পুষ্টিজনিত রোগ ও তার প্রতিকার

পুষ্টিজনিত রোগ ও তার প্রতিকার – “মাছের স্বাস্থ্য পরিচর্যা” কোর্স বইটি বিশেষভাবে স্কুল অব এগ্রিকালচার এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট-এর বিএজিএড প্রোগ্রামের ছাত্রদের জন্য লেখা হয়েছে। আপনি জানেন, দূর শিক্ষণে শিক্ষকের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নেই। তাই পাঠের কোনো কঠিন বিষয় যেন আপনার বুঝতে অসুবিধা না হয় সেদিকে দৃষ্টি রেখেই কোর্স বইটি লেখা হয়েছে। কোর্স বইটির আঙ্গিক ও উপস্থাপনা তাই প্রচলিত পাঠ্যবই থেকে কিছুটা ভিন্ন ধরনের। যেহেতু সরাসরি শিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই কোর্স বইটি আপনাকে নিজে পড়ে বুঝতে হবে, তাই এটি কীভাবে পড়বেন প্রথমেই তা জেনে নিন। এতে কোর্স বইটি পড়তে ও বুঝতে আপনার সুবিধা হবে।

 

পুষ্টিজনিত রোগ ও তার প্রতিকার

 

পুষ্টিজনিত রোগ ও তার প্রতিকার

এ পাঠ শেষে আপনি-

  • পুষ্টির অভাবজনিত রোগ ও তার প্রতিকার পদ্ধতি বলতে ও লিখতে পারবেন।
  • পুষ্টির আধিক্যজনিত রোগ ও তার প্রতিকার পদ্ধতি বলতে পারবেন।
  • খাদ্যস্থিত পুষ্টিবিরোধী উপাদানের কারণে সৃষ্ট রোগ ও তার প্রতিকার পদ্ধতি বর্ণনা করতে পারবেন।

সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় মাছের ও পরিমিত পরিমাণ খাদ্য গ্রহন করতে হয়। মাছের গৃহীত খাদ্যের পরিপাক ও শোষন শেষে বিভিন্ন খাদ্য উপাদানসমূহ মাছের দেহের ক্ষয় পূরন, বৃদ্ধি সাধন ও শক্তি সরবরাহে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু মাছের গৃহীত খাদ্যে প্রোটিন, কার্বহাইড্রেট, লিপিড, ভিটামিন ও খনিজ লবণ এই পাঁচটি পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা উচিত।

মাছের খাদ্যে উক্ত এক বা একাধিক পুষ্টি উপাদানের স্বল্পতা বা আধিক্যের কারণে অথবা খাদ্যে বিদ্যমান কিছু পুষ্টিবিরোধী উপাদানের কারণে মাছ নানাবিধ পুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। একটু সতর্ক হলেই মাছের পুষ্টিজনিত রোগসমূহ সনাক্ত করা যেতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রে তা প্রতিরোধ বা প্রতিকার করা যেতে পারে।

পাঠ ৫.১ এ মাছের বিভিন্ন পুষ্টিজনিত রোগ বালাই সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। নিম্নে মাছের বিভিন্ন পুষ্টিজনিত রোগ এবং তাদের প্রতিকার পদ্ধতি আলোচিত হলো-

পুষ্টির অভাবজনিত রোগ ও তার প্রতিকার

বিভিন্ন মাছের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের সুনির্দিষ্ট চাহিদা (Requirement) রয়েছে। মাছের গৃহীত খাদ্যে যদি কোন পুষ্টি উপাদানের চাহিদা (Nutrient requirement) দীর্ঘ দিন যাবৎ অপূর্ণ অবস্থায় থাকে তবে মাছে নানাবিধ পুষ্টির অভাবজনিত রোগ দেখা দিতে পারে। মাছের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের চাহিদা অনুযায়ী নিয়মিত খাদ্য প্রদান করলে পুষ্টির অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

আবার পুষ্টির অভাবজনিত রোগ সঠিকভাবে সনাক্ত করতে পারলে খাদ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে অথবা প্রয়োজনে ইনজেকশনের মাধ্যমে উক্ত উপাদান প্রদান করে এসকল রোগ প্রতিকার করা যেতে পারে। নিম্নে মাছের বিভিন্ন পুষ্টির অভাবজনিত রোগ ও তার প্রতিকার পদ্ধতি সংক্ষেপে আলোচিত হলো-

 

পুষ্টির অভাবজনিত রোগ সঠিকভাবে সনাক্ত করতে পারলে তা খাদ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে অথবা প্রয়োজনে ইনজেকশন প্রদান করে প্রতিকার করা যেতে পারে।

 

প্রোটিনের অভাব জনিত রোগ ও তার প্রতিকার

প্রোটিনের অভাবে প্রধানত: মাছের বর্ধন হার হ্রাস পায়। এ ছাড়া মাছে রেনাল ক্যালশিনোসিস রোগ ও প্রোটিনর অভাবে দেখা দেয়। প্রোটিনের অভাবজনিত রোগ প্রতিকারের জন্য মাছকে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন ফিশমিল, সয়াবিন মিল ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে। অনেক সময় মাছ প্রোটিন হজম করতে পারে না, ফলে খাদ্যে প্রোটিন উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা সত্ত্বেও মাছে প্রোটিনের অভাবজনিত রোগ দেখা দেয়।

তাই মাছের খাদ্যে যথা সম্ভব সহজপাচ্য প্রোটিন উৎস (Protein source) ব্যবহার করা উচিত। ট্রিপটোফেন ও মিথিওনি নামক অ্যামাইনো এসিডের অভাবে মাছের চোখে ছানি পড়তে পারে। এই অ্যামাইনো এসিড গুলো বাজারে কিনতে পাওয়া যায় প্রয়োজনে এ উপাদান গুলো মাছের খাদ্যে ব্যবহার করতে হবে। অথবা উক্ত অ্যামাইনো এসিডে সমৃদ্ধ খাদ্য বিশেষ করে ফিশমিল মাছকে সরবরাহ করতে হবে।

 

প্রোটিনের অভাবজনিত রোগ প্রতিকারের জন্য মাছকে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন- ফিশমিল, সয়াবিন মিল ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে।

 

পুষ্টিজনিত রোগ ও তার প্রতিকার

 

লিপিডের অভাব জনিত রোগ ও তার প্রতিকার

লিপিডের অভাবে মাছের রক্ত শূন্যতা দেখা দেয় এবং বৃক্ক ফ্যাকাশে হয় ও ফুলে যায়। মাছের খাদ্যে বিভিন্ন অত্যাবশ্যক ফ্যাটি এসিড সমন্বিত লিপিড সমৃদ্ধ উপাদান সরবরাহ করে এ রোগ গুলো প্রতিকার করা যেতে পারে। সরিষার খৈল, তিলের খৈল খাদ্যের সংগে ব্যবহার করা যেতে পারে।

চর্বিতে দ্রবীভূত ভিটামিনের অভাব জনিত রোগ ও তার প্রতিকার

মাছের খাদ্যে ভিটামিন-A এর অভাবে মাছের মাংসপেশীর অন্তকোষীয় ফাঁকা স্থানে তরল জমা হয় ও চোখ ফুলে যায় (exophthalmas)। ভিটামিন A এর মারাত্বক স্বল্পতায় চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই রোগগুলো প্রতিকারের জন্য মাছকে প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ১-২ গ্রাম ভিটামিন- A প্রদান করা যেতে পারে। খাদ্যে ভিটামিন- D এর অভাবে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায় এবং কিডনী ক্ষয়প্রাপ্ত ও ধ্বংশ হয়।

মাছের প্রতি কেজি শুষ্ক খাদ্যের সাথে ২৪০০ IU হারে ভিটামিন- D প্রদান করে এ রোগ গুলো প্রতিকার করা যেতে পারে। ভিটামিন E এর অভাবে মাছের চোখ ফুলে যায়, রক্ত শূন্যতা দেখা দেয় এবং দেহের বর্ন কালো হয়ে যায়। এই সমস্যাগুলো প্রতিকারের জন্য মাছকে প্রদত্ত শুষ্ক খাদ্যের সাথে ৮০-১০০ মিলি গ্রাম/ কেজি হারে ভিটামিন E প্রদান করা যেতে পারে।

 

ডিটামিন- A এর মারাত্বক স্বল্পতায় মাছের চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। রোগ প্রতিকারের জন্য মাছকে প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ১-২ গ্রাম ভিটামি-A প্রদান করা যেতে পারে।

 

পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ ও তার প্রতিকার

থায়ামিন বা ভিটামিন B1 এর অভাবে মাছের স্নায়ুবিক দুর্বলতা দেখা দেয়, কর্ণিয়া অস্বচ্ছ হয়ে যায়। থায়ামিনের দীর্ঘস্থায়ী অভাবে মাছের ঐচ্ছিক মাংসপেশী অবস হয়ে যায়। প্রতি কেজি শুষ্ক খাদ্যের সাথে ২-৩ মিলিগ্রাম থায়ামিন প্রদান করে অথবা প্রতি কেজি মাছকে ২ মিলিগ্রাম হারে থায়ামিন ইনজেকশন প্রদান করে থায়ামিনের অভাবজনিত রোগ প্রতিকার করা যেতে পারে। রাইবোফ্লোবিন বা ভিটামিন- B2 এর অভাবে মাছের ত্বক ও পাখনায় রক্তক্ষরণ হয় এবং দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়।

রাইবোফ্লোবিনের অভাবজনিত রোগে ৭-১০ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লোবিন/ কেজি শুষ্ক খাদ্য হারে মাছকে প্রদান করে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। নিয়াসিন বা ভিটামিন- B3 এর অভাবে মাছের ফুলকা ফুলে যায়, পেটে পানি জমে যায় ও অস্ত্রে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। প্রতি কেজি শুষ্ক খাদ্যের সাথে ৩০-৫০ মিলিগ্রাম নিয়াসিন প্রদান করে এই রোগগুলো প্রতিকার করা যেতে পারে। খাদ্যে পেন্টোথেনিক এসিড বা ভিটামিন- Bs এর অভাবে মাছে পুষ্টিজনিত ফুলকা রোগ হয়ে থাকে।

এ রোগটি অত্যন্ত মারাত্বক যা মাছের মৃত্যুও ঘটাতে পারে। মাছের খাদ্যের সাথে ৩০-৫০ মি. গ্রাম/ কেজি হারে পেন্টোথেনিক এসিড প্রদান করা উচিত, যাতে পুষ্টিজনিত ফুলকা রোগ দেখা না দেয়, কারণ এ রোগের প্রতিকার করা অত্যন্ত কষ্টকর। বায়োটিনের স্বল্পতায় মাছে নীল শ্লেষা রোগ দেখা দেয় আর সায়ানোকোবালমিনের স্বল্পতায় রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়।

মাছের জন্য প্রদত্ত প্রতি কেজি শুষ্ক খাদ্যের সাথে যথাক্রমে ১-১.৫ মিলিগ্রাম ও ০.০১৫-০.০২ মিলিগ্রাম বায়োটিন ও সায়ানো- কোবালমিন প্রদান করে এ রোগগুলো প্রতিকার করা যেতে পারে। এসকরবিক এসিড বা ভিটামিন- C এর অভাবে স্কলিওসিস ও লর্ডোসিস দেখা দেয় এবং ক্ষত স্থান শুকোতে দেরী হয়। স্কলিওসিস ও লর্ডোসিস হচ্ছে মাছের অস্থি ও কাটার বিশেষ ধরনের অস্বভাবিক গঠন। এই রোগ গুলো ৩০-৫০ মিলিগ্রাম/ কেজি খাদ্য হারে এসকরবিক এসিড প্রদান করে প্রতিকার করা যেতে পারে।

 

প্রতি কেজি শুষ্ক খাদ্যের সাথে ২-৩ মি.গ্রাম থায়ামিন প্রদান করে অথবা প্রতি কেজি মাছকে ২ মি.গ্রাম হারে থায়ামিন ইনজেকশন প্রদান করে থায়ামিনের অভাবজনিত রোগ প্রতিকার করা যেতে পারে।

 

Google News
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

খনিজ উপাদানের অভাবজনিত রোগ ও তার প্রতিকার

খাদ্যে বিভিন্ন খনিজ উপাদানের অভাবে মাছে বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। ক্যালশিয়াম ও ফসফরাসের অভাবে মাছের বর্ধন ও অস্থির গঠন বিঘ্নিত হয়। জিংকের অভাবে মাছের চোখে ছানি পড়তে পারে। খাদ্যে আয়োডিনের অভাবে মাছে গলগন্ড রোগ দেখা দেয়।

মাছের জন্য প্রস্তুতকৃত খাদ্যের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালশিয়াম ও ফসফরাস প্রদান করে এদের অভাবজনিত সমস্যা প্রতিকার করা যেতে পারে। জিংক ও আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ প্রতিকার করা তেমন সহজ নয়। তাই মাছের খাদ্যে যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জিংক ও আয়োডিন থাকে সে দিকে নজর রাখা উচিত। ক্ষেত্র বিশেষে খাদ্যের সাথে আয়োডিন সমন্বিত লবণ ব্যবহারে সুফল পাওয়া যেতে পারে।

 

জিংক ও আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ প্রতিকার করা তেমন সহজ নয়, তাই মাছের খাদ্যে যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জিংক ও আয়োডিন থাকে সেদিকে নজর রাখা উচিত।

 

তুষ্টির আধিক্যজনিত রোগ ও তার প্রতিকার

খাদ্যে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের আধিক্যজনিত কারণেও মাছে নানাবিধ পুষ্টিজনিত রোগ হতে পারে। মাছের খাদ্যে অতিরিক্ত কার্বহাইড্রেটের উপস্থিতিতে মাছের যকৃত কোষে ভাঙ্গন দেখা দেয়, আবার খাদ্যে লিপিডের আধিক্যের ফলে মাছের খাদ্য পরিবর্তনের হার (Food conversion ratio) কমে যায়।

অন্যদিকে খাদ্যে ভিটামিন A এর আধিক্যের ফলে মাছের এপিথেলিয়াম কোষে মেটাপ্লাসিয়া দেখা দেয় ও কর্ণিয়ায় প্রদাহ সৃষ্টি হয়। পুষ্টির আধিক্যজনিত রোগ দেখা দিলে কয়েক দিন মাছকে খাবার প্রদান না করলে অথবা উক্ত পুষ্টি উপাদান ব্যাতিরেকে খাবার প্রদান করলে সুফল পাওয়া যেতে পারে। মাছের জন্য খাদ্য তৈরির সময় যাতে কোন পুষ্টি উপাদানের আধিক্য না ঘটে সে দিকে নজর দিলে অবাঞ্চিত পরিস্থিতি প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

 

পুষ্টির আধিক্যজনিত রোগ দেখাদিলে কয়েক দিন মাছ: খাবার প্রদান না করলে অথবা উক্ত পুষ্টি উপাদান ব্যাতীত খাবার প্রদান করলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।

 

খাদ্যস্থিত পুষ্টিবিরোধী উপাদানের কারণে সৃষ্ট রোগ ও তার প্রতিকার

সারা বিশ্বে মাছের খাদ্য হিসাবে উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশেও মাছের খাদ্য হিসাবে সরিষার খৈল, তিলের খৈল, তিসির খৈল, সয়াবীন ইত্যাদি উদ্ভিজ উপাদান ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এসকল উপাদানে কতগুলো পুষ্টিবিরোধী উপাদান (Antinutritional substances) বিদ্যমান। এই পুষ্টিবিরোধী উপাদানসমূহ মাছে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি করে। যেমন- সয়াবীনে বিদ্যমান প্রোটিয়েজ ইনহেবিটর (Protease inhibitor) ও তিসির বীজ বা খৈলে বিদ্যমান টেনিন নামক পুষ্টিবিরোধী উপাদানের প্রভাবে মাছের প্রোটিন বিপাকে বিঘ্ন ঘটে। সরিষা ও তিসির বীজ বা খৈলে গ্লুকোইনোলেটস (Glucoinolates) নামক পুষ্টিবিরোধী উপাদানের করণে মাছের থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যায়।

তিলের বীজে বা খৈলে বিদ্যমান সয়ানোজেন (Cyanogen) মাছে বিষাক্ততার সৃষ্টি করে। যদি মাছে কোন পুষ্টিবিরোধী উপাদানের কারণে সৃষ্ট সমস্যা সনাক্ত করা সম্ভব হয় তবে মাছের খাদ্য হিসাবে উক্ত পুষ্টিবিরোধী উপাদান সমন্বিত উদ্ভিজ উৎস পরিহার করে বিকল্প উৎস ব্যবহার করা যেতে পারে। অধিকাংশ পুষ্টিবিরোধী উপাদান সমূহ, তাপের প্রতি সংবেদনশীল। তাই উদ্ভিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত খাদ্য উপাদানগুলো সিদ্ধ করে মাছের খাদ্যে ব্যবহার করলে অবাঞ্চিত সমস্যা প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

 

উদ্ভিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত উপাদানগুলো সিদ্ধ করে মাছের খাদ্যে ব্যবহার করলে অবাঞ্চিত সমস্যা প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

 

পুষ্টিজনিত রোগ ও তার প্রতিকার

 

অন্যান্য কারণে সৃষ্ট পুষ্টিজনিত রোগ ও তার প্রতিকার

মাছের খাদ্য তৈরিতে বিভিন্ন ধরনের বাইন্ডার যেমন- আটা, ময়দা বিভিন্ন ধরনের আটা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এসব বাইন্ডার অনেক সময় পুষ্টিজনিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই মাছের খাদ্য তৈরিতে সতর্কতার সাথে বাইন্ডার ব্যবহার করা উচিত। ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত মাছের চিকিৎসার জন্য অনেক সময় খাদ্যের সাথে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিকের মাত্রা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হলে কখনো কখনো তা মাছের বর্ধনের উপর প্রভাব ফেলে।

তাই অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। লিপিড বা চর্বি জাতীয় খাদ্য উপাদান বায়ুর উপস্থিতিতে জারিত হয়ে পারক্সাইড, এলডিহাইড, কিটোন ইত্যাদি উৎপন্ন করে যার প্রভাবে মাছের বর্ধন হ্রাস পায়, যকৃত ফুলে যায় এবং মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। ভিটামিন- E চর্বির জারন প্রতিরোধ করতে পারে।

লিপিড বা চর্বি সমৃদ্ধ মৎস্য খাদ্য ভিটামিন- E সহযোগে সংরক্ষন করলে লিপিড বা চর্বির জারনের ফলে উদ্ভুত অবাঞ্চিত পরিস্থিতি প্রতিরোধ কর যেতে পারে। মজুতকৃত মৎস্য খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের অণুজীব যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি জন্মাতে পারে। এই অণুজীবগুলো বিষ বা টক্সিন উৎপন্ন করতে পারে।

এই বিষ বা টক্সিন সমন্বিত খাদ্য গ্রহন করলে মাছ বিষ ক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে অথবা বিভিন্ন রোগ ব্যাধির শিকার হতে পারে। তাই দীর্ঘদিন যাবৎ মজুতকৃত মৎস্য খাদ্য ব্যবহার না করাই উত্তম। সাধারনত শীতকালে মাছ কম খাবার খেয়ে থাকে। তাই শীতকালে মাছকে কম খাবার প্রদান করতে হয়। যদি কোন সময় মাছকে প্রয়োজনের চেয়ে অধিক খাদ্য সরবরাহ করা হয় তবে অতিরিক্ত খাদ্যের পচনের ফলে পুকুরের পানির গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমতাবস্থায় মাছ বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী প্যাথোজেন দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। আবার পানিতে অক্সিজেনের স্বল্পতার কারণে মাছ মারাও যেতে পারে।

অনুশীলন (Activity): ভিটামিন ও খনিজ লবণের অভাবজনিত রোগ গুলোর প্রতিকার পদ্ধতি লিপিবদ্ধ করুন।

সারমর্ম: অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় মাছেরও পরিমিত পরিমাণ খাদ্য গ্রহন করতে হয়। কিন্তু মাছের গৃহীত খাদ্যে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সুনির্দিষ্ট মাত্রায় থাকা উচিত। মাছের খাদ্যে পুষ্টি উপাদানের অভাবে মাছে নানাবিধ রোগ হতে পারে যা নির্দিষ্ট মাত্রায় উক্ত পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে প্রতিকার করা যেতে পারে।

যেমন- রাইবোফ্লোবিনের অভাবে মাছের ত্বক ও পাখনায় রক্ত ক্ষরন হয় ও দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পায়, খাদ্যের সাথে ৭-১০ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লোবিন প্রদান করে এ রোগ গুলো প্রতিকার করা যেতে পারে। আবার মাছের খাদ্যে কোন কোন পুষ্টি উপাদানের আধিক্যের ফলেও মাছে রোগ দেখা দিতে পারে যা উক্ত পুষ্টি উপাদান ব্যাতিরেকে মাছকে খাবার প্রদান করলে সুফল পাওয়া যেতে পারে। খাদ্যে পুষ্টিবিরোধী উপাদানের কারণে যে সকল রোগ দেখা দেয়, পুষ্টিবিরোধী উপাদান সমন্বিত খাদ্য সিদ্ধ করে মাছকে সরবরাহ করলে এ সকল রোগ প্রতিকার করা যেতে পারে।

এন্টিবায়োটিকের মাত্রা প্রয়োজনের চেয়ে বেশী হলে তা কখনো কখনো মাছের বর্ধনের উপর প্রভাব ফেলে। তাই অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

আরও পড়ূনঃ

Leave a Comment