সংগ্রহ পাইপের। (Suction pipe) গোড়ায় যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এতে পুকুরের সমস্ত পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হবে।
৫. পুকুরের সমস্ত পানি নিষ্কাশন করা শেষ হলে পাম্প মেশিন বন্ধ করে দাও।
৬. পুকুরের তলদেশ উত্তমরূপে শুকানোর জন্য ২-৫ সপ্তাহ সূর্যালোক ফেলে রাখ।
৭. এরপর পুকুরের তলদেশ দিয়ে খালি পায়ে হেঁটে গেলে যদি ১-২ ইঞ্চির বেশি গর্ত না হয় তবে তলদেশ শুকানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।
৮. এবার পুকুরের তলদেশ যথাযথভাবে শুকানো হয়েছে কিনা তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৯. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
১০. এবার বাঁধের চূড়া দুরমুজ বাঁ রোলার দিয়ে সমান করে ফেল।
১১. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যাবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
ব্যবহারিক ১১: চিংড়ি ঘেরের রাক্ষুসে মাছ পরিচিত
প্রাসঙ্গিক তথ্য
রাক্ষুসে মাছ চিংড়ি ঘেরের জন্য অশনি সংকেতস্বরুপ। রাক্ষুসে মাছ চিংড়ি পোনার সবচেয়ে বড় শত্রু। অনেক সময় রাক্ষুসে মাছ চিংড়ির উৎপাদনকে দারুণভাবে ব্যহত করে। সাধারণত রাক্ষুসে মাছ প্রাণীভাঙ্গেী হয়ে থাকে। এরা ঘেরে চিংড়ির পোনা খেয়ে ফেলে, ফলে চিংড়ি চাষি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সাধারণত যে সব মাছ চিংড়ি বা অন্য মাছ খেয়ে ফেলে তাদেরকে রাক্ষুসে মাছ বলা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাক্ষুসে মাছের মুখ বড় এবং পরিপাকনালি ছোট হয়ে থাকে। কারণ খাদ্য শিকলের মাঝামাঝি থেকে এরা খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। অনেক রাক্ষুসে মাছের মুখে ধারালো দাঁত থাকে। আমাদের দেশে চিংড়ি ঘেরে যে সমস্ত রাক্ষুসে মাছ দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে ফলি, টেংরা, ভেটকি, বায়োল, বেলে, শোল, প্রভৃতি মাছ উল্লেখযোগ্য।
রাক্ষুসে মাছের বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
ফলি মাছ
এই মাছের উভয় পার্শ্ব চাপা, মুখ চোখের মাঝ বরাবর বিস্তৃত এবং মুখের উপরের ও নিচের চোয়াল সমান। উভয় চোয়ালে দাঁত আছে। এদের কণ্ঠেও হুকের মত বাঁকা দাঁত আছে। পৃষ্ঠদেশীয় পাখনা ও লেজ অত্যন্ত ছোট। এই মাছের পরিপাকনালিও অভ্যন্ত ছোট। এরা স্বভাবে মাংসভোজী বলে এদেরকে রাক্ষুসে মাছ বলা হয়।
টেংরা মাছ
এই জাতীয় মাছের মাথা অপেক্ষাকৃত বড় এবং নিচের চোয়াল উপরের চোয়ালের চেয়ে বড়। মুখ চোখ বরাবর বিস্তৃত। নিচের চোয়ালের নিচে একজোড়া পঁড়ি বা গুড় (Barbel) থাকে যা উদর পাখনা পর্যন্ত পৌঁছানো এবং উভয় চোয়ালে ভোতা পত্ত আছে। লেজের পাখনা দু’ভাগে বিভক্ত তবে উপরের অংশ অপেক্ষাকৃত বড়। এদের পরিপাকনালি অপেক্ষাকৃত ছোট। বাংলাদেশের উপকূলীয় জলাশয়ে এদের প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
বোয়োল মাছ
লম্বাকৃতির এই মাছের মাথা অনেকটা অবনত এবং নিচের চোয়ালের নিম্নাংশে দু জোড়া শুড় থাকে। নিচের চোয়াল উপরের চোয়ালের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বড়। বায়োল মাছের মুখ চোখের পশ্চাত্মণের পিছন পর্যন্ত বিস্তৃত এগং উপরের ও গিয়ে তোয়ালে পতি বিদায়ান।
ফাটাথিহীদ পৃষ্ঠ পাখনা আগায়ে অত্যন্ত ছোট এখং পায়ু গাখশা (Anal fin) লেজের (Caudal fin) সাথে সংযুক্ত নয়। এরা অত্যন্ত লাভেী বা পেটুক (Voracious) প্রকৃতির মাছ এবং শিকারি স্বভাবের জন্য এরা রাক্ষুসে মাছ হিসেবে অতি পরিচিত।
ভেটকি মাছ
লম্বাকৃতির এই মাছের দেহ চ্যাপ্টা। অঙ্কীয় দেশের চেয়ে এদের পৃষ্ঠদেশ বেশি উত্তল। এদের মুখের ফাঁক খুব বড় এবং চোয়াল চোখের পিছন পর্যন্ত বিস্তৃত। উত্তয় চোয়ালে দাঁত অবস্থিত। এদের চোখ দেহের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট। এদের পৃষ্ঠদেশীর পাখনা ও পায়ু পাখনার তৃতীয় কাঁটা অত্যন্ত লম্বা এবং শক্ত।
উদর পাখনা বক্ষ পাখুনার চেয়ে ছোট। লেজ দেখতে অনেকটা গোলাকার। এদের পরিপাকনালি বেশ ছোট এবং স্বভাবে এরা মাসভাজী বা শিকারি। সাগর এবং উপকূলীয় জলাশয়ে এদের প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। অনেক সময় মিঠা পানিতেও এদের পাওয়া যায়।
বেলে মাছ
এই মাছের অগ্রভাগ অনেকটা নলাকার এবং পশ্চাঙ্গ কিছুটা চ্যাপ্টা। এদের নিচের চোয়াল অপেক্ষাকৃত লম্বা এবং চোয়াল নিচের দিকে চোখের অগ্রভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। এদের ঠোট বেশ পুরু বা মোটা এবং লেজ অনেকটা গালাকার। এদের উভয় চোয়ালে দাঁত আছে এবং চোয়ালের সম্মুখভাগে ছেদন দাঁত অবস্থিত। বাংলাদেশের সর্বত্র এই মাছ পাওয়া যায়।
শোল মাছ
শোল মাছের অগ্রভাগ প্রায় নলাকার তবে পশ্চাঙ্গ কিছুটা চ্যাপ্টা। এদের মুখের কাক (Cleft) অনেক বড় এবং চোয়াল চোখের পিছন পর্যন্ত বিস্তৃত। এদের উত্তয় চোয়ালে দাঁত থাকে। শোল মাছের লেজ গোলাকার। এই জাতীয় মাছ মাংসভোজী এবং এরা বিভিন্ন জীবিত প্রাণী যেমন- মাছ, ব্যাঙ, সাপ, পোকা-মাকড়, কেঁচো এবং ব্যাঙাচি খেয়ে জীবন ধারণ করে থাকে।
এদের পরিপাকনালী অত্যন্ত ছোট। এরা জলাশয়ের কাদার নিচে বাস করে এবং পানি ছাড়া কাদার মধ্যে এরা কয়েক মাস বেঁচে থাকতে পারে।
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. ঝাকি জাল
২. ট্রে
৩. বালতি
৪. কাচি
৫. স্কালপেল
৬. নিডল
৭. আলপিন
৮. ফরসেপ
৯. কাচের জার
১০. ফরমালিন
১১. তুলি
১২. ব্যবহারিক খাতা
১৩. পেনসিল
১৪. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১. নিকটস্থ পুকুর বা খামার থেকে বিভিন্ন জাতের রাক্ষুসে মাছ সংগ্রহ কর।
২. নমুনা মাছ সগ্রহের বিভিন্ন তথ্য, যেমন- চাষির নাম, খামারের অবস্থান, আয়তন, নমুনা সংগ্রহের তারিখ, প্রতিটি নমুনা মাছের ওজন প্রভৃতি লিপিবদ্ধ কর।
৩. বালতিতে করে সংগৃহীত নমুনা মাছ প্রয়োজনীয় বরফ মিশ্রিত করে পরীক্ষাগারে আন।
৪. বিভিন্ন জাতের মাছ আলাদা আলাদাভাবে ব্যবচ্ছেদ ট্রেতে রাখ।
৫. ফরসেপ ও নিভলের সাহায্যে বিভিন্ন জাতের মাছের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৬. এবার প্রত্যেক জাতের একটি করে মাছকে আলপিন দিয়ে ব্যবচ্ছেদ ট্রেতে আটকাও।
৭. স্কালপেল ও কাচি দিয়ে প্রত্যেক জাতের মাছ ব্যবচ্ছেদ করে পরিপাকনালি পর্যবেক্ষণ কর।
৮. নমুনা মাছ সংগ্রহের তারিখসহ মাছের নাম কাগজে লিখে তা কাচ জারের গায়ে আঠা দিয়ে আটকাও।
৯. প্রত্যেক জাতের মাছের বৈশিষ্ট্যগুলো আলাদা আলাদাভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
১০. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখ।

ব্যবহারিক- ১২: রোটেননের পরিমাণ নির্ণয় ও প্রয়োগ পদ্ধতি অনুশীলন
প্রাসঙ্গিক তথ্য
ডেরিস নামক এক ধরনের পাহাড়ি গাছের শিকড় থেকে হালকা বাদামি রঙের এই রোটেনন পাউডার উৎপাদন করা হয়। এই পাউডারের বিষক্রিয়ার ফলে মাছ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায় তবে এই বিষক্রিয়ায় মৃত মাছ খাওয়ায় মানব দেহের কোনো অসুবিধা হয় না। রোটেনন প্রয়োগে চিংড়ির কোনো ক্ষতি হয় না এবং সূর্যকিরণে এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। চিংড়ি ঘেরে সাধারণত রাক্ষুসে মাছ দমনের জন্য রোটেনন পাউডার ব্যবহার করা হয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. রোটেনন পাউডার
২. দুটি ছোট ড্রাম
৩. বালতি
৪. ছোট মগ
৫. ব্যালেন্স
৬. মেজারিং টেপ
৭. মেজারিং পোল
৮. ক্যালকুলেটর
৯. ব্যবহারিক খাতা
১০. পেনসিল
১১. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
প্রথম পর্যায়: রোটেননের পরিমাণ নির্ণয়।
১. নিকটস্থ কোনো চিংড়ি খামারে গিয়ে ফিতা ও মেজারিং পোলের সাহায্যে পুকুরের পানির উপরিভাগের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ এবং পানির গভীরতা পরিমাপ কর।
২. এবার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ গুণ করে পুকুরের আয়তন বের কর।
৩. প্রতি ১৮-২৫ গ্রাম/শতাংশ/ফুট হিসেবে মোট রোটেননের পরিমাণ বের কর।
৪. এবার খাতায় ছক আকারে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, গতীরতা, আয়তন ও মোট রোটেননের পরিমাণ লিপিবদ্ধ কর।
৫. অনুশীলনকৃত কার্যক্রমটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
উদাহরণ
ধরা যাক, পুকুরের পানির উপরিভাগের দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট, প্রস্থ ৬০ ফুট এবং পানির গভীরতা ৩ ফুট। তাহলে পুকুরের আয়তন= ৩০০ x ৬০= ৬০০ বর্গফুট= ৪১ শতাংশ। মোট পরিমাণ= আয়তন × গভীরতা প্রতি শতাংশে রোটেননের পরিমাণ= ৪১ × ৩ × ২৫=৩০৭৫ গ্রাম= ৩.০ কিলোগ্রাম
দ্বিতীয় পর্যায়: রোটেনন প্রয়োগ পদ্ধতি
১. মোট নির্ধারিত পরিমাণ পাউডারের ১/৩ ভাগ ১ টি ছোট ড্রামে নিয়ে অল্প পানিতে মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে মন্ড তৈরি কর।
২. এবার মন্ড দিয়ে ছোট ছোট বল বানিয়ে সেগুলো পুকুরের বিভিন্ন অংশে নিক্ষেপ কর।
৩. অবশিষ্ট ২/৩ ভাগ পাউডার অন্য একটি ড্রামে নিয়ে পানি দিয়ে ভালোভাবে দ্রবণ তৈরি কর।
৪. উক্ত দ্রবণের সাথে আরও অধিক পরিমাণ পানি মিশিয়ে তা মগ দিয়ে পুকুরের সমস্ত পানিতে উত্তমরূপে ছিটিয়ে দাও।
৫. অনুশীলনকৃত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখ।
ব্যবহারিক- ১৩: পুকুরে চুন প্রয়োগের পরিমাণ নির্ণয় ও প্রয়োগ পদ্ধতি অনুশীলন
প্রাসঙ্গিক তথ্য
পুকুরের পুষ্টি গুণাগুণ বৃদ্ধি এবং রোগ-জীবাণু ও বাজে গ্যাস প্রতিরোধের জন্য চুন ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া পুকুরের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় চুনের গুরুত্ব অপরিসীম। বাজারে সাধারণত তিন প্রকার চুন পাওয়া যায়। যেমন
১. পাথুরে চুন (Lime stone): CaCO3
২. কলিচুন (Slaked Lime): Ca(OH)2
৩. পোড়া চুন (Quick Lime): CaO
মূল্য ও কার্যকারিতা বিবেচনায় পুকুরে সাধারণত পাথুরে চুন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চিংড়ি ঘেরে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা হয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. চুন
২. দুটি ছোট ড্রাম
৩. বালতি
৪. ছোট মগ
৫. ব্যালেন্স
৬. মেজারিং টেপ
৭. মেজারিং পোল
৮. ক্যালকুলেটর
৯. ব্যবহারিক খাতা
১০. পেনসিল
১১. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
ক. প্রথম পর্যায়: চুন প্রয়োগের পরিমাণ নির্ণয়
১. নিকটস্থ কোনো পুকুর বা খামারে গিয়ে মেজারিং টেপ ও মেজারিং পালের সাহায্যে পুকুরের দৈর্ঘ্য ও গ্রন্থ (ফুট) পরিমাপ কর।
২. এবার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ গুণ করে উক্ত গুণফলকে ৪৫.৬ দিয়ে ভাগ করে শতাংশে পুকুরের আয়তন নির্ণয় কর। মনে রাখতে হবে ১ শতাংশ = ৪৩৫.৬ বর্গ ফুট (প্রায়)।
৩. এবার ব্যবহারিক খাতায় ছক আকারে পুকুরে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, আয়তন ও চুনের পরিমাণ লিপিবদ্ধ কর।
৪. অনুশীলন কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
পুকুরের দৈর্ঘ্য (ফুট) | পুকুরের প্রস্থ (ফুট) | আয়তন (শতাংশ) | চুনের পরিমান (কেজি) | মন্তব্য |
১০০ | ৬০ | ১৪ | ১৪ | ৪৩৫.৬ বর্গ ফুট = ১ শতাংশ এবং ১০০০ গ্রাম ১ কেজি |
উদাহরণ: মনে কর একটি পুকুরের দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট ও প্রস্থ ৬০ ফুট।
পুকুরের আয়তন = ১০০ x ৬০ = ৬,০০০ বর্গ ফুট= ৬,০০০/৪৩৫.৬= ১৩.৭৭ শতাংশ = ১৪ শতাংশ= ১.০ কেজি × ১৪ = ১৪ কেজি
খ. দ্বিতীয় পর্যায়: পুকুরে চুন প্রয়োগ পদ্ধতি।
১. পরিমাপকৃত চুন টিনের ড্রাম বা বালতি বা মাটির চাড়িতে ১২-২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখ। চুন গোলাবার সময় তাপ সৃষ্টি হয় বিধায় পাস্টিকের পাত্রে চুন গুলানো উচিত নয়।
২. চুন ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পর ড্রামে বেশি পানির সাথে মিশিয়ে তরল কর।
৩. এবার চুনের দ্রবণ মগ দিয়ে সমস্ত পুকুরে ভালোভাবে ছিটিয়ে দাও।
৪. সর্বত্র সমানভাবে চুন প্রয়োগ করতে হবে, বাতাসের অনুকূলে চুন প্রয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. এবার অনুশীলনকৃত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
ব্যবহারিক- ১৪ পুকুরের তলদেশে চাষ পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
চিংড়ির পুকুরের মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য পুকুরের তলদেশে চাষ দেয়া হয়। পুকুরের তলদেশের মাটির ৬ ইঞ্চির অধিক গভীরে চাষ দেয়া উচিত নয়। কষযুক্ত মাটিতে চাষ না দেয়াই উত্তম। কষযুক্ত মাটি চাষ দিলে কষযুক্ত মাটি তলদেশের উপরিভাগে চলে আসে, ফলে পুকুরের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়।
কাজের ধাপ
১. নিকটস্থ কোনো পুকুর বা খামারে গমন কর।
২. কষযুক্ত মাটি কিনা তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৩. মাটি কষযুক্ত না হলে পুকুরের তলদেশে চাষের উপযোগী হয়েছে কি না তা পর্যবেক্ষণ কর।
৪. এবার পাওয়ার টিলার বা লাঙল দিয়ে কিভাবে চাষ দিচ্ছে তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৫. পাওয়ার টিলারের বা লাঙলের ফলা মাটির ৬ ইঞ্চির নিচে প্রবেশ করছে কি না তা পর্যবেক্ষণ কর।
৬. এক শতাংশ জমি চাষ দিতে মোট কত সময় লাগছে তা খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
৭. অনুশীলনকৃত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
ব্যবহারিক- ১৫: পুকুরে সার প্রয়োগের পরিমাণ নির্ণয়
প্রাসঙ্গিক তথ্য
চিংড়ির খামারে সাধারণত দু’ধরনের সার ব্যবহার করা হয়, যেমন- জৈব ও অজৈব সার। জৈব সার হন্দ্রে গোবর, কম্পোস্ট ইত্যাদি এবং অজৈব সার হলো- ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি ইত্যাদি। পুকুর প্রস্তুতকালীন জৈব ও অজৈব সার আলাদা আলাদাভাবে বা উভয় প্রকারের সার একত্রে মিশ্রিত করে প্রয়োগ করা যায়।
চুন প্রয়োগের ৭ ১০ দিন পর জৈব ও অজৈব সারের মিশ্রণ পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণ অবস্থায় প্রতি শতাংশে গোবর ৮ ১০ কেজি, ইউরিয়া ১০০ গ্রাম এবং টিএসপি ৫০ গ্রাম প্রয়োগ করা হয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. ইউরিয়া সার
২. টিএসপি সার
৩. গোবর সার
৪. বালতি
৫. হাফ ড্রাম
৬. ছোট মগ
৭. মেজারিং টেপ
৮. মেজারিং পালে
৯. ব্যালান্স
১০. ব্যবহারিক খাতা
১১. পেনসিল
১২. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
ক. সার প্রয়োগের পরিমাণ নির্ণয়
১. নিকটস্থ কোনো খামার বা পুকুরে গিয়ে মেজারিং টেপ ও মেজারিং পােেলর সাহায্যে পুকুরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ (ফুট) পরিমাপ কর।
২. এবার পরিমাপকৃত দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ গুণ করে উক্ত গুণফলকে ৪৩৫.৬ দিয়ে ভাগ করে শতাংশে পুকুরের আয়তন নির্ণয় কর (১ শতাংশ = ৪৩৫.৬ বর্গফুট)।
৩. শতাংশ প্রতি ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০ গ্রাম টিএসপি ও ৫ কেজি গোবর সার হিসেবে মোট ইউরিয়া টিএসপি ও গোবর সারের পরিমাণ নির্ণয় কর।
৪. অনুশীলন কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
পুকুরের দৈর্ঘ্য (ফুট) | পুকুরের প্রস্থ (ফুট) | আয়তন (শতাংশ) | ইউরিয়া (গ্রাম) | টিএসপি (গ্রাম) | গোবর (কেজি) | মন্তব্য |
১০০ | ৬০ | ১৪ | ১৪০০ | ৭০০ | ১৪০ | ১০০০ গ্রাম= ১ কেজি ৪৩৫.৬ বর্গ ফুট = ১ শতাংশ |
উদাহরণ: মনে কর, পুকুরের দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট ও প্রস্থ ৬০ ফুট। তাহলে
পুকুরের আয়তন = ১০০ x ৬০ = ৬,০০০/৪৩৫.৬ বর্গ ফুট= ১৩.৭শতাংশ = ১৪ শতাংশ
মোট ইউরিয়া সারের পরিমাণ = ১০০ গ্রাম × ১৪= ১৪০০ গ্রাম
মোট টিএসপি সারের পরিমাণ= ৫০ গ্রাম × ১৪= ৭০০ গ্রাম
মোট গোবর সারের পরিমাণ = ১০ কেজি × ১৪= ১৪০ কেজি
খ. পুকুরে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
১. পুকুরে সার প্রয়োগের ১ দিন আগে টিএসপি সার বালতি বা হাফ ড্রামে ভিজিয়ে রাখ।
২. সার ব্যবহারের দিন ইউরিয়া ও পোষর সার আলাদা আলাদা ড্রাম বা বালতিতে গুল।
৩. এবার ইউরিয়া, টিএসপি ও গোবর সার একত্রে একটি বড় ড্রামে বেশি পানির সাথে মিশিয়ে দ্রবণ। তৈরি কর।
৪. সারের প্রবণ বালচ্চিতে নিয়ে পুকুরের উপরিভাগে ছোট মগের সাহায্যে সর্বত্র উত্তমরূপে ছিটিয়ে দাও।
৫. অনুশীলন কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
সাবধানতা:
১. টিএসপি সার সহজে গুলে না। তাই ব্যবহারের আপের দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
২. চুন প্রয়োগের ৭-১০ দিন পর সারের মিশ্রণ পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে।
ব্যবহারিক- ১৬: ঘেরের পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য পর্যবেক্ষণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
চিংড়ি ঘেরের পানিতে বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানের উপস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে যে সব খাদ্য তৈরি হয় তাকে প্রাকৃতিক খাদ্য বলে। প্রাকৃতিক খাদ্যের উপর নির্ভর করে আমাদের দেশে উন্নত সমপ্রসারিত চাষ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করা হয়। প্রাকৃতিক খাদ্য দুখরনের উদ্ভিদ প্ল্যাংকটন (Phytopankton) ও প্রাণী প্ল্যাংকটন (Zooplankton)।
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. ছিপিসহ কাচের বোতল
২. প্যাংকটন নেট
৩. কানেল
৪. ড্রপার
৫. জেট বোতল
৬. পরিসুত পানি
৭. স্লাইড কতারসহ গাস
৮. মাইক্রোস্কোপ
৯. ব্যবহারিক খাতা
১০. পেনসিল
১১. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১. নিকটস্থ কোনো চিংড়ি খামারে গমন কর।
২. খামারের যে কোনো পুকুর থেকে ১০ লিটার পরিমাণ পানি প্ল্যাংকটন নেট দিয়ে হেঁকে সংগৃহীত প্ল্যাংকটন জেট বোতল ও ফানেলের সাহায্যে বোতলে নিয়ে পানিসহ বোতল পরীক্ষাগারে নিয়ে আস।
৩. বোতলটি সামান্য একটু বেঁকে নিয়ে ড্রপার দিয়ে বোতল থেকে পানি নিয়ে পাস স্লাইডের উপর এক কোটা নমুনা রাখ এবং স্নাইড ককার দিয়ে পানি ঢেকে দাও।
৪. এবার মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে প্রাণী ও উদ্ভিদ প্ল্যাংকটন ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৫. উপরে অঙ্কিত প্রাণী ও উদ্ভিদ প্ল্যাঙ্কটন চিত্রের সাথে মিলিয়ে দেখে প্রাণী ও উদ্ভিদ প্ল্যাংকটন শনাক্ত কর।
৬. এবার পর্যবেক্ষণকৃত প্রাণী প্ল্যাংকটন ও উদ্ভিদ প্ল্যাংকটনের ছবিগুলো পেনসিল দিয়ে ব্যবহারিক খাতায় আঁক।
৭. অনুশীলনকৃত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
ব্যবহারিক- ১৭: সেক্কি ডিষ্ক তৈরি ও পানির স্বচ্ছতা পরীক্ষাকরণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
খামারের পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য অর্থাৎ প্ল্যাংকটনের পরিমাণের ওপর চিংড়ির উৎপাদন নির্ভরশীল। সাধারণত পানির স্বচ্ছতা পরিমাপ করে পুকুরের পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। পানির স্বচ্ছতা ২৫-৪০ সেমি-এর মধ্যে থাকলে বুঝতে হবে পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য অর্থাৎ প্ল্যাংকটন বিদ্যমান আছে।
সাধারণত সেঞ্চি ডিস্ক দিয়ে পানির স্বচ্ছতা পরীক্ষা করা হয়। সেকি ডিক হচ্ছে লাহো বা ভারী টিনের তৈরি একটি গোলাকার চাকতি বিশেষ। এই গোলাকার চাকতির চারটি সমান অংশে ভাগ করে পর্যায়ক্রমিকভাবে সাদা ও কালো রং লাগিয়ে চিহ্নিত করা হয়। এই চাকতির কেন্দ্রে সুতা বা একটা শক্ত কাঠের লাঠি স্থাপন করে এই সুতা বা লাঠি সেন্টিমিটারে দাগাঙ্কিত করা হয়। তবে ২৫ সেমি ও ৪০ সেমি- এ অত্যন্ত স্পষ্টভাবে দাগাজ্জিত করা হয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. একটি গোলাকার চাকতি
২. মোটা সুতা
৩. সাদা ও কালো রং
৪. তুলি
৫. কেল
৬. অমুছনীয় মার্কিং পেন
৭. ব্যবহারিক খাতা
৮. পেনসিল
৯. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
ক. প্রথম পর্যায়: সেক্কি ডিস্ক তৈরি
১. লাহোর বা ভারী টিনের একটি গোলাকার চাকতি সংগ্রহ করে তার উপরিভাগ কেল দিয়ে মেপে সমান চারভাগে বিভক্ত কর।
২. এবার গোলাকার চাকতির উপরিপৃষ্ঠের চারটি অংশকে তুলির সাহায্যে সাদা ও কালো রং দিয়ে চিহ্নিত কর।
৩. চাকতিটির কেন্দ্র বিন্দুতে একটি ছোট ছিদ্র করে এই ছিদ্র দিয়ে একটি মোটা সুতা ঝুলিয়ে দাও।
৪. এবার স্কেল দিয়ে সুতাটিকে সেন্টিমিটারে অমুছনীয় কালি দিয়ে দাগাঙ্কিত কর।
৫. সুতাটির ২৫ সেমি ও ৪০ সেমি-এ বিশেষভাবে অমুছনীয় কালি দিয়ে চিহ্নিত কর।
৬. অনুশীলন কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
খ. দ্বিতীয় পর্যায়: সেকি ডিস্কের ব্যবহার
১. নিকটস্থ কোনো পুকুর পাড়ে গমন করে সাবধানে পুকুর পাড় থেকে বা পানিতে নেমে সেক্কি ডিস্কটি আস্তে আস্তে পানিতে ছেড়ে দাও। সেকি ভিকটি পানিতে ছেড়ে দেয়ার সময় গোলাকার চাকতিটির ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখ।
২. গোলাকার চাকতিটি পানিতে উঠা-নামার সময় যখন চাকতির সাদা-কালো রং অস্পষ্টভাবে দেখা যাবে তখন পানির উপরিতল থেকে সুতার পরিমাপ গ্রহণ কর। পানির উপরিতল থেকে সুভার যে পরিমাপ পাওয়া যাবে সেটাই সেকি ডিক রিডিং। এই সেক্তি ডিক পানির স্বচ্ছতা নির্দেশ করে।
৩. এবার সেক্কি ডিস্ক রিভিং খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
৪. অনুশীলনকৃত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
ব্যবহারিক- ১৮: প্রাকৃতিক উৎস থেকে বাগদা পোনা সংগ্রহ ও শনাক্তকরণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
১. বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাসমূহে অর্থাৎ সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূলীয় অঞ্চল, সাগর এলাকা, নদ-নদী ও খাল-বিলে বাগদা চিংড়ির পোনা পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত উপকূলীয় নদীসমূহে বাগদার পোনা পাওয়া যায়। বেহুন্দী জাল, ঠেলা জাল, টানা জাল ও ছাঁকনি থেকে বাগদা পোনা সংগ্রহ করা হয়।
২. বাগদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভা বা পিএল অন্যান্য চিংড়ির পোস্ট লার্ভার চেয়ে আকারে বড় হয়। দেহের গঠন সরু এবং লম্বাটে হয়ে থাকে। চক্ষু তুলনামূলকভাবে বড়। পিএল-এর দেহের দৈর্ঘ্য বরাবর লেজ পর্যত বাদামি রঙের দাগ দেখা যায়। জুভেনাইল অবস্থায় এই দাগ সবুজ বর্ণ ধারণ করে এবং পেটের দিকে তখন এটি একটি কাঠির মত দেখায়।
শুড় সোজা এবং ডগাটি সামান্য উপর দিকে বাঁকানো থাকে। খড়গের উপর তলে ৫টি দাঁত দেখা যায়। ১ম তিন জোড়া পায়ের শেষ প্রান্তে ছোট চিমটা আছে। ২য় পা ১ম পায়ের চেয়ে সামান্য লম্বা এবং ৩য় পায়ের চাইতে ছোট বা সমান।
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. টিনের পালা
২. সিলভারের পাতিল
৩. ঝিনুক
৪. বাগদা পোনা
৫. মেজারিং ফ্লাক
৬. ম্যাগনিফাইং গাস
৭. ড্রপার
৮. পরিসুত পানি
৯. ফরসেপ
১০. গাস স্লাইড
১২. ব্যবহারিক খাতা
১৩. পেনসিল
১৪. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১. উপকূলীয় অঞ্চলের কোনো নদীর তীরবর্তী পোনা বিক্রয় কেন্দ্রে গমন কর।
২. পোনা বিক্রয় কেন্দ্রের কোনো পোনা ব্যবসায়ী নিকট থেকে সুস্থ, সবল পোনা সংগ্রহ কর।
৩. টিনের থালায় পানিসহ কিছু পোনা নিয়ে সেগুলো সুস্থ সবল কিনা তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৪. এবার বিক্রয় কেন্দ্র থেকে সংগৃহীত পোনাগুলো পানিভর্তি মেজারিং ফ্রাকে করে পরীক্ষাগারে নিয়ে আস।
৫. পরীক্ষাগারে এসে মেজারিং ফ্লাস্ক থেকে কিছু পোনা পানিসহ টিনের থালায় রাখ।
৬. ড্রপারের সাহায্যে ১ টি পোনা পানিসহ ট্রেতে রক্ষিত গাস স্লাইডের উপরিতলে রাখ এবং গাস স্নাইডের উপর এক ফোটা পরিশ্রত পানি দাও।
৭. এবার আঁতশ কাচ দিয়ে পোনাটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৮. পোনার শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
৯. পেন্সিল দিয়ে পোনার চিত্র ব্যবহারিক খাতায় অঙ্কন কর।
১০. অনুশীলনকৃত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
ব্যবহারিক- ১৯: বাগদা খামারে বাঁধ ও খাল নির্মাণ কৌশল পর্যবেক্ষণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
১. বাঁধ: পুকুরের পানি ধারণ ও বন্যা বা জোয়ারের পানির অনুপ্রবেশ বন্ধ করাই বাঁধ নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য। যে এলাকায় পুকুর নির্মাণ করা হবে সেই এলাকায় ৫-১৫ বৎসরের সর্বোচ্চ জোয়ারের উচ্চতা জেনে বাঁধের উচ্চতা নির্ধারণ করা উচিত। বাঁধের মাটি ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে বাঁধের উচ্চতা কমে যায় বলে বাঁধ নির্মাণের সময় তা প্রয়াজ্জেনের চেয়ে ০.৬-০.৭ মিটার অতিরিক্ত উঁচু করা দরকার। বাঁধের ঢাল ভিতরের দিকে ১৪১ এবং বাইরের দিকে ১৪২ অনুপাতে রাখা যায়।
২. খাল: যে সব বাগদা পুকুর পানি সরবরাহের উৎসের নিকটবর্তী নয়, সে সমস্ত পুকুরে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের জন্য পৃথক নালা নির্মাণ করা উচিত। পুকুরের পানি সম্পূর্ণ নিষ্কাশনের জন্য খালের তলদেশ পুকুরের তলদেশ থেকে কিছুটা নিচু থাকা প্রয়োজন।
প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ
১. মেজারিং টেপ
২. মেজারিং পোল
৩. ব্যবহারিক খাতা
৪. পেনসিল
৫. ইরেজার, ইত্যাদি
কাজের ধাপ
১. নিকটস্থ কোনো বাগদা খামারে গমন কর।
২. নির্মাণাধীন পুকুরের বাধ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৩. মেজারিং পালে ও মেজারিং টেপ দিয়ে বাঁধের বাইরের ও ভিতরের দিকের ঢাল পরিমাপ কর এবং এই চালের। অনুপাত খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
৪. বাধের উচ্চতা, চূড়া ইত্যাদি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে এগুলো পরিমাপ কর।
৫. বাধের মাটি যথাযথভাবে নিবিড়করণ (Compaction) করা হয়েছে কিনা তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা।
৬. বাঁধ বৃষ্টির পানিতে যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ঘাসের চাপড়া লাগানো হয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ কর।
৭. এবার সরবরাহ খালের তলদেশের উচ্চতা পুকুরের চেয়ে কিছুটা উঁচু এবং নিষ্কাশন খালের তলদেশের উচ্চতা পুকুরের তলদেশের চেয়ে কিছুটা নিচু কিনা তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৮. খালের তলদেশের প্রশস্ততা ও খালের গভীরতা মেজারিং পালে ও মেজারিং টেপ দিয়ে পরিমাপ কর।
৯. সরবরাহ ও নিষ্কাশন খাল দিয়ে পুকুরে প্রয়োজনমত যথাসময়ে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন করা সম্ভব কিনা তা পর্যবেক্ষণ কর।
১০. কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
আরও দেখুনঃ