আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ২ প্রথম পত্র ব্যবহারিক । যা ” ব্যবহারিক ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।
শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং ২ প্রথম পত্র ব্যবহারিক
অনুশীলনী-১: চিংড়ির শারীরিক গঠন পর্যবেক্ষণ অনুশীলন
প্রাসঙ্গিক তথ্য
চিংড়ির সমগ্র দেহকে প্রধানত তিনটি অংশে ভাগ করা যায়, যেমন
১. শিরাক্ষে (Cephalothorax): চিংড়ির মাথাকে দেহ থেকে আলাদা করা যায় না। এজন্য চিংড়ির মাথা ও বুককে একত্রে শিরাক্ষে বলা হয়। চিংড়ির শিরাক্ষে অংশে ১৩ জোড়া উপাঙ্গ আছে। মাথার অগ্রভাগে করাকের মত রাস্ট্রেন থাকে।
২. উদর (Abdomen): উদর ক্রমান্বয়ে পিছনের দিকে সরু হয়ে লেজ বা টেলসনের সাথে মিশেছে। চিংড়ির উদর অংশে ৬ জোড়া উপাঙ্গ রয়েছে।
৩. উপাঙ্গ (Appendages): চিংড়ির দেহে সর্বমোট ১৯ জোড়া উপাঙ্গ রয়েছে। এর মধ্যে ৫ জোড়া শির অঞ্চলে, ৮ জোড়া বক্ষ অঞ্চলে এবং ৬ জোড়া উদর অঞ্চলে অবস্থিত
উপকরণঃ
১. ট্রে
২. আতশ কাচ
৩. কাঁচি
৪. চিমটা
৫. স্কালপেল
৬. নিডল বা সুচ
৭. তুলি
৮. স্পেসিমেনের জার
৯. শিশি
১০.ফরমালিনস
১১. মাইক্রোস্কোপ
১২. ব্যালান্স (Balance)
১৩. রিফ্লাক্টেমিটার
১৪. ডিও মিটার
১৫. পিএইচ মিটার
১৬. সেক্কি ডিক
১৭. খার্মোমিটার
১৮. প্ল্যাংকটন গণনাকারী এসআর সেল ইত্যাদি।
কাজের ধাপঃ
১. নিকটস্থ বাজার, পুকুর বা চিংড়ি খামার থেকে মাঝারি। বড় আকারের তাজা চিংড়ি সংগ্রহ কর।
২. সংগৃহীত চিংড়ি পানি ভর্তি বালতিতে করে পরীক্ষাগারে নিয়ে এস।
৩. নমুনা চিংড়ি সংগ্রহের বিস্তারিত তথ্য যেমন- চাষির নাম, পুকুরের অবস্থান, আয়তন, পানিয় ও নমুনা। সন্ত্রাহের তারিখ লিপিবদ্ধ কর।
৪. পরীক্ষাগারে এসে এবার চিংড়ি বালতি থেকে তুলে ট্রেডে রাখ। তারপর ফরসেপ দিয়ে লিডির শরীরের বিভিন্ন এ অংশ যেমন- শিরাক্ষে, উদর, বিভিন্ন উপাঙ্গ ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখ এবং ছবিতে চিহ্নিত অংশগুলোর সাথে মিলিয়ে দেখ।
৫. এবার ট্রেতে রক্ষিত চিংড়ির ব্যবহারিক খাতায় পেন্সিলের সাহায্যে ছবি আঁক এবং বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত কর। তোমার চিহ্নিত ছবির সাথে ছবিতে চিহ্নিত অংশগুলো মিলিয়ে দেখ।
৬. অনুশীলনকৃত কার্যপদ্ধতি চিত্রসহ ব্যবহারিক খাতায় লেখ।
অনুশীলনী-২: বিভিন্ন প্রকার চিংড়ির পরিচিতি
প্রাসঙ্গিক তথ্য
বাংলাদেশে প্রায় ৬৭ টি প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়। এসব চিংড়িকে আবাসস্থল অনুযায়ী দুভাগে ভাগ করা যায়, স্বাদু পানির চিংড়ি ও লোনা পানির চিংড়ি।
১. স্বাদু পানির চিংড়ি
বাংলাদেশের সকল নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়ে সাদু বা মিঠা পানির চিংড়ি পাওয়া যায়। সাধারণত স্বাদু পানির চিংড়ির প্রথম দুই জোড়া বক্ষ উপাঙ্গ চিলেটে রূপান্তরিত হয়। বহিঃকঙ্কালের দ্বিতীয় গিফ্টরা ১ম ও ৩য় পিউরাকে আংশিক আবৃত করে রাখে এবং এদের অ্যানটেনিউল জিনটি ফ্লাজেলা যুক্ত থাকে। অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পন্ন ও চাষযোগ্য কতকগুলো মিঠা পানির চিংড়ির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিচে দেয়া হলো।
ক) গলদা চিংড়ি (Macrobrachium rosenbergil)
বাংলাদেশের প্রায় সব ধরনের জলাশয়ে সারা বছরই এদের পাওয়া যায়। মিঠা পানির চিংড়ির মধ্যে গলদা চিংড়ি সবচেয়ে বড়, এদের সর্বাধিক দৈর্ঘ্য ৩২০ মিমি এবং ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম হয়ে থাকে। পলদা চিংড়ির গায়ের রং হালকা নীল কিংবা হালকা সবুজ রঙের হয়ে থাকে। এই চিংড়ির ২য় বিউয়া ১ম ও ৩য় পিউয়াকে আংশিকভাবে আবৃত করে। মাথার সম্মুখভাগে অবস্থিত রোস্ট্রামের উপরিভাগে ১১-১৪ টি এবং নিচের অংশে ৮-১৪ টি খাঁজ বা দাঁত থাকে।
খ) ছটকা চিংড়ি (Macrobrachium malcetsondi)
মিঠা পানির এই চিংড়ি মাঝারি আকারের হয়ে থাকে। এমের সর্বাধিক দৈর্ঘ্য প্রায় ২৩০ মি মি হয়ে থাকে। ছটকা চিংড়ির সেহের পৃষ্ঠদেশ ও তলদেশ হালকা নীল বিধবা সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। এদের রোস্ট্রামের উপরিভাগে ৯ ১৪ টি এবং নিচের দিকে ৫-৬ টি খাঁজ বা দাঁক্ষ থাকে।
উপকরণঃ
১. বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি
২. ট্রে
৩. বালতি
৪. করলেপ
৫. আলসিন
৬. আতিল কথচ (Magnifying glass)
৭. কাচের জায়
৮. ফরমালিস
৯. গাম বা আরা
১০. খাতা
১১. পেন্সিল
১২. রবার
কাজের ধাপঃ
১. নিকটস্থ কোনো বাজার, পুকুর বা খামার থেকে বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি সংগ্রহ কর। লোনা পানির চিংড়ি
উপকূলীয় অঞ্চলের কোনো বাজার বা চিংড়ি খামার বা উপকূলীয় জলাশয় থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
২. নমুনা চিংড়ি সংগ্রহের বিস্তারিক তথ্য যেমন- চাষির নাম, খামারের আয়তন, অবস্থান, সাহের তারিখ ইত্যাদি লিপিবদ্ধ কর।
৩. সংগৃহীত চিংড়ি বালতিতে করে পরীক্ষাগারে নিয়ে আসতে হবে।
৪. পরীক্ষাগারে বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়িগুলো আলাদা আলানাভাবে ট্রেতে রাখ।
৫. ফরসেপ দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়িগুলোর বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলো পরীক্ষা করে দেখ।
৬. এবার আলপিন দিয়ে আলাদা আলাদাভাবে চিংড়িগুলোর রোস্ট্রামের উপবিভাগের ও নিচের অংশের দাঁতগুলো গণনা কর।
৭. বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়িগুলো এবার আলাদা আলাদাভাবে কাচের জার ১০% ফরমালিনে সংরক্ষণ কর।
৮. প্রতিটি কাচের জারের গায়ে পৃথক পৃথকভাবে চিংড়ির শ্রেণিকণ্যাসসহ সংগ্রহের তারিখ সংবলিত কাগজের লেবেল আঠা দিয়ে আটকিয়ে দাও।
৯. এবার ব্যবহারিক খাতায় বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ির শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যগুলো আলাদা আলাদাভাবে নিখ।
অনুশীলনী-৩: চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
১. বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাশয়ে প্রায় ২৭ টি প্রজাতির চিংড়ি পাওয়া যায়। এদের কিছু লোনা পানিয় চিংড়ি এবং কিছু মিঠা পানির চিংড়ি। আবার সবজাজের চিংড়িই বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও চাষযোগ্য নয়। লোনা পাদির চিংড়ি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের নদীসমূহে এবং সাগরে পাওয়া যায়। মিঠা পানির চিংড়ি বাংলাদেশের সকল নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়ে পাওয়া যায়।
২. বাজারে সাধারণত সায়েন্টিফিক স্টোর বা ঔষধের ফার্মেসিতে ফরমালিন কিনতে পাওয়া যায়। বাজারে যে ফরমালিন কিনতে পাওয়া যায় আয়ে সাধারণত ৪০% ফরমালিন দ্রবণ থাকে। কিন্তু এই ফরমালিনে চিংড়ি সংরক্ষণ করা ঠিক নয়। চিংড়ি সংরক্ষণের জন্য এই ফরমালিন দ্রবণে পাতন পানি মিশিয়ে ১০টি ফরমালিন দ্রবণে পরিণত করতে হবে।
উপকরণঃ
১. বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি
২. বালতি
৩. ফরসেপ
৪. নিডল
৫. ট্রে
৬. স্পেসিমেন জার
৭. ফরমালিন
৮. পাতন পানি
৯. গাম বা আঠা
১০. ড্রপার
১১. ব্যবহারিক খাতা
১২. পেন্সিল
কাজের ধাপঃ
১. সম্ভব হলে নিকটস্থ বাজার বা খামার থেকে অথবা উপকূলীয় অঞ্চল থেকে বিভিন্ন প্রজাতির লোনা পানির
চিংড়ি সংগ্রহ করে আলাদাভাবে রাখ।
২. নিকটস্থ বাজার বা খামার থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মিঠা পানির চিংড়ি সংগ্রহ কর।
৩. নমুনা চিংড়ি সংগ্রহের বিস্তারিত তথ্য যেমন- চাখির নাম, খামারের অবস্থান, আয়তন, নমুনা সংগ্রহের তারিখ প্রভৃতি লিপিবদ্ধ কর।
৪. লোনা পানির চিংড়িগুলো শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী পৃথক করে আলাদা আলাদা ট্রেতে রাখ।
৫. মিঠা পানির চিংড়িগুলো শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী পৃথক করে আলাদা আলাদা ট্রেতে রাখ।
৬. নিকটস্থ বাজার থেকে ফরমালিন সংগ্রহ কর।
৭. প্রয়োজনীয় পরিমাণ পারন পানি মিশিয়ে ১০% ফরমালিন দ্রবণ তৈরি কর।
৮. প্রয়োজনীয় সংখ্যক জারে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ফরমালিন দ্রবণ লও।
৯. এবার বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি আলাদা আলাদা জারে সংগ্রহ কর।
১০. প্রত্যেকটি জারের গায়ে কাগজ আটকিয়ে তাতে চিংড়ির শ্রেণিবিন্যাস ও সংরক্ষণের তারিখ লেখ।
১১. পরিশেষে ব্যবহারিক খাতায় শেখ।
অনুশীলনী-৪: গলদা চিংড়ির অভ্যন্তরীণ গঠন পর্যবেক্ষণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
(ক) পরিপাকতন্ত্র: গলদা চিংড়ির পরিপাকতনত্র পরিপাকনালী ও হেপাটোপ্যানক্রিয়াস গ্রন্থি সমন্বয়ে গঠিত।
পরিপাকনালীঃ এই নালী মুখছিদ্র (Mouth) থেকে শুরু করে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত। পরিপাকনালী প্রধানত ভিনটি অংশে বিভক্ত। যথা-
১. অগ্র পরিপাকনালী (Foregut)
২. মধ্য পরিপাকনালী (Mid gut)
৩. পশ্চাৎ পরিপাকনালী (Hind gut)
অগ্র পরিপাকনালী: মুখ ছিদ্র, মুখ গহবর (Buccal cavit), হ্রাস নালী (Oesophagus) ও পাকস্থলী সমন্বয়ে অগ্র পরিপাকনালী গঠিত। পাকস্থলী আবার দুটি অংশে বিভক্ত। যথা-কার্ডিয়াক পাকস্থলী ও পাইলোরিক পাকস্থলী।
মধ্য পরিপাকনালী: পাইলোরিক পাকস্থলীর পরবর্তী ভাগ থেকে মধ্য পরিপাকনালী শুরু। এই অংশটি লম্বা সরু সুতার মত যা অনত্র (Intestine) নামে পরিচিত।
পশ্চাৎ পরিপাকনালী: এই অংশটি পরিপাকনালীর সবচেয়ে ছোট অংশ। মলাশয় (Rectum) ও পায়ুছিত্র (Anus)- এই দুইটি অংশের সমন্বয়ে পচাৎ পরিপাকনালী গঠিত।
হেপাটোপ্যানক্রিয়াস গ্রন্থিঃ শিরোবক্ষের গহবরে কমলা রং বিশিষ্ট এই গ্রন্থি অবস্থিত। এটিই চিংড়ির একমাত্র পরিপাক গ্রন্থি।
(ক) পরিপাকতন্ত্র
১. নিকটস্থ বাজার, পুকুর বা খামার থেকে গলদা চিংড়ি সংগ্রহ কর।
২. নমুনা চিংড়ি সল্লাহের বিস্তারিত তথ্য যেমন, চাষির নাম, খামারের অবস্থান, আয়তন, নমুনা সংগ্রহের তারিখ প্রভৃতি লিপিবদ্ধ কর।
৩. নমুনা চিংড়ি বালতিতে করে পরীক্ষাগারে নিয়ে এসা।ে
৪. বালতি থেকে এবার চিংড়ি তুলে ট্রেতে রাখ।
৫. চিংড়িটিকে এবার পৃষ্ঠদেশ উপরের দিকে রেখে আলপিন দিয়ে ভালোভাবে ট্রেতে আটকিয়ে রাখ।
৬. আতশ কাচের সাহায্যে চিংড়ির মুখ ও পায়ু ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৭. খুব সাবধানে শিরাবক্ষ ও উদর উপাঙ্গগুলো কাঁচি দিয়ে কেটে সরিয়ে ফেল।
৮. কাঁচি দিয়ে পৃষ্ঠপার্শ্ব বরাবর টারগাম কাট।
৯. ফরসেপ দিয়ে সাবধানে টারগাম ও নিচের পেশি সরিয়ে ফেল।
১০. এবার হৃৎপি- ও যকৃত কাঁচি দিয়ে কেটে ফেললে যকৃত অগ্নাশয় গ্রন্থিটি দেখা যাবে।
১১, ফরসেপ ও কালশেল দিয়ে যকৃত অগ্নাশয় গ্রন্থি সরিয়ে নিয়ে গলদা চিংড়ির পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশগুেলা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
১২. পেনসিল দিয়ে পরিপাক তন্ত্র-এর চিত্র খাতায় অঙ্কন ও বিভিন্ন অংশগুলো চিহ্নিত কর।
১৩. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
(খ) প্রজননতন্ত্র: চিংড়ি একলিঙ্গ বিশিষ্ট প্রাণী। পুজেনন অঙ্গ ও স্ত্রীজনন অঙ্গ ভিন্ন ভিন্ন চিংড়িকে বিদ্যমান।
পুজেননতন্ত্র: একজোড়া শুক্রাশয় (Textes), একজোড়া শুক্রনালী (Vas defferentia), পত্রখালি (Seminal vesicle) ও পুং জননষিদ্র (Male genital aperture) সমন্বয়ে গলদা চিংড়ির পুং জননতন্ত্র গঠিত। স্ত্রীজননতন্ত্র। চিংড়ির স্ত্রী জননতন্ত্র নিম্নলিখিত অক্ষগুলো নিয়ে গঠিত।
১. ডিম্বাশয় (Ovaries)
২. ডিম্বনালী (Oviducts)।
৩. স্ত্রীজনন ছিদ্র (Female genital aperture)।
উপকরণঃ
১. পুরুষ ও স্ত্রী গলদা চিংড়ি
২. বালতি
৩. ট্রে
৪. কাঁচি
৫. ফরসেপ
৬. নিড়ল বা সুচ
৭. আলপিন
৮. আতশ কাচ
৯. কালপেল
১০. পেন্সিল
১১. খাতা
১২. রবার
কাজের ধাপঃ
(খ) প্রজননতন্ত্র
১. নিকটস্থ বাজার, পুকুর বা খামার থেকে স্ত্রী ও পুরুষ গলদা চিংড়ি সংগ্রহ কর।
২. নমুনা চিংড়ি সংগ্রহের বিস্তারিত তথ্য যেমন, চাষির নাম, খামারের অবস্থান, আয়তন, নমুনা সংগ্রহের তারিখ প্রভৃতি লিপিবদ্ধ কর।
৩. নমুনা চিংড়ি বালতিতে করে পরীক্ষাগারে নিয়ে এসো।
৪. বালতি থেকে পুরুষ ও স্ত্রী চিংড়ি তুলে ভিন্ন ভিন্ন ট্রেতে রাখ।
৫. চিংড়িকে এবার পৃষ্ঠদেশ উপরের দিকে রেখে আলপিন দিয়ে ভালোভাবে ট্রেতে আটকাও।
৬. এবার চিংড়ির পৃষ্ঠপার্শ্ব বরাবর কচি ও ফরসেপ দিয়ে টারগাম ও পেশি সরিয়ে ফেল।
৭. পেশি সরানারে পর সাবধানে তুৎপি-টি সরিয়ে ফেললে যকৃত-অগ্নাশয়ে জননঅঙ্গ দেখা যাবে।
৮. গলদা চিংড়ির পুরুষ ও স্ত্রী জননতন্ত্রের বিভিন্ন অংশগুলো পর্যবেক্ষণ কর।
৯. পেন্সিল দিয়ে প্রজননতন্ত্রের ছবি আঁক ও জনন তন্ত্রের বিভিন্ন অংশগুলো চিহ্নিত কর।
১০. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
অনুশীলনী- ৫: পানির লবণাক্ততা পর্যবেক্ষণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
বাগদা চিংড়ি লোনা পানির চিংড়ি। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের লোনা পানির জলাশয়সমূহে বাগদা চিংড়ি পাওয়া যায় এবং উপকূলীয় অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় লোনা পানিতে বাগদা চিংড়ির চাষ করা হয়। দশ থেকে পঁচিশ পিপিটি লবণাক্ততাযুক্ত পানি বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য উপযোগী।
যদিও বাগদা চিংড়ি ০-৭০ পিপিটি লবণাক্ততাযুক্ত পানিতে বেঁচে থাকতে পারে। পানি লবণাক্ততা দুইটি উপায়ে পরিমাপ করা যায়; যথা, (১) রিফ্লাক্টোমিটার ব্যবহার করে ও (২) হ্যাককীটে বিদ্যমান বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে।
(ক) রিফ্লাক্টোমিটারের সাহায্যে লবণাক্ততা নির্ণয়
উপকরণঃ
১. ছিপিসহ বোতল
২. বটিং পেপার
৩. রিফ্রাকটোমিটার
৪. ড্রপার
৫. পাতিত পানি
৬. ব্যবহারিক খাতা
৭. পেনসিল
কাজের ধাপ:
১. যে জলাশয়, পুকুর বা খামারের পানির লবণাক্ততা নির্ণয় করতে হবে সেই পুকুর/খামার থেকে এক বোতল পানি সংগ্রহ কর।
২. পানি সংগ্রহের বিস্তারিত তথ্য যেমন, চাষির নাম, খামারের অবস্থান, পানি সংগ্রহের সময়, তারিখ, পানির গভীরতা প্রভৃতি লিপিবদ্ধ কর।
৩. এবার রিফ্লাকটোমিটারের অগ্রভাগে অবস্থিত কভার স্নাইড উঠিয়ে বটিং পেপার বা টিস্যু পেপার দিয়ে রিফ্লাকটোমিটারের অগ্রভাগ ভালোভাবে পরিষ্কার কর।
৪. রিফ্রাকটোমিটারের অগ্রভাগে কভার স্লাইডের নিচে ড্রপারের সাহায্যে কয়েক ফোঁটা পাতিত পানি দাও।
৫. রিফাকটোমিটারের পশ্চাদ্ভাগে অবস্থিত আই পীসে চোখ লাগিয়ে রিফ্রাকটোমিটারের অভ্যন্তরে অবস্থিত কেলটি শূন্যে অ্যাডজাস্ট কর।
৬. এবার রিফ্লাকটোমিটারের অগ্রভাগের কভার আইচের নিয়ে কয়েক ফোঁটা লবণাক্ত পানি দাও।
৭. অতঃপর আই শীসে চোখ লাগিয়ে শাদির লবণাক্ততা আলোজাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৮. রিক্সাকটোমিটারের অভ্যন্তরস্থ দেশ থেকে সরাসরি লবণাক্তকার মাত্রা পরিমাপ কর।
৯. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
খ) হ্যাককীটের বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে পানির লবণাক্ততা নির্ণয়
উপকরণঃ
১. ডিজিটাল টাইট্রেটর কার্টিজ (২.৫৭ বন মারকিউরিক নাইট্রেট)
২. ডাইফিনাইল কার্যাজোন পড়িভারের পূজিয়া
৩. সিরিঞ্জ (৩ সিসি)
৪. ২, ৫, ১০, ২০ ও ২৫ মিলি বোতল
৫. ৪৭৩ মিলি ডিমিনারালাইজার বোতল
৬. ডিজিটাল টাইট্রেটর
৭. ডেলিভারি টিউব
৮. বড় ক্লিপারস
কাজের ধাপঃ
১. নিকটস্থ কোনো পুকুর বা খামার থেকে লবণাক্ত পানি সংগ্রহ কর।
২. নমুনা পানি সংগ্রহের বিস্তারিত তথ্য যেমন- পুকুরের অবস্থান, আয়তন, পানি সংগ্রহের সময়, তারিখ প্রকৃতি লিপিবদ্ধ কর।
৩. একটি পরিষ্কার ডেলিভারি টিউবকে মারফিউরিক নাইট্রেট (২.৫৭ ঘন) টাইট্রেশন কার্টিজের সাথে সংযুক্ত কর এবং টাইট্রেটরের চতুর্দিকে কার্টিজ লাগিয়ে দাও।
৪. ডেলিভারি টিউবের নব এবার ঘুরাতে থাক যে পর্যন্ত না টাইট্রেন্ট পড়া শুরু করে। অতঃপর ডেলিভারি। টিউবের শেষপ্রান্ড মুছে ফেল এবং নবকে উল্টোদিকে ঘুরিয়ে শূন্যে আন।
৫. ৩ মিলি সিরিঞ্জ দিয়ে সংগৃহীত নমুনা পানি থেকে ২ মিলি নিয়ে বাতেলে রাখ।
৬. ১০ মিলি বোকলটি ডিমিনারালাইজড পানি দিয়ে পূর্ণ কর। ডিমিনারালাইজড বাজেলে ট্যাপের পানি দিয়ে ডিমিনারালহিজড পানি প্রস্তুত করা হয় এবং প্রায় ৩০ সেকেন্ড সময় এটি ঝাঁকানো হয়।
৭. এবার ডাইফিনাইলকার্বাজোন রিএজেন্ট পাউডারের পুরিয়া বাতেলে রাখ এবং ভালোভাবে এটি দ্রবণে মিশাও।
৮. মারকিউরিক নাইট্রেট দিয়ে নমুনা পানিকে টাইট্রেট করতে থাক যতক্ষণ না দ্রবণের রং হলুদ থেকে। হালকা গালোপী বর্ণের হয়।
৯. ডিজিটাল কাউন্টার উইভার থেকে প্রাপ্ত রিডিংকে ১০ দিয়ে ভাগ করে নমুনা পানির লবণাক্ততা (পিপিটি- Parts per thousand) নির্ণয় কর।
১০. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
অনুশীলনী- ৬: পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন পর্যবেক্ষণ
প্রাসঙ্গিক তথ্যঃ
গলদা চিংড়ির অক্সিজেনের চাহিদা অন্যান্য জলজ প্রাণীর তুলনায় বেশি। চিংড়ি চাষের জন্য সর্বোত্তম অক্সিজেন মাত্রা হচ্ছে ৫-৭ মিগ্রা/লিটার। কোনো পুকুরে সাধারণত দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ সকালে সবচেয়ে কম এবং বিকালে সবচেয়ে বেশি থাকে। পানির দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ দুইটি উপায়ে পরিমাপ করা যায়। যথা,
(১) ডিও মিটারের সাহায্যে ও
(২) হ্যাককীটে বিদ্যমান বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে।
(ক) ডিও মিটারের সাহায্যে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ নির্ণয়।
উপকরণঃ
(১) ডিও মিটার
(২) ব্যবহারিক খাতা
(৩) পেনসিল।
কাজের ধাপঃ
১. নিকটস্থ কোন চিংড়ি খামারে গমন কর।
২. খামারের যে কোনো একটি পুকুরের পানিতে ডিও মিটারটির সংবেদনশীল অংশ অল্প সময়ের জন্য ডুবিয়ে রাখ।
৩. এভাবে পুকুরের কয়েকটি স্থান থেকে ডিও মিটারের সাহায্যে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ পরিমাপ কর এবং অক্সিজেন পরিমাপের সময় লিখে রাখ।
৪. পেন্সিল দিয়ে ডিও মিটারের রিডিংগুলো সময়সহ লিপিবদ্ধ কর।
৫. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
(খ) হ্যাককীটের সাহায্যে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ নির্ণয়।
উপকরণঃ
১. দ্রবীভূত অক্সিজেন ১ বিকারক পাউডারের পুরিয়া (Dissolved Oxygen 1 reagent powder Pillow)
২. দ্রবীভূত অক্সিজেন ২ বিকারক পাউডারের পুরিয়া (Dissolved Oxygen 2 reagent powder Pillow)
৩. দ্রবীভূত অক্সিজেন ৩ বিকারক পাউডারের পুরিয়া (Dissolved Oxygen 3 reagent powder Pillow)
৪. ডিজিটাল টাইট্রেটর কার্টিজ (০.০২৫ ঘন সোডিয়াম থায়োসালফেট)
৫. স্টার্চ ইনডিকেটর (১০০ ml, MDB)।
৬. বোতল (৬০ মিলি)
৭. ক্রমাদিত (Graduated) সিলিন্ডার (১০০ মিলি)
৮. ডিজিটাল টাইট্রেটর (Digital titrator)
৯. ডেলিভারি টিউব
১০. বড় ক্লিপারস
১১. ব্যবহারিক খাতা ও পেন্সিল।
কাজের ধাপঃ
১. নিকটস্থ কোনো পুকুর বা খামারে গমন কর।
২. ছিপিযুক্ত ৬০ মিলি এর একটি পরিষ্কার বোতেলে পানি সংগ্রহ কর। বোতেলে এমনভাবে পানি সংগ্রহ করতে হবে যেন বোতলটিতে পানির কোনো বুদ্বুদ না ঢুকে।
৩. নমুনা পানি সংগ্রহের বিস্তারিত তথ্য যেমন, পুকুরের অবস্থান, আয়তন, পানি সংগ্রহের সময় ও তারিখ প্রভৃতি লিপিবদ্ধ কর।
৪. এরপর বোতলের পানির সাথে একটি দ্রবীভূত অক্সিজেন- ১৩ দ্রবীভূত অক্সিজেন-২ পাউডার মিশ্রিত কর। পাউডার মিশানারে পর খুব সাবধানে বোতলের ছিপি লাগাও যেন বোতেলে বাতাস না ঢুকে।
৫. বোতলের অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যাওয়ার পর তাড়াতাড়ি বোতলটিকে কয়েকবার উল্টা ও সোজা করে পাউডারকে ভালোভাবে পানির সাথে মিশ্রিত কর। এর ফলে কিছুক্ষণের মধ্যে বাতেলে একটি বাদামি-কমলা তলানি জমবে যা পরিমাপের ফলাফলকে প্রভাবিত করে না।
৬. এবার বোতলটিকে কিছুক্ষণ স্থির রাখ যাতে নিচে তলানি জমতে পারে। এর ফলে বোতলের উপরের অর্ধেক দ্রবণ পরিষ্কার দেখাবে। পুনরায় বোতলটিকে কয়েকবার উল্টা-সোজা করে দ্রবণ মিশাও। এরপর আবার বোতলটিকে স্থির অবস্থায় রাখ যেন বোতলের উপরের অর্ধেক অংশ পরিষ্কার হয়।
৭. এবার ছিপি খুলে বোতলের দ্রবণের সাথে দ্রবীভূত অক্সিজেন-৩ পাউডারের একটি পুরিয়া মিশ্রিত কর। পুনরায় সাবধানে ছিপি লাগাও যেন বোতেলে বাতাসের বুদবুদ না ঢুকে। এবার কয়েকবার বোতলটিকে পুনরায় উল্টা-সোজা করে দ্রবণের সাথে পাউডার মিশ্রিত কর। যদি পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকে তাহলে তলানি দ্রবীভূত হবে এবং দ্রবণ হলুদ বর্ণ ধারণ করবে।
৮. ক্রমাঙ্কিত ১০০ মিলি সিলিন্ডারে ৫০ মিলি প্রস্তুতকৃত নমুনা দ্রবণ ঢল।
৯. সোডিয়াম থায়োসালফেট নরমাল (০.০২৫ ঘন) দ্রবণের সাথে একটি পরিষ্কার ডেলিভারি টিউব সংযুক্ত করে এই টাইট্রেটরের চতুর্দিকে টাইট্রেশন কার্টিজ (Cartidge) সংযুক্ত কর।
১০. ডেলিভারি টিউবের নব এবার ঘুরাতে থাক যে পর্যন্ত না টাইট্রেন্ট পড়া শুরু করে। অতঃপর ডেলিভারি টিউবের শেষ প্রান্ড মুছে ফেল এবং নবকে উল্টোদিকে ঘুরিয়ে শূন্যে আন।
১১. বোতলের বাকি ১০ মিলি প্রস্তুতকৃত দ্রবণকে সোডিয়াম থায়োসালফেট (০.০২৫ ঘন) টাইট্রেন্ট দ্বারা টাইট্রেট কর যে পর্যন্ত না দ্রবণটি হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
১২. দুই ফেটা স্টার্চ ইনডিকেটর দ্রবণ ঢালার পর বোতলকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মেশাতে থাক যতক্ষণ না দ্রবণ নীল রং ধারণ করে।
১৩. পুনরায় টাইট্রেশন শুরু কর যতক্ষণ না দ্রবণ ঘন নীল থেকে রং বিহীন হয়।
১৪. ডিজিটাল কাউন্টার উইন্ডো থেকে এবার এর নম্বর সংখ্যা বের করতে হবে এবং এ সংখ্যাকে ৪০ দ্বারা ভাগ করে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা (মিগ্রা/লি) বের কর।
অনুশীলনী-৭: পানির পিএইচপর্যবেক্ষণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য পিএইচ হচ্ছে পানিতে হাইড্রোজেন আয়নের মাত্রার পরিমাপ যা “০” (খুব অম্লীয়) হতে ১৪ (খুব ক্ষারীয়) পর্যন্ত হয়। পিএইচ-৭ হলো নিরপেক্ষ। পিএইচের মান হাইড্রোজেন আয়নের কার্যকারিতা নির্দেশ করে। চিংড়ি চাষের জন্য পানির আদর্শ পিএইচ হচ্ছে ৭-৯।
পানির পিএইচ কমে গেলে পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পায় এবং চিংড়ির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও খাবার রুচি কমে যায়। আর পানির পিএইচ বেড়ে গেলে চিংড়ির ফুলকা ও চোখ নষ্ট হয়ে যায় এবং চিংড়ি খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করে দেয়। পানির পিএইচ দুভাবে নির্ণয় করা যায়। যথা, (ক) পিএইচ মিটারের সাহায্যে এবং (খ) হ্যাককীট ব্যবহার করে।
(ক) পিএইচ মিটারের সাহায্যে পানির পিএইচ নির্ণয়।
উপকরণঃ
১. পিএইচ মিটার
২. ব্যবহারিক খাতা
৩. পেনসিল ইত্যাদি
কাজের ধাপঃ
১. নিকটস্থ কোনো চিংড়ি খামারে প্রবেশ কর।
২. খামারের যে কোনো একটি পুকুরের পানিতে পিএইচ মিটারের সংবেদনশীল অংশ কিছুক্ষণের জন্য ডুবিয়ে রাখ।
৩. পিএইচ মিটারের ডিজিটাল স্কেল থেকে পিএইচ-এর মাত্রা পরিমাপ কর এবং সময়সহ ব্যবহারিক খাতায় লিখ।
৪. অনুশীলন কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
(খ) হ্যাককীটের সাহায্যে পানির পিএইচ নির্ণয়।
উপকরণঃ
১. ৪ পিএইচ ইনডিকেটর দ্রবণ
২. ১০০ এমএল টেস্ট টিউব
৩. কালার ডিস্ক
৪. কালার ভিউং টিউব
৫. স্টপার
৬. কালার কমপারেটর বক্স
৭. ছিপিযুক্ত কাচের বোতল
৮. ব্যবহারিক খাতা
৯. পেনসিল
কাজের ধাপঃ
১. নমুনা পানি দিয়ে দুটি টিউবের ৫ এমএল চিহ্ন পর্যন্ত পূর্ণ কর। পূর্বে ব্যবহৃত টিউব থাকলে তা ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে যেন এর মাঝে অন্য কোনো দ্রবণ না থাকে।
২. একটি টিউবে ৬ ফোঁটা ৪ পিএইচ ইনডিকেটর দ্রবণ নিয়ে ভালোভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দ্রবণটি নমুনা পানির সাথে মিশাও। এবার উভয় টিউবের সাথে স্টপার সংযুক্ত কর।
৩. কালার বক্সের ডান পার্শ্বের ছিদ্রে ইনডিকেটর মিশ্রিত টিউবটি রাখ।
৪. কালার বক্সের বাম পার্শ্বের ছিদ্রে অমিশ্রিত ইনডিকেটর টিউবটি রাখ।
৫. কালার বক্সকে আলোর দিকে যেমন, আকাশ, জানালা অথবা ল্যাম্প এর দিকে ধর এবং সামনের দুইটি ছিদ্র দিয়ে ভালোভাবে লক্ষ্য করে রং এর চাকতিটি ঘুরিয়ে অনুরূপ রঙের সাথে মিলাও।
৬. কেলের ছিদ্র দিয়ে পিএইচ এর মাত্রা নির্ণয় কর।
৭. অনুশীলন কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
অনুশীলনী- ৮: মাটির বৈশিষ্ট্য নির্ণয়
প্রাসঙ্গিক তথ্য
১. চিংড়ি চাষে মাটির পিএইচের গুরুত্ব অপরিসীম। মাটির পিএইচ এর উপর পুকুরের পানির পিএইচ নির্ভরশীল। চিংড়ি চাষের জন্য পুকুরের মাটির পিএইচ ৫-৬.৫ এর মধ্যে থাকা উত্তম।
২. চিংড়ি খামারের জন্য দোআঁশ, বেলে দোআঁশ বা এঁটেল মাটির স্থান নির্বাচন করা দরকার। যে মাটিতে শতকরা ৮৫ ভাগের চেয়ে বেশি বালিকণা থাকে তাকে বেলে মাটি, শতকরা ৭৫ ভাগের কম বালিকণা ও শতকরা ২৫ ভাগের কম কাদাকণা যে মাটিতে থাকে তাকে দোআঁশ মাটি এবং যে মাটিতে শতকরা ৩৫ ভাগের বেশি কাদাকণা বা পলিকণা থাকে তাকে কাদা মাটি বলে।
৩. কষযুক্ত মাটি বা অ্যাসিড সালফেট সয়েল চিংড়ি চাষের জন্য সমপূর্ণরূপে অনুপযোগী। যে মাটির পিএইচ ৪ অথবা এর কম থাকে তাকে কষযুক্ত মাটি বা অ্যাসিড সালফেট সয়েল বলে। যেসব খামার বা পুকুরে অ্যাসিড সালফেট সয়েল থাকে সেসব খামার/পুকুরের মাটির উপরিভাগে লাল রঙের একটি আস্তরণ দেখা যায়।
(ক) মাটির কলা নির্ণয়
উপকরণঃ
১. দোআঁশ, বেলে দোআঁশ ও এঁটেল মাটি
২. ৪ টি পলিথিন ব্যাগ
৩. কাচ পাত্র
৪. পাতিত পানি
৫. খাতা
৬. পেনসিল
কাজের ধাপঃ
১. নিকটস্থ খামারে গিয়ে মাটি সংগ্রহ করে পলিথিন ব্যাগের সাহায্যে পরীক্ষাগারে নাও।
২. হাতে আধা মুঠো মাটি নিয়ে চাপ দিয়ে গুড়ো করে তাতে পরিমিত পানি মিশাও।
৩. এবার মাটি দলা বানানোর চেষ্টা কর।
- দলা বানানো না গেলে অর্থাৎ মাটিকণা আলগা থেকে গেলে বুঝতে হবে এটা বেলে মাটি।
- রিং বানানো যায় তবে আংটি বানাতে গেলে ভেঙে যায় তবে বুঝতে হবে এটা দোআঁশ মাটি।
- মাটি দিয়ে ভালো রকম আংটি বানানো যায় তাহলে এটা এঁটেল মাটি
৪. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
(খ) মাটির পিএইচ নির্ণয়
উপকরণঃ
১. সরেল পিএইচ মিটার
২. পাতিত পানি
৩. পলিথিন ব্যাগ
৪. কাচ পাত্র
৫. ব্যবহারিক খাতা
৫. পেন্সিল
কাজের ধাপঃ
১. নিকটস্থ খামার থেকে অল্প পরিমাণ (প্রায় ১ কেজি) মাটি সংগ্রহ করে পলিথিন ব্যাগে করে সংগৃহীত মাটি পরীক্ষাগারে নিয়ে আস।
২. কাচ পাত্রে এক মুঠো মাটি নিয়ে পাতিত পানি দিয়ে ভিজিয়ে কাদার মতো কর। এবার সয়েল পিএইচ মিটারের নিম্নভাগের সূচালো অংশটুকু কাদার মধ্যে স্থাপন কর।
৩. এবার সয়েল পিএইচ মিটারের কেল থেকে মাটির পিএইচ এর মাত্রা পর্যবেক্ষণ কর।
৪. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
(গ) অ্যাসিড সালফেট সয়েল চিহ্নিতকরণ
উপকরণঃ
১. কষযুক্ত মাটি
২. পাতিত পানি
৩. পলিথিন ব্যাগ
৪. সয়েল পিএইচ মিটার
৫. ব্যবহারিক খাতা
৫. পেন্সিল
কাজের ধাপঃ
১. নিকটস্থ কোনো খামার থেকে আধা কেজি পরিমাণ মাটি সংগ্রহ কর।
২. সংগৃহীত মাটি পলিথিন ব্যাগে করে পরীক্ষাগারে নাও।
৩. মাটি সংগ্রহের সময় মাটির উপরের স্তরের রং ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৪. এক মুঠো সংগৃহীত মাটি একটি কাচ পাত্রে পাতিত পানি দিয়ে ভিজিয়ে কাদার মতো কর।
৫. এবার সয়েল পিএইচ মিটারের সুচালো অগ্রভাগ কাদার মধ্যে স্থাপন কর।
৬. সয়েল পিএইচ মিটারের কেল থেকে মাটির পিএইচ-এর মান পর্যবেক্ষণ কর।
৭. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।

অনুশীলনা- ৯: পুকুরের তলা শুকানো
প্রাসঙ্গিক তথ্য
১. পুকুরের তলদেশ ২-৫ সপ্তাহ সূর্যালোকে এমনভাবে শুকাতে হবে যেন মাটিতে ৫-১০ সেমি ফাটল সৃষ্টি হয়। তবে কষযুক্ত মাটি হলে ফাটল সৃষ্টি না করাই উত্তম। পুকুরের তলদেশ দিয়ে খালি পায়ে হেঁটে গেলে যদি ১-২ ইঞ্চির বেশি গর্ত না হয় তবে পুকুরের তলদেশ শুকানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।
২. পুকুরের তলদেশ শুকানোর ফলে রাক্ষুসে মাছ ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণী দমন করা যায়। মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মাটিতে বিদ্যমান হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস ও অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাস দূরীভূত হয়।
উপকরণঃ
১. পাম্প মেশিন
২. কোদাল
৩. ব্যবহারিক খাতা
৪. পেন্সিল
কাজের ধাপঃ
১. নিকটস্থ কোনো পুকুরে গমন কর।
২. পুকুরের পাড়ে পাম্প মেশিন এমনভাবে স্থাপন কর যেন মেশিনের সরবরাহ পাইপের (উবষরাবন্ধু ঢ়রঢ়ব) মুখ পাড় থেকে দূরে অবস্থান করে।
৩. এবার মেশিন স্টার্ট দিয়ে পুকুরের পানি নিষ্কাশন কর।
৪. পুকুরের তলদেশের কিছু কিছু নিচু এলাকায় পানি জমে থাকলে কোদাল দিয়ে নালা কেটে পানি মেশিনের সংগ্রহ পাইপের (Suction pipe) গোড়ায় যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এতে পুকুরের সমস্ত পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হবে।
৫. পুকুরের সমস্ত পানি নিষ্কাশন করা শেষ হলে পাম্প মেশিন বন্ধ করে দাও।
৬. পুকুরের তলদেশ উত্তমরূপে শুকানোর জন্য ২-৫ সপ্তাহ সূর্যালোকে ফেলে রাখ।
৭. এরপর পুকুরের তলদেশ দিয়ে খালি পায়ে হেঁটে গেলে যদি ১-২ ইঞ্চির বেশি গর্ত না হয় তবে তলদেশ শুকানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।
৮. এবার পুকুরের তলদেশ যথাযথভাবে শুকানো হয়েছে কিনা তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৯. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
অনুশীলনী- ১০: চিংড়ি ঘেরের রাক্ষুসে মাছ পরিচিতি
প্রাসঙ্গিক তথ্য
রাক্ষুসে মাছ চিংড়ি ঘেরের জন্য অশনি সংকেত। রাক্ষুসে মাছ/চিংড়ির পোনা সবচেয়ে বড় শত্রু। অনেক সময় রাক্ষুসে মাছ চিংড়ির উৎপাদনকে দারুণভাবে ব্যাহত করে। সাধারণত রাক্ষুসে মাছ প্রাণীভাজেী হয়ে থাকে। এরা ঘেরে চিংড়ির পোনা খেয়ে ফেলে ফলে চিংড়ি চাষি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সাধারণত যে সব মাছ চিংড়ি বা অন্য মাছ খেয়ে ফেলে তাদেরকে রাক্ষুসে মাছ বলা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাক্ষুসে মাছের মুখ বড় এবং পরিপাক নালী ছোট হয়ে থাকে। কারণ খাদ্য শিকলের (Food chain) মাঝামাঝি থেকে এরা খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। অনেক রাক্ষুসে মাছের মুখে ধারালা েদাঁত থাকে। আমাদের দেশে চিংড়ি ঘেরে যে সমস্ত রাক্ষুসে মাছ দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে ফলি, টেংরা, বোয়াল, ভেটকি, বেলে, শোল, দাতিনা, তেড়ে প্রভৃতি মাছ উল্লেখযোগ্য।
উপকরণঃ
১. ঝাকি জাল
২. বালতি
৩. ট্রে
৪. কাঁচি
৫. কালপেল
৬. নিডল
৭. আলপিন
৮. ফরসেপ
৯. কাচের জার
১০. ফরমালিন
১১. তুলি
১২. ব্যবহারিক খাতা
১৩. পেনসিল
ফলি মাছ: এই মাছের উত্তয় পার্শ্ব চাপা, মুখ চোখের মাঝ বরাবর বিস্তৃত এবং মুখের উপরের ও নিচের চোয়াল সমান। উভয় চোয়ালে দাঁত আছে। এদের কণ্ঠেও ছকের মতো বাঁকা দাঁত আছে। পৃষ্ঠদেশীর পাখনা অত্যন্ত ছোট এবং এদের লেজ অত্যন্ত ছোট। এই মাছের পরিপাকনালী অত্যন্ত ছোট। এরা স্বভাবে মাংসভালেী।
টেংরা মাছঃ এই জাতীয় মাছের মাধা অপেক্ষাকৃত বড় এবং নিচের চোয়াল উপরের চোয়ালের চেয়ে বড়। দুখ চোখ বরাবর বিস্তৃত। নিচের চোয়ালের নিচে একজোড়া দাড়ি বা গুড় (Barbel) থাকে যা উদর পাখনা পর্যন্ত পৌছায় না এবং উভয় চোয়ালে ভৌতা দাঁত আছে। লেজের পাখনা দুই ভাগে বিভক্ত তবে উপরের অংশ অপেক্ষাকৃত বড়। এদের পরিপাকনালী অপেক্ষাকৃল ছোট। বাংলাদেশের উপকূলীয় জলাশয়ে এদের প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
বোয়াল মাছঃ লম্বাকৃতির এই মাছের মাথা অনেকটা অবনত এবং নিচের চোয়ালের নিম্নাংশে দুই জোড়া গুড় থাকে। নিচের চোয়াল উপরের চোয়ালের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বড়। বোয়াল মাছের মুখ চোখের পশ্চাৎ ভাগের পিছন পর্যন্ত বিস্তৃত এবং উপরের ও নিচের চোয়ালে দাঁত বিদ্যমান। কাঁটাবিহীন পৃষ্ঠ পাখনা আকারে অত্যন্তত ছোট এবং পায়ু পাখনা (Anal fin) শেজের (Caudal fin) সাথে সংযুক্ত নয়। এরা অত্যন্ত লাগেী বা ট্রেক (Voracious) প্রকৃতির মাছ এবং শিকারি স্বভাবের জন্য এরা অতি পরিচিত।
ভেটকি মাছ: সম্বাকৃতির এই মাছের দেহ চ্যান্টা। অীয় দেশের চেয়ে এদের পৃষ্ঠদেশ বেশি উত্তল। এদের মুখের ফাঁক খুব বড় এবং চোয়াল চোখের পিছন পর্যন্ত বিস্তৃত। উত্তর চোয়ালে দাঁত অবস্থিত। এদের চোখ দেহের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট। এদের পৃষ্ঠদেশীয় পাখনা ও গাবু পাখনার তৃতীয় বঁটা অত্যন্ত লম্বা এবং শক্ত।
উদর পাখনা (Pelvic) বক্ষ পাখনার (Pectoral fin) চেয়ে ছোট। লেজ দেখতে অনেকটা গোলাকার। এদের পরিপাক নালী বেশ ছোট এবং স্বভাবে এরা মাংসভাব্জেী (Carnivorous) বা শিকারি। সাগর ও উপকূলীয় জলাশয়ে এদের প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। অনেক সময় মিঠা পানিতেও এদের পাওয়া যায়।
বেলে মাছ: এই মাছের অগ্রভাগ অনেকটা নলাকার এবং পশ্চাঙ্গ কিছুটা চ্যাপ্টা। এদের নিচের চোয়াল অপেক্ষাকৃত লম্বা এবং চোয়াল নিচের দিকে চোখের অগ্রভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। এদের ঠোঁট বেশ গুরু বা মোটা এবং লেজ অনেকটা গোলাকার। এদের উত্তর চোয়ালে দাঁত আছে এবং চোয়ালের সম্মুখভাগে ছেনন দাঁত অবস্থিত। মিঠা ও লোনা পানির সকল জলাশয়ে অর্থাৎ বাংলাদেশের সর্বত্র এই মাছ পাওয়া যায়।
শৌল মাছঃ এই মাছের অগ্রভাগ প্রায় নলাকার তবে পশ্চাদভাগ কিছুটা চ্যাপ্টা। এদের মুখের ফাক (ঈধবজত) অনেক বড় এবং চোয়াল চোখের পিছন পর্যন্ত বিস্তৃত। এদের উত্তর চোয়ালে দাঁত থাকে। শালে মাছের দেজ গোলাকার। এই জাতীয় মাছ মাংসতাজেী এবং এরা বিভিন্ন জীবিত প্রাণী যেমন, মাছ, ব্যাঙ, সাপ, পাপোকা-মাকড়, কেঁচো এবং ব্যাঙাচি খেয়ে জীবনধারণ করে থাকে। এদের পরিপাকনালী অত্যন্ত ছোট। এরা জলাশয়ের কাদার নিচে বাস করে এবং পানি ছাড়া কাদার মধ্যে এরা কয়েক মাস বেঁচে থাকতে পারে।
উপকরণঃ
১. কাকি জাল
২. বালতি
৩. ব্যবচ্ছেদ ট্রে
৪. কাঁচি
৫. কালগৈল
৬. নিড়ল
৭. আলপিন
৮. ফরসেপ
৯. কাচের জার
১০. ফরমালিন
১১. তুলি
১২. ব্যবহারিক খাতা
১৩. পেনসিল প্রভৃতি
কাজের ধাপঃ
১. নিকটস্থ পুকুর বা খামার থেকে বিভিন্ন জাতের রাক্ষুসে মাছ সংগ্রহ কর।
২. নমুনা মাছ সংগ্রহের বিভিন্ন তথ্য যেমন চাষির নাম, খামারের অবস্থান, আয়তন, নমুনা সংগ্রহের তারিখ, প্রতিটি নমুনা মাছের ওজন প্রভৃতি লিপিবদ্ধ কর।
৩. বালতিতে করে সংগৃহীত নমুনা মাছ পরীক্ষাগারে আন।
৪. বিভিন্ন জাতের মাছ আলাদা আলাদা ব্যবচ্ছেদ ট্রেতে রাখ।
৫. ফরসেপ ও নিডলের সাহায্যে বিভিন্ন জাতের মাছের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৬. এবার প্রত্যেক জাতের একটি করে মাছকে আলপিন দিয়ে ব্যবচ্ছেদ ট্রেকে আটকাও।
৭. স্কালপেল ও কাঁচি দিয়ে প্রত্যেক জাতের মাছ ব্যবচ্ছেদ করে পরিপাকনালী পর্যবেক্ষণ কর।
৮. প্রত্যেক জাতের একটি করে নমুনা মাছ কাচের জারে ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষণ কর।
৯. নমুনা মাছ সংগ্রহের তারিখসহ মাছের নাম কাগজে লিখে তা কাচ জারের গায়ে আঠা দিয়ে আটকাও।
১০. প্রত্যেক জাতের মাছের বৈশিষ্ট্যগুলো আলাদা আলাদাভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
১১. অনুশীলন পদ্ধতিটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লেখ।
অনুশীলনী-১১: রোটেননের পরিমাণ নির্ণয় ও প্রয়োগ পদ্ধতি অনুশীলন
প্রাসঙ্গিক তথ্য
ডেরিস নামক এক ধরনের পাহাড়ি গাছের শিকড় থেকে হালকা বাদামি রঙের এই রোটেনন পাউডার উৎপাদন করা হয়। এই পাউডারের বিষক্রিয়ার ফলে মাছ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায় এবং এই বিষক্রিয়ায় মৃত মাছ খাওয়ায় কোনো অসুবিধা হয় না। রোটেনন প্রয়োগে চিংড়ির কোনো ক্ষতি হয় না এবং সূর্যকিরণে এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। চিংড়ি ঘেরে সাধারণত রাক্ষুসে মাছ দমনের জন্য রোটেনন পাউডার ব্যবহার করা হয়।
উপকরণঃ
১. রোটেনন পাউডার
২. দুটি ছোট ড্রাম
৩. বালতি
৪. ছোট মগ
৫. ব্যালেন্স
৬. মাপার ফিতা
৭. মেজারিং পালে
৮. ক্যালকুলেটর
৯. ব্যবহারিক খাতা
১০. পেনসিল
প্রথম পর্যায়ঃ রোটেননের পরিমাণ নির্ণয়
কাজের ধাপঃ
১. ও নিকটস্থ কোনো চিংড়ি খামারে গিয়ে ফিতা ও মেজারিং পােেলর সাহায্যে পুকুরের পানির উপরিভাগের দৈর্ঘ্য গ্রন্থ এবং পানির গভীরতা পরিমাপ কর।
২. এবার দৈর্ঘ্য, প্রস্তু ও পানির গভীরতা গণ করে পরে পানির পরিমাণ বের কর।
৩. প্রতি ঘন মিটার পানিতে ৩ গ্রাম হিসাবে মোট রোটেননের পরিমাণ বের কর।
৪. এবার খাতায় ছক আকারে দৈর্ঘ্য, প্রন্থ, গভীরতা, আয়তন ও মোট রোটেননের পরিমাণ লিপিবদ্ধ কর।
উদাহরণ:
মনে কর পুকুরের পানির উপরিভাগের দৈর্ঘ্য ১০০ মিটার, প্রন্থ ৬০ মিটার এবং পানির গভীরতা ১.৫ মিটার।
পুকুরে মোট পানির পরিমাণ = ১০০ × ৬০ × ১.৫ = ১০০০ ঘনমিটার
মোট রোটেননের পরিমাণ ৩ গ্রাম ৯০০০ = ২৭০০০ গ্রাম
= ২৭ কিলাগ্রোম
পুকুরের দৈর্ঘ্য (মিটার) | পুকুরের প্রস্থ (মিটার) | পানির গভীরতা (মিটার) | আয়তন (ঘনমিটার) | রোটেননের পরিমাণ (কেজি) | মন্তব্য |
১০০ | ৬০ | ১/৫ | ৯০০০ | ২৭ | ১০০০ গ্রাম = কেজি |
৫. অনুশীলনকৃত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
দ্বিতীয় পর্যায়: রোটেনন প্রয়োগ পদ্ধতি
কাজের ধাপঃ
১. মোট নির্ধারিত পরিমাণ পাউডারের ১/৩ ভাগ পাউডার ১ টি ছোট ড্রামে নিয়ে অল্প পানিতে মিশিয়ে ভালোভাবে। নেড়ে মণ্ড তৈরি কর।
২. এবার ম- দিয়ে ছোট ছোট বল বানিয়ে সেগুলো পুকুরের বিভিন্ন অংশে নিক্ষেপ কর।
৩. অবশিষ্ট ২/৩ ভাগ পাউডার অন্য একটি ড্রামে নিয়ে পানি দিয়ে ভালোভাবে দ্রবণ তৈরি কর।
৪. উক্ত দ্রবণের সাথে আরও অধিক পরিমাণ পানি মিশিয়ে তা মগ দিয়ে পুকুরের সমস্ত পানিতে উত্তমরূপে ছিটিয়ে দাও।
৫. অনুশীলনকৃত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিখ।
অনুশীলনী-১২: পুকুরে চুন প্রয়োগের পরিমাণ নির্ণয় এবং প্রয়োগ পদ্ধতি অনুশীলন
প্রাসঙ্গিক তথ্য
পুকুরের উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির জন্য এবং অনেক রোগজীবাণু প্রতিরোধের জন্য চুন ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া পুকুরের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় চুনের গুরুত্ব অপরিসীম। বাজারে বিভিন্ন প্রকার চুন পাওয়া যায়। যেমন,
ক) পাথুরে চুন (Lime stone, CaCO)
খ) কলিচুন (Slaked lime, Ca(OH),)
গ) পোড়া চুন (Quick lime, CaO)
প্রাপ্যতা, মূল্য ও কার্যকারিতা বিবেচনায় পুকুরে সাধারণত পাথুরে চুন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চিংড়ি ঘেরে সচরাচর প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করা যায়।
উপকরণ
১. ব্যালান্স
২. মেজারিং ফিতা
৩. মেজারিং পালে
৪. চুন
৫. বালতি
৬. ছোট ড্রাম
৭. ছোট মগ
৮. ক্যালকুলেটর
৯. ব্যবহারিক খাতা
১০, পেন্সিল
ক) প্রথম পর্যায়: চুন প্রয়োগের পরিমাণ নির্ণয় কাজের ধাপ।
১. নিকটস্থ কোনো পুকুর বা খামারে গিয়ে মেজারিং টেপ ও মেজারিং গােেলর সাহায্যে পুকুরের দৈর্ঘ্য ও গ্রন্থ (মিটার) পরিমাপ কর।
২. এবার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ গুণ করে উক্ত গুণফলকে ৪০ দিয়ে ভাগ করে শতাংশে পুকুরের আয়তন নির্ণয় কর। মনে রাখতে হবে ১ শতাংশ = ৪০ বর্গ মিটার (প্রায়)।
৩. এবার ব্যবহারিক খাতায় ছক আকারে পুকুরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, আয়তন ও চুনের পরিমাণ লিপিবদ্ধ কর। উদাহরণ। মনে কর একটি পুকুরের দৈর্ঘ্য ১০০ মিটার ও গ্রন্থ ৬০ মিটার। পুকুরের আয়তন = ১০০ × ৬০ = ৬,০০০ বর্গ মিটার = ৬,০০০/৪০ = ১৫০ শতাংশ মোট চুনের পরিমাণ = ১,০ কেজি × ১৫০ = ১৫০ কেজি
পুকুরের দৈর্ঘ্য (মিটার) | পুকুরের প্রস্থ (মিটার) | আয়তন (শতাংশ) | চুন (কেজি) | মন্তব্য |
১০০ | ৬০ | ১৫০ | ১৫০ | ৪০ বর্গ মিটার = ১শতাংশ এবং ১০০০ গ্রাম কেজি |
৪. অনুশীলন কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
খ) দ্বিতীয় পর্যায়: পুকুরে চুন প্রয়োগ পদ্ধতি
কাজের ধাপঃ
১. পরিমাপকৃত চুন টিনের ড্রাম বা বালতি বা মাটির চাড়িতে ভিজিয়ে রাখ। প্লাস্টিকের পাত্রে চুন গুলানো উচিত নয়।
২. চুন ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার পর ড্রামে বেশি পানির সাথে মিশিয়ে তরল কর।
৩. এবার চুনের দ্রবণ মগ দিয়ে সমস্ত পুকুরে ভালোভাবে ছিটিয়ে দাও। বায়ু প্রবাহের বিপরীত দিক থেকে চুন ছিটালে চোখে লাগার সম্ভাবনা থাকে এবং সর্বত্র সমানভাবে চুন প্রয়োগ করা যায় না বিধায় বাতাসের। অনুকূলে চুন প্রয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. এবার অনুশীলনকৃত কার্যক্রম ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
অনুশীলনা- ১৩: পুকুরে সার প্রয়োগের পরিমাণ নির্ণয়
প্রাসঙ্গিক তথ্যঃ
চিংড়ির খামারে সাধারণত দুই ধরনের সার ব্যবহার করা হয় যথা- জৈব ও অজৈব সার।
ক) জৈব সার। গোবর, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা।
খ) অজৈব সার। ইউরিয়া, টিএসপি।
পুকুর প্রস্তুতকালীন জৈব ও অজৈব সার আলাদা আলাদাভাবে বা উভয় প্রকারের সার একত্রে মিশ্রিত করে প্রয়োগ করা যায়। চুন প্রয়োগের ৭-১০ দিন পর জৈব ও অজৈব সারের মিশ্রণ নিম্ন হারে পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে।
সার | মাত্রা |
গোবর | ৫ কেজি/ শতাংশ |
ইউরিয়া | ১০০ গ্রাম / শতাংশ |
টিএসপি | ৫০ গ্রাম / শতাংশ। |
উপকরণঃ
১. ইউরিয়া সার
২. টিএসপি সার
৩. বালতি
৪. হাফ ড্রাম
৫. ছোট মগ
৬. মেজারিং টেপ
৭. মেজারিং পালে
৮. ব্যালান্স
৯. ব্যবহারিক খাতা
১০. পেনসিল
ক) সার প্রয়োগের পরিমাণ নির্ণয় কাজের ধাপ
১. নিকটস্থ কোনো খামার বা পুকুরে গিয়ে মেজারিং টেপ ও মেজারিং পােেলর সাহায্যে পুকুরের দৈর্ঘ্য ও গ্রন্থ (মিটারে) পরিমাপ কর।
২. এবার পরিমাপকৃত দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ গুণ করে উক্ত গুণফলকে ৪০ দিয়ে ভাগ করে শতাংশে পুকুরের আয়তন নির্ণয় কর ১ শতাংশ = ৪০ বর্গমিটার (প্রায়)।
৩. শতাংশ প্রতি ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০ গ্রাম টিএসপি ও ৫ কেজি গোবর সার হিসেবে মোট ইউরিয়া,
টিএসপি ও গোবর সারের পরিমাণ নির্ণয় কর।
উদাহরণ: মনে কর পুকুরের দৈর্ঘ্য ১০০ মিটার ও গ্রন্থ ৬০ মিটার।
পুকুরের আয়তন
= ১০০ x ৬০ = ৬,০০০ মিটার
= ৬,০০০ বর্গ মিটার/৪০
= ১৫০ শতাংশ
১. মোট ইউরিয়া সারের পরিমাণ
= ১৫০০০ গ্রাম।
= ১৫ কেজি
২. মোট টিএসপি সারের পরিমাণ
= ১০০ গ্রাম × ১৫০
= ৫০ গ্রাম × ১৫০
= ৭৫০০ গ্রাম
= ৭.৫ কেজি
৩. মোট গোবর সারের পরিমাণ = ৫ কেজি × ১৫০
= ৭৫০ কেজি
৪. অনুশীলন কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
খ) পুকুরে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
কাজের ধাপঃ
১. পুকুরে সার প্রয়োগের ১ দিন আগে টিএসপি সার বালতি বা হাফ ড্রামে ভিজিয়ে রাখ।
২. সার ব্যবহারের দিন ইউরিয়া ও গোবর সার আলাদা আলাদা ড্রাম বা বালতিতে গুল।
৩. এবার ইউরিয়া, টিএসপি ও গোবর সার একত্রে একটি বড় ড্রামে বেশি পানির সাথে মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি কর।
৪. সারের দ্রবণ বালতিতে নিয়ে পুকুরের উপরিভাগে ছোট মণের সাহায্যে সর্বত্র উত্তমরূপে ছিটিয়ে দাও।
৫. অনুশীলন কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
সাবধানতাঃ
১. টিএসপি সার সহজে পানিতে গুলে না। তাই ব্যবহারের আগের দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
২. চুন প্রয়োগের ৭-১০ দিন পর সারের মিশ্রণ পুকুরে প্রয়োগ করতে হবে।
অনুশীলনী-১৪: পুকুরের পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্য পর্যবেক্ষণ অনুশীলন
প্রাসঙ্গিক তথ্যঃ
চিংড়ি ঘেরে পানিতে বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানের উপস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে যে সব খাদ্য তৈরি হয় তাকে প্রাকৃতিক খাদ্য বলে। প্রাকৃতিক খাদ্যের ওপর নির্ভর করে আমাদের দেশে উন্নত সম্প্রসারিত চাষ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করা হয়। প্রাকৃতিক খাদ্য দুই ধরনের যথা- ১. উদ্ভিদ প্ল্যাংকটন (Phytoplankton) ও প্রাণী প্ল্যাংকটন (Zooplankton)।
উপকরণঃ
১. ছিপিসহ কাচের বোতল
২. প্ল্যাংকটন নেট
৩. ফানেল
৪. ড্রপার
৫. জেট বোতল
৬. পরিশ্রত পানি
৭. মাইক্রোস্কোপ
৮. স্লাইড কভারসহ গ্লাস
৯. ব্যবহারিক খাতা
১০. পেনসিল ইত্যাদি
কাজের ধাপঃ
১. নিকটস্থ কোনো চিংড়ি খামারে গমন কর।
২. খামারের কোনো পুকুর থেকে ১০ লিটার পরিমাণ পানি প্ল্যাংকটন নেট দিয়ে হেঁকে সংগৃহীত প্ল্যাংকটন জেট বোতল ও ফানেলের সাহায্যে বাতেলে নিয়ে পানিসহ বোতল পরীক্ষাগারে নিয়ে আস।
৩. বোডলটি সামান্য একটু বেঁকে নিয়ে জলার নিয়ে বোকল থেকে পানি নিয়ে প্লাস প্লাইভের উপর এক ফোটা সমুলা পাসি রাখ এবং স্নাইফ কার নিয়ে পানি ঢেকে দাও।
৪. এবার মাইয়োস্কোপের সাহায্যে প্রাণী ও উদ্ভিল পাবেই কালোভাষে পর্যবেক্ষণ নয়।
৫. নিচে অফিক বাস্ট ও উত্তিন প্ল্যাংকটন চিত্রের সাথে মিলিয়ে দেখে প্রাণী ও উঙিন প্লাংকটন শনাক্ত কর।
৬. এবার পর্যবেক্ষণকৃত প্রাণী প্ল্যাংকটন ও উদ্ভিদ পানেন্টদের ছবিগুলো পেনসিল দিয়ে ব্যবস্থারিক শাকার আঁকি।
৭. অনুশীলনকৃষ্ণ কার্যক্রম ঋরাবাহিকঙ্গদে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
অনুশীলনী-১৫: সেকি জিক্ষ তৈরি ও পানির স্বচ্ছতা পরীক্ষাকরণ
প্রাসঙ্গিক তথ্যঃ
খামারের পামিতে প্রাকৃতিক খাদ্য অর্থাৎ পাংকটদের পরিমাণের ওপর চিংড়ির উৎপাদন নির্জয়লীল। সাঞ্চায়নয় পানির স্বচ্ছতা পরিমাপ করে পুকুত্রের পানিতে প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। গাসির স্বাচ্ছকা ২৫-৪০ সেমি মধ্যে থাকলে বুঝতে হবে পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃক্ষিক গাল্য অর্থাৎ প্ল্যাংকটন বিদ্যমান আছে। সাধারণত সেকি দিক দিয়ে পানির স্বচ্ছতা পরীক্ষা করা হয়।
সেকি ভিক হচ্ছে নাছো বা ভারী টিনেয় তৈইি একটা গোলাকার চালজি বিশেষ। এই গোলাকার চাকতির উপরিভাগ চার্জট সমান অংশে জ্ঞাগ করে পর্যায়ক্রমিকজাবে সাদা ও ফালো রং লাগিয়ে চিহ্নিত করা হয়। এই চাকক্রিয় কেলে মুকা বা একটা শক্ত কাঠের পাঠি স্থাপন করে এই সুকা বা লাঠি সেন্টিমিটারে সাখাফিক করা হয়। কবে ২৫ সেমি ও ৪০ সেমি এ অত্যন্ত স্পরড়বে সাগড়িত করা হয়।
উপকরণঃ
১. একটি গোলাকার চাকতি
২. মোটা সুতা
৩. সাদা ও কালো রং
৪. তুলি
৫. বেল
৬. অমুহনীয় মার্কিং পেন
৭ ব্যবহারিক বাঙা
৮. পেনসিল
ক) এখন পর্যায়। সেকি ডিষ্ক তৈরির পদ্ধতি।
কাজের ধাপঃ
১. লাহোর বা ভারী টিনের একটি গোলাকার চাকতি সংগ্রহ কর।
২. সকভিটির উপরিভাগকে স্কেল দিয়ে দেপে সমান চারভাগে বিভক্ত কর।
৩. এবার গোলাকার চাকতির উপরিপৃষ্ঠের চারটি অংশকে তুলির সাহায্যে সদা ও কালো রং দিয়ে চিহ্নিত কর।
৪. সকভিটির কেন্দ্র বিন্দুতে একটি ছোট ছিদ্র কর।
৫. কেন্দ্রের এই ছিদ্র দিয়ে একটি মোটা সুভা ঝুলিয়ে দাও।
৬. এবার স্কেল দিয়ে সুতাটিকে সেন্টিমিটারে অমুছনীয় কালি দিয়ে সাগান্ধিত কর।
৭. সুতাটির ২৫ সেমি ও ৪০ সেছি এ বিশেষভাবে অমুজনীয় কালি দিয়ে চিহ্নিত কর।
৮. অনুশীলনকৃত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
খ) দ্বিতীয় পর্যায়: সেল্কি ডিস্কের ব্যবহার পদ্ধতি
কাজের ধাপঃ
১. নিকটস্থ কোনো পুকুর বা খামারে গমন কর।
২. এবার সাবধানে পুকুর পাড় থেকে বা পানিতে নেমে সেক ডিওটি আস্তে আস্তে পানিতে ছেড়ে দাও।
৩. সেকি ডিস্কটি পানিয়ে ছেড়ে দেয়ার সময় গোলাকার চাককিটির ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখ।
৪. গোলাকার চাকভিটি পানিতে উঠানামার সময় যখন চাকরির সাদা-কালো রং অস্পষ্টভাবে দেখা যাবে। তখন পানির উপরিতল থেকে সুতার পরিমাপ গ্রহণ কর। পানির উপরিতল থেকে সুভার যে পরিমাণ পাওয়া যাবে সেটাই সেকি ডিক রিডিং। এই সেকি ডিস্ক রিডিং পানির স্বচ্ছতা নির্দেশ করে।
৫. এবার সেকি ডিক রিডিং খায়ায় লিপিবদ্ধ কর।
৬. অনুশীলনকৃত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
অনুশীলনী- ১৬: প্রাকৃতিক উৎস থেকে গলদা পোনা সংগ্রহ ও শনাক্তকরণ
প্রাসঙ্গিক তথ্য
১. গলদা চিংড়ি যদিও মিঠা পানির চিংড়ি তবে ডিম ছাড়ার জন্য উপকূলীয় অঞ্চলের আধা লবণাক্ত পানির জলাশয়ে এবা জীবনের কিছু সময় অতিবাহিত করে থাকে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাসমূহে অর্থাৎ সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূলীয় নদীসমূহে গলদায় পোনা পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়।
সাধারণত ডিসেম্বর থেকে জুলাই মাদ পর্যন্ত উপকূলীয় নদীসমূহে গলদার পানা পাওয়া যায়। সাধারণত খুবই ঘন ছিদ্রযুক্ত জাল বা মশারী জাল দিয়ে উপকূলীয় নদী থেকে গলদার পোনা সংগ্রহ করা হয়।
২. গলদা চিংড়ির পোনার (১৮-৯০ মিমি) ক্যারাপেসে বা শিরোবক্ষের খোলসে লম্বালম্বি কয়েকটি রেখা দেখা যায়। ছোট পোনার ক্ষেত্রে ১ টি এবং অপেক্ষাকৃত বড় পোনার ক্ষেত্রে ৭-৮ টি লম্বালম্বি রেখা দেখা যায়। এছাড়া গলদা পোনার উদর খন্ডকের সংযোগস্থলে নীল বর্ণের ডোরাকাটা দাগ দেখা যায় যা জীবনের অবশিষ্ট সময়েও অবিকৃত থাকে।
রোস্ট্রামের উপরে ও নিচে দাঁত থাকে এবং এই অবস্থায় স্বেচ্ছায় সাঁতার কাটতে পারে। পিএল অবস্থায় এদের গায়ের রং সাধারণত স্বচ্ছ দেখায় এবং মাথায় হালকা বাদামি রঙের রঞ্জন কণা দেখা যায়।
উপকরণঃ
১. টিনের থালা
২. ঝিনুক
৩. সিলভারের পাতিল
৪. গলদার পোনা
৫. মেজারিং ক্লাক
৬. আতশ কাচ
৭. ড্রপার
৮. পরিশ্রুত পানি
৯. ফরসেপ
১০. গ্লাস স্নাইড
১১. ট্রে
১২. ব্যবহারিক খাতা
১৩. পেনসিল ইত্যাদি
কাজের ধাপঃ
১. উপকূলীয় অঞ্চলের কোনো নদীর তীরবর্তী পোনা বিক্রয় কেন্দ্রে গমন কর।
২. পোনা বিক্রয় কেন্দ্রের কোনো পোনা ব্যবসায়ীর নিকট থেকে সুস্থ ও সবল পোনা সংগ্রহ কর।
৩. টিনের থালায় পানিসহ কিছু পোনা নিয়ে সেগুলো সুস্থ ও সবল কিনা তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৪. এবার বিক্রয় কেন্দ্র থেকে সংগৃহীত পোনাগুলো পানিভর্তি মেজারিং ফ্লাকে করে পরীক্ষাগারে নিয়ে আস।
৫. পরীক্ষাগারে এসে মেজারিং ক্লাক থেকে কিছু পোনা পানিসহ টিনের থালায় রাখ।
৬. ড্রপারের সাহায্যে ১টি পোনা পানিসহ ট্রেতে রক্ষিত গ্লাস স্নাইডের উপরিতলে রাখ এবং গ্লাস আইডের উপর এক ফোঁটা পরিশ্রুত পানি দাও।
৭. এবার আতশ কাচ দিয়ে পোনাটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৮. পোনার শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
৯. পেনসিল দিয়ে পানার চিত্র ব্যবহারিক খাতায় অঙ্কন কর।
১০. অনুশীলনকৃত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
অনুশীলনী-১৭: গলদা খামারের বাঁধ ও খাল নির্মাণ কৌশল পর্যবেক্ষণ প্রাসঙ্গিক তথ্য
বাঁধ: পুকুরের পানিধারণ ও বন্যা বা জোয়ারের পানি প্রবেশ বন্ধ করাই বাঁধ নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য। যে এলাকায় পুকুর নির্মাণ করা হবে সেই এলাকার ৫-১৫ বছরের সর্বোচ্চ জোয়ারের উচ্চতা জেনে বাঁধের উচ্চতা নির্ধারণ করা উচিত। বাঁধের মাটি ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে বাঁধের উচ্চতা কমে যায় বলে বাঁধ নির্মাণের সময় তা প্রয়োজনের চেয়ে ০.৬-০.৭ মিটার অতিরিক্ত উঁচু করা দরকার। বাঁধের ঢাল ভেতরের দিকে ১:১ এবং বাইরের দিকে ১ ও ২ অনুপাতে রাখা যায়।
যে সব গলদা পুকুর পানি সরবরাহের উৎসের নিকটবর্তী নয়, সে সমস্ত পুকুরে পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের জন্য পৃথক নালা নির্মাণ করা উচিত। পুকুরের পানি সম্পূর্ণ নিষ্কাশনের জন্য খালের তলদেশ পুকুরের তলদেশ থেকে কিছুটা নিচু থাকা প্রয়োজন।
উপকরণঃ
১. মেজারিং পালে
২. মেজারিং টেপ
৩. ব্যবহারিক খাতা।
৪. পেন্সিল ইত্যাদি
কাজের ধাপঃ
১. নিকটস্থ কোনো গলদা খামারে গমন কর।
২. নির্মাণাধীন পুকুরের বাঁধ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৩. মেজারিং পালে ও মেজারিং টেপ দিয়ে বাঁধের বাইরের ও ভেতরের দিকের ঢাল পরিমাপ কর এবং এই ঢালের অনুপাত খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
৪. বাঁধের উচ্চতা, চূড়া ইত্যাদি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে এগুলো পরিমাপ কর।
৫. বাঁধের মাটি যথাযথভাবে নিবিড়করণ (Compaction) করা হয়েছে কিনা তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৬. বাঁধ বষ্টির পানিতে যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ঘাসের চাপড়া লাগানো হয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ কর
৭. এবার সরবরাহ খালের তলদেশের উচ্চতা পুকুরের চেয়ে কিছুটা উঁচু এবং নিষ্কাশন খালের তলদেশের। উচ্চতা পুকুরের তলদেশের চেয়ে কিছুটা নিচু কিনা তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ কর।
৮. খালের তলদেশের প্রশস্ততা ও খালের গভীরতা মেজারিং পালে ও মেজারিং টেপ দিয়ে পরিমাপ কর।
৯. সরবরাহ ও নিষ্কাশন খাল দিয়ে পুকুরের প্রয়োজনমত যথাসময়ে সরবরাহ ও নিষ্কাশন করা সম্ভব কিনা তা পর্যবেক্ষণ কর।
১০. অনুশীলনকৃত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারিক খাতায় লিপিবদ্ধ কর।
আরও দেখুনঃ