আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- মিথোজীবিতার প্রকারভেদ যা ইউনিট ১ পরজীবীতা অংশ।
এ পাঠ শেষে আপনি-
- মিথোজীবিতার সংজ্ঞা বলতে পারবেন।
- মিথোজীবিতা কত প্রকার তা উল্লেখ করতে পারবেন ।
- বিভিন্ন ধরনের মিথোজীবিতার ব্যাখ্যা করতে পারবেন ।
মিথোজীবিতা ইংরেজি Symbiosis শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ। Symbiosis শব্দটি দুটি গ্রীক শব্দ হতে উদ্ভূত – Syn এবং bios। Syn অর্থ একত্রে এবং bios অর্থ জীবন। অর্থাৎ Symbiosis-এর নাকি অর্থ দাঁড়ায় একত্রে জীবন। যখন ভিন্ন প্রজাতির দুইটি প্রাণী প্রত্যক্ষ শারীরিক সংসর্গে সম্পৃক্ত হয়ে বাহ্যিক পরিবেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং এরূপ সম্পর্ক প্রাণী দুটির পারস্পরিক প্রচেষ্টা ও কার্যক্রম দ্বারা কার্যকর ও নিয়ন্ত্রিত হয় তখন তাকে মিথোজীবিতা বলা হয়।
দুটি প্রাণীর মধ্যে ক্ষণিকের জন্য বা আকস্মিক শারীরিক সংসর্গের সম্পর্ককে মিথোজীবিতা বলা যায় না। মিথোজীবিতার ক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী নিয়মিত ও সুসংবদ্ধভাবে পারস্পরিক যুক্ত থেকে জীবনযাত্রা অতিবাহিত করে। অর্থাৎ মিথোজীবিতা দুটি প্রাণীর মধ্যে স্থায়ী সম্পর্কের বন্ধন।
সাধারণত সহজ উপায়ে চলাচল বা স্থানান্তর, পরিবেশের প্রতিকূল নিয়ামক বা রাক্ষুসে প্রাণীর কবল থেকে আত্মরক্ষা, শ্বাসকার্য পরিচালনা এবং খাদ্য সংগ্রহের জন্য দুটি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী মিথোজীবিতার সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে থাকে।
মিথোজীবিতায় সম্পর্কযুক্ত প্রাণীদ্বয় পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এ ধরনের আদান প্রদানে কখনও একটি প্রাণী লাভবান হয় এবং অন্যটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়; আবার কখন দুটি প্রাণীই লাভবান হয়ে থাকে। এরূপ সম্পর্কের কারণে পারস্পারিক ফলাফলের উপর ভিত্তি করে মিথোজীবিতাকে প্রধানত ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১. মিউচুয়ালিয়ম (Mutualism)
২. কমেনস্যালিয়ম ( Commensalism) এবং
৩. পরজীবিতা (Parasitism)
মিথোজীবিতার প্রকারভেদ
মিউচুয়ালিযম
যখন দুটি প্রাণীর দৈহিক সংসর্গের মাধ্যমে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে দুটি প্রাণীই উপকৃত হয় এবং কোন প্রাণীই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না তখন মিথোজীবিতার উক্ত সম্পর্ককে মিউচুয়ালিসম বলা হয়।
কমেনস্যালিয়ম
মিথোজীবিতার সম্পর্কের মাধ্যমে জীবনযাত্রা পরিচালনার ক্ষেত্রে পারস্পরিক ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়া ও জীবন প্রণালি দ্বারা যখন একটি প্রাণী উপকৃত হয়, কিন্তু অন্য প্রাণীটির কোন ক্ষতি বা অপকার হয় না, তখন তাকে কমেনস্যালিসম বলা হয়।
পরজীবিতা
পারস্পরিক শারীরিক সংসর্গে আবদ্ধ হয়ে জীবনযাত্রা পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক সময় একটি প্রাণী অন্য প্রাণীর ক্ষতিসাধন করে নিজে জীবন-যাপন করে। মিথোজীবিতার এরূপ সম্পর্ককে পরজীবিতা বলা হয়। পরজীবিতার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত প্রাণীটি অনেক সময় মারাও যায়।
মিথোজীবিতায় দুটি প্রাণীর সাহজর্যের বা সংসর্গের স্থান এবং সম্পর্কের নিবিড়তার ধরনের ওপর ভিত্তি
করেও মিথোজীবিতাকে নিম্নরূপ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা-
১. প্রতিবেশ মিথোজীবিতা (Synoecious symbiosis)
২. বহিঃমিথোজীবিতা (Epizoic symbiosis)
৩.অন্তঃমিথোজীবিতা (Entozoic symbiosis)
প্রতিবেশ মিথোজীবিতা
এই ধরনের মিথোজীবিতার ব্যাপ্তি ব্যাপক। Syn অর্থ একত্রে এবং oikos অর্থ গৃহ। এই ধরনের মিথোজীবিতায় একটি প্রাণী আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট হয়ে থাকে। ছোট প্রাণীটি অপেক্ষাকৃত দ্রুতগতির হয়ে থাকে। ছোট প্রাণীটির দ্রুততর গতির কারণে অপেক্ষাকৃত বড় প্রাণীটির দেহে নিজেকে সংস্থাপিত করে বা ছোট প্রাণীটি বড় প্রাণীর দেহ গহ্বরে অবস্থান নেয় এবং উক্ত প্রাণীর সাথে সহযোগী ভ্রমনকারী বা সহচর হিসেবে চলাচল করে।
এক্ষেত্রে ছোট প্রাণীটি বড় প্রাণীটিকে আবাসস্থল বা বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। যথা- এফিপ্রিয়ন মাছ (Amphiron) বড় ক্রামবাটিস এবং ডিসকোসোমার (Crambactics ard Discosoma) ট্রেনটাকেল-এর মধ্যে বাস করে।
বহিঃমিথোজীবিতা
যখন মিথোজীবী দুটি প্রাণীর একটি প্রাণী অন্য প্রাণীর দেহের উপরিভাগে বা বহিরাংশে সংস্থাপিত হয়ে জীবনযাপন করে তখন তাকে বহিঃমিথোজীবিতা বলা হয়। যথা প্লাংটনভোগী অমেরুদণ্ডী প্রাণী অ্যাপেলাসমা (Anclasma) করোনুলা (Coromula) তিনি এবং স্থাগরের ত্বকে সংস্থাপিত হয়ে জীবনযাপন করে।
তিমি এবং হাঙ্গর যখন চলাফেরা করে তখন অ্যানেলাসমা বা অনুরূপ প্রাণী খাদ্য সংগ্রহ করে এবং শ্বাসকার্য পরিচালনা সহজ হয়। তিমি বা হাঙ্গর থেকে বিচ্ছিন্ন হলে এরা ধবংস হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ছোট প্রাণীটি বড় প্রাণীটিকে বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করে এবং এখান থেকেই খাদ্য সংগ্রহ ও জীবনযাত্রা পরিচালনা করে।

অন্তঃমিথোজীবিতা
এ ধরনের মিথোজীবিতায় একটি মিথোজীবী প্রাণী আকারে ছোট হয়। ছোট প্রাণীটি অন্য মিথোজীবীর দেহের অভ্যন্তরে প্রবিষ্ট হয়ে প্রাণীটিকে আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহার করে এবং দেহাভ্যন্তর হতে খাদ্য গ্রহণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ঘুণপোকার অস্ত্রে এক ধরনের ফ্রাজিলেট থাকে। এর ঘুণপোকার অস্ত্র থেকে খাদ্য গ্রহণ করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং ঘুনপোকার গৃহীত খাদ্যদ্রব্য হজমে সহায়তা করে।
ঘুণপোকা শুকনা কাঠ থেকে সেলুলোজ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। কিন্তু ঘুণপোকার অস্ত্রে সেলুলোজ হজমের কোন এনজাইম বা পাচকরস থাকে না। হাইপারম্যাস্টিজিনা গোত্রের ফ্ল্যাজেলেট এই সেলুলোজ হজমে সহায়তা করে মিথোজীবিতার সম্পর্ক বজায় রাখে।
অনুশীলন ( Activity) বহিঃমিথোজীবিতা ও অন্তঃমিথোজীবিতার মধ্যকার পার্থক্য লিখুন।
সারমর্ম :
মিথোজীবিতা ইংরেজি Symbiosis শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ। Symbiosis শব্দটি দুটি গ্রীক শব্দ হতে উদ্ভূত, যথা- Syn এবং bios Syn অর্থ একত্রে এবং bios অর্থ জীবন। অর্থাৎ Symbiosis-এর শাব্দিক অর্থ দাঁড়ায় একত্রে জীবন যখন ভিন্ন প্রজাতির দুইটি প্রাণী প্রত্যক্ষ শারীরিক সংসর্গে সম্পৃক্ত হয়ে বাহ্যিক পরিবেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং এরূপ সম্পর্ক প্রাণী দুটির পারস্পরিক প্রচেষ্টা ও কার্যক্রম দ্বারা কার্যকর ও নিয়ন্ত্রিত হয় তখন তাকে মিথোজীবিতা বলা হয়।
মিথোজীবিতার ক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী নিয়মিত ও সুসংবদ্ধভাবে পারস্পরিক যুক্ত থেকে জীবনযাত্রা অতিবাহিত করে। অর্থাৎ মিথোজীবিতা দুটি প্রাণীর মধ্যে স্থায়ী সম্পর্কের বন্ধন। মিথোজীবিতায় সম্পর্কযুক্ত প্রাণীরা পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এ ধরনের আদান প্রদানে কখনও একটি প্রাণী লাভবান হয় এবং অন্যটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়; আবার কখন দুটি প্রাণীই লাভবান হয়ে থাকে।
আরও দেখুনঃ