আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ছত্রাকজনিত রোগের প্রতিকার
ছত্রাকজনিত রোগের প্রতিকার
ছত্রাকজনিত রোগ
মিঠাপানির প্রায় সব মাছই ছত্রাকজাতীয় রোগের প্রতি সংবেদনশীল। মোল্ডজাতীয় ছত্রাক এ ধরনের রোগের সংক্রমণ ঘটিয়ে তাকে । ছত্রাক মাছের রোগ সৃষ্টিতে মাধ্যমিক পর্যায়ে সংক্রমণ ঘটিয়ে থাকে । ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবীর আক্রমণে মাছের দেহে ক্ষত সৃষ্টি হয়। উক্ত ক্ষতস্থানে ছত্রাকের সংক্রমণে রোগ সৃষ্টি হয় । রেণুর জন্য এই রোগ খুবই সংবেদনশীল। হ্যাচারি বা আঁতুড় পুকুরে হঠাৎ করে মোড়ক আকারে এই রোগ সব রেণু ধ্বংস করে দিতে পারে।
স্যাপরোলেগনিয়াসি
এই রোগ সাধারণভাবে তন্ত্ররোগ নামে পরিচিত।
রোগজীবাণু : এই রোগ প্রধানত স্যাপরোলেগনিয়া গনের তিনটি প্রজাতির সংক্রমণে ঘটে থাকে প্রজাতিগুলো হলো- সেপরোলেগনিয়া ফেরাক্স (Saprolegnia ferax). সেপরোলেগনিয়া প্যারাসাইটিকা (Saprolegnia parasitica) এবং সেপরোলেগনিয়া ডিকলিনা (Seprolegnia diclina ) একাইয়া (Achyia) গনের কয়েকটি প্রজাতির সংক্রমণেও এ রোগ ঘটে থাকে ।
রোগের বিস্তার :
কার্পজাতীয় মাছের সব প্রজাতির ক্ষেত্রেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। মাছের ডিম এবং রেণুর একটি একটি প্রধান রোগ। আক্রান্ত মাছ বা ডিমে উজ্জ্বল সাদা আঁশ বা তন্তুজাতীয় মোলায়েম বস্তুর উদ্ভব হয়। এসব তন্ত্র বা আঁশ ৩ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায় । পরিবেশগত পীড়নে অথবা ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবীর সংক্রমণে মাছের দেহে ক্ষত সৃষ্টি হলে উক্ত ক্ষতে ছত্রাকের সংক্রমণে এ রোগের সৃষ্টি হয় ।
পোনামাছ ছাড়া, মাছ ধরা বা নমুনায়নের সময় যথেচ্ছাভাবে মাছ নাড়াচাড়া করা, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে মাছ দুর্বল হওয়া এবং অধিক ঘনত্বে মাছ মজুদ করা এ রোগের তীব্রতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মাছের ডিম বা মৃত মাছের ক্ষেত্রে মোল্ড ১২-২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুরো দেহ ঢেকে ফেলে। এ রোগে মাছের পিঠের অংশ ও লেজ, পাখনা, চোখ, ফুলকা আক্রান্ত হয়ে থাকে।
সংক্রমণের শুরুতে মাছ তেমন কোনো অস্বাভাবিক আচরণ করে না । সংক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে মাছে মড়ক দেখা দেয় । এটি একটি সংক্রামক রোগ। বিশেষ করে হ্যাচিং বোতলে বা ইনকুবিউশন ট্যাংকে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায় ।
রোগের লক্ষণ :
i. রেণুপোনার দেহে বা ডিমে মিহি সুতার মতো উজ্জ্বল বস্তু দেখা দেয় ।
ii. রেণুপোনার দেহে অতিরিক্ত পিচ্ছিল পদার্থের উপস্থিতি দেখা দেয়।
iii. পোনা অস্থিরভাবে চলাফেরা করে এবং শক্ত কিছুতে গা ঘষে ।
iv. সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে রেণুপোনা ক্ষুধা হ্রাস পায় ।
v. রেণুপোনা ধীরে ধীরে ও অলসভাবে চলাফেরা করে ।
vi. রেণুপোনার আক্রান্ত অংশে পঁচন ধরে ।
vii. রেণুপোনার ব্যাপকহারে মড়ক দেখা দেয় ।
ছত্রাকজনিত রোগের প্রতিকার
আমাদের দেশের মিঠা পানির প্রায় সকল মাছই ছত্রাক রোগে সংবেদনশীল। বিশেষ করে ত্বক ও ফুলকাতে আঘাতজনিত কারণে সহজেই ছত্রাক আক্রমণ করে রোগ সৃষ্টি করে থাকে। ত্বকের রোগকে ডারমাটোমাইকোসিস (Dermatomycosis) ফুলকায় হলে ফুলকা পচা রোগ যথাক্রমে স্যাপ্রোলেগনিয়াসিস এবং ব্রংকিওমাইকোসিস হিসেবে পরিচিত।
যা হোক ত্বক বা ফুলকায় ছত্রাক জাতীয় রোগ হলে সাধারণত ‘ম্যালাকাইট গ্রীন’ দ্বারা চিকিৎসা ফলদায়ক । তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ করে হ্যাচারিতে ডিম বা পোনার আক্রমণে ‘মিথিলীন ব্লু’ ব্যবহার করা হয়। আবার অল্প সংখ্যক মাছের ক্ষেত্রে লবণ দ্রবণে চিকিৎসা করা যায়। এদের প্রয়োগ মাত্রা নিম্নে দেওয়া হলো ।
ম্যালাকাইট গ্রীন : ০.১৫-০.২০ পি.পি.এম পুকুরে প্রয়োগ প্রতি সপ্তাহে একবার দু থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত চালালে ভালো ফল পাওয়া যায় ।
মিথিলিন ব্লু : ০.১০ -০.১৫ পি.পি.এম দ্বারা আক্রান্ত পোনা বা ডিম ধোত করালে, বা দ্রবণে ১-২ ঘণ্টা
গোসল করালে প্রতিকার পাওয়া যায় ।
লবণ দ্রবণ : ২.০-২.৫ শতাংশ লবণে আক্রান্ত মাছকে যতক্ষণ সহ্য করতে পারে ততক্ষণ সময় পর্যন্ত গোসল করানো যেতে পারে। এছাড়া কোনো কোনো ক্ষেত্রে আক্রান্ত মাছকে ০.৫ পি.পি.এম তুঁতে দ্রবণে চুবানোর জন্য উপদেশ দেওয়া হয়ে থাকে । তবে তুঁতে খুব বিষাক্ত এবং ক্ষতিকর তাই যতদূর সম্ভব তুঁতে দ্বারা চিকিৎসা না করানো ভালো ।
আরও দেখুন: