মিঠা পানি ও লোনা পানির পরজীবীসমূহ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- মিঠা পানি ও লোনা পানির পরজীবীসমূহ যা  ইউনিট ১ পরজীবীতা অংশ।

এ পাঠ শেষে আপনি-

মিঠা পানি ও লোনা পানির পরজীবীর নাম বলতে পারবেন।

মিঠা পানি ও লোনা পানির পরজীবীর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে পারবেন।

প্রতিটি জীবের একটি নিজস্ব পরিবেশ এবং একান্ত কর্তৃত্বপূর্ণ এলাকা (Own personal teritory) রয়েছে। এক পরিবেশের প্রাণী সাধারণভাবে ভিন্ন পরিবেশে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। প্রতিটি জীবের অনুকূলে পরিবেশের বিভিন্ন নিয়ামক ভিন্ন ধরনের হয় এবং স্থান-কাল ভেনে এগুলোর মাত্রার ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।

স্বাদু ও লোনা পানির পরিবেশ স্বতন্ত্র প্রকৃতির। যেমন- লোনা পানির লবণাক্ততার মাত্র ৩০ পিপিটি (ppt parts per thousand) পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিন্তু স্বা পানির লবণাক্ততার মাত্রা না। তাই স্বাদু পানির মাছ লোনা পানিতে এবং লোনা পানির মাছ স্বাদু পানিতে বাস করতে পারে না। স্বাদু ও লোনা পানির গুণাবলীর ভিন্নতা হেতু স্বাদু ও লোনা পানির মাছের পরজীবীও ভিন্ন হয়ে থাকে। নিচে স্বাদু ও লোনা পানির পরজীবীর তালিকা দেওয়া হলো-

 

মিঠা পানি ও লোনা পানির পরজীবীসমূহ

সাদু পানি পরজীবী

এককোষী পরজীবী : নিম্নলিখিত এককোষী পরজীবী স্বাদু পানির মাছে রোগ সৃষ্টি করে থাকে। যথা-

১. ইকথায়োপথিরিয়াস Ichthyophthirius

২. ট্রাইকোডিনা Trichodina

৩. মিক্সোরোলাস Myxobalus

৪. মাইক্রোসপোরিডিয়ান  Microsporidian

৫. ইকথায়োবোড়ো Ichthyobodo

বহুকোষী পরজীবীঃ বহুকোষী পরজীবীকে কৃমিজাতীয়, উকুনজাতীয়, জোঁক ইত্যাদি উপশ্রেণীতে ভাগ করা হয়।

সাধারণত নিম্নলিখিত পরজীবীগুলো চাষকৃত স্বানু পানির মাছে রোগ সৃষ্টি করে থাকে।

কৃমিজাতীয় পরজীবী

১. গাইরোড্যাকটাইলা
Gyrodactylus
২. ড্যাটাইলোগাইরাস
Dactylogyrus

উকুনজাতীয় পরজীবী 

১।Lernaca

২. আরগুলাস Argulus

৩. ইরগাসিলাস Ergasilus

মিঠা পানি ও লোনা পানির পরজীবীসমূহ

 

জোঁক জাতীয় পরজী

১। পিসসিকোলা জিমেটা পূর্বপাঠে স্বাদু পানির সাধারণ মা পরজীবীর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে।
লোনা পানির পরী

1. Lintonium pseudovibex  লিনটোনিয়াস সিউডোভাইবেক্স

2. Odontocoryle arabi  অডনটোকোটাইল অ্যারাবি

3. Faustula mandapamensis ফসটুলা ম্যালডাপামেনসিস

4. Faustula hasiri ফসটুলা বাসিরি

5. Faustula varanusiensis  ফসটুলা

6.Pseudobacciger cablei সিউডোব্যাসিজার ক্যাবলি

7.Prosogonarium plotos প্রোসোগোনারিয়াম প্রোসটি

8.সিউডোর্যাসিজার  প্যারাক্রিপটোগোনিমাস

9.কোনোগোনারিয়াম প্রোসটি হিরাসট্রিকটাস অ্যালোমেটাডেনা

10.Paracryptogonimus histrictus রোটানডাস ক্রিপটোকোলারিট্রিমা

11Allometadena rotundum অ্যাকানথোসিফোডের বেঙ্গালেন্স

 

নিচে কয়েকটি লোনা পানির পরজীবীর পোষকের নাম এবং সাধারণ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো: ফসটুলা বাসিরি
এই পরজীবীর পোষক মাছ ইলিশ মাছের একটি প্রজাতি হিলসা সাইনেনসিস (Hilsa sinensis) এই পরজীবী আক্রান্ত মাছের অস্ত্রে পাওয়া যায়। ফসটুলা বাসিরি (Faustula basiri) বঙ্গোপসাগরে
পাওয়া যায়।

বৈশিষ্ট্য
  • দেহ ডিম্বাকৃতি, ২.১৪২.৫৮ ১.০৩ – ১.১ সি.মি. আকারের হয়ে থাকে।
  • দেহের প্রান্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাটাযুক্ত।
  • মুখে শোষক আছে, শোষক দেহের প্রাপ্ত ভাগে অবস্থিত।
  • পায়ু (Excretory vesicle) দেহের শেষভাগে, দেখতে ইংরেজী ‘Y’-এর মত।
  • যৌনছিদ্র (genital pore) দেহের শেষ অংশে অবস্থিত।

 

মিঠা পানি ও লোনা পানির পরজীবীসমূহ

 

ফসটুলা ভ্যারানাসাইনেনসিস

এই পরজীবী ইলিশ মাছ (Hilsa ilisha ) কে আক্রান্ত করে রোগ সৃষ্টি করে। এটি ইলিশ মাছের অগ্র আক্রান্ত করে। ভারতের উত্তর প্রদেশ, বেনারস এবং বঙ্গোপসাগরে পাওয়া যায়।

বৈশিষ্ট্য
  • দেহ লম্বাটে, ০.৯৩১-১৩০.৫-০.৬০২ মি.মি. আকারের হয়ে থাকে।
  • দেহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাঁটা যুক্ত।
  • যৌনচ্ছিদ্র দেহের মাঝামাঝি অবস্থিত।
  • মুখ শোষকযুক্ত, সম্মুখ প্রান্তে অবস্থিত।
  • পায়ু দেহের শেষভাগে অবস্থিত, দেখতে ইংরেজী অক্ষর ‘Y’ এর মত।

 

অডনটোকোটাইল অ্যারাবি

এই সামুদ্রিক পরজীবীর পোষক মাছের নাম পান মাছ (Drepane punctala) এটি  পোষক 1 মাছের অন্তঃপরজীবী এবং অস্ত্রে অবস্থান করে। সাধারণভাবে বঙ্গোপসাগর, কালকূট এবং ওয়ালটেয়ার এ পরিলক্ষিত হয়।

বৈশিষ্ট্য
  • দেহ লম্বাটে, নাশপাতির মত দেখতে, আকার ০.৬-২.২৩০.৩১ ০.৮ মি.মি. ।
  • দেহের প্রান্ত ঘেসে আঁইশের মত কাঁটাযুক্ত।
  • মুখের শোষক ডিম্বাকার।
  • যৌনচ্ছিদ্র দেহের মধ্যভাগের একটু পরে অবস্থিত।
  • পায়ুপথ দেহের শেষভাগে অবস্থিত।

ক্রিপটোকোলাররিটিমা প্রোজেসিকুলেটাম

এই পরজীবীর পোষক মাছের নাম (Chelone mydas)। এই পরজীবী পোষক মাছের পাকস্থলী এবং হেপাটিক সিকা-কে আক্রান্ত করে। বঙ্গোপসাগরে পাওয়া যায়।

বৈশিষ্ট্য

• দেহ নলের মত, উপরে-নিচে সমান গোলাকার, ৩.৮৭-৫৯২ X ১.৬৮ মি.মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে।
• দেহের সম্মুখ অংশ মাংশল, কুশনের মত।
• মুখের শোষক দেহের সম্মুখ ভাগের প্রান্তের একটু পরে অবস্থিত।
• যৌনাঙ্গ ফলের বীজের মত দেখতে। • পায়ু দেহের শেষ ভাগে এবং দেখতে ‘Y’-এর মত।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

অ্যালোমেটাডোনা রোটানডাম

রাঙা চৌকা নামক সামুদ্রিক মাছ (Lutjianus malbaricus) এই পরজীবীর পোষক। অ্যালোমেটাডোনা রোটানডাম পোষকের অস্ত্রকে আক্রান্ত করে। বঙ্গোপসাগরে পাওয়া যায়।

বৈশিষ্ট্য

• দেহ গোলাকার, পেট ও পিঠের দিক থেকে চাপা। আকার ০.৬১০০.১ ০.৭২ মি.মি. ।
• দেহের প্রান্ত কাঁটাযুক্ত। • সম্মুখভাগে বিন্দুর মত চোখ আছে।
• যৌনাঙ্গ দেহের মধ্যভাগে অবস্থিত।
• পায়ু দেহের শেষ প্রান্তের একটু আগে অবস্থিত।

অনুশীলন ( Activity): শোষকসহ মিঠা এবং লবণাক্ত পানির ৬টি (৩+৩) পরজীবীর বৈজ্ঞানিক নামের তালিকা তৈরি করুন

সারমর্ম:

প্রতিটি জীবের একটি নিজস্ব পরিবেশ এবং একান্ত কর্তৃত্বপূর্ণ এলাকা ( Own personal territory) রয়েছে। এক পরিবেশের প্রাণী সাধারণভাবে ভিন্ন পরিবেশে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না। স্বাদু পানির মাছ লোনা পানিতে এবং লোনা পানির মাছ স্বাদু পানিতে বাস করতে পারে না স্বাদু ও লোনা পানির গুণাবলীর ভিন্নতা হেতু স্বাদু ও লোনা পানির মাছের পরজীবীও ভিন্ন হয়ে থাকে।

স্বাদু পানির মাছে রোগ সৃষ্টিকারী এককোষী পরজীবীর মধ্যে ইকথায়োপথিরিয়স, ট্রাইকোডিনা মিক্সোবোলাস অন্যতম। অনুরূপভাবে লোনা পানির মাছে রোগ সৃষ্টিকারী পরজীবীর মধ্যে ফসটুলা, বাসিরি, ফসুটলা, ভ্যারানাসাইনেনসিস অন্যতম।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment