পরজীবি, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসজনিত রোগের প্রতিকার পদ্ধতি – “মাছের স্বাস্থ্য পরিচর্যা” কোর্স বইটি বিশেষভাবে স্কুল অব এগ্রিকালচার এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট-এর বিএজিএড প্রোগ্রামের ছাত্রদের জন্য লেখা হয়েছে। আপনি জানেন, দূর শিক্ষণে শিক্ষকের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নেই। তাই পাঠের কোনো কঠিন বিষয় যেন আপনার বুঝতে অসুবিধা না হয় সেদিকে দৃষ্টি রেখেই কোর্স বইটি লেখা হয়েছে। কোর্স বইটির আঙ্গিক ও উপস্থাপনা তাই প্রচলিত পাঠ্যবই থেকে কিছুটা ভিন্ন ধরনের। যেহেতু সরাসরি শিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই কোর্স বইটি আপনাকে নিজে পড়ে বুঝতে হবে, তাই এটি কীভাবে পড়বেন প্রথমেই তা জেনে নিন। এতে কোর্স বইটি পড়তে ও বুঝতে আপনার সুবিধা হবে।
পরজীবি, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসজনিত রোগের প্রতিকার পদ্ধতি
এ পাঠ শেষে আপনি-
মাছ ও চিংড়ির পরজীবী ঘটিত রোগের প্রতিকার পদ্ধতি লিখতে ও বলতে পারবেন।
ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগের প্রতিকার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
ভাইরাস ঘটিত রোগের প্রতিরোধ পদ্ধতি সম্বন্ধে লিখতে ও বলতে পারবেন।
মৎস্য রোগের প্রতিকার করতে সাধারণতঃ রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করে চিকিৎসা করা হয় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে। তবে এ ক্ষেত্রে যত কম খরচে এবং কম মাত্রার ঔষধ ব্যবহার করা যায় সেদিকে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ জন্য নানা প্রকার ঔষধ ব্যবহার না করে যাতে এক ঔষধের দ্বারা একাধিক রোগ বা একজাতীয় রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত রোগের চিকিৎসা করা যায় তার পদ্ধতিই উত্তম পদ্ধতি। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত রোগের প্রতিকার পদ্ধতি বর্ণনা করা হল।
পরজীবী, ছত্রাক, ব্যাক- টেরিয়া, ভাইরাসজনিত রোগের প্রতিকার সাধা-রণত রাসায়নিক দ্রব্যাদি প্রয়োগ করে (Chemo-therapy) করা হয়। এক্ষেত্রে কম খরচ এবং লাগসই রাসায়নিক ধ্রুব্য ব্যবহার করা অপরিহার্য্য।
পরজীবীজনিত রোগের প্রতিকার
মাছের পরজীবী অনেক থাকলেও বাংলদেশে পরজীবীজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব তেমন প্রকট নয়। চিংড়ির ক্ষেত্রে এ সমস্যা নেই বললেই চলে। যা হউক যে সকল পরজীবীজনিত রোগ মৎস্য চাষে সমস্যা করে তার অধিকাংশই বহিঃ পরজীবীর আক্রমণে হয়। এগুলোর মধ্যে এককোষী পরজীবী এবং কিছু বহুকোষী পরজীবীর আক্রমণজনিত রোগই প্রধান। নিম্নে এদের প্রতিকার পদ্ধতি উল্লেখ করা
হল-
মাছের সাদা দাগ রোগ (White spot) ও ট্রাইকোডাইনিয়াসিস (Trichodiniasis), কসটিয়াসিস (Costiasis)
এ রোগগুলো এককোষী পরজীবী দ্বারা হয়। কার্প-জাতীয় এবং ক্যাট ফিশ (মাগুর, পাংগাস) মাছে এদের আক্রমণ হতে পারে। এ সম্পর্কে বিস্তাবিত বর্ণনা ৩.২. পাঠে রয়েছে। এ গুলো মাছের ত্বক, লেজ, পাখা ও ফুলকায় আক্রমণ করে। আক্রান্ত মাছকে আলাদা পাত্রে ৫০ পি.পি.এম ফরমালিন, অথবা ১.০ পি.পি.এম. তঁতে (Copper sulphate) ব্য ২.৫% লবণ দ্রবণে যতক্ষণ মাছ সহ্য করতে পারে ততক্ষণ গোসল করাতে হবে।
এর পর পরিস্কার পানিতে কিছুক্ষণ চুবানোর পর মজুদ পুকুরে ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। তবে রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি এবং সমস্ত পুকুরে ছড়িয়ে পড়লে সপ্তাহে ২০-২৫ পি.পি.এম হারে পুকুরে ফরমালিন প্রয়োগ করা যেতে পারে। এতে ভাল ফল পাওয়ার আশা করা যায়। এ ছাড়া ৩-১০ পি.পি.এম আরিফষ্কাভিন এর মধ্যে আক্রান্ত মাছকে দীর্ঘক্ষণ গোসল করালে ভাল ফল পাওয়া যায়।
মনোজেনেটিক ট্রিমাটোডের আক্রমণঃ
গিল ও স্কীন ক্লুক, টুইন ওয়ার্ম (Dactylogyrosis, Gyrodactylosis, Diplozooniasis) এ রোগগুলো জন্য ও উপরিউল্লিখিত ফরমালিন চিকিৎসা করা যেতে পারে। এ ছাড়া ডিপটারেক্স ও পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট অল্পমাত্রায় মিশ্রিত করে (০.৩ পি.পি.এম ডিপটারেকক্স ও ৩ পি.পি.এম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট) পুকুরে প্রতি সপ্তাহ একবার করে দু সপ্তাহ যাবৎ প্রয়োগ করলে ব্যাপক আক্রমণ দমন করা সম্ভব হয়।
২রপাসিলোসিস (Ergasilosis), আরগুলোসিস (Argulosis), লারনিয়াসিস (Lerneossis), জোঁকের আক্রমণ (Leech infection)
এ সকল রোগের মধ্যে আরগুলোসিস মাঝে মাঝে মাছের পুকুরে বেশ সমস্যার সৃষ্টি করে। যেহেতু এরা পোকামাকড় জাতীয় পরজীবী ঘটিত রোগ সে জন্য এদের চিকিৎসার জন্য কীটনাশক (Insecticide) ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে ডিপটেরেক্স (Dipterex) বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ ছাড়া সুমিথিওন, ম্যালাথিওন বা প্যারাথিওন কেউ কেউ ব্যবহার করেন। এ ঔষধ প্রয়োগের পদ্ধতিঃ পুকুরে ব্যবহার সর্বোত্তম। ডিপটেরেক্স ০.৩-০.৫ পি.পি.এম প্রতি সপ্তাহে, সুমিথিওন/ম্যালাথিওন/পারাথিওন ০.২৫-০.৩ পি.পি.এম হারে পুকুরে প্রয়োগ সপ্তাহে ১ বার দু সপ্তাহ পর্যন্ত।
ছত্রাক জাতীয় সাধারণত ০.১৫ রোগে ০.২০ পি.পি.এম ম্যালাকাইট গ্রীন পুকুরে প্রয়োগ করতে পারলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
ছত্রাক জনিত রোগের প্রতিকার
আমাদের দেশের মিঠা পানির প্রায় সকল মাছই ছত্রাক রোগে সংবেদনশীল। বিশেষ করে ত্বক ও ফুলকাতে আঘাতজনিত কারণে সহজেই ছত্রাক আক্রমণ করে রোগ সৃষ্টি করে থাকে। ত্বকের রোগকে ডারমাটোমাইকোসিস (Dermatomycosis) এবং ফুলকায় হলে ফুলকা পচা রোগ যথাক্রমে স্যাপ্রোলেগনিয়াসিস এবং ব্রংকিওমাইকোসিস হিসেবে পরিচিত।
যা হউক ত্বক বা ফুলকায় ছত্রাক জাতীয় রোগ হলে সাধারণতঃ “ম্যালাকাইট গ্রীন” দ্বারা চিকিৎসা ফলদায়ক। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ করে হ্যাচারীতে ডিম বা পোনার আক্রমণে “মিথিলীন ব্লু” ব্যবহার করা হয়। আবার অল্প সংখ্যক মাছের ক্ষেত্রে লবণ দ্রবণে চিকিৎসা করা যায়। এদের প্রয়োগ মাত্রা নিম্নে দেওয়া হল।
ম্যালাকাইট গ্রীন : ০.১৫-০.২০ পি.পি.এম পুকুরে প্রয়োগ প্রতি সপ্তাহে একবার দু থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত চালালে ভাল ফল পাওয়া যায়।
মিথিলীন ব্লুঃ ০.১০-০.১৫ পি.পি.এম দ্বারা আক্রান্ত পোনা বা ডিম ধৌত করালে, বা দ্রবণে ১-২ ঘন্টা গোসল করালে প্রতিকার পাওয়া যায়।
লবণ দ্রবণঃ ২.০-২.৫ শতাংশ লবণে আক্রান্ত মাছকে যতক্ষণ সহ্য করতে পারে ততক্ষণ সময় পর্যন্ত গোসল করানো যেতে পারে। এছাড়া কোন কোন ক্ষেত্রে আক্রান্ত মাছকে ০.৫ পি.পি.এম ছুঁতে দ্রবণে ঢুবানোর জন্য উপদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে ছুঁতে খুব বিষাক্ত এবং ক্ষতিকারক তাই যতদুর সম্ভব ছুঁতে দ্বারা চিকিৎসা না করানো ভাল। বর্তমানে ক্ষত রোগের প্রধান কারণ এফানোমাইসেস (Aphanomyces) ছত্রাকের আক্রামণে হয় বলে বৈজ্ঞানিকগণ মনে করছেন। পরবর্তীই পাঠে ক্ষত রোগের প্রতি-গর সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কলামনারিসসহ ব্যাকটেরিয়াজনিত অন্যান্য রোগ এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে চিকিৎসা করা হয়।
ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের প্রতিকার
মৎস্য চাষে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যাকটেরিয়াজনিত অনেক রোগের সমস্যা রয়েছে এবং এর প্রতিকারের জন্য অনেক গবেষণাও চলছে। প্রতিকারের জন্য সঠিক ব্যাকটেরিয়া সনাক্ত করতে অনেক সময় লেগে যায়। তবে সচরাচর যে সকল ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ মাছ কিংবা চিংড়ি চাষে দেখা দেয় তার জন্য বিভিন্ন প্রকার “এন্টিবায়োটিক” প্রস্তুত রাখা হয় এবং সময়মত তা খাবারের সংগে প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে যে হারে মাছ ও চিংড়ি চাষ চলছে এবং ভবিষ্যৎ সম্ভবনা যার প্রচুর, তার রোগ সনাক্তকরণ বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস ঘটিত রোগের বিশেষজ্ঞ এদেশে খুবই কম এবং উপযুক্ত গবেষণাগারও অপ্রতুল। সে জন্য অনেক রোগ যা ব্যাকটেরিয়া জনিত তা সঠিক সময়ে সনাক্ত করা যায় না আবার যা ব্যাকটেরিয়া জনিত নয় অথচ তাকে ব্যাকটেরিয়া মনে করে চিকিৎসার দ্বারাও কোন ফল পাওয়া যায় না।
যা হউক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অন্তর্গত একোয়াকালচার বিভাগে একটি আধুনিক মৎস্য রোগ গবেষণাগার (Fish Disease Lab.) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে এখানকার বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের গবেষণা ফল স্বরূপ কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ সনাক্ত করা গিয়েছে এ ছাড়া বিভিন্ন মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনের মাধ্যমে যে সকল রোগ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নিম্নে দেওয়া হল।
কলামনারিস রোগ:
Flexibacter columnaris ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ কার্প জাতীয় মাছ সহ অন্যান্য স্বাদু পানির মাছে হয়ে থাকে। অনেকে ফুলকা ও পাখনা পচা রোগ বলে থাকে যা প্রধানতঃ এই ব্যাকটেরিয়ার আক্রামণেই ঘটে থাকে। যেহেতু এই ব্যাকটেরিয়া ১% লবণ দ্রবণ সহ্য করার ক্ষমতা নেই বা তাতেই তার মরণ, তাই অনেকে আক্রান্ত মাছকে ১%-২% লবণ দ্রবণে সহ্য করার মত সময় পর্যন্ত গোসল করিয়ে সুফল পায়।
এ ছাড়া জাপান বা আমেরিকাতে এ রোগের চিকিৎসার জন্য সমুদ্রের পানি ক্রমশঃ তরল থেকে ঘন স্বাদু পানি মিশ্রিত পানিতে গোসল করিয়ে প্রতিকার করা হয়। যা হউক অন্যান্য বড় প্রাণীর মত মাছও চিংড়ির ব্যাকটেরিয়াজনতি রোগের জন্য লাগসই এন্টিবায়োটিক ব্যবহারই উত্তম প্রতিকার।
যেহেতু কোন কোন ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে ব্যাকটেরিয়া চেনা তাৎক্ষনিকভারে সম্ভব নয় তার জন্য ব্যাপক আরোগ্য সাধন করার ক্ষমতা সম্পন্ন, আবার কম খরচ ও ক্ষতিক্ষারক ক্রিয়া যাতে না করে সে সকল এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উত্তম। কলামনারিস রোগের ক্ষেত্রে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন (টেরামইসিন), সালফা ড্রাগস (Sulphamethoxazole, Sulphadiazine), এবং ফুরাসিন (Furacin) ব্যবহার করা যায়। নিম্নে এদের প্রয়োগ মাত্রা সহ চিকিৎসা পদ্ধতি উল্লেখ করা হল।
অক্সিটেট্রাসাইক্লিন/টেরামাইসিন বহুল ব্যবহৃত ঔষধ। দশদিন পর্যন্ত ৭৫ মি.গ্রাম/প্রতি কেজি মাছের জন্য প্রত্যহ খাবারের সংগে মিশিয়ে খাদ্যের সংগে ব্যবহার কর যেতে পারে। আবার ইনজেকশন করলে ১০০ মিগ্রা/প্রতি কেজি মাছের ওজন হিসাবে।
সালফা ড্রাগস: খাবারের সংগে ০.১-০.২ গ্রাম/প্রতি কেজি মাছের ওজনের জন্য ১০ দিন পর্যন্ত দিতে হবে।
ফুরাসিন (নাইট্রোফুরামেন ৯.৩%): ১ ঘন্টা যাবৎ ১০-১৫ পি.পি.এম দ্রবণে আক্রান্ত মাছ গোসল করাতে হবে। আবার ৫০ মি.গ্রাম/ প্রতি কেজি আক্রান্ত মাছের জন্য ১০ দিন যাবৎ খাবার দিলে আরোগ্য লাভ করতে পারে।

ব্যাকটেরিয়াল সেপটিসেমিক রোগ
Pseudomonas fluorescens, Aeromonas hydrophila এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত মাছের রক্ত ক্ষরণ সহ নানা লক্ষণ প্রকাশ পায়। এর মধ্যে ড্রপসি (পেটফুলা) রোগও হতে পারে। এ সকল হলে বা রক্ত সংক্রমিত হলে সাধারণতঃ এন্টিবায়োটিকের চিকিৎসা ছাড়া আর উপায় থাকেনা। তখন উপরিউল্লিখিত ভাবে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে।
এ সকল ক্ষেত্রে “অক্সোলিনিক এসিড (Oxolinic Acid)” প্রতিদিন ৩ মি.গ্রাম হারে প্রতি কেজি মাছে খাবারের মাধ্যমে ৫ দিন পর্যন্ত প্রয়োগ করতে হবে। আবার গোসলের জন্য ১-২ পি.পি.এম এই ঔষধ দ্রবণে ১ দিন পর্যন্ত আক্রান্ত মাছকে রাখলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
অনুরূপভাবে সামুদ্রিক মাছ ও চিংড়ির ভিব্রিওসিসি রোগ, স্বাদু ও সামুদ্রিক উভয় শ্রেনীর মাছে এডওয়ার্ড সিওলোসিস এবং নাতিশীতোষ্ণ বা শীত প্রধান দেশের মাছের ফুরানকুলোসিস ও ব্যাকটেরিয়াল গিল রোগ, ব্যাকটেরিয়াল কিডনী রোগ (সামুদ্রিক মাছ) চিকিৎসা করা যায়। এ ছাড়া পুকুরের পানিতে অক্সিজেন কম থাকার কারণে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ হলে ২-৫ পি.পি.এম পটাশ (পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, KMnO4) প্রয়োগ করলে কিছু ফল পাওয়া যায়।
অল্প সংখ্যক মাছ হলে ১৫-২০ পি.পি.এম পটাশ দ্রবণে এক ঘন্টা পর্যন্ত গোসল করানো যেতে পারে। বর্তমানে ছুঁতে (কপার সালফেট, CuSO4, 5H2O) খুব বিষাক্ত হিসাবে চিহ্নিত হওয়ায় সাধারণতঃ ইহার প্রয়োগ পুকুরে একেবারে অনুচিৎ। তবে অল্প সংখ্যক আক্রান্ত মাছকে আলাদা করে ০.৫-২ পি.পি.এম ছুঁতে দ্রবণে ৩০ মিনিট সময় পর্যন্ত গোসল করানো যেতে পারে।
ভাইরাসজনিত রোগের উত্তম প্রতিকার পদ্ধতি এখনও অজানা। তবে কিছু প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে এ সকল রোগের প্রতিকার করার চেষ্টা চলছে।
ভাইরাসজনিত রোগের প্রতিকার
মাছ ও চিংড়ি উৎপাদনকারী পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে ভাইরাস ঘটিত রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে এবং কোন ক্ষেত্রে তা মারাত্মক মড়কের সৃষ্টি করে। কিন্তু বিজ্ঞানির নানাবিধ গবেষণা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত প্রতিকারের ভাল কোন উপায় বের করা সম্ভব হয়নি। সে জন্য বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই উত্তম ব্যবস্থাপনা, সংক্রমন যাতে না হয় তার ব্যবস্থা নেওয়া, রোগের প্রতি সংবেদনশীলতা যাতে কম হয় তার জন্য পরিবেশ নিয়ন্ত্রন করা এ ছাড়া কোন কোন ক্ষেত্রে ভ্যাক্সিন (ঢিকা) দিয়ে বা অন্য কোন রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করে মাছের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা হয়।
নাতিশীতোষ্ণ বা শীত প্রধান দেশে ভাইরাস রোগের প্রাদুর্ভাব হয় যার মধ্যে আই.পি.এন (ইনফেকশাস প্যাংক্রিয়েটিক নেক্রোসিস), ভি-এইচ.এস (ভাইরাল হেমোরহেজিক সেপ্টিসেমিয়া), আই এইচ এন (ইনফেকশাস হেমাটোপোয়েটিক নেক্রোসিস), লিম্ফোসিসটিস প্রধান। বাংলাদেশে অনেকে ক্ষতরোগের সংগে মিশ্র সংক্রমন করে এমন ধারনা করে থাকে যা পুরাপুরি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়নি। কার্প জাতীয় মাছে স্প্রিং ভিরেমিয়া নামক রোগের সম্ভবনা রয়েছে। তবে চিংড়ি উৎপাদনে এ দেশে ব্যাপক মড়ক দেখা দেওয়ায় প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে বিগত ৩/৪ বছর থেকে।
বর্তমানে যে রোগের প্রধান সমস্যা তা হল সাদা দাগ রোগ (White spot) বা চায়না ভাইরাস রোগ, বৈজ্ঞানিকগণ একে SEMBV (Systemic Ectodermal Mesodermal Baculo Virus) রোগ বলে থাকে। কক্সবাজার থেকে খুলনার পুরা অঞ্চল জুড়ে বাগদা চিংড়িতে এরোগের বিস্তৃতি। থাইল্যান্ড, ভারত, শ্রীলংকাসহ এশিয়ার অনেক দেশেই এর বিস্তৃতি। কিন্তু আজ পর্যন্ত সাফল্যজনক কোন চিকিৎসা এর বের হয় নি। তবে থাইল্যান্ডে কোন কোন স্থানে পুকুরে ২৫ পি.পি.এম ফরমালিন প্রয়োগ করে কিছুটা উপকার পাওয়া গেছে (নিজষ অভিজ্ঞতা থেকে)।
এ ছাড়াও বাংলাদেশে চিংড়িতে ইয়েলো হেড রোগ (Monodon Baculo Virus Disease-MBV রোগ) বাংলাদেশে ধরা পড়েছে তারও তেমন কোন প্রতিকার পাওয়া যায় নি। মাছের ক্ষেত্রে ভাইরাস সংক্রমন যাতে না হয় তার জন্য ডিম বা পোনার জন্য আয়োডিন জাতীয় ঔষধ (Argentyne) ১০০ পি.পি.এম দ্রবণে আধঘন্টা থেকে দু ঘন্টা পর্যন্ত গোসল বা ধৌত করানো যেতে পারে। এ ছাড়া জাল, পাত্র ও অন্যান্য জিনিষপত্র ১.৫০ ভাগ তরল করে ১০ মিনিট কাল ডুবিয়ে রাখলে ভাইরাস মুক্ত থাকা যায়।
অনুশীলন (Activity): পরজীবী, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসজনিত রোগের প্রতিকার পদ্ধতি সংক্ষেপে লিখুন।
সারমর্ম: পরজীবী, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসজনিত রোগের প্রতিকার সাধারণতঃ রাসায়নিক দ্রব্যাদি সঠিক নিয়মে ব্যবহার করে করতে হয় যাকে রাসায়নিক চিকিৎসা বা কেমোথেরাপি (Chemotherapy) বলে। কেবল মাত্র ভাইরাসজনিত রোগের প্রতিকার পদ্ধতি এখন পর্যন্ত কৃতকার্য্যের সহিত উদ্ভাবিত হয়নি। তবে অন্যান্য জীবানু ঘটিত রোগের মধ্যে সাধারণ রোগগুলোর প্রতিকার সাফল্যজনক ভাবে মাছ এবং চিংড়ি চাষে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
বহিঃ পরজীবীজনিত রোগের চিকিৎসা সাধারনতঃ ফরমালিন, ডিপটেরেক্স দ্বারা করা হয় তবে অন্ত পরজীবীর ক্ষেত্রে ঔষধ তেমন ক্রিয়া করে না। ছত্রাকজনিত রোগের চিকিৎসা সাধারণতঃ ম্যালাকাইট গ্রীন দ্বারা করা হয় আর ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের জন্য অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, ফুরাসিন প্রভৃতি এন্টিবায়োটিক কার্য্যকরী ভূমিকার জন্য বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ