আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-মৎস্য খামার পরিকল্পনা ও নির্মাণ
মৎস্য খামার পরিকল্পনা ও নির্মাণ
এখনও অধিকাংশ মৎস্য খামার স্থলভাগেই নির্মাণ করা হয় এবং নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার সুবিধার জন্য এগুলো মিঠা পানি ও লোনা পানির খামার হিসেবে ভাগ করা হয় ।
কোনো স্থানে খামার নির্মাণ করতে হলে মৌলিক তথ্য হিসেবে মাসিক গড় তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বাষ্পীভবন,আর্দ্রতা, সূর্যালোক, বাতাসের গতি ও দিক ইত্যাদি জানা দরকার। তাছাড়া স্থানের বন্ধুরতা ও মসৃণতার মানচিত্র মৎস্য খামারের ডিজাইনের জন্য খুবই সহায়ক। এগুলো জানা থাকলে কোন দিক থেকে খামারের পানি সরবরাহ করতে হবে এবং কোন দিকে নিষ্কাশন করতে হবে তার উপর সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
২ মাটি :
খামার নির্মাণের আগেই মাটির নমুনা সংগ্রহ করে নিতে হবে। যদি খামারের স্থানের মাটি সমরূপী হয় তাহলে প্রতি ২-৫ হেক্টরের জন্য একটি বা দুটি নমুনা সংগ্রহ করলেই চলে । যদি বৈচিত্র্য বেশি থাকে তাহলে অধিক নমুনার প্রয়োজন হয়। মাটির নমুনা সংগ্রহের জন্য ২ মিটার বা ৬-৭ ফুট গভীরে যাওয়া উচিত । পানির জন্য বড় টাওয়ার বা অন্য কোনো ধরনের বড় ধরনের কিছু নির্মাণ করতে হলে আরও বেশি গভীরের মাটির নমুনা পরীক্ষা করা উচিত । নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রয়োজনে মাটির নমুনা পরীক্ষা করা উচিত ।
১. চুয়ানোর হার নির্ণয় ।
2. (Under seepage) অবস্থা
৩. খামারের মাটি দিয়ে তৈরি করা পুকুরের পাড় ও বাঁধের স্থায়িত্ব ।
৪. মাটিকে কী পরিমাণে ( compact) (দৃঢ়) করতে হবে তা জানা ।
৫. পুকুরের কাঁচা/পাকা নালা দিয়ে সরবরাহকৃত পানির প্রবাহ গতি কত হবে ।
৬. অন্যান্য নির্মাণ কাজের ভিত (foundation) কীভাবে করতে হবে ।
আমাদের দেশে প্রায় সর্বক্ষেত্রেই পুকুর খননের সময় পুকুরের ভিতর থেকে যে মাটি পাওয়া যায় সে মাটি দ্বারাই পুকুরের পাড় বাঁধা হয়। কিন্তু যদি পুকুরের স্থান বেশি উঁচু হয় বা বিল বা বন্যাপ্লাবিত অঞ্চল হয় তাহলে পুকুরের ভিতরের মাটি দিয়ে প্রয়োজনীয় উচ্চতায় পাড় বাঁধতে হলে পুকুরের গভীরতা অনেক বেড়ে যাবে যা মাছ চাষের জন্য কাম্য নয় । এমন ক্ষেত্রে অন্য স্থানের মাটি এনে পুকুরের পাড় বাঁধা উচিত । মাছের পুকুরের পাড়ের জন্য এঁটেল মাটি সবচেয়ে ভালো, কারণ এ মাটির পাড় সহজে ভাঙে না এবং দীর্ঘস্থায়ী হয় ।
(৩) পানি সরবরাহ
মাছের পুকুরের পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কারণ পানির গুণাগুণ মাছের উৎপাদনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে থাকে । আমাদের দেশের অধিকাংশ পুকুরের পানির উৎস বৃষ্টি ও গভীর নলকূপ। কিন্তু বর্তমানে যেসব নতুন নতুন মৎস্য খামার হচ্ছে, সেসব খামারের পুকুরের পানির উৎস নদী ও হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে দেখে নিতে হবে যে, নদীর পানি দূষিত কিনা । আজকাল নদীর পানিতে কলকারখানা থেকে নানা ধরনের বর্জ্য পদার্থ যোগ হচ্ছে ।
সেজন্য দূষণের বিষয়টি খুব ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। কোনো অঞ্চলে পুকুর তৈরি করার সময় পুকুরে বছরে কী পরিমাণ পানির প্রয়োজন হবে তা জেনে নিতে হবে । পুকুর হতে চুয়ানো ও বাষ্পীভবনের মাধ্যমে পানি হারিয়ে যায়। বছরের কোন সময়ে কী পরিমাণ পানি হারায় তা বের করা সম্ভব । আমাদের দেশে একটি আদর্শ পুকুর থেকে বছরে ৩ ফুটের মতো পানি কমতে পারে । তবে
সাধারণভাবে বলা যায় এটেল মাটির পুকুর হলে এবং পুকুরের গভীরতা ১০ ফুটের মতো হলে শুষ্ক মৌসুমে বাহির থেকে পানি সরবরাহের প্রয়োজন নেই । অন্য দিকে খামারের পুকুরের পানির জন্য যদি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয় তাহলে পুকুরের গভীরতা ৫-৭ ফুটের মতো রাখলেই চলে। শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে গেলে গভীর নলকূপ থেকে পানি সরবরাহ করতে হবে।
পুকুরে দীর্ঘদিন মাছের চাষ করলে অত্যধিক কাদা হয়ে পুকুরের তলা ভরাট হয়ে গভীরতা কমে যায়। সেজন্য মাঝে মধ্যে এসব পুকুর থেকে কাদা সরাতে হয় । কাদা সরানোর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে পুকুরের তলার আদি মাটি উন্মুক্ত না হয় কারণ আদি মাটি উন্মুক্ত হলে আবার পানির চুয়ানো বেড়ে যাবে এবং তা ঠিক হতে কয়েক বছর লেগে যাবে ।
৪. খামারের আকার :
কোনো খামারের আকার নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে :
(ক) ভূমি ও পানির প্রাপ্যতা
(খ) চাষের জন্য কী ধরনের প্রযুক্তি ব্যাবহার হবে । (বিস্তৃতি, আধা নিবিড়, নিবিড় চাষ পদ্ধতি );
(গ) কোন আকারের খামার অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি লাভজনক;
(ঘ) উৎপাদিত মাছের বাজার;
(ঙ) জনবল ও যন্ত্রপাতি;
কোনো কোনো খামারের মাছ বাজারজাত করার আগেই জমা করে রাখার জন্য খামারের ভেতরে আলাদা পুকুর বা বড় বড় চৌবাচ্চা করা হয় । তবে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক করার স্বার্থে খামারের একটি পুকুর বা পাকা চৌবাচ্চা এ কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। খামারে যদি নিবিড় চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তাহলে পুকুরগুলো ১-৫ হেক্টরের ভিতর হলে ভালো হয় । অন্যদিকে বিস্তৃত চাষের পুকুরসমূহ ৩-১০ হেক্টর হতে পারে ।
৫. পরিকল্পনামাফিক খামার তৈরি :
i) বাঁধের পুকুর (Barrage Ponds)
প্রচলিত নিয়মে মাছের পুকুরের design-কে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা ।
এই তিনটি শ্রেণি হচ্ছে :
iii) ধানক্ষেতের পুকুর ( paddy- Ponds)
ii) ঢালু পাড়ের পুকুর (contour Ponds)
নিচে এসব পুকুর সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেওয়া হলো :
i) বাঁধের পুকুর
সাধারণত দুই পাহাড় বা টিলার মাঝে বিদ্যমান সমতল বা অল্প ঢালুযুক্ত ভূমিতে বা মরা নদীর সুবিধাজনক স্থানে বাঁধ দিয়ে নির্মাণ করা হয়। এ ধরনের পুকুরে পানি সরবরাহ করা ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে ।
ii) ঢালু পাড়ের পুকুর কিছুটা বাঁধের পুকুরের মতই । কিন্তু এ ক্ষেত্রে পুকুরের তলদেশ সমতল না হয়ে ঢাল যুক্ত হয় ।
iii) ধান ক্ষেত্রের পুকুর
ধান ক্ষেতের সমতল ভূমিতে পাড় বেঁধে তৈরি করা হয়। আমাদের দেশের অধিকাংশ পুকুর এ ধরনের।
৬. চাষের জন্য প্রজাতি নির্বাচন :
খামার প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন হলে চাষের প্রজাতি নির্বাচন করতে হবে । যে সব প্রজাতির উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সহজ, উৎপাদন বেশি এবং বাজারমূল্য বেশি সেসব মাছ চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে । আমাদের দেশে রুই-কাতলা জাতীয় মাছ, পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, থাই সরপুঁটি, মাগুর ও শিং মাছের চাষ লাভজনক বর্তমানে মনোসেক্স তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশের চাষ সবচেয়ে লাভজনক ।
৭. খামারের ব্যবস্থাপনা
উৎপাদনের পুকুরের আগাছা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সার ও খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। মাছের রোগ হলে চিকিৎসা করতে হবে।
৮. মাছ আহরণ ও বিক্রি।
যখন কাঙ্ক্ষিত আকারে বড় হবে, বাজারে যখন ভালো মূল্য পাওয়া যাবে, মাছ ধরে তখন বিক্রি করতে হবে । বাজারে যে পরিমাণ মাছ বিক্রি হবে ঠিক সেই পরিমাণ মাছ ধরতে হবে। মাছ ধরার পর যথা সম্ভব টাটকা অবস্থায় বাজারজাত করতে হবে। তাতে মাছের মূল্য বেশি পাওয়া যায় ।
৯. আয়-ব্যায়ের হিসাব
বছর শেষে খামারে সর্বমোট কত বিনিয়োগ হলো এবং মাছ বিক্রি করে কত আয় হলো তার হিসাব করতে হবে । যদি কোথাও ব্যবস্থাপনার ভুল ধরা পড়ে সেগুলো সংশোধন করে আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. মাছ আহরণ ও
যখন কাঙ্ক্ষিত আকারে বড় হবে, বাজারে যখন ভালো মূল্য পাওয়া যাবে, মাছ ধরে তখন বিক্রি করতে হবে । বাজারে যে পরিমাণ মাছ বিক্রি হবে ঠিক সেই পরিমাণ মাছ ধরতে হবে। মাছ ধরার পর যথা সম্ভব টাটকা অবস্থায় বাজারজাত করতে হবে। তাতে মাছের মূল্য বেশি পাওয়া যায় ।
৯. আয়-ব্যায়ের হিসাব
বছর শেষে খামারে সর্বমোট কত বিনিয়োগ হলো এবং মাছ বিক্রি করে কত আয় হলো তার হিসাব করতে হবে । যদি কোথাও ব্যবস্থাপনার ভুল ধরা পড়ে সেগুলো সংশোধন করে আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে ।
ব্রুড মাছ পালনের কর্ম পরিকল্পনা:
ব্রুড মাছ বলতে প্রজননে ব্যবহৃত পরিপক্ক বয়ঃপ্রাপ্ত স্ত্রী ও পুরুষ মাছকে বুঝায়। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উন্নত মাছের পোনা উৎপাদনে ব্রুড মাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । আর তাই বিভিন্ন ধরনের মধ্যে মাছ চাষের মধ্যে ব্রুড মাছ পালন খুবই লাভজনক ব্যবসা । ব্রুড মাছ সাধারণত ২-৩ বছরে প্রজনন যোগ্য হয় । সেক্ষেত্রে তাদের থেকে দ্বিতীয় বছরে আয় আসে। প্রথম বছরে আয় পেতে হলে বড় ব্রুড সংগ্রহ করতে হয় । সেক্ষেত্রে আবার খরচ বেশি পড়ে ।
নিম্নে ১ একর বা ১০০ শতাংশ আয়তনের পুকুরে ব্রুড মাছ পালনের কর্মপরিকল্পনা দেওয়া হলো ।
আয়
ব্রুড মাছ থেকে বিভিন্নভাবে আয় করা সম্ভব। বিভিন্ন হ্যাচারি মালিকের কাছে সরাসরি বিক্রি করে। মোট
মাছ ১২০০ এর ৯০% আহরণ হার = ১০৮০ টি
প্রতিটি ব্রুড মাছের দাম ২৫০ হলে
১০৮০
১০৮০× ২৫০/- = ২,৭০,০০০/= টাকা
খরচ বাদে নিট লাভ (২,৭০,০০০/= ১৬৯, ৪৩০/=) = ১,০০৫৭০/=
আবার হ্যাচারি মালিকের সাথে ব্রুড বিনিময় করে রেণু চুক্তিতে এবং পরবর্তীতে ধানী ও চারা পোনা উৎপাদন করে আরো বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব ।

কার্প জাতীয় মাছের কর্মপরিকল্পনা
কৃষির যেকোনো সেক্টরের মধ্যে মাছ চাষ অধিকতর লাভজনক। দেশে প্রায় সাড়ে আঠারো লক্ষ ছোট-বড় পুকুর দীঘি রয়েছে যেখানে মাছ চাষ কার্যক্রম গ্রহণ করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই সঠিক কর্মপরিকল্পনা অনুসরণ করতে হবে ।
নিম্নে ৫০ শতাংশ আয়তনের পুকুরে কার্প জাতীয় মাছের কর্মপরিকল্পনা দেওয়া হলো :
আয় :
প্রাকৃতিক খাদ্য বজায় রাখার পাশাপাশি সম্পূরক খাদ্য পরিমাণ মতো প্রয়োগ করলে প্রতি শতাংশে ২৫ কেজি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।
সে ক্ষেত্রে মোট মাছের উৎপাদন – ৫০ × ২৫ = ১২৫০ কেজি
১ কেজি মাছের দাম ১৫০ টাকা হলে
১২৫০” ১২৫০×১৫০ টাকা = ১৮৭৫০০ টাকা
উৎপাদন খরচ বাদে লাভ (১৮৭৫০০-৬৬৬৯০) টাকা = ১২০৮১০ টাকা অর্থাৎ এক বছরে ৫০ শতাংশ পুকুর থেকে ১২০৮১০ টাকা নিট আয় হবে ।
পোনা উৎপাদন পরিকল্পনা :
মাছ চাষ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন : পুকুরে বড় মাছ উৎপাদন, বিল বা হাওরে মাছ চাষ, সমন্বিত মৎস্য চাষ, মাছের পোনা উৎপাদনের মধ্যে পোনা উৎপাদন অত্যন্ত লাভজনক প্রকল্প । তবে এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লাভবান হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা একান্ত দরকার।
নিম্নে নমুনা হিসেবে পোনা উৎপাদনের কর্ম পরিকল্পনা দেওয়া হলো :
(ক) এক ধাপ পদ্ধতিতে পোনা উৎপাদন : ২০ শতাংশ আয়তনের পুকুরে শতাংশপ্রতি ২৫ গ্রাম হারে রেণু মজুত এবং শতকরা ৬০% রেণু বেঁচে থাকার হিসাবে পরিকল্পনা দেখানো হয়েছে :
আয় :
সাধারণত ১ গ্রাম ৪০০টি পোনা হয় । উক্ত পোনার বাঁচার হার ৬০% হলে মোট পোনা = ২৪০টি। সুতরাং ৫০০ গ্রাম রেণুতে কাঙ্ক্ষিত
পোনা ৫০০ X ২৪০ = ১২০০০০ টি ধানী পোনা । ৩ বা ৪ সপ্তাহ পর প্রতি হাজার ৩০০ টাকা করে ১০০০০০ পোনার বিক্রয় মূল্য=
৩০০০০/- বাকি ২০০০০ পোনা আড়াই থেকে তিন মাস পালন করার পর প্রতি পোনা ২ টাকা হারে বিক্রয় মূল্য
(২০০০০ এর ৮০ % বাঁচার হার )
= ১৬০০০ X ২ টাকা করে
= ৩২০০০ টাকা
মোট = ৩০০০০ + 32000
= ৬২০০০/-
উৎপাদন বাদে খরচ লাভ (৬২০০০ ২৯০৮৬) = ৩২৯১৪/-
সুতরাং নিট লাভ ৩২৯১৪ টাকা।
যে সমস্ত পুকুর মালিকের একাধিক পুকুর রয়েছে তারা দুই ধাপ পদ্ধতি পোনা উৎপাদন করে অধিক লাভবান
হতে পারে ।
(খ) দুই ধাপ পদ্ধতিতে পোনা উৎপাদন :
প্রাথমিক পর্যায়ে ২০ শতাংশ পুকুরে, প্রতি শতাংশে ৩০ গ্রাম হারে রেণু মজুদ এবং শতকরা ৭০% রেণু বেঁচে থাকার হিসাবে পরিকল্পনা দেখানো :
আয় :
প্রতি গ্রাম রেণুতে ৪০০টি পোনা ৭০% বাচার হার হলে ২৮০টি ধানী পোনা ৬০০ গ্রাম রেণু থেকে ২৮০ X ৬০০ = ১৬৮০০০টি পোনা ।
প্রতি হাজার ধানী পোনার বিক্রয় মূল্য ২০০ টাকা হিসেবে ১৩০০০০ পোনার দাম
=২৬০০০ টাকা ।
উৎপাদন খরচ বাদে লাভ ২৬০০০-১৯৪২৪
= ৬৫৭৬/-
বাকি ৩৮০০০ পোনা কাটাই করে অন্য পুকুরে ছাড়া হয় ।
দ্বিতীয় পর্যায় :
৩০ শতাংশ পুকুরে প্রতি শতাংশে ১০০০টি ধানী মজুদ করে এবং ৮০% বেঁচে থাকার হিসেবে উৎপাদন পরিকল্পনা দেখানো হলো :
আয়
৩০ হাজার ধানী পোনার ৮০% বাঁচার হার হলে ২৪ হাজার চারা পোনা পাওয়া যাবে । এর মধ্যে ১টি পোনার দাম ২ টাকা হলে ২০ হাজার
পোনার দাম-
২০০০০ x ২
= ৪০০০০ টাকা
অবশিষ্ট ৪ হাজার পোনা আরও তিন মাস পালন করলে প্রতি পোনার দাম ৫ টাকা হিসেবে ৪ হাজার পোনার দাম-
8000 X @
= ২০০০০ টাকা
মোট বিক্রয় মূল্য ৪০০০০+২০০০০-৬০০০০ টাকা উৎপাদন খরচ বাদে লাভ = (৬০০০০ – ৩০৫১০)
= ২৯৪৯০ টাকা
রাজপুঁটির চাষের কর্মপরিকল্পনা :
ফিশ কালচার অ্যান্ড ব্রিডিং-২
বর্তমানে চাষীদের মধ্যে রাজপুঁটির চাষ বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কারণ এটা মৌসুমি পুকুর, ছোট জলাশয় এবং ঘোলা পানিতেও চাষ করা যায়, ধান ক্ষেতের অল্প পানিতে চাষ করে লাভবান হওয়া যায় ।এখানে ছোট পুকুর হিসেবে ২৫ শতাংশের পুকুরে থাই পুঁটি চাষের কর্মপরিকল্পনার বিবরণ দেওয়া হলো :
আয় :
রাজপুঁটি মাছের প্রধান খাদ্য ক্ষুদি পানা, এজোলা ও চালের কুঁড়া নিয়মিত পরিমাণ মতো দিতে পারলে উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পায় ।
১ শতাংশে মাছের উৎপাদন ২৫ কেজি হলে
২৫
২৫ × ২৫
১ কেজি মাছের দাম ১০০ টাকা হলে
৬২৫
উৎপাদন খরচ বাদে লাভ (৬২৫০০-৩১৫৪০ )
= ৬২৫ কেজি
= ৬২৫০০ টাকা
= ৩০৯৬০ টাকা
ব্রুড মাছ পালন, রেণু ও পোনা উৎপাদন পরিকল্পনা
ক্যাটফিশ জাতীয় মাছ চাষের কর্মপরিকল্পনা :
ক্যাটফিশ জাতীয় মাছের মধ্যে থাই পাঙ্গাশের চাষ অত্যন্ত লাভজনক । কারণ এই মাছ অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায় । এর রোগ-বালাই কম হয় এবং জীবিত বিক্রি করা যায়। তবে অন্য মাছের চেয়ে পাঙ্গাশের খাদ্য খরচ বেশি লাগে । এক্ষেত্রে প্রয়োজনে আংশিক অর্থাৎ ২০-২৫% পানি বদল করে দিতে হয় । এখানে নমুনা হিসেবে ৫০ শতাংশ আয়তনের পুকুরে পাঙ্গাশ চাষের কর্ম পরিকল্পনা দেওয়া হলো :
আয় :
প্রতি শতাংশে ৭০ কেজি মাছ উৎপাদন হলে
৫০x৭০,,,, = ৩৫০০ কেজি
১ কেজি মাছের বাজার মূল্য ৮০ টাকা হলে
3500 ৩৫০০ × ৮০ = ২৮০০০০ টাকা
উৎপাদন খরচ বাদে লাভ (২৮০০০০-২০৩৮৫০) টাকা
= ৭৬১৫০ টাকা
নিট লাভ = ৭৬১৫০ টাকা ।
ব্যবস্থাপনার উপর ভিত্তি করে পাঙ্গাশের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব ।
আরও দেখুন: