Site icon Fisheries Gurukul [ মৎস্য গুরুকুল ] GOLN

ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ

ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়- ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ যা  ইউনিট ৩ রোগ ও রোগের কারণ এর অংশ।

এ পাঠ শেষে আপনি-

মাছ চাষ ব্যবস্থাপনায় নার্সারি পরিচালনা, চারা পুকুরে পোনা পালন এবং মজুদ পুকুরে মাছ চাষের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। মাছ চাষীদের কাছে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

যথাসময়ে ব্যাকটেরিয়াজনিত সমস্য প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ পুকুরে চাযকৃত মাছ পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলতে পারে। মাছ চাষে ব্যাকটেরিয়াজনিত বহু রোগের সংক্রমণ ঘটে থাকে। ব্যাকটেরিয়া মাছকে প্রাথমিক জীবাণু হিসেবে অথবা মাছের কোন ক্ষত বা ঘা-এ মাধ্যমিক সংক্রামক হিসেবে রোগাক্রান্ত করে থাকে। নিচে কয়েকটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের জীবাণু রোগের বিস্তার এবং লক্ষণ বর্ণনা করা হলো।

ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ

কলামনারিস রোগ

রোগজীবাণু :

ফ্লেক্সিব্যাক্টার কলামনারিস (Flexibacter columnaris) নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এ রোগের সৃষ্টি হয়।
রোগের বিস্তার এই রোগ সারা বিশ্বব্যাপী স্বাদু পানির প্রায় সব প্রজাতির মাছের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। মাছের দেহে বা ফুলকার ক্ষত সৃষ্টির মাধ্যমে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।

মাছের প্রজাতি এবং রোগের তীব্রতার ওপর ক্ষতের মাত্রা নির্ভর করে। রুইজাতীয় মাছের ক্ষেত্রে পাখনার গোড়া থেকে ক্ষত শুরু হয় এবং সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এটি একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এই রোগে সাধারণত মাছের মাথা, পৃষ্ঠদেশ এবং ফুলকা বেশি আক্রান্ত হয়। পরিবেশগত বিভিন্ন পীড়ণ, যেমন- পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে, তলদেশে পচা জৈব পদার্থ জমা হলে, বিশেষ করে তাপমাত্রার অধিক বৃদ্ধিতে এরোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। কোন কোন মাছের ক্ষেত্রে ১৮ ২০ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এরোগ দেখা দেয়।

রোগের লক্ষণ

 

ব্যাকটেরিয়াজনিত ফুলকা পচা রোগ (Bacterial gill disease)

রোগ জীবাণু মিক্সোকক্কাস পিসিরুলাস (Mixococcus piscicolus) নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এ রোগ দেখা দেয়।

রোগের বিস্তার :

গ্রাসকার্প এবং কমন কার্পের পোনা ও আঙ্গুলে পোনায় এ রোগ বেশি দেখা দেয়। এরোগে আক্রান্ত মাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং বাঁচার হার (survival rate) হ্রাস পায়। দেশী কার্পজাতীয় মাছেও এ রোগ দেখা যায়। গ্রাস কার্পের জন্য এটি একটি মরাত্মক রোগ। সাধারণত ২৮° – ৩০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।

তাপমাত্রা ১৫° সেলসিয়াসের নিচে গেলে এ রোগ সাধারণত হয় না এবং তাপমাত্রা ২০° সেলসিয়াসে উঠলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হয়। জলজ পরিবেশের অবনতিশীল অবস্থা, যথা- তলদেশে ক্ষতিকর জৈব পদার্থ জমা হওয়া এবং মাছের অধিক ঘনত্ব এ রোগের সহায়ক নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। এ রোগ সারা বছরব্যাপী হয়ে থাকে। এ রোগে ব্যাকটেরিয়া মাছের ফুলকারে আক্রান্ত করে। এটি একটি সংক্রামক রোগ এবং খুবই দ্রুত ছড়ায়।

 

রোগের লক্ষণ

পাখনা ও লেজ পচা রোগ (Tail & Fin rot)

রোগজীবাণু :

সিউডোমোনাস ও মিক্সোব্যাকটার গণের কয়েকটি প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে মাছ এরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যথা- সিউডোমোনাস ফিউরোসেন্স (Pseudomonas forescens)

রোগের বিস্তার

স্বাদু পানির কার্পজাতীয় মাছ এবং ক্যাটফিশে এ রোগ দেখা দেয়। জলজ পরিবেশের বিভিন্ন নিয়ামকের যথাযথ মাত্রার হ্রাস বা বৃদ্ধির কারণে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায় ।

 

আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

রোগের লক্ষণ

অনুশীলন ( Activity): মাছের দেহে সংঘটিত বাকটেরিয়াজনিত রোগগুলোর নাম লিখুন।

সারমর্ম :

মাছ চাষ ব্যবস্থাপনার সব ক্ষেত্রেই ব্যাটেরিয়াজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। যথাসময়ে | প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ চাষকৃত মাছ পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলতে পারে। ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের মধ্যে কলামনারিস রোগ, ফুলকাপচা রোগ, পাখনা ও লেজপচা রোগ উল্লেখযোগ্য। ব্যাকটেরিয়া প্রাথমিক রোগজীবাণু হিসাবে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে সংক্রমণ ঘটিয়ে থাকে। পানির বিভিন্ন গুণাবলীর খুববেশি হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটলে এ ধরণের রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version