Site icon Fisheries Gurukul [ মৎস্য গুরুকুল ] GOLN

রেণু বাজারজাতকরণ

রেণু বাজারজাতকরণ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-রেণু বাজারজাতকরণ

রেণু বাজারজাতকরণ

মানুষের চাহিদা ও অভাবের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য বিনিময় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত সকল মানবীয় কার্যক্রমকে বাজারজাতকরণ বলা হয়। যেকোনো ব্যবসার সফলতা উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ বাজারজাতকরণের উপর নির্ভরশীল। যথাযথ বাজারজাতকরণের জন্য বাজারে অনুপ্রবেশ ও প্রভাব বিস্তার, বাজার প্রসার ও বাজার পণ্যের উন্নয়ন ইত্যাদি ধাপসমূহ অনুসরণ করা আবশ্যক।

উৎপাদিত পণ্যের বাজার নিশ্চিত না হলে আর্থিক লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হ্যাচারি স্থাপন ও মৎস্য প্রজনন বেশ ব্যয়বহুল কার্যক্রম। এ ধরনের বিনিয়োগ থেকে কাঙ্ক্ষিত লাভবান হওয়ার জন্য স্থান নির্বাচন, জরিপের মাধ্যমে পোনার চাহিদা নির্ধারণ, মৎস্যচাষি সুযোগ ও মৎস্যচাষির আগ্রহ অন্যান্য মৎস্য খামারের অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।

সম্ভাব্য স্থানসমূহে জরীপের মাধ্যমে উৎসাহী ব্যবসায়ীদের কমিশন এজেন্ট নিয়োগ করা যেতে পারে যারা স্থানীয়ভাবে রেণু পালন ও নার্সারি ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করবে । প্রয়োজনে কিছু কিছু উদ্যোক্তাকে ধারে বা কিস্তিতে রেণু সরবরাহ করা যেতে পারে। সঠিক বিক্রয়মূল্য উচ্চ বা ভালো গুণসম্পন্ন পোনা বিভিন্ন ধরনের পোনার সরবরাহ ও উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেকে অন্যান্য উৎপাদনকারী থেকে আলাদা বা ব্যতিক্রমী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করতে হবে।

 

 

মৎস্যচাষ বা মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমের সময় এবং উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও মৎস্য চাষের সাথের সম্পৃক্ত এনজিওগুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে রেণু বা পোনার বাজার বিস্তৃত করা যায় ।
রেণুপোনার রোগ ।সাধারণভাবে মাছ চাষের ক্ষেত্রে অণুজীব সংক্রমিত রোগের চেয়ে পরজীবীঘটিত রোগের সংক্রমণ অধিক পরিলক্ষিত হয়।

পরজীবী সংক্রমণের তীব্রতার মাত্রা এবং পরজীবীঘটিত রোগের কারণে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ জলাশয়ভেদে খুবই কম-বেশি হয়ে থাকে। জলজ পরিবেশে মাত্রাতিরিক্ত জৈবপদার্থের উপস্থিতি এবং অধিক তাপমাত্রায় জৈব পদার্থের পচন পরজীবীঘটিত রোগের প্রধান কারণ ।
হ্যাচারি পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রেণুর স্বাস্থ্য পরিচর্যা করা। প্রজেননের অন্যান্য ধাপগুলো যথেষ্ট দক্ষতার সংগে সম্পন্ন করে যদি রেণুর স্বাস্থ্য রক্ষায় মনোযোগ না দেওয়া হয়। তাহলে দুই-এক ঘণ্টার মধ্যে সব রেণু মারা যাতে পারে। আর রেণু মারা যাওয়ার অর্থ হলো হ্যাচারির সামগ্রিক ব্যর্থতা

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

রেণুপোনার রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকার :

কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্যসম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় আমিষ চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং সর্বোপরি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের অবদান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, রোগের প্রাদুর্ভাব ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছের প্রাচুর্য আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। দ্রুত শিল্পায়ন, কৃষি কাজে ব্যাপক কীটনাশক ব্যবহার এবং অন্যান্য কারণে জলজ পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং ক্রমেই তা বেড়ে চলেছে ।

পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি আধা নিবিড় মাছ চাষাবাদের ফলেও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা অনেক সময় সম্ভব হচ্ছে না । ফলে মাছের রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। মাছের রোগবালাই বাংলাদেশে নিবিড় বা আধা নিবিড় মৎস্য প্রযুক্তির সফল বাস্তবায়নে অন্যতম অন্তরায়। রোগবালাইয়ের ফলে মাছের দৈহিক বৃদ্ধির হার হ্রাস পায়, উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং বাজারে রোগাক্রান্ত মাছের চাহিদা ও মূল্য কমে যায় । তাই রোগবালাই থেকে মাছ, পোনাকে রক্ষা করে উৎপাদন বাড়াতে হলে রোগের কারণ, লক্ষণ, রোগ প্রতিষেধক এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক ।

রোগ প্রতিরোধের বিভিন্ন উপায় :

‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ শ্রেয়’এই ভিত্তিতেই রেণুপোনার রোগ নিয়ন্ত্রণের মূলনীতি রোগ প্রতিরোধ। রেণুপোনাতে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগ নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিত। পানিতে বসবাস করে বিধায় মাছের বিভিন্ন কার্যাবলি ও আচরণ পর্যবেক্ষণ কষ্টসাধ্য। এ কারণে নির্ভুলভাবে মাছের রোগ নিরূপণ করা এবং রোগ সংক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা অধিকতর কষ্টসাধ্য ।

আবার অনেক রোগই মাছকে খাদ্য প্রদানের পদ্ধতির সাথে সংশ্লিষ্ট । এ কারণে মুখে ওষুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি মাছের রোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ততটা কার্যকরি হয় না। অন্যদিকে রোগাক্রান্ত মাছকে জীবাণুমুক্ত (disinfect) করার জন্য কোনো দ্রবণে ডুবানো বা গোসল করানোর পদ্ধতি বড় খামার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাস্তবিকপক্ষে সম্ভব হয় না। এসব বিবেচনায় সুষ্ঠুভাবে মাছ চাষ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে রোগ প্রতিকারের চেয়ে রোগ প্রতিরোধই উত্তম ।
মাছের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা এবং সফলভাবে রোগ প্রতিরোধের জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ : i. জলজ পরিবেশের গুণাবলি যথাযথ মাত্রায় সংরক্ষণ।

ii. দূষণ নিয়ন্ত্রণ

iii. জলাশয়ের স্থান নির্বাচন

iv. সুষ্ঠু মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা

v নিয়মিত মনিটরিং এবং

vi. জলজ পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ।

নিচে মাছের রোগ প্রতিরোধের কয়েকটি উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

পানির গুণাগুণ নিয়ন্ত্রণ (Controlling Water Quality ) জলজ পরিবেশের বিভিন্ন গুণাবলি, যেমন পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা, পি.এইচ, তাপমাত্রা, অ্যামোনিয়া, মুক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড, মোট ক্ষারত্ব ইত্যাদি মাছের জীবনযাত্রায় নিয়ন্ত্রক হিসেবে ভূমিকা রাখে । এসব গুণাবলি কাঙ্ক্ষিত মাত্রার না হলে মাছ পরিবেশগত পীড়নের শিকার হয় এবং বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় । পানির বিভিন্ন ভৌত রাসায়নিক গুণাবলির মাত্রা অনুকূল সীমার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করে

মাছকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়। পানির বিভিন্ন গুণাবলির অনুকূল মাত্রায় রেণুপোনা সুষম হারে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং মাছের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।

 

 

আরও দেখুন:

Exit mobile version