বাংলাদেশের চিংড়ি সম্পদ । ১ম অধ্যায় । শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – বাংলাদেশের চিংড়ি সম্পদ । যা ” বাংলাদেশের চিংড়ি সম্পদ ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।

শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।

শিক্ষাক্রম উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত পাঠ্যপুস্তকসমূহ পরিবর্তনশীল চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগী হওয়াসহ উচ্চশিক্ষার পথ সুগম হবে। ফলে রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী জাতিকে বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রশিক্ষিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে আমরা উজ্জীবিত।

বাংলাদেশের চিংড়ি সম্পদ

 

বাংলাদেশের চিংড়ি সম্পদ । ১ম অধ্যায় । শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

 

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আধা লোনা বা স্বল্প লোনা পানিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হয়। এ অঞ্চলের আবহাওয়া, জলবায়ু ও পানির গুণাবলি বাগদা চিংড়ি চাষের সহায়ক। জলজ সম্পদ সমৃদ্ধ বাংলাদেশের চিংড়ি ক্ষেত্রসমূহ হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ জলজ সম্পদ ও সামুদ্রিক এলাকা।

এ দেশে বদ্ধ জলাশয় আছে ৫,২৮,৩৯০ হেক্টর, তার মধ্যে পুকুর বা ডোবা ৩.০৫.০২৫ হেক্টর, বাঁওড় ৫.৪৮৮ হেক্টর ও চিংড়ি খামার এলাকা ২.১৭.৮৭৭ হেক্টর। উক্ত জলাশয় রয়েছে ৪০,৪৭,৩১৬ হেক্টর, তার মধ্যে নদী ও মাহেলা ৮,৫৩,৮৬৩ হেক্টর, বিল ১,১৪,১৬১ হেক্টর, কাপ্তাই লেক ৬৮,৮০০ হেক্টর, বন্যাপ্লাবিত এলাকা ২৮,৩২,৭৯২ হেক্টর ও সুন্দরবন এলাকা ১,৭৭,৭০০ হেক্টর।

বাংলাদেশের ৭১০ কিলোমিটার তটরেখার কাছাকাছি বেইজলাইন থেকে সাগরে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত প্রায় ১,৬৬,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের সামুদ্রিক জলসম্পদ রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, এ দেশের স্বাদু পানিতে ২৪ প্রজাতির চিংড়ি ও লোনা পানিতে ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়। মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ-এর ২০০৭-২০০৮ সনের তথ্যানুসারে বাংলাদেশের জলজসম্পদ ও মাছের মোট উৎপাদন নিচের সারণিতে উল্লেখ করা হলো।

সারণি: বাংলাদেশের জলজ সম্পদ ও মাছের উৎপাদন

মৎস্য সেক্টরজলায়তন (হেক্টর)উৎপাদন (মে. টন)শতকরা (%)
ক. অভ্যন্তরীণ জলাশয়
(১) মুক্ত জলাশয়
১. নদী ও মোহনা৮,৫৩,৮৬৩১,৩৬,৮১২
২. সুন্দরবন১,৭৭,৭০০১৮,১৫১
৩. বিল১,১৪,১৬১৭৭,৫২৪
৪. কাপ্তাই লেক৬৮,৮০০৮,২৪৮
৫. পাবনভূমি২৮,৩২,৭৯২৮,১৯,৪৪৬
মোট৪০,৪৭,৩৬১১০,৬০,১৮১৪১.৩৬
(২) বদ্ধ জলাশয়
১. পুকুর৩,০৫,০২৫৮,৬৬,০৪৯
২. বাওড়৫,৪৮৮৪,৭৭৮
৩. চিংড়ি খামার২,১৭,৮৭৭১,৩৪,৭১৫
মোট৫,২৮,৩৯০১০,০৫,৫৪২৩৯.২৩
অভ্যন্তরীণ জলাশয় (মোট)৪৫,৭৫,৭০৬২০,৬৫,৭২৩৮০.৫৯
(৩) সামুদ্রিক জলাশয়
১. ট্রলার৩৪,১৫৯
২. আর্টিসেনাল৪,৬৩,৪১৪
মোট৪,৯৭৫৭৩১৯.১৪
সর্বমোট২৫,৬৩,২৯৬১০০,০০

সুত্র: জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০০৯ সংকলন, মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

চিংড়ির প্রাপ্তিস্থান

নিচে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু লোনা ও স্বাদু পানির চিংড়ির প্রাপ্তিস্থান বর্ণনা করা হলো:

বাগদা চিংড়ি (Penaeus monodon): বাংলাদেশের উপকূলীয় ও মোহনা অঞ্চল, যেমন বাগেরহাটের ঊর্ধ্ব মোহনা, চালনা মোহনা, খুলনার পশুর নদীর মুখে নিম্ন মোহনা, পটুয়াখালীর রাঙাবালি, খেপুপাড়া মোহনা, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা এবং বঙ্গোপসাগর।

তাছাড়া ভালো জেলার লালমাহেন ও চরফ্যাশন উপজেলা সংলগ্ন মেঘনা নদী ও বুদ্ধগৌরাঙ্গা নদীর মোহনায় পাওয়া যায়। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, উত্তর অস্ট্রেলিয়া, মালয় আর্কিপেলাগো, জাপান, দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকা ও লোহিত সাগরে এদের পাওয়া যায়।

চাকা চিংড়ি (Penaeus indicus): বাংলাদেশের খুলনা, চালনা, পটুয়াখালী, খেপুপাড়া, কক্সবাজার ও বঙ্গোপসাগরে পাওয়া যায়। পালফ অফ এজেন, মাদাগাস্কার, আফ্রিকা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, নিউগিনি, ভারত ও উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় এই চিংড়ি দেখা যায়।

বাগতারা চিংড়ি (Penaeus semisulcatus): বাংলাদেশের সুন্দরবনের মোহনা ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়া এদের বিচরণ এলাকা। দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকা, মালয় আর্কিপেলাগো, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চল, ফিলিপাইন, ভারতের পূর্ব উপকূল, নিউগিনি ও মালয়েশিয়াতে এই চিংড়ি পাওয়া যায়।

হরিণা চিংড়ি (Metapenaeus monoceros): বাগেরহাটের ঊর্ধ্ব মোহনা, চালনা মোহনা, কুমারখালী মোহনা, ডুবলা, চরচাপলি, খুলনার পশুর নদীর মুখে নিম্ন মোহনা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বঙ্গোপসাগর এলাকা এই চিংড়ির বিচরণ ক্ষেত্র। দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত মহাসাগর, মালয়েশিয়া, মালাক্কা স্টেইট ও ভারতের সমগ্র সমুদ্র উপকূল এলাকায় এদের পাওয়া যায়।

বল্লি চিংড়ি (Metapenaeus bravicornis): বাগেরহাটের ঊর্ধ্ব মোহনা, চালনা মোহনা, চট্টগ্রাম মোহনা, সাতক্ষীরা মোহনা ও বঙ্গোপসাগর এদের বিচরণ ক্ষেত্র। পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের সমুদ্র উপকূলে এদের। পাওয়া যায়। পাকিস্তান ও ভারতে এটি বাণিজ্যিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ চিংড়ি।

ডোরা কাটা চিংড়ি (Penaeus japonicus): বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে এই চিংড়ি পাওয়া যায়। জাপান ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকা, আফ্রিকা ও ভারতের মাদ্রাজ উপকূলে এই ডোরা কাটা চিংড়ি পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়।

ৰাষতারা চিংড়ি (Parapenaeopsis stylifera): বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলাধীন মহেশখালী এলাকায় মূলত এই চিংড়ি পাওয়া যায়। কুয়েত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ভারত, বার্মা ও ইন্দোনেশিয়াতে এদের বিচরণ এলাকা।

বাগচাষা চিংড়ি (Penaeus:hierguensis): ঈষৎ লবণাক্ত পানি ও লোনা পানিতে বাপাচামা চিংড়ি বাস করে। সমুদ্রের ১০-৪৫ মিটার পানির গভীরে এদের পাওয়া যায়। দক্ষিণ চীন সাগর, মালয় আর্কিপেলাগো, অস্ট্রেলিয়া, এরাবিয়ান গালফ, পাকিস্তান ও ভারত এদের বিচরণ ক্ষেত্র।

গলদা চিংড়ি (Macrobrachium rosenbergii): বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র বিশেষ করে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি, সাতক্ষীরা, বাপেরহাট, চাঁদপুর, চট্টগ্রামের হালদা নদী ও ভালো জেলায় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম সমুদ্র উপকূল, পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় অঞ্চল, উড়িষ্যা ও অন্ধ প্রদেশ, পূর্ব আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, শ্রীলংকা ও মায়ানমারে এই চিড়ি পাওয়া যায়। এছাড়াও পশ্চিম গালোর্ধের ইন্দো ডেলটা এলাকায় এদের পাওয়া যায়।

ছটকা চিংড়ি (Macrobrachium inalcolmasonnii): বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, কুমিল্লাস্না জেলার দাউদকান্দি, চাঁদপুর, নরসিংদী, রংপুর, ফরিদপুর, ফেনী, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চট্টগ্রামে এই চিংড়ি পাওয়া যায়। এছাড়া ভারতের গঙ্গা, মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণাকাবেরী, পাকিস্তানের সিন্ধু নদ, মায়ানমার ও বোর্নিওতে ছটকা চিংড়ি পাওয়া যায়।

ডিমুয়া চিংড়ি (Macrobrachium villosinanus): বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই বিশেষ করে কুমিল্লাস্না, ফেনী ও বাগেরহাট জেলা, বিল ডাকাতিয়া, মেঘনা, কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে এদের বিচরণ এলাকা। এছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বার্মায় এদের পাওয়া যায়।

শুল চিংড়ি (Macrobrachiurn birnanicus): বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই কম বেশি এই চিংড়ি পাওয়া যায়। তবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, ও সিলেট অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে শুল চিংড়ি পাওয়া যায়।

 

বাংলাদেশের চিংড়ি সম্পদ । ১ম অধ্যায় । শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ১

 

গোদা চিংড়ি (Macrobrachium rude): বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রামের হালদা নদীতে পাওয়া যায়। ভারত, আফ্রিকা, মাদাগাস্কার ও শ্রীলংকাও এদের বিচরণ এলাকা।

চিকনা চিংড়ি (Macrobrachium idella): বাংলাদেশের সর্বত্রই বিদ্যমান। পূর্ব আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, মালয় আর্কিপেলাগো, ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মোহনা ও নদীতে বিশেষ করে পূর্ব সমুদ্র উপকূলে এদের বিচরণ ক্ষেত্র।

লটিয়া চিংড়ি (Macrobrachium mirabile): বাংলাদেশের মেঘনা নদী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও খুলনা অঞ্চলে এই চিংড়ি বাস করে। ভারতের গাঙ্গেয় অঞ্চল, মায়ানমার, মালয়েশিয়া ও বোর্নিও-তে পাওয়া যায়।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment