আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-সাধারণ মৎস্য পরজীবী ও তার বৈশিষ্ট্য
সাধারণ মৎস্য পরজীবী ও তার বৈশিষ্ট্য
এ পাঠ শেষে আপনি- চাষযোগ্য মাছের চিংড়ির সাধারণ পরজীবীর নাম বলতে পারবেন।
বিভিন্ন পরজীবীর শ্রেণিবিভাগ করতে পারবেন।
বিভিন্ন পরজীবীর বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে পারবেন।
অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় মাছেও বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ দেখা দেয়। মাছের সংক্রামক রোগজীবাণুকে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রধানত দুই শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। যথা-
১. অণুজীব (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক) এবং
২.পরজীবী।
প্রাণী জগতের শ্রেণিবিন্যাস (Classification) অনুযায়ী মাছের পরজীবীকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
যথা-
ক)এককোষী পরজীবী (Protozoa)
খ) বহুকোষী পরজীবী (Metazon
এককোষী পরজীবী
চাষোপযোগী মাছে সাধারণত নিম্নলিখিত এককোষী পরজীবী পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। যেমন-
ইকথায়োপথিরিস (Ichthyophthirius sp.)
ট্রাইকোডিনা (Trichodina sp )
মিজোবোগাস (Mixobolus sp.)
ইকথায়োবোডো (Ichthyobodo sp.)
কাইলোডোনেলা (Chilodonella sp) ইত্যাদি।
ইকথায়োপথিরিয়াস
এটি সিলিওফোরা (ciliophora) গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এককোষী, আকৃতি ঘোড়ার ক্ষুরের ন্যায় এবং আকার ০.৫-১.০ মি.মি. লম্বা। ইকথায়োপথিরিয়াস সিলিয়াযুক্ত। এ পরজীবী সাধারণত মাছের ত্বক, পাখনা ও ফুলকাকে আক্রান্ত করে। বহিঃপরজীবী, কার্পজাতীয় মাছের সব প্রজাতিতেই আক্রান্ত হয়ে থাকে।
আক্রান্ত মাছে বিন্দুর মত সাদা দাগ সৃষ্টি করে। কার্পজাতীয় মাছের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। প্রতিকূল জলজ পরিবেশে এ পরজীবী সিষ্ট তৈরি (cyst) করে আত্মরক্ষা করে। ইকথায়োপথিরিয়াস স্বাদু পানি ও আধালোনা পানিতে থাকে। এ পরজীবী দ্বি-বিভাজন পদ্ধতিতে বংশ বিস্তার করে।
ট্রাইকোডিনা
এককোষী: আকৃতি চাকরির মত চাকরির প্রান্ত ঘেসে সিলিয়ার ব্যান্ড থাকে। সিলিওফোরা পর্বের অন্তর্ভুক্ত। সাধারণত মাছের ফুলতা এবং ত্বককে আক্রান্ত করে। আক্রান্ত মাছের দেহের বহিঃবাংশে অতিরিক্ত প্রেমা বা (mucus) দেখা দেয়। ট্রাইকোডিনা মাছের বহিঃপরজীবী এর চাকতিতে একটি রিং (ring) থাকে। বিং-এ ২০ ৩২টি বড়শির মত (hook) থাকে, যা শোষক (Sucker ) হিসেবে কাজ করে। আকার 0.08 ০.০৫ মি.মি.। ট্রাইকোডিনা অৱসিংগারিডি (Urcealeridae) গোত্রের অন্তর ।
মিরোবোলাস
এটি মিঙ্গোসপরিডি (Myxosperidea) গোত্রের অন্তর্গত। আকার অসম, ত্রিকোনাকার বা গোলাকা হয়ে থাকে। ব্যাস ৪ মি.মি. পর্যন্ত হয়। এটি বহিঃ এবং অপরাধী হিসেবে মাছকে আক্রান্ত করে। আক্রান্ত স্থানে ফোড়া বা নতুন সৃষ্টি হয়। মিঙ্কোবোলান কার্পজাতীয় মাছের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। পরীর কাছের ফুলকা আক্রান্ত করে, ফলে ফুলকা পড়ে যান এবং ব্যাপকহারে মড়ক দেখা দেয়। এটি একটি সংক্রামক রোগজীবাণু এবং এর দুই কষ্টকর।
ইকবায়োবোডো
এককোষী, দেখতে ডিম্বাকার, অসম আকৃতির পৃষ্ঠদেশ উত্তল এবং উদর অংশ অবতল। উদর অ দুটি ফ্লাজেলা থাকে। ফ্লাজেলা ( falgela) দৃষ্টি অসম আকারের। ইকথায়োৰোতো মাছের বহিঃপরজীবী। মাছের ত্বক এবং ফুলকায় আক্রান্ত হয়। আগে দেখা দেয়। ইকথায়োবোডের সাইকোম্যাপটিগোফোরা গোত্রের অন্তর্ভুক্ত।
বহুকোষী পরজীবী
কাষোপযোগী মাছে নিম্নবর্ণিত বহুকোষী পরীর সংক্রমণ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে
ক) কৃমি জাতীয় – (Gyrodactylus sp), ডাটাইলোগাইরাস
(Dactylogyrus sp.)
খ)উকুন জানায়, যথা- (Lernea spn)
আরা (Angles sp.)
গ)জোঁক (Leech) ইত্যাদি

গাইরোড্যাকটাইলাস
এটি প্লাটিহেলমেনথিস পর্বের মনোজিনিয়া গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। গাইরোডাকেটাইলাস বহিঃপরজীবী। মাছের ত্বক এবং ফুলকার আক্রান্ত হয়। আকারে লম্বাকৃতি, সর্বোচ্চ ৩ সে.মি. লম্বা হয়। দেহের পশ্চাদ্দেশে পোষকের দেহে লেগে থাকার ভানা আকর্ষক অঙ্গ থাকে। এটিকে হেক্টর (Heptor) বলে।
হেন্টরে ২ জোড়া নোহরের মত অঙ্কুশ (hook) থাকে। দেহের অগ্রভাগ গ্রন্থি সদৃশ্য। মুখে কোন শোষক থাকে না। দেহের অগ্রভাগে চোখ আছে। পাইরোড্যাকটাইলাসের জীবনচক্র একটি পোষকেই সম্পন্ন হয়, কোন মধ্যবর্তী পোষকের প্রয়োজন হয় না। এটি সাধারণভাবে ত্বক কৃমি (Skin fluke) নামে পরিচিত। কার্পজাতীয় মাছকে সংক্রমিত করে।
ড্যাকটাইলোগাইরাস
ড্যাকটাইলোগাইরাসের সকল বৈশিষ্ট্য গাইরোড্যাকনাইলাসের অনুরূপ। কিন্তু এটি শুধুমাত্র মাছের ফুলকাকে আক্রান্ত করে। সাধারণভাবে এটি ফুলকা কৃমি (gill fluke) নামে পরিচিত।
আরগুলাস (Argulus )
এটি আর্থোপোডা পর্বের ক্রাস্টেসিয়া শ্রেণিভুক্ত। দেহ চ্যাপ্টা, পৃষ্ঠদেশ ও উপরের দিক থেকে চাপা, ডিম্বাকৃতি। দেহ খন্ডিত ও সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গ সমন্বয়ে গঠিত। দুই জোড়া এন্টিনা ও যুদ্ধের অগ্রভাগে পড় থাকে। দ্বিতীয় ম্যাক্সিলা আটোর মত ও শোষকে রূপান্তরিত হয়। আরওলাস মাছের বহিঃপরজীবী।
আক্রান্ত মাছ অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে সাঁতার কাটে এবং অস্থিরভাবে বিশ্রামহীন ছুটাছুটি করে। কইজাতীয় মাছের প্রধান পরজীবী। আরওলাস শোষকের মাধ্যমে উকুনের মত মাছের দেহ থেকে রক্ত শোষণ করে। আরগুলাস মাছের উকুন (fish louse) নামে পরিচিত।
মার্ণিয়া (Learnea)
লার্নিয়াও আর্থোপোডা পর্বের ফ্রাস্টেসিয়া শ্রেণিযুক্ত। এটি মাছের বহিঃপরজীবী। দেহ লম্বাকৃতি, কৃমির মত। দেহ খণ্ডিত এবং উপাঙ্গগুলো পরম্পরযুক্ত। মুখে আংটার মত উপাহ থাকে, যা দিয়ে ম মাংসে দৃঢ়ভাবে গেঁথে থাকে। এজন্য পার্ণিয়াকে নোগর কৃমি (anchor worm) বলা হয়।
মাছের দেহে ক্ষত সৃষ্টি করে। কার্পজাতীয় মাছের পাখনার গোড়ায় ও ত্বকে এ পরজীবী প্রায়শঃ দেখা যায়। আক্রান্ত যাছে আরগাস আক্রান্ত মাছের অনুরূপ লক্ষণ দেখা দেয়। পার্ণিয়া ৬ ১২.৪ মি.মি. পর্যন্ত আকারের হয়ে থাকে।
জোঁক (পিসিকোলা)
জোঁক এনেলিড (Annelid) পর্বের অন্তর্ভুক্ত। দেহ খন্ডিত দেহপ্রাটীর মাংশল। দেহ নলের মত লম্বা এবং পৃষ্ঠদেশ ও উদরের দিক থেকে চাপা। দেহের অগ্র ও পশ্চাদ্দেশে দুইটি শোষক (sucker ) আছে। জোঁক মাছের বহিঃপরজীবী।
সারমর্ম:
মাছের রোগজীবাণুকে অণুজীব এবং পরজীবী এই দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।
অণুজীব বলতে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও ভাইরাসকে বুঝায়। মাছের রোগসৃষ্টিকারী পরজীবীকে দুইটি উপশ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা- এককোষী পরজীবী ও বহুকোষী পরজীবী। চাষোপযোগী মাছে যেসব এককোষী পরজীবী রোগের সংক্রমণ ঘটায় তার মধ্যে ইকথায়োপথিরিয়াস, ট্রাইকোডিনা মিক্সোস বালাস, কাইলোডোনেলা, ইকথায়োবোডো উল্লেখযোগ্য।
বহুকোষী পরজীবীর মধ্যে গাইরোড্যাকটাইলাস, ড্যাকটাইলোগাইরাস, লার্ণিয়া, আরগুলাস, জোঁক ইত্যাদি পরজীবী সাধারণত মাছে রোগ সৃষ্টি করে থাকে। এসব পরজীবীর মধ্যে অন্তঃ এবং বহিঃ উভয় ধরনের পরজীবী রয়েছে।
আরও দেখুনঃ