আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় প্লাবন ভূমিতে মাছচাষ।
প্লাবন ভূমিতে মাছচাষ
নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, পুকুর-দিঘি আর মৌসুমী জলাশয়সমৃদ্ধ আমাদের এ দেশ। এদেশে কৃষিজ জমির তুলনায় জলাশয়ের পরিমাণ বেশি। ফলে আবহমান কাল থেকে এদেশ মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ। জাতীয় আয়, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টি সরবরাহ এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এ খাতের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এ দেশের মৎস্য সম্পদের প্রধান তিনটি উৎসের মোট আয়তন ২০৯.১৫ লক্ষ হেক্টর। তন্মধ্যে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয় ৪০.৪৭ লক্ষ হেক্টর। এই অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের মধ্যে প্লাবনভূমির পরিমাণ ২৮.৩৩ লক্ষ হেক্টর। অর্থাৎ মোট অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের ৬৬% প্লাবনভূমি। প্লাবনভূমি হলো নিচু জমি যা নদী বা বিলের নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত। প্লাবনভূমি সাধারণত প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে পানিতে ডুবে নদী বা বিলের সাথে মিশে একাকার হয়ে যায় । আবার শুকনো মৌসুমে সম্পূর্ণ পানি শুকিয়ে গিয়ে ধানী জমিতে পরিণত হয়। প্লাবনভূমিতে সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ৩ থেকে ৬ মাস পানি থাকে ।
প্লাবনভূমিতে মাছ চাষের গুরুত্ব :
প্লাবনভূমির সিংহভাগ বছরের বেশির ভাগ সময় শুষ্ক থাকায় এখানে ধানসহ বিভিন্ন কৃষি ফসল উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়। ফলে জমির উপরের মাটি উলটপালট হয় এবং কয়েক মাস প্রখর রোদে থাকায় মাটি খুবই উর্বর হয় । প্লাবনভূমিতে কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার ও পলি মাটি জমে বিধায় মৎস্য উৎপাদনের জন্য দরকারি মৌলিক উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। তাই এখানকার মাটি ও পানির উর্বরতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
পানির গভীরতা উপযুক্ত পর্যায়ে থাকায় প্লাবনভূমি বিভিন্ন প্রজাতির মাছের উৎকৃষ্ট চারণভূমি ও উপযুক্ত আবাসস্থল। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই এ দেশের প্রায় সব প্রজাতির মাছই প্রজনন করে। প্লাবনভূমি আবার অধিকাংশ মাছের প্রজননস্থলও বটে। ফলে সব প্রজাতির মাছের নতুন প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে প্লাবনভূমি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ষাট-সত্তর দশকে অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মোট উৎপাদনের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ মাছ পাওয়া যেত প্লাবনভূমি থেকে। ফলে দেশের বিরাট একটি অংশের মৎস্যজীবীরা প্লাবনভূমিতে মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু বাড়তি জনসংখ্যার কারণে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের চিন্তা না করে মাত্রাতিরিক্ত ও অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য আহরণ করা হচ্ছে। শুধু তাই না প্লাবনভূমিতে বিচরণরত পোনা মাছ নিধনসহ নানাবিধ মনুষ্যসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক কারণে প্লাবনভূমির মাছের উৎপাদন তাই বর্তমানে হ্রাস পেয়েছে।
বন্যা পরবর্তী সময়ে প্লাবনভূমিতে মাছের চাষ করে এই ক্ষতি কিছুটা পূরণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে বন্যার ইতিহাস, বর্ষা মৌসুমের স্থায়িত্ব, বর্ষার ধরন ইত্যাদি সম্বন্ধে ভালভাবে জেনে স্থানীয় লোকজনের সাথে আলোচনা স্বাপেক্ষে দলীয় বা সমাজভিত্তিক মাছচাষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ধানের পরে মাছচাষ, খাঁচায় মাছ চাষ, পেনে মাছ চাষ ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। বর্তমানে কুমিলা জেলার দাউদকান্দি উপজেলায় প্লাবনভূমিতে মাছচাষ ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
প্লাবনভূমিতে চাষ চাষের প্রয়োজনীয়তা :
মাছ চাষের ক্ষেত্রে প্লাবনভূমিও অন্যান্য জলাভূমির ন্যায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিল-ঝিল এবং নদী পাশের নিচু এলাকা প্লাবনভূমি হিসেবে পরিচিত। এসব প্লাবন ভূমিতে বছরে সাধারণত ধানের একটি মাত্র ফসল হয়। এরূপ ধানী জমির পরিমাণ দেশের মোট আবাদি জমির শতকরা ৮০ ভাগ। বোরো মৌসুমে ধান কাটার পরে এসব ধানের জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে । এসব জমিতে বৈশাখ মাসে বর্ষার পানি আসতে শুরু করে এবং কার্তিক মাস পর্যন্ত পানি থাকে।

বৈশাখ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত ৬-৭ মাসের মধ্যে প্রায় ৩-৫ মাস এসব অব্যবহৃত ধানের জমিতে ৩-১০ ফুট পর্যন্ত পানি থাকে, যা মাছ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বর্ষা প্লাবিত এসব মৌসুমী জলাশয়ে মাছচাষ করে মানুষ তাদের জীবিকা পরিচালনাসহ অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারে। বর্তমানে আমাদের দেশে বর্ষা-প্লাবিত প্লাবনভূমিতে ধানের পরে মাছচাষ কার্যক্রম ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। বিশেষ করে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ এবং নাটোর জেলার কিছু কিছু এলাকায় বর্ষা-প্লাবিত নিচু ধানী জমিতে সমাজভিত্তিক মাছচাষ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ধানের জমি প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনমতো গোবর ও সার ব্যবহার করতে হয়। ফলে ধানক্ষেতে পানি, মাটি, গোবর, ও সারের মিশ্রণে যে প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হয় তা মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য খুবই সহায়ক। তাই এরকম পরিবেশে ধানের পরে মাছের চাষ করে ব্যাপক সম্ভাবনাময় ধানক্ষেত তথা প্লাবনভূমিকে কাজে লাগিয়ে দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো যেতে পারে ।
মাছ চাষের জন্য প্লাবনভূমি নির্বাচন :
সাধারণত নিচু ধরনের জমি যেখানে ৬-৭ মাস মাছ চাষ উপযোগী (৪-৬ ফুট) পানি থাকে সেসব জমিতে মাছ চাষ করা যায়। এসব জমিতে বোরো ধান কাটার পর পুকুরের মতো পোনা মজুদ করে মাছ চাষ করা হয়। এ ধরনের মাছ চাষে পোনা মজুদের হার পানির গভীরতার ওপর নির্ভর করে ।
পানির গভীরতা ৩ ফুট বা অধিক রাখা সম্ভব হলে পুকুরের মতো মিশ্রচাষ ও স্বাভাবিক ঘনত্বে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মজুদ করা যায়। যথাযথ পরিচর্যা করা হলে এক্ষেত্রে পুকুরের মতোই স্বাভাবিক ফলন পাওয়া যায়। উপযুক্ত প্লাবনভূমি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিচে লিখিত বৈশিষ্ট্যাবলি বিবেচনা করা যেতে পারে। নিচু এলাকায় যেখানে অন্তত ৬ মাস ৩ ফুটের বেশি পানি থাকে ।
চাষকৃত এলাকার মধ্যে কিছু অংশে নালা বা গর্ত বা কুয়া থাকলে ভালো হয় । এর আয়তন মোট জমির শতকরা ১০ ভাগ হলে ভালো হয়। নদী বা খালের সাথে সংযোগ থাকলে ভালো, তাতে বর্ষার শুরুতে পানি ঢুকানো এবং মাছ ধরার সময়ে পানি কমিয়ে ফেলা সম্ভব হয় । অন্যথায় বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। অথবা সেচের মাধ্যমে পানি প্রবেশ করাতে হয় । প্লাবনভূমির দুই বা তিন দিকে সড়ক বা বাঁধ আছে এরূপ এলাকা হলে ভালো হয়। তাতে বাঁধ নির্মাণ খরচ কমে যায় ও যেকোনো আকারের প্লাবনভূমিতেই এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ সম্ভব ।
প্লাবনভূমিতে মাছ চাষ পদ্ধতি :
প্লাবনভূমিতে মাছ চাষ পদ্ধতি স্বাভাবিকভাবে পুকুরে মাছ চাষ পদ্ধতির চেয়ে ভিন্নতর । আবার জলাশয়ের ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন প্লাবনভূমিতে ভিন্ন ধরণের মাছ চাষ পদ্ধতি গড়ে উঠেছে। প্লাবনভূমিতে মাছ চাষের মডেল হিসেবে দাউদকান্দি মডেলে কীভাবে মাছ চাষ হচ্ছে বা সে আদলে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় তা নিচে বর্ণনা করা হলো ।
বাঁধ বা উঁচু পাড় নির্মাণ :
বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এমন উঁচু ও শক্ত বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
সুইচ গেট বা ইনলেট-আউটলেট নির্মাণ :
বন্যার পানি বা অন্য কোনো প্রকল্প এলাকা থেকে পানি প্রবেশ করানো বা বের করে দেওয়ার জন্য আয়তন অনুযায়ী এক বা একাধিক সুইচ গেট বা ইনলেট-আউটলেট নির্মাণ করতে হবে।
গর্ত তৈরি :
শুকনো মৌসুমে পোনা প্রতিপালন, বিলম্বে মাছ বিক্রি করার সুবিধা গ্রহণ অথবা সংকটকালীন সময়ে মাছ মজুদ প্রভৃতি কারণে প্রকল্পের অভ্যন্তরে এক বা একাধিক গর্ত বানানো বা পুকুর নির্মাণ করা প্রয়োজন । অবশ্য অনেক প্রকল্পে আগে থেকেই গর্ত বা নালা বানানো থাকে ।
জমি চাষ দেয়া ও চুন প্রয়োগ করা :
এপ্রিল-মে মাসে বর্ষাপ্লাবিত হওয়ার আগে ধান কেটে নেওয়ার পর পরই জমিতে শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা প্রয়োজন। সম্ভব হলে ধান কাটার পর জমিতে হালচাষ করে ১-২ সপ্তাহ পর্যন্ত রৌদ্রে শুকাতে পারলে ভালো হয়। সে ক্ষেত্রে হালচাষ করার পর চুন প্রয়োগ করতে হবে।
কেনো কোনো সময় ধান কাটতে বিলম্ব হতে পারে অথবা আগাম বা অতি বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ধান কেটে নেওয়ার পর পরই চুন প্রয়োগ করতে হবে। প্রকল্পের অভ্যন্তরে গর্ত বা নালা থাকলে সম্ভব হলে সেগুলোকে শুকিয়ে নিতে হবে। শুকানো সম্ভব না হলে পানি থাকা অবস্থায় শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
সার প্রয়োগ :
চুন প্রয়োগের ৪-৫ দিন পরে শতাংশ প্রতি ৫-৭ কেজি হারে গোবর অথবা ৭-১০ কেজি হারে কম্পোষ্ট সার সারা প্রকল্প এলাকায় ছড়িয়ে দিতে হবে। বষ্টি হলে অথবা স্থুইচ গেট দিয়ে পানি ঢুকানোর পরে শতাংশ প্রতি ২০০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১০০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
পোনা মজুদ :
প্লাবনভূমিতে মাছ চাষের জন্য মজুদকৃত পোনার আকার ও সংখ্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পোনার আকার ৫-৬ ইঞ্চির ছোট হলে চাষকালীন সময়ের মধ্যে সব প্রজাতির মাছ বিক্রির উপযোগী হবে না । আবার যেহেতু প্রকল্প এলাকায় নদী বা খাল থেকে অনেক সময় পানি প্রবেশ করানো হয় বা গর্তগুলো ভাল করে শুকানো হয় না, ফলে রাক্ষুসে মাছের ডিম প্রবেশ করতে পারে বা গর্তে রাক্ষুসে মাছ থেকে যেতে পারে। তাই এই ক্ষেত্রে বড় সাইজের পোনা মজুদ করা হয়।
নিচে স্বাভাবিক ব্যবস্থাপনায় শতাংশ প্রতি পোনা মজুদের দুইটি নমুনা সারণি-২১ ও ২২ এ দেখানো হলো। যেসব খামারে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যেমন- পানি পরিবর্তনের জন্য গভীর-অগভীর নলকূপ এবং পানিতে অক্সিজেন মিশানোর জন্য এরেটর -এর ব্যবস্থা আছে সেখানে নিচের নমুনা অনুসারে পোনা মজুদ করা যেতে পারে ।
সারণি-২২ : পোনা মজুদের নমুনা
খাদ্য ও সার প্রয়োগ :
প্লাবনভূমিতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য বিদ্যমান থাকে। তারপরও স্বল্প সময়ে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়ার জন্য পরিমাণমতো সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করা প্রয়োজন। বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের সমন্বয়ে এই সম্পূরক খাদ্য তৈরি করা যেতে পারে। তবে সম্পূরক খাদ্যে অবশ্যই ১৫-২০% হজমযোগ্য প্রোটিন থাকতে হবে।
খাদ্য উপাদান :
খৈল, চালের কুঁড়া, গমের ভুসি, ভুট্টার আটা প্রভৃতি সম্পূরক খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। গ্রাসকার্প ও থাই সরপুঁটির জন্য নরম সবুজ কচি ঘাস, কলাপাতা, ক্ষুদিপানা ইত্যাদি প্রয়োগ করেও ভালো ফল পাওয়া যায় ।
খাদ্যের পরিমাণ ও প্রয়োগের সময় :
প্রতিদিন সকালে অথবা বিকেলে মাছের মোট ওজনের ২-৩% হারে খাদ্য দিতে হবে। তবে কাতলা, সিলভার কার্প, বিগহেড, গ্রাস কার্পের মোট ওজন বাদ দিয়ে এই হিসেবে তৈরি করতে হবে।
খাদ্য প্রদানের স্থান :
আয়তন অনুযায়ী কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে খাদ্য দিতে হবে। প্রতি একরের জন্য ২টি স্থান হওয়া ভালো।
খাদ্য প্রস্তুত ও প্রয়োগ পদ্ধতি :
প্রয়োজনীয় খাদ্যের অর্ধেক খৈল ও অর্ধেক কুঁড়া/গমের ভুসি/ভূট্টার আটা পরিমাপ করে নিতে হবে। এরপর সরিষার খৈল সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভেজা খৈলের সাথে ভুসি মিশিয়ে বল তৈরি করে নির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োগ করতে হবে। বল শক্ত করার জন্য আটা অথবা চিটা গুড় ব্যবহার করলে খাদ্যের বলগুলো পানিতে দ্রুত গলে যাবে না । প্রত্যেক দিন একই সময়ে একই স্থানে খাদ্য প্রয়োগ করা উচিত ।
সার প্রয়োগ :
প্লাবন ভূমিতে প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপাদন পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখার জন্য নিয়মিত সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন । তবে সার প্রয়োগের পূর্বে পানি পরীক্ষা করে পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমাণ নিশ্চিত হয়ে সার প্রয়োগ করা উচিত। সাধারণভাবে পানির রং হালকা সবুজ বা বাদামি সবুজ থাকলে পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য পরিমাণ মতো আছে বলে ধরে নেয়া যেতে পারে। তখন সার প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। আবার পানি বর্ণহীন অথবা ধূসর বর্ণের হলে সার প্রয়োগ করতে হবে। নিচে শতাংশ প্রতি সার প্রয়োগের মাত্রা উল্লেখ করা হলো ।
সারণি-২৩ : শতাংশ প্রতি সার প্রয়োগের মাত্রা
নমুনায়ন :
পোনা মজুদের পর থেকে প্রতি মাসে অন্তত ১ বার করে মাছের নমুনায়ন করা উচিত। এতে মাছের সংখ্যা, বৃদ্ধি, সুস্থতা ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় ।
আংশিক আহরণ :
পোনা মজুদের ৩-৪ মাস পরে আংশিক আহরণ করে মাছ বিক্রি করা যেতে পারে । অনেক সময় প্রকল্পে আপনা-আপনি মলা, ঢেলা, চেলা, পুঁটি ইত্যাদি ছোট ছোট মাছ জন্ম নেয়। তাই প্রথমেই এসব প্লাবনভূমিতে জন্মানো ছোট ছোট মাছ আহরণ করে বিক্রি করা যেতে পারে। এতে বিনিয়োগকৃত পুঁজির একটি বড় অংশ হাতে চলে আসে। যা থেকে পরবর্তী পরিচালনা ব্যয় নির্বাহ করা যায়। এতে চাষের মাছগুলো পর্যাপ্ত খাবার ও জায়গা পেয়ে দ্রুত বড় হয়ে ওঠে, ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমে যায় এবং রোগ বালাই সহ অন্যান্য ঝুঁকি কমে যায়।
শীতপূর্ব চুন প্রয়োগ :
মাছের রোগ-বালাই প্রতিরোধ ও ঝুঁকি এড়ানোর জন্য অক্টোবর-নভেম্বর মাসে প্রতি শতাংশে ৫০০ গ্রাম হারে চুন প্রয়োগ করা প্রয়োজন ।
মাছ আহরণ ও বিক্রি :
মাছের পূর্ণ আহরণের পূর্বে অবশ্যই বিক্রির সু-ব্যবস্থা করতে হবে। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে মাছের ভালো বাজারমূল্য থাকে বলে সে সময়ে মাছ পুরোপুরি আহরণ করে বিক্রি করলে ভালো মূল্য পাওয়া যেতে পারে। তবে অঞ্চলভেদে এ সময়ের তারতম্য হতে পারে ।
আরও দেখুনঃ