আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – বাগদা চিংড়ির খাদ্য ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা। যা “বাগদা চিংড়ির খাদ্য ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।
শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
বাগদা চিংড়ির খাদ্য ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা
চিংড়ির দৈহিক বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের প্রয়োজন। পেশীকলা গঠন ও জৈবিক ক্রিয়া সম্পাদনের জন্য চিংড়ি খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। আমিষ, চর্বি, শ্বেতসার, খাদ্যপ্রাণ, খনিজ পদার্থ প্রভৃতি চিংড়ির খাদ্যের প্রধান পুষ্টি উপাদান।
চিংড়ির খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস
অধিকাংশ চিংড়িই সর্বভুক ও নিশাচর। এরা সাধারণত রাতের বেলায় খেতে পছন্দ করে। এরা জৈব পচা পদার্থ, ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী, উদ্ভিদকণা প্রভৃতি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। এছাড়াও সম্পূরক খাদ্য হিসেবে শুকনো মাছের গুঁড়া, সয়াবিন চূর্ণ, চালের খুদ, ভুট্টা, গম চূর্ণ বা আটা প্রভৃতি গ্রহণ করে থাকে।
বাণিজ্যিকভাবে চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে উভয় প্রকার খাদ্যের উৎপাদন ও নির্দিষ্ট মাত্রায় গুণগত মানসম্পন্ন খাদ্য পরিবেশন করা একান্ত প্রয়োজন। নতুবা চিংড়ি চাষে আশাতীত ফলন লাভ করা সম্ভব নয়। চিংড়ি চাষে সম্পূরক খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা সমূহ হলোঃ
ক) চিংড়ির বৃদ্ধি দ্রুততর হয়।
খ) চিংড়ির বাঁচার হার বৃদ্ধি পায়।
গ) সময়মত নির্দিষ্ট আকারের চিংড়ি আহরণ করা যায়।
ঘ) নির্দিষ্ট সময়ে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
ঙ) একক ও মিশ্রচাষে চিংড়ি চাষের মাধ্যমে আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হওয়া যায়।

খাদ্যের প্রকারভেদ
দেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য চিংড়ি নানা ধরনের খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। খাদ্য গ্রহণের প্রকৃতিতে এরা সর্বভুক প্রাণী। খাদ্য গ্রহণে এদের কোনো বাচ-বিচার নেই। সাধারণত এরা সব ধরনের খাদ্য খেয়ে থাকে। চিংড়ির খাদ্যকে মূলত দুভাগে ভাগ করা যায়, যথা- ক. প্রাকৃতিক খাদ্য এবং খ, সম্পূরক খাদ্য।
ক. প্রাকৃতিক খাদ্য
আমাদের দেশে উন্নত সম্প্রসারিত চিংড়ি চাষ পদ্ধতিতে সাধারণত প্রাকৃতিক খাদ্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পুকুর প্রস্তুতকালে এবং পরবর্তীতে খামার ব্যবস্থাপনার সময় জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন করা হয়। প্রাকৃতিক খাদ্য আবার দু ধরণের, যেমন
ক) প্রাণী প্ল্যাংকটন- ড্যাফনিয়া, কপিপড, ক্লাডোসেরা, রটিফারস, সাইক্লপস, অস্টাকডস, ব্রাইন শ্রিম্প ইত্যাদি।
খ) উদ্ভিদ প্ল্যাংকটন- ইউজেরিনা, সবুজ শেওলা, নাভিকুলা, ডায়াটমস, সুতাকার শেওলা ইত্যাদি।
খ. সম্পূরক খাদ্য
অ্যান্য প্রাণীর মতই সুস্থভাবে বেঁচে থাকা ও দৈহিক বৃদ্ধির জন্য চিংড়ি খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। আমাদের দেশে জালা মিষিত্ব বা নিবিড় চিংড়ি চাষ পদ্ধতিতে অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করায় লক্ষ্যে সুষম সম্পূরক খাসা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সম্পূরক খাদ্য প্রত্রোণের ফলে চিংড়ি দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি ও অপুষ্টিজনিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
চিংড়ি স্বভাবজাত কান্তণেই পুকুর বা জলাশত্রের তলদেশের খাল্য গ্রহণ করে থাকে। এ কারণেই মিশ্র মাছ চাষের ন্যায় সম্পূরক খাদ্য পানির উপরিভাগে ছড়িয়ে দেয়া চিংড়ি চাষের জন্য উপযোগী নয় বা এমন ধরনের অলমান খান্য চিংড়ির খাদ্য হিসেবে সরবরাহ করা উচিক নয়।
সঠিকভাবে খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে চিংড়ির খাদ্যের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ হওয়া উচিতঃ
ক) চিংড়ির খান্য ভাসমান হওয়া উচিক নয়।
খ) পানিতে মিশ্রিত খাদ্যের স্থায়ীকাল অধিক হওয়া বালুসীয়।
গ) মিশ্রিত খাদ্যের খাদ্যপ্রাণ ও খনিজ পদার্থের গুণাগুণ দীর্জ সময় অপরিবর্তিত থাকা।
ঘ) খাদ্যের উপকরণের দানা খুবই ছোট আকারের হওয়া বাঞ্ছনীয়, যাতে চিংড়ি আতি সহজেই গ্রহণ করতে সক্ষম হয়।
ঙ) খাদ্য চিংড়ির বয়সের অনুপাতে হওয়া উচিত।
আরও দেখুনঃ