আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মাছের শ্রেণিবিন্যাস – যা চাষযোগ্য মাছ সম্পর্কে ধারণা এর অন্তর্ভুক্ত।
মাছের শ্রেণিবিন্যাস
অধ্যাপক সিম্পসনের মতে, শ্রেণিবিন্যাস হচ্ছে সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে কোনো প্রাণী বা প্রাণীগোষ্ঠীকে একটি স্বাভাবিক নিয়মে কতগুলো স্তরে সুস্থিতভাবে সাজানোর এক বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। বিশ্বে প্রায় ২০,০০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। যার মধ্যে আমাদের দেশে ২৬০ প্রজাতির স্বাদু পানির এবং ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায় । এদের প্রত্যেকের আকার, আকৃতি, বর্ণ, বাসস্থান, প্রজনন স্বভাব, খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস সবই আলাদা। এক প্রজাতির মাছের সঙ্গে অন্য প্রজাতির মিল নেই বললেই চলে।
বিশাল এ পরিমণ্ডলের সবগুলো মৎস্য প্রজাতির জীবন বৃত্তান্ত ভিন্ন ভিন্ন ভাবে জানা সম্ভব নয় বিধায় বৈজ্ঞানিকগণ নামকরণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে সর্বসম্মতিক্রমে নামকরণের একটি পদ্ধতি বের করেন যা দ্বিপদী নামকরণ (Binomial System of Nomenclature) নামে পরিচিত। যেখানে প্রত্যেকটি জীবের তথা মাছের নামকরণের ক্ষেত্রে নামের দুটি অংশ থাকবে। প্রথম অংশ ‘গণ’ এবং দ্বিতীয় অংশ ‘প্রজাতি’। নিচে কার্পজাতীয় মাছের প্রতিনিধি হিসেবে রুই এবং সিলভার কার্প মাছের শ্রেণিবিন্যাস দেখানো হলো—
রুই মাছের শ্রেণিবিন্যাস –
পর্ব (Phylum) : কর্ডাটা (Chordata)
শ্রেণি (Class) : অষ্টিকথিস্ (Osteichthys)
বর্গ (Order) : সাইপ্রিনিফরমেস (Cypriniformes) গোত্র (Family) : সাইপ্রিনিডি (Cyprinidae)
গণ (Genus) : লেবিও ( Labeo )
প্ৰজাতি (Species) : লেবিও রোহিতা ( L. rohita)
সিলভার কার্প মাছের শ্রেণিবিন্যাস –
Phylum Chordata
Class Osteichthys
Order Cypriniformes
Family – Cyprinidae Genus – Hypopthalmichthys
Species – H. molitrix
শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে যখন পদগুলোকে (Taxa) পর্ব থেকে প্রজাতি পর্যন্ত মানের নিম্নক্রমানুসারে স্তরবিন্যাস করা হয় তখন ক্রমশই নিচের দিকে প্রজাতি সংখ্যা কমতে থাকে বলে ডান দিকে চেপে লিখতে হয় ফলে
অনেকটা উল্টো ছাতার মতো দেখায় ।
শ্রেণিবিন্যাসের উদ্দেশ্য
মাছের সুষ্ঠু এবং নিয়মতান্ত্রিক পর্যালোচনার জন্য শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা সহজেই অনুমেয়। শ্রেণিবিন্যাসের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে-
ক. মাছের শনাক্তকরণ;
খ. যথোপযুক্ত শ্রেণিতে মাছের প্রজাতিকে বিন্যস্ত করা;
গ. নতুন নতুন তথ্য বা জ্ঞান আহরণ করা ও ঘ. অন্যান্য প্রাণীর সাথে মাছের জাতিগত সম্পর্ক নির্দেশ করা ।
শ্রেণিবিন্যাসের নিয়মাবলি
শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে যেসব নিয়মাবলি পালন করতে হয় তা হলো-
- বৈজ্ঞানিক নাম লেখার ক্ষেত্রে ইটালিক (Italic) হরফে অর্থাৎ বাঁকা ছাঁচের অক্ষরে মুদ্রিত হতে হবে। অর্থাৎ লিখার সময় ডান দিকে কাত করে লিখতে হবে। যেমন- Labeo rohita
- ইটালিক হরফে বা কাত করে লেখা সম্ভব না হলে ‘গণ’ এবং ‘প্রজাতি’ অংশের নিচে প্রত্যেকটি অক্ষর পর্যন্ত আলাদা আলাদা ভাবে দাগ টানতে হবে। যেমন- Labeo Rohita
কার্প জাতীয় মাছ :
যেসব মাছের গলবিলীয় দাঁত বিদ্যমান থাকে এদেরকে কার্প জাতীয় মাছ বলে। তবে গলবিলীয় দাঁত বিদ্যমান না থাকলেও কার্পের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যাবলি বিদ্যমান থাকলেও তাকে কার্প বলা যেতে পারে। যেমন-
- এরা সকলেই Cypriniformes বর্গের অন্তর্ভুক্ত, –
- এদের Weberian ossicles নামক এক ধরণের অঙ্গ বিদ্যমান থাকে যাহা অন্তঃকর্ণ ও পটকার মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে;
- এদের পটকা বা বায়ু থলির মধ্যমাংশ সংকীর্ণ হয়ে দুটি অংশে পরিণত হয়; –
- পার্শ্বরেখা সোজা ও সম্পূর্ণ;
- এ জাতীয় মাছের মাথায় কোন আঁইশ নেই। তবে সমস্ত শরীর ছোট, বড় ও মাঝারী আকারের গোলাকার আঁইশ দ্বারা আবৃত থাকে;
- পাখনা রশ্মি কাঁটাযুক্ত;
- মাংসপেশী অভ্যন্তরীণ কাঁটাযুক্ত ;
- এদের ডিম ধারণক্ষমতা তুলনামূলক বেশি এবং এরা পোনার কোন যত্ন নেয় না;
- প্রাপ্ত বয়স্ক মাছ তৃণভোজী বলে খাদ্য হিসেবে শৈবাল ও জলজ উদ্ভিদ পছন্দ করে ।
কার্পজাতীয় মাছকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- মেজর কার্প এবং মাইনর কার্প। আমাদের দেশীয় রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস, ইত্যাদি প্রজাতির মাছকে অথবা অনুরূপ জৈবিক স্বভাব বা দৈহিক পঠনের কয়েক প্রজাতির বিদেশী মাছ, যেমন- সিলভার কার্প, গ্রাসকার্প, কমন কার্প বা কার্পিও এবং বিগহেড ইত্যাদি মাছকে মেজর কার্প বলা হয়। অপর পক্ষে আকারে ছোট অনুরূপ স্বভাববিশিষ্ট মাছ, যেমন- পুঁটি, বাটা ইত্যাদি মাছ মাইনর কার্প হিসেবে পরিচিত।
ইন্ডিয়ান মেজর কার্প এবং মাইনর কার্প যেসব মাছের জন্মস্থান এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল তাদেরকে ইন্ডিয়ান মেজর কার্প বলে। ইন্ডিয়ান মেজর কার্প হিসেবে পরিচিত মাছ হলো- রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস ইত্যাদি। আকারে ছোট অনুরূপ স্বভাববিশিষ্ট মাছ যেমন- পুঁটি, বাটা ইত্যাদি মাছকে ইন্ডিয়ান মাইনর কার্প বলে ।
আরও দেখুন: