আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-ফিশ কালচার অ্যান্ড ব্রিডিং-২ প্রথম পত্র ব্যবহারিক
ফিশ কালচার অ্যান্ড ব্রিডিং-২ প্রথম পত্র ব্যবহারিক
জব নং-১
জবের নাম : মৎস্য হ্যাচারির বিভিন্ন অংশ পর্যবেক্ষণ ও শনাক্তকরণ ।
জবের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা :
মাছের প্রণোদিত প্রজনন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য যেসব ভৌত সুবিধা যেমন পুকুর, চৌবাচ্চা, হাপা, পানির পাম্প ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় এগুলোকে একত্রে হ্যাচারি বলা হয় ।
হ্যাচারির দুইটি অংশ থাকে যথা :
১। পুকুর অংশ
২। হ্যাচারি অংশ
১। একটি হ্যাচারির পুকুর অংশে কতকগুলো পুকুর থাকে যেমন :
ক) ব্রুড মাছ পালন পুকুর
খ) প্রজননোত্তর মাছের পালন পুকুর
গ) আঁতুড় পুকুর
ঘ) নার্সারি পুকুর
২। হ্যাচারি অংশে কতকগুলো স্থাপন থাকে যেমন :
ক) ওভার হেড ট্যাংক ও পাম্প
খ) বিভিন্ন আকারের চৌবাচ্চা
গ) গোলাকার চৌবাচ্চা
ঘ) ডিম ফোটানোর বোতল
ঙ) অফিস, গুদাম, ল্যাবরেটরি, গার্ডশেড ইত্যাদি
উপকরণ :
ক) মৎস্য প্রজনন করা হয় এমন একটি হ্যাচারি
খ) প্রয়োজনীয় যানবাহন
গ) খাতা, পেন্সিল
কাজের ধাপ :
১। বিদ্যালয় থেকে নিকটতম দূরত্বের কোনো হ্যাচারি মালিকের সাথে পূর্বে যোগাযোগ করে হ্যাচারি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা করে রাখি ।
২। হ্যাচারি বিভিন্ন অংশের বিবরণ সংবলিত বই-এর তাত্ত্বিক অংশ ব্যবহারিক অনুশীলনের আগে ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করি ।
৩। নির্দিষ্ট তারিখে শ্রেণি শিক্ষকসহ হ্যাচারিতে গমন করি ।
৪ । হ্যাচারির বিভিন্ন অংশ বা অবকাঠামোগুলো এক এক করে পর্যবেক্ষণ করি ।
৫ । প্রতিটি অংশ পৃথক পৃথকভাবে শনাক্ত করি এবং ঐ অংশের কার্যক্রম সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করি । ৬। মৎস্য প্রজনন কার্যক্রমের পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলোর সাথে হ্যাচারির সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোর সম্পর্ক চিহ্নিত করি ।
৬ । গৃহীত কার্যক্রমগুলো চিত্রসহ ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করি ।
জব নং -০২
জবের নাম : হ্যাচারির পুকুরে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম পর্যবেক্ষণ ও শনাক্তকরণ ।
জবের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা :
মৎস্য প্রজনন হ্যাচারি পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম প্রয়োজন হয় । পরবর্তী ছকে
হ্যাচারির পুকুর অংশের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের তালিকা দেওয়া হলো
উপকরণ :
১। হ্যাচারিতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন ।
২। খাতা, পেন্সিল ইত্যাদি ।
কাজের ধাপ :
১। নিকটস্থ একটি মৎস্য প্রজনন হ্যাচারি মালিকের সাথে পূর্বে যোগাযোগ স্থাপন করি ।
২। নির্দিষ্ট দিনে ও সময়ে শ্রেণি শিক্ষকসহ হ্যাচারিতে যাই ।
৩ । হ্যাচারিতে রক্ষিত বিভিন্ন সরঞ্জাম একে একে পর্যবেক্ষণ করি ।
৪। বিভিন্ন সরঞ্জাম শনাক্ত করি এবং এগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভ করি ।
৫ । ব্যবহারিক খাতায় সরঞ্জামের বর্ণনাসহ ছবি আঁকি ।
৬ । গৃহীত কার্যক্রমের প্রতিবেদন ছবিসহ ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করি ।
জব নং-০৩
জবের নাম :
প্রণোদিত প্রজননে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি পর্যবেক্ষণ জবের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা :
মাছের প্রণোদিত প্রজনন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি হ্যাচারিতে বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা
হয় । প্রজনন পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয় এমন যন্ত্রপাতির সম্ভাব্য তালিকা এখানে দেওয়া হলো :
উপকরণ : উপরের ছকে বর্ণিত উপকরণ
কাজের ধাপ :
১। ল্যবরেটরিতে বর্ণিত উপকরণ একে একে পর্যবেক্ষণ করি ।
২। যন্ত্রপাতির ব্যবহার সম্পর্কে শ্রেণি শিক্ষকের সহায়তায় হাতে কলমে ধারণা লাভ করি ।
৩। ব্যবহারিক খাতায় প্রতিটি যন্ত্রের ছবি আঁকি ।
৪ । গৃহীত পদক্ষেপগুলোর চিত্র ও প্রতিবেদন ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করি ।
জব নং- ৪
জবের নাম : প্রণোদিত প্রজননে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ও ঔষধ পর্যবেক্ষণ ও শনাক্তকরণ ।
জবের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা : মাছ চাষের ক্ষেত্রে প্রায় সময়ই বিভিন্ন ধরনের উপকরণ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার হয়ে থাকে । একই উপকরণ পরিমিত বা নিয়মমাফিক ব্যবহার করলে মাছ চাষে সফলতা বয়ে আনতে পারে । আবার সেই উপকরণই কম মাত্রায় ব্যবহার করলে তা কার্যকরি নাও হতে পারে আবার বেশি মাত্রায় ব্যবহার করলে মাছ মারাও যেতে পারে।
তাই যে কোনো উপকরণ প্রয়োগের সময় অবশ্যই প্রয়োগের উদ্দেশ্য জেনে সুনির্দিষ্ট মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। এমন কিছু অতীব প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহের নাম, প্রয়োগের উদ্দেশ্য ও প্রয়োগ মাত্রা নিম্নে দেওয়া হলো :
উপকরণ : হ্যাচারিতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন খাতা, পেন্সিল ইত্যাদি ।
কাজের ধাপ :
১। নিকটস্থ একটি মৎস্য প্রজনন হ্যাচারি মালিকের সাথে পূর্বে যোগাযোগ স্থাপন করি অথবা নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে পর্যবেক্ষণ করি ।
২। নির্দিষ্ট সময়ে শ্রেণি শিক্ষকসহ হ্যাচারিতে/ল্যাবরেটরিতে যাই ।
৩। হ্যাচারিতে/ল্যাবরেটরিতে রক্ষিত বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ও ঔষধ যেমন : ফরমালিন, ট্যানিক এসিড, লবণ, ম্যালাকাইট গ্রীন, তুঁতে, পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, সুমিথিয়ন, বিভিন্ন হরমোন (যেমন – কার্প পিটুইটারি গ্রন্থি, এইচসিজি এল এইচ, আর এইচ, সুমাছ ইত্যাদি) এসিটিক এসিড, সালফিউরিক এসিড, রোটেনন, ইঁদুর মারার বিষ, ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি, পটাশ সার, চুন, ডিজইনফেকটেন্ট ।
৪ । বিভিন্ন দ্রব্য শনাক্ত করি এবং সেগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি ।
৫ । ব্যবহারিক খাতায় এগুলোর কাজসমূহ লিখি ।
জব নং ০৫
জবের নাম : বিভিন্ন প্রজাতির প্রজননক্ষম স্ত্রী ও পুরুষ মাছ শনাক্তকরণ ও বাছাইকরণ ।
জবের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
ব্রুড মাছের সঠিক নির্বাচনের উপর কৃত্রিম প্রজননের সফলতা নির্ভর করে। মাছ বাছাইয়ের ব্যাপারটি মূলত অভিজ্ঞতার উপর নির্ভরশীল। ব্রুড মাছ বাছাই ও পরিবহনের কাজটি সকাল বেলায় পানির তাপমাত্রা বাড়ার আগেই করতে হবে । নিম্নবর্ণিত উপায়ে পরিপক্ব স্ত্রী ও পুরুষ মাছের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য দেখে ব্রুড মাছ নির্বাচন ও
বাছাই করা যায় ।
উপকরণ :
১। হ্যাচারি পর্যন্ত যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন ।
২ । প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর পুকুরে নামার জন্য উপযুক্ত পোশাক ।
কাজের ধারা :
১। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের মাধ্যমে নিকটতম কোনো হ্যাচারি মালিকের সাথে পূর্বে যোগাযোগ করি ।
২ । নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হ্যাচারিতে পৌঁছি।
৩। ব্রুড মাছের পুকুরে বেড় জাল দিয়ে ব্রুড মাছ ধরি এবং ব্রুড মাছ বাছাই করি ।
৪ । হ্যাচারির অভিজ্ঞ কর্মীর সহায়তায় বিভিন্ন প্রজাতির ব্রুড মাছের স্ত্রী ও পুরুষ ক্রডের বৈশিষ্ট্যগুলো শনাক্ত করি ।
৫। পর্যবেক্ষণের বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করি ।
জব নং-০৬
জবের নাম : পরিপক্ক ডিম ও নিষিক্ত ডিম শনাক্তকরণ ।
জবের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা : কার্প হ্যাচারিতে দুই প্রণালিতে ডিম নিষিক্ত হয় ।
১। সহজাত বা স্বাভাবিক পদ্ধতি : হরমোন ইনজেকশন দেওয়ার পর স্ত্রী মাছকে ব্রিডিং পুলে স্রোত ও ফোয়ারা সহকারে রাখতে হবে। পুরুষ মাছকে হরমোন ইনজেকশন দেওয়ার পর পৃথক ব্রিডিং পুলে স্রোত ও ফোয়ারা সহকারে স্ত্রী মাছ হতে বিচ্ছিন্নভাবে রাখতে হবে। স্ত্রী মাছের ডিম ছাড়ার ২ ঘণ্টা পূর্বে পুরুষ মাছকে স্ত্রী মাছের ব্রিডিং পুলে স্থানান্তর করতে হবে। স্ত্রী মাছ পুরুষ মাছের সাহচর্যে ডিম পাড়বে ও ডিম নিষিক্ত হবে ।
২। স্ট্রিপিং পদ্ধতি : হরমোন ইনজেকশন দেওয়ার পর স্ত্রী মাছকে ব্রিডিং পুলে স্রোত ও ফোয়ারা সহকারে রাখতে হবে । পুরুষ মাছকে হরমোন ইনজেকশন দেওয়ার পর পৃথক ব্রিডিং পুলে স্রোত ও ফোয়ারা সহকারে স্ত্রী মাছ হতে বিচ্ছিন্নভাবে রাখতে হবে। ডিম পাড়ার সঠিক সময়ে স্ত্রী মাছ ধরে পেটে সামান্য চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে একটি পাত্রে ডিম সংগ্রহ করতে হবে।
এরপর পুরুষ মাছের পেটে চাপ দিয়ে মিন্ট পূর্বে সংগৃহীত ডিমের উপর ফেলতে হবে এবং মুরগির নরম পালক দিয়ে মিল্টকে ডিমের সঙ্গে মিশিয়ে ডিমকে নিষিক্ত করতে হবে । নিষিক্ত ডিমকে পরিমাপ করে হ্যাচিং জার অথবা হ্যাচিং পুলে পানির স্রোত ও ফোয়ারার মধ্যে T ফুটনের জন্য রাখতে হবে ।
উপকরণ :
১ । প্রজনন চালু আছে এমন হ্যাচারিতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন ।
২। আতশ কাঁচ
৩ । খাতা কলম ইত্যাদি ।
কাজের ধারা :
১। প্রজনন কার্যক্রম আছে এমন হ্যাচারির সাথে আগে যোগাযোগ রাখি ।
২ । নির্দিষ্ট সময়ে শ্রেণি শিক্ষকসহ হ্যাচারিতে যাই ।
৩। সহজাত পদ্ধতির ক্ষেত্রে ব্রুড মাছকে দ্বিতীয় ইনজেকশন দেওয়ার ৪-৬ ঘণ্টা পর থেকে সার্কুলার ট্যাংকে পুরুষ ও স্ত্রী মাছের কার্যাবলি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করি। এক্ষেত্রে স্ত্রী মাছ ডিম ছাড়ার পর পুরুষ মাছ শুক্রাণু ছেড়ে তা নিষিক্ত করে ।
৪ । চাপ পদ্ধতিতে ব্রুড মাছকে দ্বিতীয় ইনজেকশন দেওয়ার পর ৪-৬ ঘণ্টা পর থেকে স্ত্রী মাছের পেটে চাপ দিয়ে পরিষ্কার গামলায় ডিম সংগ্রহ করি এবং পুরুষ মাছের শুক্র ডিমের উপর দিয়ে পালক দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিষিক্ত করি।
৫ । সাদা থালায় কয়েকটা ডিম আতশ কাচ দিয়ে ভ্রূণ পর্যবেক্ষণ করি এবং খাতায় ছবি আঁকি ।
৬। গৃহীত পর্যবেক্ষণের ছবিসহ ব্যবহারিক খাতায় লিখি ।
জব নং-০৭
জবের নাম : ব্রুড মাছের ঘনত্ব নির্ধারণ।
জবের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা : ব্রুড মাছের ডিমের পরিপক্বতা বহুলাংশে নির্ভর করে মজুদ ঘনত্বের ওপর । কিছুটা কম হারে মাছ মজুদ করলে পুকুরে খাদ্যের অভাব হয় না। ফলে সব মাছের ডিম্বাশয়ের ও শুক্রাশয়ের পরিপক্বতা নিশ্চিত হয়। সাধারণত শতাংশ প্রতি ৬-৭ কেজি মাছ মজুদ করা হয়।
বড় ধরনের পুকুরে শতাংশপ্রতি ৫ কেজি ব্রুড মাছ পালন করলে দ্রুত ডিম্বাশয়ের পরিপক্বতা আসে এবং বেশি রেণু পোনা পাওয়া যায় । পুকুরের সর্বস্তরের খাবার ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন স্তরের বিচরণশীল বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মজুদ করলে ভালো ফল পাওয়া যায় । নিম্নবর্ণিত হারে ব্রুড মজুদ করলে ভালো ফল পাওয়া যায় ।
উপকরণ :
১। হ্যাচারি পর্যন্ত যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন ।
২। প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীদের পুকুরে নামার জন্য উপযুক্ত পোশাক ।
কাজের ধাপ:
১। বিদ্যালয়ের তরফ থেকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের মাধ্যমে নিকটতম কোনো হ্যাচারি মালিকের সাথে পূর্বে যোগাযোগ করি ।
২ । নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হ্যাচারিতে পৌঁছি ।
৩ । হ্যাচারি মালিক নিয়োজিত লোকের কাছ থেকে ব্রুড মাছের ঘনত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করি ।
৪ । অধিক ঘনত্বের কুফল এবং সঠিক ঘনত্বের সুফল জেনে কয়েকটি পুকুরে জাল টেনে ও পুকুরের ক্ষেত্রফল
পরিমাপ করে এর সত্যতা পর্যবেক্ষণ করি ।
৫। পর্যবেক্ষণের বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবন্ধ করি ।
জব নং-০৮
জবের নাম : কার্প জাতীয় ব্রুড মাছের খাদ্য প্রস্তুতি ও প্রয়োগ পদ্ধতি ।
জবের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা : ব্রুড মাছ ব্যবস্থাপনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ । কারণ পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য মাছের পুষ্টি চাহিদার পুরোটাই জোগান দিতে পারে না। আর প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবে ব্রুড মাছের কতকগুলো খারাপ লক্ষণ দেখা যায় ।
ক) ব্রুড মাছের ডিম্বাশয়ের পরিপক্কতা বিলম্বিত হয় ।
খ) মাছের ডিমের সংখ্যা বা Fecundity কমে যায় ।
গ) ডিমের আকার ছোট হয় ।
ঘ) ডিমের গুণাগুণ নিম্নমানের হয় ফলে ডিমের পরিস্ফুটন হার কমে যায়, রেণু পোনা বেঁচে থাকার হার কমে যায় । সম্পূরক খাদ্য নিম্নলিখিত উপাদান দিয়ে তৈরি করা যায় :
উপরোক্ত উপাদানের সাথে এমবাভিট এল প্রতি ১০০ কেজির জন্য ২৫০-৩০০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করলে ডিমের পরিপক্বতা ভালো হয় । এসব উপাদান একত্রে মিশিয়ে খাদ্য বল বা পিলেট আকারের খাদ্য তৈরি করে মাছের দৈহিক ওজনের শতকরা ৩-৫ ভাগ হারে দিনে দুইবার প্রয়োগ করতে হবে।
শীত মৌসুমে শতকরা ১-১.৫ ভাগ হারে প্রয়োগ করা যেতে পারে । গ্রাস কার্প সরপুঁটির জন্য নরম ঘাস, কুটি পোনা, তরিতরকারির বর্জপাতা কুচি কুচি করে কেটে মাছের দৈহিক ওজনের শতকরা ২০-২৫ ভাগ দৈনিক পুকুরে দেওয়া আবশ্যক ।
উপকরণ :
১। গমের ভুসি/চালের কুঁড়া (অটোরাইস)
২। তৈল বীজের খৈল
৩। মৎস্য চূর্ণ
৪ । আটা
৫। চিটাগুড়
৬ । ভিটামিন
৭ । প্লাস্টিকের গামলা ও মগ
৮ । ওজন করার জন্য দাঁড়িপাল্লা
কাজের ধাপ
১। বিদ্যালয়ের তরফ থেকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের মাধ্যমে নিকটতম কোনো হ্যাচারির মালিকের সাথে পূর্বে
যোগাযোগ করে রাখি।
২। নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হ্যাচারিতে পৌঁছি।
৩ । হ্যাচারি মালিক নিয়োজিত লোকের কাছ থেকে কোনো একটি ব্রুড পুকুরের আয়তন ও ব্রুড মাছের ঘনত্ব পরিমাণ ও সংখ্যা জেনে নিই ।
৪ । ব্রুড মাছের ওজন হিসাব করে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে বল তৈরি করি।
৫। এসব বল খাদ্যদানী বা ফিডিং ট্রেতে করে পুকুরে প্রয়োগ করি। অতিরিক্ত পরিমাণ বল আকৃতির খাদ্য রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করি।
৬। গৃহীত কার্যক্রমটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করি ।
জব নং-০৯
জবের নাম : ব্রুড মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা।
জবের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা : ব্রুড মাছ রোগাক্রান্ত হলে তা ডিমের পরিপতার উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া । তাই মাছ যাতে রোগাক্রান্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত । মাঝে মাঝে জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। আমাদের দেশে সাধারণত আরগুলাস বা মাছের উকুন দ্বারা ব্রুড মাছ বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং তা রুই মাছের বেলায় ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়।
ব্রুড মাছ আরগুলাস দ্বারা আক্রান্ত হলে দ্রুত প্রতিকার করা উচিত। এ রোগ প্রতিকারের জন্য ০.৫ পিপি এম হারে ডিপটারেক্স বা ০.২৫ পিপিএম হারে সুমিথিয়ন পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে । এ ঔষধ সপ্তাহে ১ বার করে পরপর তিন সপ্তাহ প্রয়োগ করতে হবে
উপকরণ :
১। হ্যাচারি পর্যন্ত যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন ।
২। প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর পুকুরে নামার জন্য উপযুক্ত পোশাক ।
কাজের ধাপ:
১। বিদ্যালয়ের তরফ থেকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের মাধ্যমে নিকটতম কোনো হ্যাচারি মালিকের সাথে পূর্বে যোগাযোগ করে রাখি ।
২। নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হ্যাচারিতে পৌঁছি।
৩ । হ্যাচারি মালিক নিয়োজিত লোকের কাছ থেকে ব্রুড মাছের রোগ প্রতিরোধের বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে অবগত হই ।
৪ । সাবধানতা অবলম্বনের জন্য একটি ব্রুড পুকুরে জাল টেনে উকুন রোগে আক্রান্ত মাছ আছে কিনা পরীক্ষা করি ।
৫ । রোগাক্রান্ত মাছ থাকলে ০.৫ পিপিএম হারে ডিপটারেক্স পুকুরে প্রয়োগ করি ।
৬। পর্যবেক্ষণের বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ করি ।
জব নং-১০
জবের নাম : প্রাকৃতিক উৎস থেকে রেণু পোনা সংগ্রহ পর্যবেক্ষণ ।
জবের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা :
নদীমার্তৃক বাংলাদেশের নদীগুলোই কার্প জাতীয় মাছের রেণু পোনার উৎস। বর্ষাকাল (মে-আগস্ট) দেশের প্রধান প্রধান নদীগুলো থেকে কোটি কোটি রেণু পোনা ধরা হয় । নদী থেকে রেণু পোনা ধরার কাজে কয়েকজন জেলে মিলে একটি দল গঠন করে থাকে। পোনা ধরার জন্য বিশেষ এক ধরনের জাল ব্যবহার করা হয় । যাকে সাভার জাল বলে । জালের দৈর্ঘ্য ৩০০-৩৬০ সে.মি. জালের মুখ থেকে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ২৪০-৩০০ সে.মি. শেষের খোলা মুখ ১৫- ২২ সে.মি. এর মতো গোলাকার অঙ্গুরি থাকে । \
অবশেষে গামছা থাকে ৭৫-৯০ সে.মি. মাপের । ২টি বাঁশের খুঁটির সাহায্যে জাল খাটানো হয় । পিছনে ২টি বাঁশের খুঁটি থাকে । গামছার শেষ অংশে ২টি বাঁশের খুঁটি থাকে । জালের বড় মুখ স্রোতের দিকে থাকে । পানির স্রোতের সাথে ডিম পোনা জালের মধ্যে আসে, পানি বেরিয়ে যায়, রেণুপোনা আবদ্ধ হয় ।
জালের শেষের দিকে ছোট গোলাকার খোলা মুখ থাকে তাতে বাঁশের বা বেতের তৈরি একটি গোল ধরনের অঙ্গুরি থাকে এবং রেণু পোনা ধরে রাখবার জন্য গামছাটি চতুষ্কোণ করে সাজানো হয় । যাতে অঙ্গুরির মধ্যে দিয়ে রেণু পোনা এসে গামছায় জড়ো হয় এবং বেঁচে থাকে । গামছা উঠিয়ে মাঝে মাঝে রেণু পোনা এনে হাঁড়ির উপর ঘন জালের ছাঁকনি বিছায়ে ঢালা হয় ।
এতে রেণু পোনার সাথে যদি অন্যান্য ছোট মাছ বা ময়লা থাকে তা ছাঁকানি দিয়ে বাদ করা যায় । তারপর জীবিত রেণু পোনা সাময়িকভাবে হাপাতে জমা করা হয় । নদীর কিনারের দিকে যেখানে রেণু পোনা ধরা পরার সম্ভাবনা বেশি, সেখানে এরকম অনেক জাল পরপর খাটানো হয় এবং রেণুপোনা সংগৃহীত হয়। বহু জেলে সাময়িকভাবে নদী থেকে রেণুপোনা ধরার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে ।
আমাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ জাল দিয়েই পোনা সংগ্রহ করা হয় বেশি এবং এই জাল দিয়ে পোনা সংগ্রহ করা খুবই সহজ ও যে কেউ সহজে পোনা ধরতে পারে । এই জাল তৈরি করা খুবই সহজ এবং ব্যয় কম । আমাদের দেশে বর্ষাকালে বা মাছের প্রজনন মৌসুমে দেশের সমুদ্রের মোহনায়, নদীর কিনারায়, প্লাবন ভূমি, বিল প্রভৃতি স্থানে পোনা সংগ্রহ করা হয় ।
এই জাল তিনটি বাঁশের অংশ দ্বারা ত্রিভুজ আকৃতির একটি ফ্রেম প্রথমে তৈরি করা হয় যার একটি বাঁশ লম্বা থাকে এবং হাতলের কাজ করে। এরপর সূক্ষ্ম নাইলনের জাল বা সাইন নেটের জাল ৪ কোনাকৃতির লম্বা করে তৈরি করা হয় । যার পেছনের পার্শ্ব সরু এবং সামনের অংশ প্রশস্ত থাকে । জালের প্রশস্ত অংশটি ফ্রেমের সাথে চিকন নাইলনের সুতা দ্বারা বাঁধা থাকে।
যাতে ফাঁকা না থাকে। চার মাথায় চারটি লম্বা দড়ি বাঁধা থাকে । পোনা ধরার সময় জালের ফ্রেমসহ প্রশস্ত অংশটি অগভীর জলাশয়ের নিচে রাখা হয়। জালের তিন ভাগ পানির নিচে থাকে এ অবস্থায় জালের পিছনের অংশ স্রোতের দিকে বা টানার বিপরীত দিকে টানটান করা অবস্থায় বা লম্বা অবস্থায় থাকে ।
সুতা চারটি এক এক করে একত্র করে এবং নিচের সুতা দুটি একটু ঢিল দিয়ে উপরের অংশ দুটি ধরে ক্রমান্বয়ে টানতে হয় । এভাবে জাল টানার ফলে পোনা সহজেই ফ্রেমের মধ্য দিয়ে জালের শেষ প্রান্তে গিয়ে আটকে যায় । কিছু সময় পর জালের মধ্য হতে নির্দিষ্ট প্রজাতির পোনা সংগ্রহ করে পোনা হাঁড়িতে রাখতে হয়।
কিন্তু নদ-নদীসমূহের নাব্যতা হ্রাস, বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের বাঁধ তৈরির মাধ্যমে মাছের চলাচলের উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, প্রজননক্ষম মাছের অতি আহরণ এবং মানুষ সৃষ্ট বিভিন্ন কারণ যেমন- কৃষি জমিতে কিটনাশকের যথেচ্ছা ব্যবহার, পানি দূষণ, কারেন্ট জালের ব্যবহার ইত্যাদি কারণে এসব মাছের পোনার উৎস ধ্বংসের মুখে। এখন এসব স্থানে খুব সামান্য পরিমাণ মাছের পোনা পাওয়া যায় । আর তাই মানুষ এখন মাছ চাষের জন্য হ্যাচারির পোনার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে ।
কাজের ধারা :
১। প্রাকৃতিক উৎস থেকে পোনা ধরা হয় এমন একটি স্থান নির্বাচন করে সংশ্লিষ্ট জেলের দলের সাথে আগে থেকে যোগাযোগ করে রাখি।
২। নির্দিষ্ট দিনে শ্রেণি শিক্ষকসহ নির্দিষ্ট স্থানে যাই ।
৩। পোনা ধরার বিভিন্ন জাল যেমন বেহুন্দি জাল, টানা জাল তৈরি ও ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা নেই ।
৪ । প্রাকৃতিক উৎস থেকে আগের মতো পোনা না পাওয়ার কারণ সম্পর্কে অবগত হই ।
৫। গৃহীত কার্যক্রমটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখি ।
আরও দেখুন: