আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – চিংড়ি বিপণন প্রক্রিয়ায় প্রধান প্রধান সমস্যা ও সমাধানের সম্ভাব্য উপায় । যা ” বাগদা চিংড়ি আহরণ ও বাজারজাতকরণ ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।
শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
চিংড়ি বিপণন প্রক্রিয়ায় প্রধান প্রধান সমস্যা ও সমাধানের সম্ভাব্য উপায়
চিংড়ি বিপণন প্রক্রিয়ায় প্রধান প্রধান সমস্যা ও সমাধানের সম্ভাব্য উপায়
চিংড়ির বিপণন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে এখনও উপযুক্ত কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। চিংড়ি রপ্তানিযোগ্য পণ্য হওয়ায় মূলত চিংড়ি চাষ সমৃদ্ধ উপকূলবর্তী এলাকায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ প্যান্ট বা শিল্প গড়ে উঠেছে। বর্তমানে (২০০৩ পর্যন্ত) আমাদের দেশে হিমায়িত খাদ্য শিল্প খাতে ১৩৩টি কারখানা বিদ্যমান।
যার মধ্যে লাইসেন্স প্রাপ্ত ৬০টি এবং ইইউ অনুমোদনকৃত ৫৩ টি। ২০০৭-২০০৮ সালের প্রাপ্ত তথ্যানুসারে বাংলাদেশে ১৩৩টি চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা থেকে প্রায় ৭৫,০০০ মে. টন চিংড়ি এবং মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। চিংড়ি বিপণন প্রক্রিয়ায় প্রধান প্রধান সমস্যা ও তা থেকে উত্তোরণের সম্ভাব্য উপায়সমূহ নিচে বর্ণনা করা হলো
ক. চিংড়ি উৎপাদন সংক্রান্ত সমস্যা
আমাদের দেশে চিংড়ির বিপণন প্রক্রিয়া মূলত আহরণকৃত চিংড়ির উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশে রপ্তানিকৃত চিংড়ির মধ্যে ৭০ ভাগই গলদা চিংড়ি। গলদা চিংড়ির উৎপাদন এখনও আমাদের দেশে প্রাকৃতিক উৎস নির্ভর। তাছাড়া উপকূলবর্তী অঞ্চলে গলদা চিংড়ি চাষের খামার বৃদ্ধি পেলেও হেক্টর প্রতি চিংড়ি উৎপাদন খুবই কম।
ফলে চিংড়ির চাষের অভীষ্ট এলাকায় এখনও চিংড়ির দ্রুত সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের উপর পর্যাপ্ত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা গড়ে উঠেনি। এছাড়াও বিক্ষিপ্তভাবে খামার স্থাপনের কারণেও চিংড়ি উৎপাদনকারীরা উপযুক্ত মূল্যে বাজারে বিক্রয় করতে পারে না এবং ধীরে ধীরে চিংড়ি চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে যা ভবিষ্যতের চিংড়ি চাব সম্প্রসারণের অন্তয়ায়বরূপ।
খ. পরিবহন সমস্যা
বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকায় ব্যাপক আকারে ঘেরে চিংড়ি চাষ সম্প্রসারিত হলেও গলদা চিংড়ি চাষের খামারের সংখ্যা খুবই নগণ্য এবং চিংড়ি উৎপাদন এলাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো নয়। ফলে ক্রেতা বা ভাক্তোদের অবস্থান অনেকটা এলাকাভিত্তিক হিসেবেই গড়ে উঠেছে।
অপরদিকে চিংড়ি দ্রুত পচনশীল পণ্য হওয়া সত্ত্বেও বিপণন প্রক্রিয়াকে সুসংগঠিত করার জন্য তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত কোনো পরিবহন ব্যবস্থাও গড়ে উঠেনি। বর্তমানে চিংড়ি পরিবহনের জন্য রেলপথ, সড়কপথ ও নৌ-পরিবহনে যে সকল ব্যবস্থা আছে তা ত্রুটিপূর্ণ বা সুষ্ঠুভাবে চিংড়ি বিপণন উপযোগী নয়।
গ. দীর্ঘ বিপণন প্রক্রিয়াগত সমস্যা
আমাদের দেশে মৎস্যসম্পদ বিপণনের ক্ষেত্রে ফড়িয়া, বেপারী, দালাল ও আড়তদারগণ মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। এদের মাধ্যমেই তা পুনরায় পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে ক্রেতা বা ভাক্তোদের হাতে পৌঁছে। ফলে পচনশীল চিংড়িসম্পদ দীর্ঘসময় ধরে হাত বদলের কারণে বিভিন্ন উপায়ে পণ্যের গুণগতমান বিনষ্ট হয়। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ প্রক্রিয়ায় ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই যেমন- ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি বিপণন প্রতিও বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে।
ঘ. প্রক্রিয়াজাতকরণ সমস্যা
চিংড়িসম্পদের সুষ্ঠু বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অভ্যন্তরীণ বাজারে চিংড়ি বিপণনের ক্ষেত্রে শুধু বরফ ব্যবহার করে হিমায়িতকরণের মাধ্যমে ক্রেতার কাছে পৌছানা েহয়। প্রাপ্ত তথ্যানুসারে দেখা গেছে, প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় সরবরাহকৃত চিংড়ির প্রায় ২৫ শতাংশেরও অধিক চিংড়ি বিবর্ণ, অপরিষ্কার এবং কালো দাগযুক্ত।
সংশিষ্ট চিংড়ি সরবরাহকারীদের অনভিজ্ঞতা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকার কারণেই চিংড়ির গুণগতমান নষ্ট হয় এবং বাজার মূল্য কম হয়ে থাকে। ফলে একদিকে সরবরাহকারীরা যেমন ব্যবসায়িক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অপরদিকে দেশও প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সাধারণত আমাদের দেশে এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চলের ঘের এবং মুক্ত জলাশয় থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বাজারজাতকরণের উপযুক্ত চিংড়ি আহরণ করা হয়। এসময়ে আমাদের দেশের আবহাওয়া উষ্ণ থাকার কারণে এবং চিংড়ি দ্রুত প্রক্রিয়াজাত কারখানায় সরবরাহ না করার ফলে অধিকাংশ চিংড়ির গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়।
অনুরূপভাবে ট্রলারে আহরিত চিংড়ি অনেক সময় অসচেতনতার কারণে দিনের সূর্যালোকে উত্তপ্ত ডেকে ফেলে রাখা হয়। ফলে চিংড়ির দেহে কালো দাগ দেখা দেয়, যা চিংড়ি রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হয়ে দাড়ায়।
চিংড়ি বিপণনের ক্ষেত্রে উপরোক্ত সমস্যাসমূহ ছাড়াও চিংড়ি হিমায়িতকরণ ও চিংড়ি উৎপাদন এলাকায় প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগত সমস্যা, প্রযুক্তিগত সমস্যা, বিশ্ববাজারে চিংড়ির অস্থিতিশীল মূল্য, বিপণন প্রক্রিয়ার সাথে সংশিষ্ট প্রক্রিয়ায় অর্থসংস্থানগত সমস্যা, চিংড়ির সংরক্ষণের উপযুক্ত স্থানগত সমস্যা প্রভৃতি অন্যতম। দক্ষ বিপণন প্রক্রিয়া পরিচালনার ক্ষেত্রে উপরোক্ত সমস্যাসমূহকে প্রধান অন্তরায় হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
আরও দেখুনঃ