গলদা চিংড়ির পোনা প্রতিপালন | অধ্যায়-৫ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – গলদা চিংড়ির পোনা প্রতিপালন । যা ” পুকুরের গলদা চিংড়ি পোনা মজুদ ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।

শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।

গলদা চিংড়ির পোনা প্রতিপালন

 

গলদা চিংড়ির পোনা প্রতিপালন | অধ্যায়-৫ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২

 

গলদা চিংড়ির পোনা প্রতিপালন

প্রাকৃতিক উৎস বা হ্যাচারি থেকে সংগৃহীত পোনা সরাসরি মজুদ পুকুরে মজুদ করা উচিত নয়। চিংড়ির পোনা সরাসরি উৎপাদন পুকুরে মজুদ করলে পোনার মৃত্যুহার অনেক বেড়ে যায় এবং সামগ্রিক উৎপাদন প্রক্রিয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এজন্য নার্সারিতে গলদা চিংড়ির পোনা প্রতিপালন করে কিশোর চিংড়ির বা বড় পোনা পুকুরে মজুদ করলে চিংড়ির সন্তোষজনক উৎপাদন নিশ্চিত করা যায়।

পোনা প্রতিপালনের প্রয়োজনীয়তা

চিংড়ি পোনা সাধারণত পরিবেশের সামান্য তারতম্যে অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবহনজনিত পীড়নের ফলে চিংড়ি পোনা অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং শ্বাসকষ্টে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সব অসুস্থ দুর্বল পোনা সন্নাসরি মজুদ পুকুরে ছাড়া হলে সাধারণত অধিকাংশ পোনা মারা যায়। মজুদ পুকুরে চিংড়ির উললামন মিশ্চিত করতে নার্সারিতে নানা পহিপালানের উপকারিতা নিম্নজনঃ

– নতুন পরিবেশের সাথে পোনা সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে

– পোনার মৃত্যুর হার কমানো যায়।

– পরিদেশের তারতম্যের কারণে সৃষ্ট পীড়ন বা শ্বাসকষ্ট রোধ করা যায়

– অল্প সময়ে পোনাকে সবল ও বড় করা যায়।

– ক্ষতিকর ও রাক্ষুসে প্রাণীর আক্রমণ থেকে পোনাকে রক্ষা করা যায়।

– অন্যান্য ছোটট প্রজাতির চিংড়ি থেকে গলনা চিংড়ির পোদা সহজেই বাছাই করা যায়।

-শোনার বেঁচে থাকার হার সহজেই অনুমান করা যায়

– মজুদ পুকুরের উৎপাদন নিশ্চিত করা যায়

নার্সারি পুকুর

খামারের মোট আয়তনের সাধারণত ১০-১৫% এলাকায় নার্সায়ি পুকুর করা উচিত। সাধারণত মজুন পুকুরের মধ্যে বাঁধ দিয়ে অথবা ঘন জালের বেড়া দিয়ে ছোট আকারের নার্সারি পুকুর তৈরি করা যায়। এছাড়া মজুদ পুকুরের পাশেও গোনার চাহিদা অনুযায়ী নার্সারি পুকুর তৈরি করা যেতে পারে।

নার্সারি পুকুর অপেক্ষাকৃত ছোট হলে ভালো হয়। নার্সারি পুকুরের আয়তন ২-৩ বিঘা হলে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অনেক বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। এঁটেল মাটি, এঁটেল দোআঁশ কিংবা বেলে দো-আঁশ মাটি নার্সারি পুকুর নির্মাণের জন্য সবচেয়ে ভালো। অ্যাসিড সালফেট যুক্ত কিংবা বেলেযুক্ত মাট নার্সারি পুকুর নির্মাণের জন্য উপযুক্ত নয়।

পাড়ের উচ্চতা বন্যামুক্ত হতে হবে এবং পাড়ের ঢাল ১ অথবা ৩৬১ এর মধ্যে রাখতে হবে। পুকুরের গভীরতা চাষ উপযোগী হতে হবে। পুকুরের গভীরতা বর্ষাকালে ৯০-১০০ সেমি এবং শুকনো মৌসুমে ৭০-৮০ সেমি হলে ভালো হয়। পুকুরের তলদেশ সমতল হওয়া বাঞ্ছনীয়। এতে সমস্ত চিংড়ি আহরণ করা ছাড়াও পুকুর ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নানা ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

নার্সারি পুকুরের পানির গুণাবলি

পুকুর প্রস্তুতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে চিংড়ির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। চিংড়ি সাধারণত প্রাকৃতিক পরিবেশে প্ল্যাংকটন, ছোট পোকা-মাকড় ও পয়া জৈব পদার্থ খেয়ে বড় হয়। এ সব অণুজীব ও ছোট প্রাণী পানিতে একটি বিশেষ পরিবেশে জন্মায়। এই উপযুক্ত পরিবেশের জন্য পানিতে নিম্নবর্ণিত গুণাবলি থাকা বিশেষভাবে প্রয়োজন।

পানির গুণাগুণ-মাত্রা

পানির গভীরতা-৭০-৯০ সেমি

অক্সিজেন-২৫-৩০ সেমি

পিএইচ-৫.০-৬.৫ পিপিএম

পানির স্বচ্ছভা-২৫-৩৫ সেমি

নার্সারি পুকুর প্রস্তুতির নিয়মাবলি

পুকুরের পরিবেশের গুণগতমান বজায় রাখার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে পুকুর প্রস্তুত করা প্রয়োজন। পুকুর প্রস্তুতির ওপর চিংড়ি উৎপাদনের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে। তাই পোনা মজুদের পূর্বে পুকুর প্রস্তুত করা একান্তভাবে দরকার। পুকুর প্রস্তুতির পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলো নিচে বর্ণনা করা হলোঃ

-সমস্ত জলজ আগাছা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

-রাজুলে ও অবস্থিত প্রাণী দমন করতে হবে।

-পুকুরের পুরাতন পানি নিষ্কাশন করে পুকুরের অলদেশ ৬-৭ দিন রোদে শুকাতে হবে।

-পুকুরের পাড় ভালোভাবে মেরামত করতে হবে এবং পাড়ে কোনো গর্ত থাকলে তা ভালোভাবে বন্ধ করতে হবে

-পুকুরের তলদেশে হালকা চাষ দিতে হবে।

-চাষ দেওয়ার পর প্রতি শতকে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে।

চুন প্রয়োগে উপকারিতা নিম্নরূপঃ

  • মাটির অম্লতা দূর করে।
  • সালফাইড ও অন্যান্য অ্যাসিডের ক্রিয়া প্রশমিত করে।
  • রোগজীবাণু দমনে সহায়তা করে। এবং
  • নাইট্রোজেন ফিক্সিং ব্যাক্টেরিয়ার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।

-চুন প্রয়োগের ২-৩ দিন পর প্রতি শতাংশে ৮-১০ কেজি গোবর বা কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে হবে।

-গোবর প্রয়োগের পর ১০ সেমি পানি ঢুকাতে হবে এবং এর পর ৫-৭ দিন অপেক্ষা করতে হবে।

-অতঃপর ২০-২৫ সেমি পর্যন্ত পানি পুকুরে ঢুকিয়ে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরে রাসায়নিক সার প্রয়োগের মাত্রা নিম্নরূপঃ

ইউরিয়া-১০০ গ্রাম প্রতি শতাংশে

টিএসপি- ১০০ গ্রাম প্রতি শতাংশে

পটাশ- ৫০ গ্রাম প্রতি শতাংশে

 

গলদা চিংড়ির পোনা প্রতিপালন | অধ্যায়-৫ | শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২

 

পুকুরে চিংড়ির শোনার আবাসস্থলের উন্নয়ন করতে হবে। আবাসস্থল উন্নয়নের লক্ষে পুকুরের তলায় বাঁশের কঞ্চি বা ভাল কাত করে পুঁতে দিতে হবে। চিংড়ির পোনা ছোট অবস্থায় ভালপালার সাথে আকড়িয়ে থাকতে পছন্দ করে। আছাড়া গাছের ডালপালা খাদ্য যোগাতে সহায়তা করে থাকে।

– সার প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর নির্ধারিত হারে পোনা মজুদ করতে হবে।

– নার্সারি পুকুরে ৭০-৯০ সেমি পানি রাখতে হবে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment