আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-বাহ্যিক লক্ষণ দেখে রোগাক্রান্ত মাছ শনাক্তকরণ যা ইউনিট ২ মাছের স্বাস্থ্য অংশ।
এই পাঠ শেষে আপনি
- মাছ রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণ নির্ণয়ের পদ্ধতিগুলোর নাম বলতে পারবেন।
- বিভিন্ন নিয়ামকের কারণে রোগ সংক্রমণের তীব্রতার মাত্রা বর্ণনা করতে পারবেন।
- বিভিন্ন বাহ্যিক লক্ষণ দেখে রোগাক্রান্ত মাছ শনাক্ত করতে পারবেন।
অন্যান্য জীবের ন্যায় মাছও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার পিছনে ভিন্ন ভিন্ন কার্যকারণ নিয়ামক রয়েছে। এসব নিয়ামকের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় মাছ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় এবং বিভিন্ন রকম লক্ষণ প্রদর্শন করে থাকে।
এসব কার্যকারণ নিয়ামক এবং লক্ষণকে বিবেচনায় রেখে মাছের রোগাক্রান্ত হওয়া, রোগের মাত্রা ইত্যাদি নির্ণয়ের কতকগুলো পদ্ধতি আছে। যথা-
১. পুকুর পর্যবেক্ষণ
২. আণুবীক্ষণিক পর্যবেক্ষণ এবং
৩. মাছের দৈহিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ।
বাহ্যিক লক্ষণ দেখে রোগাক্রান্ত মাছ শনাক্তকরণ
পুকুর পর্যবেক্ষণ
পুকুর পর্যবেক্ষণকে কয়েকটি ধাপে ভাগ করা যায়। যেমন–
ক. পানির গুণাবলী পরীক্ষা
খ. মাছের মৃত্যুর প্রকৃতি যাচাই
গ. পুকুরের ইতিহাস পর্যালোচনা
ঘ. উৎপাদন উপকরণ যাচাই করা
পানির গুণাবলী পরীক্ষা
পুকুরে পানির বিভিন্ন গুণাবলী, যেমন- দ্রবীভূত অক্সিজেন, পি.এইচ, অ্যামোনিয়া, তাপমাত্রা, মোট ক্ষারত্ব ইত্যাদি চাষকৃত মাছের উপযোগী যাত্রায় আছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করা প্রয়োজন। পানির বিভিন্ন গুণাবলীর মাত্রা খুববেশি গরমিল হলে মাছ কোন রোগে আক্রান্ত না হয়েও অল্প সময়ের মধ্যে মারা যেতে পারে।
মাছের মৃত্যুর প্রকৃতি :
পরিবেশগত পীড়ন এবং রোগজীবাণুর সংক্রমণে মাছ রোগাক্রান্ত হয়। বিভিন্ন রোগ জীবাণু এবং পরিবেশগত পীড়নের মাত্রার ওপর নির্ভর করে মাছের রোগের তীব্রতা এবং মৃত্যুর সংখ্যানুপাত কম-বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত পরিবেশগত পীড়নে এবং ভাইরাসজনিত রোগে মাছের রোগের সংক্রমণের তীব্রতা ও মৃত্যুর হার বেশি হয়। অপুষ্টিজনিত রোগে মাছের মৃত্যুহার সবচেয়ে কম হয়ে থাকে।
পুকুরের ইতিহাস :
কীভাবে পুকুর সৃষ্টি হয়েছে, পুকুরের বয়স কত, কি কারণে পুকুর কাটা হয়েছে, পুকুরে পানির স্থায়িত্বের প্রকৃতি অর্থাৎ পুকুরে সারা বছর পানি থাকে, না বছরের কয়েক মাস পানি থাকে, পুকুর শুকানো হয়েছিল কি-না ইত্যাদি বিষয় পুকুরের তলদেশ এবং পুকুরে বিদ্যমান প্রাণী ও অণুজীব সম্পর্কে ধারণা দেয়, যা মাছের রোগের প্রকৃতি নির্ণয়ে সহায়তা করে।
উৎপাদন উপকরণ
পানি ও পোনার উৎস এবং সারও খাদ্যের উৎস, খাদ্য গুদামজাতকরণের অবস্থা, পরিবহণ ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয় মাছের রোগের প্রকৃতি নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
আণুবীক্ষণিক পর্যবেক্ষণ
পর্যকরী ক্ষণিক সাধারণত মাছের ত্বক, ফুলকা, অস্ত্র, চোখ ইত্যাদির আণুবীক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হয়। মরা মাছের চেয়ে জীবিত মাছ পর্যবেক্ষণ অধিকতর কার্যকরী ফল দেয়।
আণুবীক্ষণিক পর্যবেক্ষণের দ্বারা রোগজীবাণু শনাক্তকরণের মাধ্যমে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করা যায়। রোগাক্রান্ত মাছের নিম্নোক্ত অঙ্গ/স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আণুবীক্ষণিক পরীক্ষা করা হয়-
- পাখনার গোড়ার মিউকাস থেকে
- ত্বক বা ফুলকার সিস্ট থেকে
- রক্ত থেকে
- অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ থেকে
- ত্বক বা ফুলকার টুকরা থেকে।
মাছের দৈহিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ
বিভিন্ন রোগজীবাণুর সংক্রমণে বা পরজীবীর আক্রমণে মাছ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মাছ ভিন্ন ভিন্ন বাহ্যিক লক্ষণ প্রদর্শন করে থাকে। বাহ্যিক লক্ষণ দেখে রোগাক্রান্ত মাছ শনাক্তকরণ করার জন্য মাছের আচরণ এবং বিভিন্ন অঙ্গসংস্থানিক বৈশিষ্ট্যের অসংগতি পর্যবেক্ষণ করা হয়।
বাহ্যিক লক্ষণ সাধারণত খালি চোখে দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকে। নিম্নবর্ণিত বাহ্যিক লক্ষণগুলো দেখে একটি রোগাক্রান্ত মাছকে শনাক্ত করা যায়-
ক. মাছের ত্বকেঅতিরিক্ত মিউকাস নিঃসৃত হওয়া
খ. মাছের এবড়োথেবড়ো চলাচল বা সাঁতার কাটা
গ. পাখনা ভাঁজ হওয়া, ক্ষয়ে যাওয়া, পড়ে যাওয়া বা ভেঙ্গে যাওয়া
ঘ. আইশ উঠে যাওয়া বা বহির্ণত হওয়া
ঙ. ত্বকে ক্ষত, পচন বা ঘা হওয়া
চ. পেট ফুলে যাওয়া
ছ. ত্বকে পাখনার গোড়ায় পরজীবীর উপস্থিতি
জ. মাছের রং ফ্যাকাশে হওয়া
ঝ. ত্বকে সাদা বা লালচে দাগ দেখা দেয়া
ঞ. ফুলকা ও পায়ু পথে প্রদাহ হওয়া।
চাষকৃত মাছে উল্লিখিত লক্ষণগুলোর কোন একটি বা একাধিক লক্ষণ যুগপৎভাবে পরিলক্ষিত হলে বুঝা যাবে যে মাছ রোগাক্রান্ত হয়েছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন রোগের সুনির্দিষ্ট লক্ষণের সাথে আক্রান্ত মাহের লক্ষণ মিলিয়ে নিয়ে মাছ কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়।
অনুশীলন ( Activity) : বাজার থেকে কয়েকটি মাছ ক্রয় করে তাদের বাহ্যিক লক্ষণ দেখে রোগ নির্ণয় করুন।

সারমর্ম:
রোগাক্রান্ত মাছে বিভিন্ন রকম লক্ষণ প্রকাশিত হয়ে তাকে এসব লক্ষণের কিছু বাহ্যিক এবং কিছু অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গে প্রকাশিত হয়। পুকুর পর্যবেক্ষণ, মাছের দৈহিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং মাছের আণুবীক্ষণিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রোগাক্রান্ত মাছ, রোগের কারণ এবং রোগ সংক্রমণের মাত্রা নিরূপণ করা যায়। পরিবেশগত পীড়ণে এবং ভাইরাসজনিত রোগে মাছের মৃত্যুহার বেশি হয়।
অপুষ্টিজনিত রোগে মাছের মৃত্যুহার তুলনামূলক কম হয়। পানির বিভিন্ন গুণাবলীর মাত্রায় খুব বেশি হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটলে মাছ কোন রোগে আক্রান্ত না হয়েও অল্প সময়ে মারা যেতে পারে। বাহ্যিক লক্ষণ দেখে রোগাক্রান্ত মাছ শনাক্তকরণে মাছের আচরণ এবং অঙ্গসংস্থানিক বৈশিষ্ট্যের অসংগতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। যথা- ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলা, সাঁতারের ধরন, পাখনা-আইশের অবস্থা, দেহে পরজীবীর উপস্থিতি, দেহে ঘা ক্ষত আছে কি-না ইত্যাদি ।
আরও দেখুনঃ