Site icon Fisheries Gurukul [ মৎস্য গুরুকুল ] GOLN

রোগ সৃষ্টিকারী উপাদানসমূহ

রোগ সৃষ্টিকারী উপাদানসমূহ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- রোগ সৃষ্টিকারী উপাদানসমূহ যা  ইউনিট ৩ রোগ ও রোগের কারণ এর অংশ।

এ পাঠ শেষে আপনি-

পরিবেশের পীড়ণ মাছকে অধিকতর সংবেদনশীন করে তোলে। জলজ পরিবেশে সংবেদনশীল মাছ, কার্যকর রোগজীবাণু এবং পরিবেশের মধ্যে একটি দুর্বল ভারসাম্য রয়েছে। এগুলো পরস্পরের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে থাকে।

যখন পুকুর-জলাশয়ে মাছের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ বিঘ্নিত হয় বা অনুপস্থিত থাকে, তখন রোগজীবাণুর জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং মাছের শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বিপর্যন্ত হয়ে যায়। এরূপ অবস্থায় পরিবেশগত পীড়ণ, কার্যকর রোগ জীবাণু এবং সংবেদনশীল মাছের আন্তঃক্রিয়ায় মাছের শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি হয় ফলে মাছ রোগাক্রান্ত হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে মাছের রোগসৃষ্টিকারী প্রধান উপাদান ৩টি। যথা-

১।পোষক মাছের সংবেদনশীলতা (susceptibility of host fish )

২।কার্যকর রোগজীবাণু/পরজীবীর সংক্রমণ (virulent pathogen)

৩।পরিবেশগত পীড়ণ (environmental stress)

উল্লিখিত কার্যকারণগুলো ছাড়াও নিম্নবর্ণিত নিয়ামকগুলো মাছের রোগসৃষ্টির জন্য দায়ী-

১)অপুষ্টি বা মানসম্পন্ন খাদ্যের অভাব

2) অধিক সংখ্যায় মাছ মজুতকরণ

৩) বংশানুক্রম

8) অতিরিক্ত মাত্রায় উৎপাদন উপকরণ প্রয়োগ

৫) উল্লিখিত সবগুলো কারণের আন্তক্রিয়া

রোগ সৃষ্টিকারী উপাদানসমূহ

পোষক মাছের সংবেদনশীলতা

রোগ সংক্রমণে মাছের সংবেদনশীলতা বা প্রতিরোধ পোষক মাছের বাহ্যিক প্রতিবন্ধক, ইতোপূর্বে রোগ সংক্রমণের অভিজ্ঞতা এবং বয়সের ওপর নির্ভর করে। অনেক রোগ কিছু নির্দিষ্ট প্রজাতির মাছের ক্ষেত্রে সংক্রমিত হয়ে থাকে, অথবা অন্য প্রজাতির চেয়ে নির্দিষ্ট প্রজাতির ক্ষেত্রে মারাত্মক হয়ে দেখা দেয়।

মাছের ত্বক, আঁইশ, খোলশ এবং ঝিল্লী (mucus membrane) বাহ্যিক প্রতিবন্ধক হিসেবে বিষাক্ত পদার্থ, সংক্রামক রোগজীবাণু বা পরজীবীকে মাছের দেহে প্রবেশে বাধা দেয়। কোন পোষক মাছ ইতোপূর্বে কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে পরবর্তীতে উক্ত রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রকোপ নতুন কোন মাছ অপেক্ষা কিছুটা কমে যায়। অপেক্ষকৃত কম বয়সী এবং প্রজননক্ষম পরিপক্ক মাছ রোগের প্রতি অধিকতর সংবেদনশীল হয়ে থাকে।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

কার্যকর রোগজীবাণু বা পরজীবী

কার্যকর রোগজীবাণু বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগ সৃষ্টি করে। রোগ জীবাণুর অনুপস্থিতিতে কোন সংক্রামক রোগ দেখা দেয় না। পানিতে বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণু থাকে, যেগুলো মাছে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো-

• ভাইরাস
• ব্যাকটেরিয়া
• এককোষী পরজীবী
• কৃমিজাতীয় পরজীবী
• খোলসযুক্ত পরজীবী

এসব রোগজীবাণু বা পরজীবী পোষক মাছের দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গে প্রবিষ্ট হয় বা বহিঃরাংঙ্গে লেগে থেকে বংশ বিস্তার করে ও পুষ্টি শোষণ করে। অতঃপর পোষক মাছের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সংক্রামিত করে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় নানা প্রকার বিঘ্ন সৃষ্টি করে। ফলে মাছ রোগাক্রান্ত হয়।

 

 

পরিবেশগত পীড়ণ

পোষক মাছ এবং কার্যকর রোগজীবাণুর পারস্পরিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া জলজ পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। জলজ পরিবেশ হয় পোষক মাছের জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে, নতুবা রোগজীবাণুর জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে।

জলজ পরিবেশের অবনতি ঘটলে মাছের জীবনযাপনে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়, কিন্তু এরূপ অবস্থা রোগজীবাণুর অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করে। ফলে পরিবেশগত পীড়নে মাছ সংবেদনশীল হয়ে ওঠে এবং সেসাথে রোগজীবাণুর অনুকূল পরিবেশের কারণে সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যায়।

এ অবস্থায় ব্যাপকহারে রোগসৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যখন কোন জলজ পরিবেশে জৈব পদার্থের পচনক্রিয়া বৃদ্ধি পায়, তখন মাছের জন্য অনুকূল পরিবেশ বিঘ্নিত হয়; কিন্তু রোগজীবাণুর জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ফলে মাছে রোগ দেখা দেয়।

জলজ বাস্তুসংস্থানের জড় (abiotic) এবং জৈব (biotic) উভয় ধরনের নিয়ামকই মাছের রোগসৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জলজ পরিবেশে পানির ভৌত-রাসায়নিক গুণাবলী, যথা- তাপমাত্রা, ঘোলাত্ব, পি.এইচ, দ্রবীভূত অক্সিজেন, অ্যামোনিয়া, মুক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড ইত্যাদির ন্যূনতম বা সংকটপূর্ণ মাত্রা রয়েছে।

এসব নিয়ামকের মাত্রা সংকটপূর্ণ মাত্রার নিচে নেমে গেলে মাছ পীড়িত হয় এবং রোগজীবাণু কর্তৃক সহজেই সংক্রামিত হয়। পরিবেশগত পীড়নে একই প্রজাতির রোগজীবাণুর একই পোষকে সংক্রমণের মাত্রা ও তীব্রতা দুই-ই বৃদ্ধি পায়।

 

পুষ্টিহীনতা

বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণুর বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক সামর্থ অর্জন ও মাছের স্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পরিমিত পুষ্টি অপরিহার্য। খাদ্যদ্রবো ভিটামিনের অভাবে মাছের দেহে মারাত্মক অপুষ্টিজনিত রোগের সৃষ্টি হয়।

এছাড়াও পুষ্টিহীনতার কারণে থাইরয়েড গ্রন্থির টিউমার, যকৃত নষ্ট হয়ে যাওয়া, উদর অংশে ৩টি ওঠা, রক্তশূন্যতা, বর্ণহীনতা ইত্যাদি ভয়ংকর রোগ দেখা দেয়। আবার অতিরিক্ত শর্করাজাতীয় খাদ্য দিলে মাছের শরীর ফুলে যাওয়া, যকৃৎ বড় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি রোগ দেখা দেয়। পুষ্টিজনিত সমস্যা অধিকাংশ রোগের ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখে।

অপুষ্টিজনিত কারণে মাছের বৃদ্ধির হার হ্রাস, শারীরিক বিকৃতি, খাদ্যের পরিবর্তন হার হ্রাস এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহ, যথা- যকৃত, বৃত্ত ইত্যাদির বিরূপ পরিবর্তন ঘটে। ফলে মাছ রোগাক্রান্ত হয় ও মারা যায়। প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমাণ খাদ্য যেমন মাছে অপুষ্টিজনিত রোগ সৃষ্টি করে, প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত খাদ্যও তেমনি মাছের পুষ্টিজনিত সমস্যা সৃষ্টি করে।

অধিক পুষ্টিজনিত কারণে মাছ এন্টেরাইটিস (Enteritis), লোপোড হেপাটিকা ডিজেনারেশন (Lopold hepatic degeneration), হেপাটোমা (Hepatoma) ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। চাষকৃত মাছে যেসব রোগ পরিলক্ষিত হয় সেগুলো সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা প্রোটোজোয়াজনিত রোগজীবাণু বা অণুজীবের সংক্রমণের ফলে সংঘটিত হয়ে থাকে।

এসব রোগের মধ্যে অনেক রোগের কোন সুনির্দিষ্ট প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা প্রতিকার এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত হয় নাই। তবে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এসব রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এ ছাড়াও কপিপোড গোত্রের পরজীবী এবং কৃমিজাতীয় পরজীবীর সংক্রমণেও বেশ কিছু রোগ সৃষ্টি হয়।

সারমর্ম :

পরিবেশগত পীড়নে মাছের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিপর্যন্ত হয়ে পড়ে। এরূপ অবস্থায় রোগজীবাণুর সংক্রমণে মাছ রোগাক্রান্ত হয়। মাছের রোগসৃষ্টিকারী প্রধান উপাদান তিনটি।

যথা- সংবেদনশীল মাছ, কার্যকর রোগজীবাণু/পরজীবী এবং পরিবশেগত পীড়ন। এছাড়াও অপুষ্টি, অধিক সংখ্যায় পোনামাছ মজুত। করা, বংশানুক্রম, অতিরিক্ত মাত্রায় উৎপাদন উপকরণের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয় মাছের রোগ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অপেক্ষাকৃত কম বয়সী ও পরিপক্ক প্রজননক্ষম মাছ রোগের প্রতি অধিকতর সংবেদনশীল হয়ে থাকে।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version