Site icon Fisheries Gurukul [ মৎস্য গুরুকুল ] GOLN

মনোসেক্স তেলাপিয়ার প্রজননের গুরুত্ব

মনোসেক্স তেলাপিয়ার প্রজননের গুরুত্ব

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়-মনোসেক্স তেলাপিয়ার প্রজননের গুরুত্ব।

মনোসেক্স তেলাপিয়ার প্রজননের গুরুত্ব

আমরা জানি তেলাপিয়া মাছ ঘন ঘন বাচ্চা দেয় তাই তাদের Prolific Breeder বলা হয়। অর্থাৎ এরা বছরে একাধিকবার প্রজননে সক্ষম এমনকি একটি পূর্ণ বয়স্ক তেলাপিয়া বছরে তিন বারেরও অধিক প্রজনন করে থাকে ফলে চাষকৃত পুকুরে এদের সংখ্যাধিক্য ঘটতে থাকে। নিজেদের মধ্যে খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার কারণে এদের বৃদ্ধি ৰাধা প্রাপ্ত হয়, ফলে উৎপাদন হ্রাস পায়।

আবার বাচ্চা দেওয়ার কারণে বাচ্চার জন্মদান থেকে শুরু করে বাচ্চাকে লালন পালনে স্ত্রী তেলাপিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এমনকি যতদিন পর্যন্ত বাচ্চগুলো বাইরের পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে না পারবে (কমপক্ষে ১২ দিন) ৩৩ দিন পর্যন্ত মা তেলাপিয়া তার বাচ্চাগুলোকে মুখের ভিতর আগলে রাখে।

এই সময় সে বাহির থেকে কোনো প্রকার খাদ্য গ্রহণ করে না। এই সমস্ত কারণে স্ত্রী তেলাপিয়ার বৃদ্ধির হার পুরুষ তেলাপিয়ার চেয়ে অনেক কম। অর্থাৎ স্ত্রী তেলাপিয়ার চেয়ে পুরুষ তেলাপিয়া অনেক দ্রুত বাড়ে । তাই চাষের ক্ষেত্রে এই অনাকাঙ্ক্ষিত প্রজনন ঠেকানোর জন্য স্ত্রী এবং পুরুষ তেলাপিয়া একসঙ্গে চাষ না করে শুধুমাত্র মনোসেক্স পুরুষ তেলাপিয়া চাষ করা যেতে পারে।

আবার তেলাপিয়ার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অধিক প্রজনন সবচেয়ে বড় সমস্যা বিধায় তেলাপিয়া যেন স্বাভাবিক ভাবে প্রজনন করতে না পারে সেজন্য এদেরকে ট্রিপ্লয়েড তেলাপিয়ার রূপান্তরিত করা যেতে পারে। ট্রিপ্লয়েড মাছ বন্ধ্যা হওয়ার কারণে জনন কোষের বিভাষণ তথা প্রজনন-সংশ্লিষ্ট শারীরবৃত্তীয় কাজে তাদের শক্তি ব্যয় করতে হয় না।

ফলে গৃহীত খাদ্যের ব্যয়িত অংশ বাদে পুরোটাই মাংসপেশিতে রূপান্তরিত হতে পারে। ফলে স্বাভাবিক তেলাপিয়ার চেয়ে বন্ধ্যা তেলাপিয়া উৎপাদন অনেক বেড়ে যায়। তাই কোনো কোনো মৎস্যচাষি সাধারণ তেলাপিয়া চাষ না করে একলিঙ্গ পুরুষ (Monoscx Male) তেলাপিয়া চাষ করলে একই সময়ে একই ব্যবস্থাপনায় অনেক বেশি উৎপাদন পেতে পারেন ।

তেলাপিয়া গোনার লিঙ্গ শনাক্তকরণ কৌশল

সাধারণত প্রতিটি মাছের ওজন যখন ৩৪-৪০ গ্রাম এবং দৈর্ঘ্য ৭-৯ সেন্টিমিটার হবে তখন অত্যন্ত স্পষ্টভাবে এদের পুরুষ এবং স্ত্রী মাছের পার্থক্য করা যায়। কারণ এ সময় এদের জননঅঙ্গ বা জেপিটাল প্যাপিরাল পার্থক্য স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। ঠিক তখনই তাদের এ পার্থক্যকরণের কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। তবে  সেক্সিং-এর ক্ষেত্রে এ পৃথককরণ যত কম বয়সে করা যাবে এ পদ্ধতিতে চাষের সফলতা ততই বৃদ্ধি পাবে । স্ত্রী এবং পুরুষ তেলাপিয়ার পার্থক্য নিম্নে দেওয়া হলো

 

 

কিন্তু পোনার ওজন ২ গ্রামের কম হলে জননেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ করে লিঙ্গ শনাক্ত করা যায় না, তবে এসিটোকারমিন স্কোয়াস পদ্ধতিতে লিঙ্গ শণাক্তকরণ করা সম্ভব। তেলাপিয়া পোনার লিঙ্গ শণাক্তকরণের প্রণালি নিচে দেখানো হলো

১। কিছু পোনার নমুনাকে ধারালো কাচির সাহায্যে বিচ্ছেদ করা হয় ।

২। উদয় গহ্বরের উপরের দিকে অবস্থিত সুতার ন্যায় গোনাড ফরসেফ দিয়ে বের করা হলো ।

৩। সংগৃহীত গোনাড গ্লাস স্লাইডে স্থাপন করে ১ ফোঁটা এসিটোকারমিন দ্রবণ দিয়ে হবে। তারপর কভার

স্লাইপ দিয়ে ঢেকে গোনাডকে চাপ দিয়ে হয় ।

৪ । এরপরে গোনাডকে মাইক্রোস্কোপে পর্যবেক্ষণ করতে হয়।

৫ । পুরুষ গোনাড দেখতে সূক্ষ্ম দানার ন্যায় এবং স্ত্রী গোনাড দেখতে জালের মতো। এসিটোকারমিন দ্রবণ তৈরির পদ্ধতি নিম্নে দেওয়া

হলো :

১। কারমিন :০.৫ গ্রাম

২। ৪৫% এসিটিক এসিড :১০০ মি. লি.

৩। ২-৪ মিনিট ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে ফিল্টার করতে হবে

তেলাপিয়ার মনোসেক্স জাতের পোনা উৎপাদনে হ্যাচারির নকশা প্রণয়ন ও পরিচালনা : বাণিজ্যিকভাবে তেলাপিয়ার মনোসেক্স পোনা উৎপাদন হ্যাচারি নির্মাণ কাজ শুরু করার পূর্বে স্থান নির্বাচনে নিম্নের বিষয়গুলো ভালোভাবে বিবেচনা করা দরকার।

১। হ্যাচারির স্থান বন্যামুক্ত এবং বাণিজ্যিক তেলাপিয়ার খামারের নিকটে হলে ভালো হয় ।

২। পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে (ভূ-গর্ভস্থ অথবা উপরিভাগের পানির উৎস হতে পারে) ।

৩। পুকুর নির্মাণে ভালো মাটি অর্থাৎ বেলে-দোঁআশ মাটি হতে হবে ।

৪ । স্থায়ী বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থাকতে হবে ।

৫। পোনা বিক্রির জন্য ভালো বাজার বা বিপণনের ব্যবস্থা থাকতে হবে ।

 

 

তেলাপিয়া হ্যাচারি কমপ্লেক্সের নকশা এবং নির্মাণ :

ডিম ফুটানো, হ্যাচিং এবং লার্ভিং নার্সিং ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তেলাপিয়া হ্যাচারির প্রধান ও কার্যকর উৎপাদনগুলো নিম্নরূপ :
১। হ্যাচারির ছাউনি (Hatchery Shed) লোহার অ্যাঙ্গেল (Iron Angles) দিয়ে তৈরি যা সিআই সিট
(CI Sheets) দিয়ে আবৃত

২। সিমেন্টের মেঝে ।

৩। ডিম ফুটানোর জন্য জার (Jars) এবং হাতলসহ ট্রে (Trays)।

৪ । পুনঃসঞ্চালন পানির প্রবাহ ।

৫। পানি সরবরাহের (অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী) ।

৬। পানির পাম্প (SubmersiYule water pump ) |

৭। ১০০০০-২০০০০ লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন ওভারহেড পানির ট্যাংক ।

৮ । খাবার প্রস্তুত এবং সংরক্ষণ রুম ।

৯। স্বল্পস্থায়ী নার্সিং ট্যাংক।

১০ । হরমোন ট্রিটমেন্টের জন্য নার্সারি পুকুর ।

১১। হ্যাচারিতে বায়ুবায়নের ব্যবস্থা ।

(খ) হ্যাচারিতে তেলাপিয়ার ডিম ফুটানো পদ্ধতির মডেল :

হ্যাচারির প্রয়োজনীয় উপাদনসমূহের তালিকা নিম্নে প্রদত্ত হলো :

(ক) হেডার ট্যাংক :

জার এবং ট্রেতে প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য মজুদ রাখা হয় ।

(খ) ইনকোবেশন জার :

নিষিক্ত ডিম হ্যাচিং-এর জন্য ইনকোবেশন জারে রাখা হয় ।

(গ) নার্সিং ট্রে

সদ্য ফোটা লার্ভিকে নার্সিং-এর জন্য এই ট্রেতে রাখা হয় ।

(ঘ) ফিল্টার চেম্বার :

ইনকোরেশন জার এবং ট্রেতে ব্যবহৃত পানি এই চেম্বারের মাধ্যমে ফিল্টার করা হয় ।

(ঙ) বায়োবল চেম্বার :

ফিল্টার করা পানি বায়োবল চেম্বারের মাধ্যমে বিশুদ্ধ হয়ে প্রবাহিত হয় ।

(চ) ওয়েস্টার সেল :

চেম্বারে বিশুদ্ধ পানি মজুদ থাকে এবং তা সাব-মারসিবল পাম্পের মাধ্যমে ওভার হেড ট্যাংকে স্থানান্তরিত হয় ।

 

গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

(গ) হ্যাচারি ছাউনি : (Hatchery Shed ) এবং সিমেন্টের মেঝে নির্মাণ মাঝারি আকারে তেলাপিয়া হ্যাচারির নির্মাণের জন্য নিম্নের

উপাদানগুলো গুরুত্বপূর্ণ :

১। হ্যাচারির ছাউনির (Hatchery Shed) গঠন : ৮৬২৫ বর্গমিটার (
২। সিমেন্টের মেঝে : ৭৭ বর্গমিটার (১১ মি × ৭ মি.)
৩ । বিম ও কলাম
৪ । এম এস এঙ্গেল ট্রাস
৫। সি আই সিটের ছাদ
৬ । ইনকোবেশন জার এবং ট্রে স্থাপন :
প্লাস্টিক কন্টেনারের সাথে প্রয়োজনীয় সংখ্যক হ্যাচিং জার এবং ট্রেগুলো হ্যাচারির ভিতরে সঠিকভাবে স্থাপন
করতে হবে।

১। লিটার ক্ষমতা সম্পন্ন জার ৩০টি ।
২। ট্রের সংখ্যা ৬০টি (প্রতিটি ২৮ সে. মি. x ৪৩ সে. মি. x ১০সে.)
৩। ট্রে স্থাপনের জন্য প্লাস্টিক কন্টেনারের সংখ্যা : ৩০ টি প্রতিটি ৩০ সে.মি. × ১২০ সে.মি ২০ সে.মি) ৪। ইস্পাত অথবা লৌহ অথবা কাঠের স্ট্যান্ড ১৫ টি।
(৩) প্রজনন পুকুর নির্মাণ

প্রজনন পুকুরের জন্য ০.৪ হেক্টরের কমপক্ষে ১.৫-২.০ মিটার গভীরতায় কমপক্ষে ৩টি পুকুর পরিকল্পনা মাফিক তৈরি করতে হবে। পানি সরবরাহ এবং নির্গমনের জন্য ২টি মন্ধ বা পার্শ্বপথসহ পুকুরগুলো
আয়তকার হতে হবে।

(চ) প্রজনন হাপা তৈরি ও স্থাপন

প্রজনন হাপা তৈরির জন্য গ্লাস নাইলন অথবা লাইলন জালের কাপড় স্থানীয় বাজার থেকে জয় করে দর্জির সাহায্যে আয়তাকার (২০ মি × ৫ মি. x ১.৫ মি.) আকারের হাপা তৈরি করা প্রয়োজন। নিম্নে পদ্ধতি অনুসারে প্রতিটি প্রজনন পুকুরে ৮১০ টি হাপা স্থাপন করা হয়ে থাকে।

(১) খুব সতর্কতার সাথে হাপা স্থাপন করতে হবে যাতে হাপাতে কোনো ছিদ্র না থাকে ।

(২) বাঁশের অথবা কাঠের অথবা লোহার খুঁটির মাধ্যমে হাপা স্থাপন করতে হবে।

(৩) হাপাতে পানি সঞ্চালনের জন্য ০.৫-১.০ মিটার গভীরতার স্থাপন করা হয়। হাপার উপরের অংশ পানির তার থেকে ৫০-৬০ সে. মি. উপরে রাখা হয়।

(৪) হাপা খুব ভালোভাবে বাঁধতে হবে যাতে ছাপা বাতাসের চাপে ভাজা হওয়ার আশা না থাকে।

ছ) প্রজননক্ষম মাছ বাছাই এবং প্রজনন হাপাতে মজুদকরণ :

হাপা আকারের উপর প্রজননক্ষম মাছের মজুদ ঘনত্ব নির্ভরশীল। হাপায় উন্নত জাতের প্রজননক্ষম ১০০- ১৫০ গ্রাম ওজনের তেলাপিয়া প্রতি বর্গমিটারে ৪-৬টি মজুদ করতে হবে। জানা উৎস থেকে সংগৃহীত অথবা ইতিপূর্বে ব্রুড পুকুরে লালন-পালন করা হয়েছে এমন স্টক থেকে পুরুষ ও স্ত্রী মাছ ১৪৩ (১টি পুরুষ ও ৩ টি স্ত্রী) অনুপাতে হাপায় মজুদ করা হয় ।

 

 

জ) মাছের মুখ থেকে নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ

গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের পুকুরে পরিপক্ক স্ত্রী মাছ সাধারণত ২-৩ সপ্তাহে অন্তর ডিম দিয়ে থাকে। পর্যায়ক্রমে পুরুষ মাছ ডিমগুলোকে নিষিক্ত করে এবং প্রাকৃতিকভাবে স্ত্রী মাছ মুখে নিষিক্ত ডিম ধারণ করে । সুতরাং ডিম সংগ্রহের জন্য প্রত্যেক হাপাতে মজুদকৃত স্ত্রী মাছের মুখ সপ্তাহে ১ বা ২ বার অত্যধিক সতর্কতার সাথে
পরীক্ষা করে দেখতে হবে । ডিম সংগ্রহের পদ্ধতি নিম্নে বর্ণনা :

(১) প্রজননক্ষম স্ত্রী মাছ হাপার এক জায়গায় জমা করে ভালোভাবে পরীক্ষা করতে হবে ।

(২) নিষিক্ত ডিম অথবা লার্ভি হাপা থেকে সংগ্রহ করার জন্য অত্যন্ত ২-৩ জন লোক দরকার হয় ।

(৩) নিষিক্ত ডিম অথবা লার্ভি মুখে আছে কিনা তা দেখার জন্য প্রত্যেক প্রজননক্ষম স্ত্রী মাছ স্কপ নেটের

সাহায্যে সংগ্রহ করে ভালোভাবে পরীক্ষা করতে হবে ।

(৪) নিষিক্ত ডিম স্ত্রী মাছের মুখ থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং রঙের ভিন্নতা অনুসারে আলাদা করে রাখা

হয় । সাধারণত চার রঙের ডিমের মাছের মুখ থেকে সংগ্রহ করে প্লাস্টিক গামলায় রাখা হয় । (সাদাটে, হালকা, হলুদ, গাড় হলুদ এবং লালচে) প্লাস্টিক পামলাগুলো ইস্পাত লোহা অথবা বাঁশের ফ্রেমের উপর
ভাসিয়ে রাখা হয় ।

(৫) সংগৃহীত ডিমগুলো জীবাণুমুক্ত করতে ৫-৭ পিপিটি লবণে দ্রবণে (Saline Water) রেখে ৮-১০ মিনিট কক্ষ তাপমাত্রায় রাখা হয় ।

(৬) এই অবস্থায় সংগৃহীত নিষিক্ত ডিম/লার্ভি হ্যাচিং-এর জন্য হ্যাচারিতে স্থানান্তর করা হয় ।

 

ঝ) জার/ট্রেতে সংগৃহীত ডিম অথবা লার্ভি ফুটানো :

নিষিক্ত ডিম/লার্ভি স্ত্রী মাছের মুখ থেকে সংগ্রহ করে গোলাকার প্লাস্টিক জার এবং সমতল ট্রেতে রেখে পানির পুনঃসঞ্চালন পদ্ধতিতে ফুটানো হয়ে থাকে যেখানে স্বচ্ছ পানি (তাপমাত্রা ২৮° সেলসিয়াস) ওভারহেড ট্যাংক থেকে সরাসরি সঞ্চালিত হয়। ডিম ফুটার পর পূর্ণাঙ্গ লার্ভি ট্রেতে স্থানান্তর করা হয়। যতক্ষণ না পর্যন্ত লার্ভিং ডিম্বথলি নিঃশোষিত হয়, ততক্ষণ এই ট্রেতেই ক্ষুদে পোনাগুলো মজুদ থাকে । নিষিক্ত ডিম হতে ভ্রূণ এবং লার্ভার অবস্থা শেষ হতে গড়ে প্রায় ১৫-১২ দিন সময় লাগে ।

 

 

ঞ) এন্ড্রোজেন হরমোন মিশ্রিত খাবার প্রস্তুত মজুদ এবং প্রয়োগ :

তেলাপিয়া নাইলোটিকার মনোসেক্স পোনা উৎপাদনের জন্য হরমোন মিশ্রিত খাবার প্রস্তুত ও প্রয়োগ পদ্ধতি নিম্নে বর্ণনা করা হলো :

হরমোন মিশ্রিত খাবার তৈরি ।

১. হরমোন মাত্রা ৫০ মিলিগ্রাম ১৭-৫ মিথাইল টেসটোসটেরণ (17-a Methyl testosteron ) ১০০ মি. লি ইথাইল অ্যালকোহালের (৯৫%) সাথে দ্রবীভূত করা হয়।

২. হরমোন দ্রবণ এক কেজি পাউডার খাবারের (৫০% সাধারণত খাবার +৫০% ফিশমিল) সাথে ১০-১৫ মিনিট সময় ধরে মিশাতে হবে।

৩. তৈরিকৃত খাবার পরে সাধারণত তাপমাত্রা শুকানো হয় ।

৪. হরমোন মিশ্রিত শুল্ক খাবার কক্ষ তাপমাত্রার অথবা ৪° সে. তাপমাত্রায় রেফ্রিজারেটরে সর্বোচ্চ ৭ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে ।

মজুদ প্রবণ ব্যবহার করে হরমোন মিশ্রিত খাবার তৈরি মজুদ দ্রবণ তৈরি করে ১০০ কেজি খাবার তৈরির জন্য কয়েক সপ্তাহ পর্যায়ক্রমে ব্যবহার করা হয় ।

১। গ্রাম ১৭-০০-মিথাইল টেসটোসটেরণ, ১ লিটার ইথানলের (৯৫%) সাথে দ্রবীভূত করে মজুদ দ্রবণ তৈরি
করা হয়।

২। ১ কেজি মিহি খাবার একটা শুষ্ক পাত্রে রাখা হয়।

৩ । পরে ১০ মি. লি মজুদ দ্রবণ পুনরায় ১০০ মি. লি ইথানলের সাথে মিশিয়ে খাবার তৈরি করা হয় ।

৪ । এই দ্রবণটি ধীরে ধীরে খাবারের সাথে সংমিশ্রণ করে হরমোন মিশ্রিত খাবার তৈরি করা যায়।

৫। প্রস্তুতকৃত খাবার ১০-১৫ মিনিট ধরে সাধারণত ভাপমাত্রায় শুকিয়ে সরাসরি তেলাপিয়া মনোসেক্স পোনা উৎপাদন কার্যক্রম ব্যবহার করা হয় ।

বাণিজ্যিকভাবে হরমোন এবং খাবার মিশ্রণের জন্য স্বয়ংক্রিয় মেশিন ও ব্যবহার করা যায়। ক্ষণস্থায়ী ট্যাংকে প্রথমে খাবার গ্রহণযোগ্য পোনাকে হরমোন মিশ্রিত খাবার প্রয়োগ : ক্ষণস্থায়ী ট্যাংকে প্রথম খাবার গ্রহণযোগ্য পোনাকে হরমোন মিশ্রিত খাবার প্রয়োগের দৃশ্য এবং নিম্নে কৌশল বর্ণনা করা হলো :

১। ট্যাংকের আকার : ১৭ মি. x ৩ মি. x ০.৭৫ মি.

২। ট্যাংকের সংখ্যা : ৪টি

৩। মিহি ফাঁসের জাল দ্বারা আবৃত

৪। হাপার আকার। ৮ মি. x ২.৫ মি. x ০.৬ মি.

৫। প্রতি ট্যাংকের হাপার সংখ্যা : ২টি

৬। প্রতি হাপাতে প্রথম খাবার গ্রহণযোগ্য পোনার সংখ্যা ১৫০০০০

৭। ট্যাংকে পানির উচ্চতা: ৬০ সে. মি

৮। এই সকল হাপাতে হরমোন মিশ্রিত খাবার প্রয়োগ করা যায়

৯ । খাবার প্রয়োগ মাত্রা : পরিতৃপ্ত অবস্থা পর্যন্ত

১০। খাবার প্রয়োগকাল : দিনে ৩ বার

১১। হরমোন মিশ্রিত খাবার প্রয়োগের স্থায়িত্বকাল : ৩ দিন ।

১২। নিয়মিত ঠাণ্ডা স্বাদু পানি পরিবর্তন করে এই ট্যাংকের পানিতে গুণাগুণ রক্ষা করা হয়। (তাপমাত্রা ২৪- ২৭° সে.)

১৩। ক্ষণস্থায়ী ট্যাংকের অবস্থান কালের ক্ষেত্রে স্কুলে পোশাকে তাদের সংখ্যা গণনা করে মার্সারি খাবার প্রয়োগ হাপাতে স্থানান্তর করা হয়

নার্সারি হাপাতে ক্ষুসে পোনাকে হরমোন মিশ্রিত খাবার প্রয়োগ : নার্সারি হাপা স্থাপনের জন্য ০.৪ হেক্টর আয়তনের একটি পুকুর নির্মাণ করতে হবে। পুকুরটি হবে আরতাকার এবং পানি আগমন ও নির্গমনের দুটি পার্শ্বপথ যুক্ত। পুকুরের গভীরতা ১.৫-২.০ মিটার হওয়া বাঞ্ছনীয়। বাঁশের খুঁটি এবং নাইলনের দড়ির সাহায্যে হাপা স্থাপন করা হয়।

হরমোন মিশ্রিত খাবার খাওয়ানোর কৌশল এবং প্রয়োগ প্রণালি দেখানো হলো। মনোসেক্স পোনা
উৎপাদনের জন্য খাবার প্রয়োগ পদ্ধতি সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা হলো :

(১) হাপার আকার : দৈর্ঘ্য ৮ মি. x গ্রন্থ ২.৫ মি. x ০.৭৫ মি.

(২) হাপার সংখ্যা ২৫টি

(৩) হাপাতে ক্ষুদে পোনার মজুদ ঘনত্ব ১00000

(৪) মজুদকৃত পোনার মোট সংখ্যা প্রায় ২.৫ মিলিয়ন

(৫) খাবার প্রয়োগ মাত্রা : শারীরিক ওজনের ১৫-৩০%

৬)খাবার প্রয়োগের তীব্রতা : প্রতিদিন ৪-৬ বার

৭) হরমোন মিশ্রিত খাবার খাওয়ানো স্থায়িত্বকাল : ১৮-২১ দিন

(৮) মনোসেক্স পুরুষ জাতের পোনার উৎপাদন প্রতি মাসে প্রায় ২.০ মিলিয়ন

(৯) নিয়মিত ঠাণ্ডা পানি পরিবর্তন করে পুকুরে অবস্থিত নার্সারি হাপার পানির গুণাগুণ ঠিক রাখা হয়।
(তাপমাত্রা ২৪-২৭° সে.)

বিক্রয়ের জন্য মনোসেক্স পোনা মজুদ ও লালন : হরমোন মিশ্রিত খাবার ক্ষুদে পোনাকে ২১-২৪ দিন
প্রয়োগের পর ৯০-৯৫% লিঙ্গ রূপান্তরিত মনোসেক্স পুরুষ পোনা প্রাপ্তির আশা করা যায়। এই অবস্থায় সাধারণ খাবার প্রয়োগ করে পৃথক পৃথক হাপায় বিক্রয়ের জন্য পোনা মজুদকরণ ও লালনের বিষয়ে নিয়ে দেওয়া হলো

(ক) হাপার সাইজ : ৮ মি. x ২.৫ মি. x ০.৮ মি.
(খ) মজুন ২১-২৪ দিন বয়সের পোনা
(গ) মজুদ ঘনত্ব ৪০০-৬০০ ঘন মিটার
(ঘ) পুকুরে তেলাপিয়ার পোনা লালনের জন্য সুষম খাবারের ফরমূলা নিম্নে দেওয়া হলো :

 

প্রস্তুতকৃত খাবার প্রয়োগের হার পোনার দেহ ওজনের ৮-১০%

(ঙ) লালনকাল : ১-২ সপ্তাহ ।

* তেলাপিয়ার মনোসেক্স পোনা উৎপাদন এবং করণীয় :

সাধারণত তেলাপিয়ার মনোসেক্স পোনা উৎপাদন পদ্ধতি খুব সহজে মনে হতে পারে কিন্তু প্রয়োগকারীদের এটি জেনে রাখা উচিত যেন এটি জীব প্রযুক্তির একটি উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন । মাছের প্রজনন সংক্রান্ত সঠিক প্রক্রিয়া, প্রজনন পুকুরে পানির তাপমাত্রা ও অন্যান্য রাসায়নিক গুণাগুণের সঠিক মাত্রা বজায় রাখা, প্রথম খাবার গ্রহণের পোনা শনাক্তকরণ, হরমোন এবং অ্যালকোহলের সঠিক মাত্রা

নির্ধারণ ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে ১০০% পুরুষ পোনা উৎপাদনের উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। তাই মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা যেন প্রতারিত না হন সেজন্য হ্যাচারির মালিকদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে ।

আরও দেখুন:

Exit mobile version