আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মাছচাষে পুকুরের ধরন ও পুকুর খনন।
মাছচাষে পুকুরের ধরন ও পুকুর খনন
সুনির্দিষ্ট পাড় দ্বারা ঘেরা পানিসহ বা শুকনো জলাশয় যেখানে মাছ চাষের সকল উপাদানসমূহ অনুকূল অবস্থায় বিদ্যমান থাকে এমন বদ্ধ জলাশয়কে পুকুর বলে। সর্বোচ্চ ১ একর থেকে সর্বনিম্ন ২ শতাংশ আয়তন বিশিষ্ট জলাশয়কে পুকুর বলা হয়। ২ শতাংশের কম আয়তন বিশিষ্ট জলাশয়কে কুয়া বলে । ১ একরের বেশি আয়তন বিশিষ্ট জলাশয়কে দিঘি বলে। আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে ছোট বড়, গভীর-অগভীর, আয়তাকার, গোলাকার, নতুন ও পুরাতন অসংখ্য পুকুর-দিঘি রয়েছে। এসব পুকুর-দিঘির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য অনুসারে এদেরকে নিম্নোক্তভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা যায় ।
পুকুরের শ্রেণিবিভাগ :
পানির গভীরতা, মাটির গঠন এবং পানির প্রাপ্যতা অনুসারে পুকুরকে ২ ভাগে ভাগ করা যায় ।
ক. মৌসুমী পুকুর এবং
খ. বাৎসরিক পুকুর।
ক. মৌসুমি পুকুর :
যেসব পুকুরে সারা বছর পানি থাকে না বা বছরে ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত পানি থাকে তাকে মৌসুমী পুকুর বলে । এ ধরণের পুকুরে পানির গভীরতা ২ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে । বাড়ি নির্মাণ, রাস্তার মাটি ভরাট বা অন্য কোন গৃহস্থালির কাজে মাটি কাটার ফলে এ জাতীয় মৌসুমী পুকুর সৃষ্টি হয়। এ জাতীয় পুকুরের আয়তন সাধারণত ২ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। মৌসুমী পুকুরে সেসব প্রজাতির মাছচাষ করা যায়, যেগুলো স্বল্প সময়েই খাওয়ার বা বাজারজাতকরণ উপযোগী হয়। যেমন- নাইলোটিকা, রাজপুঁটি, শিং, মাগুর ইত্যাদি।

অর্থনৈতিক দিক থেকে এসব পুকুরে পোনা উৎপাদন অত্যন্ত লাভজনক । কারণ মৌসুমী পুকুর প্রতি বছরই শুকিয়ে যায়। তাই তলার পরিবেশ অত্যন্ত উপযোগী থাকে। মৌসুমী পুকুরের পাড়গুলো উঁচু নয় বলে বন্যা বা বৃষ্টির পানিতে সহজেই পুকুর ভেসে যায়। তাই এসব পুকুরে মাছচাষ করতে হলে হয় বন্যামুক্ত করে অথবা বন্য পরবর্তী সময়ে মাছ চাষের ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের দেশে ডোবা, নালা, খাদ প্রভৃতি মৌসুমী পুকুরের অন্তর্ভুক্ত।
খ. বাৎসরিক পুকুর :
যেসব পুকুরে বছরের সব সময় পানি থাকে তাকে বাৎসরিক পুকুর বলে। এসব পুকুর সাধারণত ৫ ফুট হতে ৭ ফুট পর্যন্ত গভীর হয়ে থাকে। মাছচাষ বা পানীয় জলের অভাব পূরণের জন্য সাধারণত এসমস্ত পুকুর তৈরি করা হয়। আবার সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃকও এসব পুকুর খনন করা হয়। বাৎসরিক পুকুরে কার্পজাতীয় মাছের মিশ্রচাষ অত্যন্ত লাভজনক। এ জাতীয় পুকুরের আয়তন সাধারণত ৩৩ শতাংশ থেকে ১ একর পর্যন্ত হয়ে থাকে, তবে এর আয়তন পরিবর্তনশীল। মাছের উৎপাদনশীলতার ওপর ভিত্তি করে পুকুরকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
ক. উৎপাদনশীল পুকুর :
যেসব পুকুরের পানি সবুজ বা বাদামি রঙের, পুকুরে কোন আগাছা বা কচুরিপানা নেই, পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ে, পাড় ভাঙ্গা নয় এবং পুকুরের তলদেশে কোন পচা কাদা নেই। এ ধরনের পুকুরকে উৎপাদনশীল পুকুর বলে। এ জাতীয় পুকুরে অত্যন্ত কম খরচে মাছচাষ করা যায়।
খ. পচা পুকুর :
এ ধরনের পুকুর মূলত বহু বছর ধরে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত হওয়ার ফলে সৃষ্টি হয় । সাধারণত পুকুরের তলদেশে প্রচুর পরিমাণ পচা কাদা থাকতে পারে। এ ধরনের পুকুরে পানির রং কালচে থাকে, পানি পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়। পুকুর সাধারণত জলজ আগাছা বা কচুরিপানায় পূর্ণ থাকে। পুকুর পাড়ের চারপাশ ঝোপ-জঙ্গলে বা বড় ধরনের গাছ-পালা দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে। প্রায় ক্ষেত্রেই পুকুরের পাড় ভাঙা থাকে। এমন পুকুরকে পঁচা পুকুর বলে। এ ধরনের পুকুরে মাছের উৎপাদন আশানুরূপ হয় না।
আরও দেখুনঃ