মাছ ধরার বড়শি

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মাছ ধরার বড়শি – যা মৎস্য আহরণের সরঞ্জামাদি তৈরি ও সংরক্ষণ এর অন্তর্ভুক্ত।

মাছ ধরার বড়শি

ক. দাওন বড়শি (লং লাইন) :

একটি লম্বা রশিতে ০.৫-১.০ মিটার পর পর দাওন বড়শি ঝুঁলিয়ে দেয়া হয় । রশির দুইপ্রান্ত খুঁটির সাথে বাঁধা থাকে। বড়শিতে টোপ হিসেবে কেঁচো, চিংড়ি ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। দাওন বড়শিতে এক সাথে ২০০-২৫০টি বড়শি ঝুলানো থাকে। এতে টাকি, শোল, গজার, টেংরা, মাগুর, কৈ ইত্যাদি মাছ ছাড়াও কখনো কখনো রুইজাতীয় মাছ ধরা পড়ে।

 

মাছ ধরার বড়শি
চিত্র ২৬ দাওন বড়শি

 

খ. ঢ্যাপ/নল বড়শি:

এ ধরনের বড়শিকে ৩০-৩৫ সে.মি. লম্বা কচুরি ডগা বা পাটকাঠি থেকে সুতা দ্বারা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এ ধরনের বড়শি অগভীর পানিতে জলজ আগাছা পরিষ্কার করে তার মাঝে একটির পর একটি স্থাপন করা হয়। সাধারণত ২০০-৩০০ ঢ্যাপ বড়শি লাইন ধরে স্থাপন করা হয় এবং বিপরীত দিক থেকে মাছ আহরণ শুরু করা হয়। ঢ্যাপ বড়শিতে মূলত টাকি মাছ ধরা পড়ে। এছাড়া এতে শিং, মাগুর, কৈ, টেংরা, পাবদা ইত্যাদি মাছও ধরা পড়ে।

গ. হাত বড়শি :

বড়শি দ্বারা মাছ ধরার মধ্যে হাত বড়শিই সহজতম পদ্ধতি। এটি এক টুকরো ছোট সিসা, একটি ছিপ, একটি সিগন্যাল ফ্লোট বা পাখনা এবং হুক সহযোগে গঠিত। এতে কৃত্রিম টোপ সংযুক্ত করা হয়। পানির গভীরতার উপর নির্ভর করে সুতার সাথে ফ্লোট সংযুক্ত করে পানিতে ফেলা হয়। মাছ যখন টোপ খেতে থাকে বা কামড় দের তখন ফ্লোট দেখে বুঝা যায় মাছ টোপ খাওয়ায় চেষ্টা করছে। ঠিক সেই সময়ে মুহূর্তে হঠাৎ করে ঝাঁকুনি দিয়ে বড়শি উত্তোলন করলে মাছ বড়শিতে আটকে যায়। তখন মাছ আহরণ করা হয় । এ ধরনের বড়শি দ্বারা মূলত রুই, মৃগেল, কালিবাউশ, কার্পিও, আইড় ইত্যাদি মাছ ধরা হয়।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

ঘ. সেট লাইনিং :

বাণিজ্যিকভাবে মাছ ধরার জন্য মৎস্যজীবীরা অনেকগুলো ছিপ একত্রে ব্যবহার করে। এ ছিলগুলো অগভীর পানিতে যেমন- নদীর কূলে, জলাশয়, মোহনায় ব্যবহার করা হয়। ছিপগুলোর নিচের অংশ মাটিতে গেঁথে দেয়া হয়। হকে জীবিত ছোট আকারের টাকি মাছ, ব্যাঙ্ক এবং পুঁটি জাতীয় মাছের পিঠের দিকে আটকানো থাকে যা পানি পৃষ্ঠে চলাফেরা করে। এ ধরনের বড়শি যারা শোল, বোয়াল, গজার, টাকি ইত্যাদি মাছ ধরা পড়ে।

চাঁচড়া :

এটি বাঁশের শলাকা দ্বারা তৈরি। যা ২.৫-৩.২ সে.মি. লম্বা হয়ে থাকে। এটি ৩০-৩৫ সে.মি. কচুরির ডগা বা পাটকাঠি হতে সুতার সাহায্যে বুলিয়ে দেওয়া হয়। চাঁচড়ার দুটি চোখা (সুচালো) মাথা ঘাস ফড়িংয়ের মধ্যে ঢুকানো হয়। মাছ যখন ফড়িং খেতে আসে তখন চাঁচড়ার চোখা মাখা দুটি দুইদিকে প্রসারতি হরে মাছের মুখে আটকে যায়। এভাবে চাঁচড়া ব্যবহার করে শুধুমাত্র কৈ মাছ ধরা হয়।

কোঁচ জাতীয় উপকরণ

এই জাতীয় যন্ত্রের সাহায্যে মাছকে আহত করার মাধ্যমে আহরণ করা হয় বলে একে Wounding Gear বলে। মাছ আহরণে ব্যবহৃত এই জাতীয় কতগুলো সরঞ্জামের নাম নিচে দেয়া হলো-

ক. কোচ :

কোচ হলো মাছকে আহত করে ধরার এক ধরণের সরঞ্জাম। এতে ২৫-৩০ সে.মি. দীর্ঘ ১৫-২০টি লোহার শলাকা ২-৩ মিটার লম্বা একটি বাঁশের মাথার আটকানো থাকে। এটি সাধারণত রাতের বেলায় নৌকা থেকে ছুরে মেরে যাছ ধরা হয়। আবার ভাদ্র-আশ্বিন মাসে যখন কোন বাতাস প্রবাহিত না হয় তখন ধান ক্ষেতে রুই, কাতলা মাছ যখন ধানের শ্যাওলা খেতে থাকে তখন কোচ দ্বারা ঐ সব মাছ আহরণ করা হয়।

 

মাছ ধরার বড়শি
চিত্র- ২৭: কোচ

 

খ. স্মৃতি :

এটিও আহত করে মাছ ধরার যন্ত্র বিশেষ। ভূতিতে প্রায় ২-৩ মিটার লম্বা বাঁশের অপেক্ষাকৃত মোটা খাস্তে ৬০-৭০ সে.মি. দীর্ঘ ৭-৮টি বাঁশের শলাকা শক্তভাবে রশি দ্বারা আটকানো থাকে। প্রতিটি শলাকার মাথায় লোহার তৈরি বার্বযুক্ত কভার বা কালি লাগানো থাকে। এটি রাতে নৌকা থেকে ছুরে মেরে মাছ ধরা হয় ।

গ. চেঁচা :

এটিও মাছকে আঘাতকারী এক ধরনের যন্ত্র। এতে ২-৩ মিটার বাঁশের এক প্রান্তে ৩-৫টি লোহার বার্ণযুক্ত শলাকা লাগানো থাকে। এটি নৌকা থেকে ছুড়ে মারা হয়। অনেক সময় রাতের বেলায় হ্যাজাক লাইট ঝুলিয়ে মাছকে আলোর দিকে আকৃষ্ট করে নৌকা হতে এ যন্ত্রটি ছুড়ে মারা হয়। এ যন্ত্রের সাহায্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, শোল, গজার, বোয়াল ইত্যাদি মাছ ধরা হয় ।

ঘ. চা :

এটিও মাছকে আহত করে আহরণকারী এক ধরনের বস্ত্র। এতে ৩০-৪৫ সে.মি. লম্বা লোহার একটি দণ্ড থাকে যার একটি মাথা বৃত্তাকারে বাঁকানো এবং অত্যন্ত তীক্ষ্ণ। এর সঙ্গে ১.৫-২.০ মিটার লম্বা বাঁশের চিকন একটি কাঠি রশি দ্বারা আটকানো থাকে যার সাহায্যে কাদার ভিতরে যন্ত্রটাকে সামনে পিছনে টানা হয়। ফলে কাদার মধ্যে লুকিয়ে থাকা মাছ তীক্ষ্ণভাবে বাঁকানো আংটায় আটকে যায়। পরে সেখান থেকে মাছ সংগ্রহ করা হয়। এই যন্ত্র দ্বারা কাদার ভিতরে বসবাসকারী মাছ, যেমন- বাইম, গুচি, শিং ইত্যাদি আহরণ করা যায়।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment