আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – প্যাকেজিংয়ে লেভেল ব্যবহারের গুরুত্ব । যা ” বাগদা চিংড়ির গুণগতমান সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।
শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
প্যাকেজিংয়ে লেভেল ব্যবহারের গুরুত্ব
প্যাকেজিংয়ে লেভেল ব্যবহারের গুরুত্ব
ক) প্যাকেজিংয়ের লেবেলের মাধ্যমে কোনো দ্রব্যের মানের একটা প্রতিচ্ছবি ক্রেতা বিক্রেতার নিকট ভেসে উঠে।
খ) প্যাকেজিংয়ের লেবেলের বর্ণনা থেকে অতি সহজে বুঝে নেয়া যায় পণ্যটির গুণগতমান, পুষ্টিগুণ ও এর মেয়াদ সম্পর্কে।
গ) ভালোভাবে প্যাকেজিং ও লেবেলিং করা থাকলে ক্রেতা সব সময় পণ্য ক্রয় করতে স্বাচ্ছন্দ্য বাধে করে।
ঘ) ট্রেসে বিলিটি লেবেল থাকলে পণ্যের পরিপূর্ণ ইতিহাস সহজেই জানা সম্ভব হয়।
প্যাকেজিং ও লেবেলিং এবং উৎপাদনকারী শনাক্তকরণ
ক) প্যাকেজিং ও লেবেলিং ঠিক থাকলে চিংড়ি পণ্যের গুণগত মানের জন্য উৎপাদনকারীকে দায়ী করা সম্ভব হয়।
খ) প্যাকেজিংয়ের লেবেল থেকে উৎপাদনকারীকে শনাক্ত করা যায়।
গ) উৎপাদনকারীকে শনাক্ত করা গেলে পণ্যের গুণগতমানের দায়ভার উৎপাদনকারীর উপর বর্তানো সহজ হয়।
ঘ) যেহেতু ট্রেসবিলিটি (traceabiluty) লেবেল অর্থাৎ পরিপূর্ণ ইতিহাস রাখা আস্তে আস্তে বাধ্যতামূলক হতে যাচ্ছে, সেহেতু উৎপাদনকারীকে বা আরও নিচের দিকে চাষি বা হ্যাচারি মালিককেও শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
ট্রেসেবিলিটি লেবেলে সাধারণত যে সকল তথ্য থাকা উচিত সেগুলো হলো:
ক) মা চিংড়ি সম্পর্কিত তথ্য, যথা। ধরার তারিখ, ধরার প্রকৃতি ও ধরার পরে ব্যবহৃত খাদ্য/ঔষধের বিবরণ।
খ) সকল গৃহীত ব্যবস্থাদির তালিকা।
গ) চিংড়ি পোনা সম্পর্কিত তথ্য, যথা: হ্যাচিং এর তারিখ, ট্যাংক নম্বর ও পরের খাদ্য/ঔষধসহ গৃহীত ব্যবস্থাদির তালিকা।
ঘ) চিংড়ি চাষ সম্পর্কিত তথ্য, যথা: মজুদের তারিখ, পুকুর নম্বর ও পরের খাদ্য/ঔষধসহ গৃহীত ব্যবস্থাদির তালিকা।
ঙ) চিংড়ি ডিপো/মধ্যবর্তী স্থান সম্পর্কিত তথ্য যথা: ধরার/সংগ্রহের তারিখ, অবস্থানের মোট সময় ও গৃহীত ব্যবস্থাদির তালিকা।
চ) চিংড়ি ডিপো/মধ্যবর্তী স্থান সম্পর্কিত তথ্য যথা: ধরার/সংগ্রহের তারিখ, অবস্থানের মোট সময় ও গৃহীত। ব্যবস্থাদির তালিকা
ছ) চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ সম্পর্কিত তথ্য যথা: চিংড়ি গ্রহণের তারিখ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্যাকেজিং ও স্টোরেজসহ গৃহীত ব্যবস্থাদির বিস্তারিত তালিকা।
প্যাকেজিং ও লেবেলিংয়ের সঙ্গে পণ্যের মান বাড়ার সম্পর্ক
ক) প্যাকেজিং ও লেবেলিং ঠিক থাকলে, লেবেলিংয়ে উৎপাদনকারীর পরিচয় থাকে ফলে উৎপাদনকারীর নিজস্ব দায় দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায় ও পণ্যের মান বাড়াতে সহায়তা করে।
খ) উৎপাদনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পণ্যের লেবেলে তাদের নাম ঠিকানা ব্যবহার করলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সুনাম রক্ষা করা ও ব্যবসায়িক সাফল্য উত্তরাত্তের বৃদ্ধির জন্য তাদের উৎপাদিত পণ্যের মান বাড়াতে সদা সচেষ্ট থাকে।
স্বাস্থ্যনম্বত ও উন্নত চিংড়ি পণ্য তৈরি ও বাজারজাতের জন্য উন্নত প্যাকেজিং সরঞ্জাম ও তার ব্যবহার
পলিথিন/কাগজ জাতীয় সরঞ্জাম প্রদর্শন ও তার ব্যাখ্যা-
ক) প্যাকেজিংয়ের জন্য পলিথিন জাতীয় সরঞ্জামের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ও জনপ্রিয়।
খ) পলিথিন বিভিন্ন প্রকার হতে পারে।
গ) পলিথিনের গুণগত মান ও পুরুত্বেরও অনেক রকমভেদ আছে।
পলিথিন সিলারের ব্যবহার
ক) বিশ্বব্যালী প্যাকেজিং সরঞ্জাম হিসেবে পলিথিনের ব্যবহারের সাথে সাথে পলিথিন সিলারের ব্যবহারের। ব্যাপকতা বাড়ছে।
খ) বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রকার পলিথিন সিলায়ও এখন বাজারে পাওয়া যায়।
পলিথিন জাতীয় সরঞ্জাম ব্যবহারের বেশ কিছু সুবিধা ও অসুবিধা আছে সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে-
ক) সহজপ্রাপ্যতা ও মূল্য কম হওয়া
খ) স্বচ্ছ ৩ অবচ্ছ উভয় প্রকায় প্রাপ্যতা
গ) বিভিন্ন আকার ও প্রকৃতির প্রাপ্যতা
ঘ) লেবেল প্রিন্ট করার সুযোগ থাকা
ঙ) অর্দ্রতা প্রতিরোধক হওয়া
চ) টেকসই হওয়া
অসুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে-
ক) পরিবেশবান্ধব না হও না।ণ
খ) কোনো সরু দ্রব্য, সুচ ও ধারালো জিনিস যেমন, চাকু, পিন, ইত্যাদির সংস্পর্শে আসলে সহজেই ছিদ্র হওয়া বা কেটে যাওয়া।
গ) মজুদের সময় উপরে অবস্থিত প্যাকেটের মালামালের চাপ সরাসরি নিচের প্যাকেটের মালের উপর পড়ে।
পুনরায় ব্যবহারযোগ্য সাদা প্লাস্টিক পাত্রের ব্যবহার-
ক) পুনরায় ব্যবহারযোগ্য পাত্র হিসেবে প্রচলিত সাদা পাস্টিকের বৈয়মের ব্যবহার করা যেতে পারে।
খ) পরীক্ষামূলকভাবে বেশকিছু সাদা পাস্টিকের বৈয়মের ব্যবহার করে শুটকি বাজারজাত করে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া গেছে।
গ) চিংড়ি পণ্যের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার করতে হলে বৈয়মের আকার আকৃতি পরিবর্তন করে চিংড়ি পণ্যের উপযোগী করে তৈরি করতে হবে।
স্বাস্থ্যসম্মত ও উন্নত চিংড়ি পণ্য তৈরি ও বাজারজাতকরণের সমস্যা ও সমাধান
ক) স্বাস্থ্যসম্মত ও উন্নত চিংড়ি পণ্যের খবর ক্রেতার নিকট পৌঁছানো অতি জরুরি।
খ) চিংড়ি পণ্যের ভোক্তারা সাধারণভাবে চিংড়ি পণ্যের স্বাদের বিচার বিশেষণ করে থাকে।
গ) চিংড়ি পণ্যের সকল ক্ষেত্রে হ্যাসাপ মেনে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি কিনা সে ব্যাপারে সচেতনতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাজারজাতকরণের সমস্যা ও সমাধানের জন্য করণীয়
চিংড়ি পণ্যের বাজারজাতকরণের সমস্যা সমাধানের জন্য করণীয় বিষয়সমূহ তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
ক) চিংড়ি পণ্য বাজারজাতকরণের বিভিন্ন পর্যায়েও গুণগতমান হারাতে পারে।
খ) অবশ্যই বাজারজাতকরণের বিভিন্ন পর্যায়ে চিংড়ি পণ্যের মাননিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
গ) চিংড়ি পণ্য বাজারজাত করার জন্য স্থানান্তরের সময় বা বাজারজাতের পরে বিক্রেতার দোকানে অসাবধানতার কারণে চিংড়ি পণ্যের প্যাকেট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ও চিংড়ি পণ্যের গুণগতমান নষ্ট হতে পারে।
ঘ) দোকানে দীর্ঘদিন অবিক্রীত রয়ে গেলে চিংড়ি পণ্যের গুণাগুণ নষ্ট হতে পারে।
ঙ) বাজারজাতকরণের সময়ে ও তৎপরবর্তী বিক্রয়ের সময়ে বিশেষভাবে চিংড়ি পণের মাননিয়ন্ত্রণ করা অপরিহার্য।
চ) স্বাস্থ্যসম্মত চিংড়ি পণ্যের খবর অতি জরুরিভাবে ক্রেতার নিকট পৌছানারে ব্যবস্থা করতে হবে।
ছ) চিংড়ি পণ্য স্বাস্থ্যসম্মত বা অস্বাস্থ্যসম্মত আছে এ ধারণাটা ক্রেতার নিকট পৌছানারে জন্যে পর্যাপ্ত বিজ্ঞাপনের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
জ) অধিক মূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত চিংড়ি পণ্য ক্রয় করতে পারে এমন সচেতন ও সমর্থ ক্রেতার নিকট চিংড়ি-পণ্য পৌছানারে ব্যবস্থা করতে হবে।
ঝ) বাজারজাতকরণের বিভিন্ন পর্যায় ও বিক্রয়ের সময়ে চিংড়ি পণ্যের মাননিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে।
চিংড়ি পণ্য দেশে ও বিদেশে বিপণনে বিজ্ঞাপন প্রচারসহ মেলা বা প্রদর্শনীর আয়োজন করা:
ক) চিংড়ি পণ্য স্বাস্থ্যসম্মত বা অস্বাস্থ্যসম্মত আছে এ ধারণাটা ক্রেতার নিকট পৌঁছানোর জন্যে বিজ্ঞাপনের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হবে।
খ) বিজ্ঞাপনের জন্যে বিভিন্ন গণমাধ্যম, যেমন- রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, ইন্টারনেট ইত্যাদির। মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের প্রচার করে স্বাস্থ্যসম্মত চিংড়ি-পণ্যের জনপ্রিয়তা বাড়াতে হবে।
গ) অন্যান্য প্রচার মাধ্যম, যেমন- ব্যক্তিগত যোগাযোগ, পোস্টার, বিলবোর্ড, লিফলেট ইত্যাদিও সার্থকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ঘ) বিভিন্ন গণমাধ্যমে শুধু বিজ্ঞাপন প্রচার করলেই চলবে না বরং অধিক মূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত চিংড়ি-পণ্য ক্রয় করতে পারে এমন সচেতনতা ও সমর্থ ক্রেতার নিকট চিংড়ি-পণ্য পৌছানারে ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে।
ঙ) দেশে ও বিদেশে মেলা বা প্রদর্শনীর আয়োজন করতে হবে।
চ) স্বাস্থ্যসম্মত চিংড়ি পণ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা না গেলে কোনো প্রচারই কাজে লাগবে না, বরং তাতে অহেতুক বাড়তি খরচ হবে।
আরও দেখুনঃ