বাগদা চিংড়ির নার্সারি | অধ্যায়-৫ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় -বাগদা চিংড়ির নার্সারি। যা “বাগদা চিংড়ির নার্সারি ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।

শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।

বাগদা চিংড়ির নার্সারি

বাগদা চিংড়ি পিএল অবস্থায় খুব ছোট থাকে তাই পিএলকে পালন পুকুরে সরাসরি মজুদ করলে গভীরতাজনিত কারণে মারা যেতে পারে। তাই পোনার বেঁচে থাকার হার বৃদ্ধির জন্য ঘেরে নার্সারি ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য যেরে স্বল্পকালীন নার্সারি তৈরি করে লালন করলে পোনার বেঁচে থাকার হার অনেকাংশে বাড়ানো সম্ভব। এ লক্ষ্যে

ক. ঘেরের যে কোনো এক পাশে মাটির বাঁধ দিয়ে বা বাঁশের চটা ও মশারির নাইলন নেটে দিয়ে ঘিরে বেরের আয়তনের শতকরা ১০-১৫ ভাগ আকারের নার্সারি তৈরি করতে হবে।

খ. বাঁশের চটা ও মশারির নাইলন নেট দিয়ে নার্সারি তৈরি করলে খেয়াল রাখতে হবে যাতে নেটে ছিদ্র না থাকে। নেট ছিদ্র থাকলে শোনা বের হয়ে লালন পুকুরে চলে যাবে।

গ. পোনার প্রাথমিক অবস্থায় আশ্রয়ের জন্য নার্সারিতে পরিমিত পরিমাণ বাঁশের কঞ্চি বা শুকনো নারিকেল বা খেজুর পাতা পুঁতে দিতে হবে। এতে একদিকে যেমন পোনার আশ্রয় হবে তেমনি এতে জমানো পেরিফাইটন ও ব্যাকটেরিয়াল ফিল্ম পোনার প্রাথমিক দশায় খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

 

বাগদা চিংড়ির ব্রড সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা | অধ্যায়-৪ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

নার্সারির প্রয়োজনীয়তা

ক) পোনার যত্ন ও পরিচর্যা করা সহজ হয়,

খ) পোনার খাবার প্রয়োগ সহজ হয়,

গ) পোনা সফল এবং শক্তিশালী হয়,

ঘ) পোনা বেঁচে থাকার হার বৃদ্ধি পায়,

ঙ) পোনা বেঁচে থাকার হার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়,

চ) সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা সহজ হয়,

হ) পালন পুকুরে মজুদ ঘনত্ব ঠিক রাখা যায়,

জ) সঠিক সময়ে নির্দিষ্ট আকারের পোনা পাওয়া যায়, এবং

ঝ) পালন পুকুরে মজুদ ঘনত্বের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায়।

নার্সারির স্থান নির্বাচন

ঘেরের যে কোনো প্রাতে নার্সারি নির্মাণ করা যায়। তবে এক্ষেত্রে নিম্নে বিষয়গুলো অনুসরণীয়

ক) ঘেরের অপেক্ষাকৃত গভীর অংশে ও নিরাপত্তার জন্য পাহারা ঘরের কাছাকাছি স্থানটি নার্সারির জন্য নির্ধারণ করা ভালো; এবং

খ) ঘরের অপেক্ষাকৃত ভালো মাটিযুক্ত এবং পাড়ের কাছাকাছি স্থানে নার্সারি তৈরি করা উচিত।

নার্সারি তৈরি

নার্সারি যথাযথভাবে তৈরি করতে হবে, ফলে পোনার মজুদকালীন মৃত্যুর হারও কমে যাবে এবং পোনা দ্রু ত বাড়বে। এক্ষেত্রে পালনীয় পরামর্শগুলো হলো

ক) নার্সারিতে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি থাকতে হবে।

খ) ঘন নেট দিয়ে নার্সারি নির্মাণ করতে হবে।

গ) নার্সারির নেট পানির উপরে এক হাত পরিমাণ বাড়তি থাকবে এবং তলার মাটিতে ৫-৬ ইঞ্চি পরিমাণ পুঁতে দিতে হবে। সেই সাথে বসানো খুঁটির সাথে শক্ত করে এঁটে দিতে হবে, যাতে বাতাসে তা পড়ে না যায়।

ঘ) নার্সারির মধ্যে শুকনো ডালপালা ও পাতা দিয়ে চিংড়ির আশ্রয়স্থল নির্মাণ করতে হবে।

ঙ) নার্সারির তলা সমান হলে ভালো হয়।

নার্সারির আয়তন

নার্সারির আকার বা আয়তন নির্ভর করে মূলত নার্সারির ধরুন, পোনা মজুদের পরিমাণ, পালন ঘেরের আয়তন, নার্সারিতে পোনা কত দিন রাখা হবে ইত্যাদির উপর। এক্ষেত্রে পরামর্শ হলো

ক) প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) পালন ঘেরের জন্য নার্সারির আয়তন হবে তিন থেকে পাঁচ শতাংশ।য়ে

খ) নার্সারির আয়তন এক বিবার বেশি হওয়া ঠিক নয়, প্রয়োজনে বড় ঘেরের জন্য একাধিক নার্সারি তৈরি করা যেতে পারে।

ক্ষেরে ও নার্সারি প্রস্তুতি

প্রস্তুতি পর্বে ঘের ও নার্সারির কমপক্ষে ৫-৬ টি স্থানের মাটির পিএইচ পরিমাপ করতে হবে। মাটির পিএইচ এর উপর ভিত্তি করে নার্সারি ও বেরে পরিমিত হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে।

ক) ধের ও নার্সারির প্রস্তুতকালীন সময়ে তলদেশ ও পাড়ের উপর অংশ পর্যন্ত শতকে ১ কেজি হারে’। ক্যালসিয়াম অক্সাইড-এর মিশ্রণ প্রয়োগ করা যেতে পারে। অথবা বিক

খ) পাথুরে চুন ও ক্যালসিয়াম অক্সাইড এর মিশ্রণ ১:১ অনুপাতে প্রয়োগ করা যেতে পারে। কিংবা

গ) শুধুমাত্র ডলোমাইট বা শুধুমাত্র পাথুরে চুন উল্লিখিত হারে ছিটিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

ক্ষেরে পানি উত্তোলন

সাধারণত জোয়ারের সময় খেয়ে পানি উঠানো হয়। এক্ষেত্রে একটু যত্নের সাথে এবং অন্য ঘেরের পানি না নিয়ে, ক্যানাল বা খালের পানি নেয়া উচিত। এক্ষেত্রে অনুসরণীয় বিষয়গুলো হলো

ক) ঘন নেটের মাধ্যমে ছেকে পানি উঠাতে হবে, যাতে অবাঞ্চিত প্রাণী/প্রাণীর ডিম ঢুকতে না পারে।

খ) প্রথমেই পাড়ের পক্ষে সহনীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ পানি উত্তোলন করে নিতে হবে। প্রয়োজনে ২-৩ দিনে পানি উত্তোলন সম্পন্ন করতে হবে, যাতে নতুন পুকুর হলে পুকুরের পাড় এবং তলার মাটি প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি শুষে নিতে পারে।

অবাঞ্চিত/রাক্ষুসে মাছ দমন

চুন প্রয়োগের ৩-৭ দিন পয়ে স্ক্রিনিং করে খের ও নার্সারিতে ৫০-৬০ সেমি জোয়ারের পানি ঢুকাতে হবে যাতে অবাঞ্চিত ও রাক্ষুসে মাছ ঘেরে প্রবেশ করতে না পারে। তদুপরি জোয়ারের পানির সাথে কদাচিৎ কিছু কিছু রাক্ষুসে মাছ বা অবাঞ্চিত প্রাণী ঘেরে ঢুকে পড়তে পারে। এদের ধ্বংস করার জন্য রাসায়নিক উপাদানটি বাজার থেকে ক্রয় করার সময় মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, মূল্য ইত্যাদি যাচাই করে নিতে হবে। রোটেনন, ফসটক্সিন, ব্লিচিং পাউডার, চা বীজের খৈল ইত্যাদি ব্যবহার করে অবাঞ্চিত/রাক্ষুসে মাছ দমন করা যেতে পারে। মেরে পানি উঠানোর ৩-৪ দিন পর রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাহ দমন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

অবাঞ্চিত ও রাক্ষুসে মাহ দমন করার পদ্ধতিসমূহ

অবাঞ্চিত ও রাক্ষুসে মাছ বিভিন্নভাবে দমন করা যায়। নিচে কয়েকটি নিরাপদ ও পরিবেশ উপযোগী পদ্ধতির বর্ণনা করা হলোঃ

ক. রোটেনন: রোটেনন দেখতে বাদামি বর্ণের এক ধরনের পাউডার জাতীয় পদার্থ। ভেরিস নামক গুল্ম জাতীয় এক প্রকার গাছের মূল শিকড়) থেকে তৈরি হয়। এ গাছ সাধারণত দক্ষিণ আমেরিকার পেরুতে প্রচুর পরিমাণে জন্মে। আমাদের দেশে পাউডার আকারে রোটেনন পাওয়া যায়। রোটেননের শক্তি মাত্রা এর মধ্যে বিদ্যমান মূল কার্যকর উপাদানের উপর নির্ভরশীল। বাজারে দুই ধরনের শক্তি সম্পন্ন রোটেনন পাওয়া যায়, যেমন-৭% এবং ৯.১%। তবে ৯.১% শক্তি সম্পন্ন রোটেননই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে রোটেনন এর মাত্রা কমে যাবে। তাই শীতকালে রোটেনন প্রয়োগের ক্ষেত্রে গরমকালের চেয়ে বেশি পরিমাণে রোটেনন লাগবে। রোটেনন প্রয়োগের সুবিধা হলো এ পদ্ধতিতে মারা যাওয়া মাছ খেলে কোনো সমস্যা হয় না।

 

শিকাবি ১ - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১ - এসএসসি, ভোকেশনাল

 

প্রয়োগমাত্রা: রোটেনন প্রয়োগের ক্ষেত্রে যেহেতু এর প্রয়োগমাত্রা প্রজাতি, তাপমাত্রা এবং শক্তিমাত্রার উপর নির্ভর করে তারপরও আমাদের দেশে সচরাচর ৯.১% মাত্রার রোটেনন বেশি ব্যবহৃত হয়। রোটেননের প্রয়োগমাত্রা নিচে উল্লেখ করা হলো

শক্তিমাত্রা প্রয়োগ মাত্রা ইউনিট
৭% ১৮-২৫ গ্রাম
প্রতি শতক/এক ফুট পানি

৯.১% ১৬-১৮ গ্রাম

প্রয়োগ পদ্ধতি: একটি সুবিধাজনক পাত্রে পরিমাণমত রোটেনন পাউডার নিয়ে আস্তে আস্তে অল্প করে পানি যোগ করে পেইস্টের মত করে কাই তৈরি করতে হবে। অতঃপর উক্ত কাইকে সমান তিনভাগে ভাগ করে এক ভাগ অল্প পানিতে গুলে ছোট ছোট বল তৈরি করে এবং দুই ভাগ বেশি পানিতে গুলে তরল করে সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। বল তৈরির ফলে কাদার নিচের ও উপরিভাগের প্রাণীসমূহ মারা যাবে এবং গুলানো অংশ উত্তমরূপে র ফলে পানিতে অবস্থিত প্রাণী মারা যাবে।

এর পর জাল টেনে পানি উলট-পালট করে দিলে রোটেনন তড়িৎ কার্যকর হবে। ১৫-২০ মিনিট পর মাছ ভাসতে শুরু করলে খুব দ্রুত জাল টেনে মাছ ধরে ফেলতে হবে। কারণ একটু বেশি দেরি হলে মৃত মাছ পুকুরের তলায় চলে যাবে, মাছ জালে উঠবে না। ভোর বেলায় রোটেনন প্রয়োগ করা ভালো। কারণ এমনিতেই তখন পানিতে কম অক্সিজেন থাকে এর সঙ্গে যাগে হয় রোটেনন এর বিষক্রিয়া ফলে খুব সহসাই মাছ মারা যায়। রোটেনন দিয়ে অবাঞ্চিত মাছ মারা গেলেও চিংড়ি ও কাকড়া মারা যায় না।

রোটেনন পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন নষ্ট করে ফেলে তাই পুকুরে যখন রোটেনন প্রয়োগ করা হয় তখন ঐ পানিতে অবস্থিত অবাঞ্চিত মাছ পানি হতে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। মাছ যখন পানি হতে অক্সিজেন গ্রহণ করার নিমিত্ত নিঃশ্বাস নিতে থাকে তখন পানিতে দ্রবীভূত রোটেনন এর বিষক্রিয়াধারা মাছের ফুলকার ল্যামেলি আক্রান্ত হয়।

অর্থাৎ ফুলকায় যে গিল ল্যামেলি আছে সেই গিল ল্যামেলিগুলো ফেটে যায়। ফলে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন হিমােেগাবিনের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সিহিমোগ্লোবিন রূপে দেহে পরিবাহিত হতে পারে না। অক্সিজেন পরিবহনের সেই মেকানিজম বন্ধ হয়ে যায় ফলে মাছ অক্সিজেন গ্রহণ করতে না পেরে মারা যায়। রোটেনন প্রয়োগ করলে পুকুরে নিম্নলিখিত বিক্রিয়া সম্পন্ন হয়-

এছাড়াও বিষযুক্ত পানি যখন নিঃশ্বাস-এর মাধ্যমে সরাসরি মাছের পাকস্থলীতে প্রবেশ করে তখন অনুরূপ প্রতিক্রিয়ায় মাছের অভ্যন্তরীণ অংশ, যেমন- পরিপাকতন্ত্র, হৃদযন্ত্র, লিভার, ফুসফুস প্রভৃতির সঙ্গে সংযুক্ত রক্তনালির দ্রুত ক্ষতিসাধন হয়। ফলে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং মাছ মারা যায়।

খ. ফসটক্সিন/কুইকফস/সেলফস: এগুলো এক ধরনের কীটনাশক। বাজারে ৩ গ্রাম ওজনের ট্যাবলেট আকারে এগুলো পাওয়া যায়। পুকুরে মৎস্যভুক ও অবাঞ্চিত মাছ দূরীকরণে এগুলো খুবই কার্যকর। তবে মানুষের জন্য অত্যন্ত বিষাক্ত বিধায় সতর্কতার সাথে এগুলো ব্যবহার করতে হয়। ফসটক্সিন প্রয়োগের মাত্রা নিচে উল্লেখ করা হলো।

সারণি: পুকুরে কমটক্সিন প্রয়োগ মাত্রা।

পানির আয়তন (শতাংশ) পানির গভীরতা ট্যাবলেটের সংখ্যা
১ ১ ফুট ১টি
১০ ১ ফুট ১০ টি
৩০ ১ ফুট ৩০ টি
৪০ ৫ ফুট ২০০ টি
৫০ ৫ ফুট ২৫০ টি

প্রয়োগ পদ্ধতি: ট্যাবলেটগুলো সমানভাবে সমত পুকুরে ছিটিয়ে দেয়ার পর জাল টেনে পানি উলট-পালট করে দিতে হবে। ট্যাবলেট প্রয়োগের ১-২ ঘণ্টা পর মাছ মরে ভাসতে শুরু করলে সাথে সাথে জাল টেনে সব মৃত মাছ উঠিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। কম গভীর পুকুরে এর কার্যকারিতা বেশি।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

বিষক্রিয়ার মেয়াদকাল: প্রায় ৮-১০ দিন।

গ. ব্লিচিং পাউডার: যদিও এটা পানি বিশাধেনে ব্যবহৃত হয় তবু এটাদ্বারা মৎস্যভুক ও অবাঞ্চিত মাছ দূর করা যায়। ব্লিচিং পাউডার পুকুরে চুনেরও কাজ করে, ফলে ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করলে আর চুন প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগের ফলে পুকুরের সমস্ত মাছ, ব্যাঙ, শামুক, ঝিনুক, পরজীবী প্রাণী এবং অন্যান্য রোগজীবাণু মারা যায়। ব্লিচিং পাউডারের প্রয়োগমাত্রা নিচে উল্লেখ করা হলো।

সারণি: পুকুরে ব্লিচিং পাউডারের প্রয়োগমাত্র

পানির আয়তন (শতাংশ) পানির গভীরতা ট্যাবলেটের সংখ্যা
১ ১ ফুট ১ কেজি
২০ ১ ফুট ২০ কেজি
৩৫ ১ ফুট ৩৫ কেজি
৪৫ ৫ ফুট ২২৫ কেজি
৫৫ ৫ ফুট ২৭৫ কেজি

প্রয়োগ পদ্ধতি: ব্রিচিং পাউডার সুবিধাজনক কোনো পাত্রে পরিমাপমত নিয়ে পানি দিয়ে গুলে দ্রবণ তৈরি করতে হবে। তারপর এই দ্রবণ নিয়ে সদ্য পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। এ পাউডার সকালে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। পাউডার প্ররোগের ৩০ মিনিট পরেই মাছ মরতে শুরু করলে জান টেনে মাহু পুকুর থেকে তুলে ফেলতে হবে।

বিষক্রিয়ার মেয়াদকাল: প্রায় ৮-১০ দিন।

ঘ. চা বীজের খৈল: এ পাউডারের মধ্যে স্যাপোনিন নামক এক প্রকার বিষাক্ত পদার্থ থাকে, যা পানিতে দ্রবীভূত হয়ে মাছের রক্তের লোহিত কণিকাগুলোকে জমাট করে ফেলে, ফলশ্রুতিতে মাছ মারা যায়। চা বীজেয় জড়া হতে এটা তৈরি করা হয়। চা বীজের খৈলের বিষাক্ততার মেয়াদকাল ৩ দিন হলেও পত্রে সার হিসেবে কাজ করে। পানির তাপমাত্রা বেশি থাকলে এ বিষক্রিয়া তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। তাপমাত্রা কম হলে এটা ধীরে ধীরে কাজ করে ফলে অনেক সময় ধরে এর কার্যকারিতা থাকে। তাই চা বীজের খৈল তাপমাত্রা বাড়ার আগে সকালের দিকে প্রয়োগ করা ভাল। বিষ প্রয়োগের ৩-৫ ঘণ্টার মধ্যেই মাঞ্চলো তারসাম্য হারিয়ে ভাসতে শুরু করে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায়। এটা প্রয়োগে শুধু মাছ মারা যায় না ব্যাঙাচি, ছোট শামুক, জোক এবং কিছু কিছু পোকামাকড়ও মারা যায়।

নির্ধারিত মাত্রায় চা বীজ খৈল প্রয়োগ করলে পুকুরের পানিতে অবস্থিত রটিফার, কপিপিড প্রভৃতি খাদ্যকণার কোনো ক্ষতি হয় না। চা বীজ খৈলের প্রয়োগমাত্রা নিচে উল্লেখ করা হলো।

সারণি: পুকুরে চা বীজ খৈলের প্রয়োগ মাত্রা

পানির আয়তন (শতাংশ) পানির গভীরতা
চা বীজ খৈলের পরিমাণ

১ ১ ফুট ১ কেজি
১৫ ১ ফুট ১৫ কেজি
২৫ ১ ফুট ২৫ কেজি
৪০ ৫ ফুট ২০০ কেজি
৪৫ ৫ ফুট ২২৫ কেজি

প্রয়োগ পদ্ধতি: নির্ধারিত পরিমাণ চা বীজের খৈল প্রথমে অল্প পানিতে গুলে নিয়ে তার সাথে আরও পানি মিশিয়ে পাতলা দ্রবণ তৈরি করে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এর ফলে স্যাপোনিন নামক বিষাক্ত পদার্থ পানিতে দ্রবীভূত হয়। প্রখর সূর্যালোকিত দিনে সকালের দিকে সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। পাউডার প্রয়োগের ২০-৩০ মিনিট পরেই মাছ মরতে শুরু করলে জাল টেনে মাছ ধরতে হবে। এই দ্রবণ প্রয়োগের সময় পুকুরে পানির গভীরতা যতদূর সম্ভব কম রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

চ. মহুয়া বীজের খৈল। মহুয়া বীজ হতে তৈল নিষ্কাশনের পর যে খৈল অবশিষ্ট থাকে, এটা বিষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এতে স্যাপোনিন (৪-৬%) নামক এক প্রকার বিষাক্ত পদার্থ বিদ্যমান থাকে। আমাদের দেশে উত্তরাঞ্চলে এই গাছ সামান্য পরিমাণে দেখা যায়। এটাও প্রথমে বিষ হিসেবে এবং পরে সার হিসেবে কাজ করে। এটা প্রয়োগ করার ২ ঘণ্টার মধ্যেই বিষক্রিয়া শুরু হয়ে যায় এবং মাছ মরে ভারসাম্যহীনভাবে ভাসতে শুরু করে। মহুয়া বীজের খৈল প্রয়াগমাত্রা নিচে উল্লেখ করা হলো।

সারণি: পুকুরে মহুয়া বীজ খৈলের প্রয়োগমাত্রা পানির

পানির আয়তন (শতাংশ) পানির গভীরতা
মহুয়া বীজ খৈলের পরিমাণ

১ ১ ফুট ৩ কেজি
১০ ১ ফুট ৩০ কেজি
২০ ১ ফুট ৬০ কেজি
৩০ ৫ ফুট ৪৫০ কেজি
৪০ ৫ ফুট ৬০০ কেজি

প্রয়োগ পদ্ধতি: প্রথমে অল্প পানিতে পরিমাণমত মহুয়া বীজের খৈল গুলে নিয়ে তার সাথে আরও পানি মিশিয়ে পাতলা দ্রবণ তৈরি করে প্রখর সূর্যালোকিত দিনে সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। পাউডার প্রয়োগের ২০-৩০ মিনিট পরেই মাছ মরতে শুরু করলে জাল টেনে মাছ ধরতে হবে নতুবা এই মাছ পচে পুকুরের পরিবেশকে নষ্ট করে ফেলতে পারে।

বিষক্রিয়ার মেয়াদকাল: প্রায় ৩-৪ দিন।

সতর্কতা

  •  ব্লিচিং পাউডার বা রোটেনন পানিতে গুলানো এবং ছিটানোর সময় যাতে নাকে বা মুখে ঢুকতে পারে তার জন্য মুখে গামছা বেঁধে নিতে হবে।
  • বাজে মাছ দমনের জন্য শুধুমাত্র ব্লিচিং পাউডার ব্যবহারই যথেষ্ট, তবে রোটেনন ব্যবহার করেও ভালো ফল পাওয়া যায়।
  •  ব্লিচিং ব্যবহার করার পর একই ঘেরে একই সাথে চুন ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। ব্লিচিং ব্যবহারের পর নিয়মিত হররা টেনে দিলে নার্সারিতে অধিক শেওলা জন্মানোর সম্ভাবনা কমে যাবে।
  • ব্লিচিং পাউডার বা রোটেনন পানিতে ছিটানোর সময় বাতাসের অনুকূলে থেকে ছিটাতে হবে।
  • পাস্টিকের গামলাতে গুলানো যাবে না।
  • ব্লিচিং পাউডার বা রোটেনন শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment