আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় – আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা পোনা পরিবহন । যা ” পুকুরের গলদা চিংড়ি পোনা মজুদ ” অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ।
শিক্ষা জাতীয় জীবনের সর্বতোমুখী উন্নয়নের পূর্বশর্ত। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত-দক্ষ মানব সম্পদ। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং আত্মনির্ভরশীল হয়ে বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্রমপরিবর্তনশীল অর্থনীতির সঙ্গে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) স্তরের শিক্ষাক্রম ইতোমধ্যে পরিমার্জন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা পোনা পরিবহন
আধুনিক পদ্ধতিতে গলদা পোনা পরিবহন
আমাদের দেশে বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে পলিথিন ব্যাগে চিংড়ির পিএল এবং সনাতন পদ্ধতিতে ড্রাম বা অ্যালুমিনিয়ামের হাড়িতে গলদা চিংড়ির পোনা পরিবহন করা হয়ে থাকে। তবে সুযোগ থাকলে আধুনিক পদ্ধতিতে চারা পোনা ও জুভেনাইল পরিবহনও অধিক নিরাপদ।
সনাতন পদ্ধতিতে পরিবহনকালে ড্রাম বা অ্যালুমিনিয়ামের হাড়ির গায়ে ধাক্কা লেগে পোনার দেহে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে এবং পাত্রের পানিতে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দিতে পারে, এমন কি ব্যাপক হারে পোনা মারা যেতে পারে। পক্ষান্তরে অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহনকালে অক্সিজেনের অভাব হয় না ও পোনার শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। সে কারণে সনাতন পদ্ধতিতে পোনা ও জুভেনাইল পরিবহনে অধিক সতর্কতা ও প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়।
পোনা পরিবহন ঘনত্ব
পরিবহন ঘনত্ব মূলত নির্ভর করে পিএল, জুভেনাইল ও চারা পোনার আকার, ওজন এবং পরিবহন দূরত্বের উপর। সাধারণভাবে ৩৬ ইঞ্চি×২০ ইঞ্চি আকারের পলিথিন ব্যাগ পিএল বা পোনা পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। চিংড়ির পোনার আকার ও দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে পরিবহন ঘনত্ব।
বাংলাদেশে সাধারণত দুভাবে পোনা পরিবহন করা যায়ঃ
১. আধুনিক পদ্ধতি (অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাসহ)
২. সনাতন পদ্ধতি (অক্সিজেন সরবরাহ ছাড়া)
১। আধুনিক পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে পোনা পরিবহন করা হয়। অক্সিজেনসহ পলিথিন ব্যাগে লিটার প্রতি ৫০০টি হারে ছোট পোনা পরিবহন করা যায়। একটি ৬ × ৪০ সে. মিটার ব্যাগের ৬-৮ লিটার পানিতে অক্সিজেন দিয়ে ৩০০০-৪০০০ টি ১০-১৫ দিন বয়সের পোনা ১২ ঘণ্টার জন্য পরিবহন করা যায়।
২। সনাতন পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতিতে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা ছাড়া অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে পোনা পরিবহন করা হয়। অক্সিজেন সরবরাহ ছাড়া ৬ ঘণ্টার জন্য পলিথিন ব্যাগে নিম্নহারে পোনা পরিবহন করা যায়।
পোনা প্যাকিং
গোনা প্যাকিং-এ নিম্নলিখিত জিনিসপত্রাদির প্রয়োজন
-পলিথিন ব্যাগ
-বেগুলেটরসহ অক্সিজেন সিলিভার
– পরিষ্কার মিঠা পানি
– ফের টুকরা
– কাগজের কার্টুন অথবা কাঠের বা স্টীলের ইনসুলেটেড বক্স
– পোনা রাখার ডিশ বা গামলা
– রাবার ব্যান্ড ইত্যাদি
পোনা পাকিং পদ্ধতি
গলদা চিংড়ির পোনা অভ্যন্ত কোমল, স্পর্শকাতর এবং খুব সহজেই পীড়িত হয়ে পড়ে বিধায় প্যাকিং-এর সময় এদেরকে খুব যত্ন সহকারে নাড়াচাড়া করতে হয়। নিয়ে পোনার প্যাকিং পদ্ধতিটি বর্ণনা করা হলো।
- পোনা পরিবহনের কমপক্ষে ২ ঘণ্টা পূর্বে শোনাকে খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে। তবে দূরপালা পরিবহনের ক্ষেত্রে আর্টিনিয়া শগ্নি জীবিত খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে
- এরপর গোনা একই লবণাক্ততা ও ভাপমাত্রা বিশিষ্ট পরিষ্কার রাখতে হবে। পোনা পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত পানি প্লাস উলের সাহায্যে পরিষ্কার পানিতে রাখতে হবে।
- ৫০ × ১০ দেখি আকারের একটি পলিথিন ব্যাগ একই আকারের আরেকটি পলিথিন ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে ব্যাগের নিচের দুই কোন রাবারের ব্যান্ড দিয়ে মুড়িয়ে বেঁধে দিতে হবে। এর ফলে ব্যাগ ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং গোনাও ব্যাগের কোণার অর্টিকে থাকার সম্ভাবনা থাকে না।
- পলিথিন ব্যাগের এক তৃতীয়াংশ ৮-১০ লিটায় একই পরিবেশের পানি যারা পূর্ণ করতে হবে। এরপর পরিবহদের দূরত্ব ও পোনার আকার অনুযায়ী ১০০০-৫০০০ পোনা গণনা করে ব্যাগের মধ্যে রাখতে হবে। ব্যাগের বাকি দুই-তৃতীয়াংশ অক্সিজেন দ্বারা পূর্ণ করে ব্যাগের মুখ ভালোভাবে মুড়িয়ে বাবার ব্যান্ড দিয়ে শক্ত করে বাঁধতে হবে।
- পরিবহনকালে ব্যাগের পানির তাপমাত্রা ২২° সে. এর কাছাকাছি রাখতে হবে। যদি পরিবহন সময় ৪ ঘণ্টায় কম হয়, তবে এক্ষেত্রে অক্সিজেনের প্রয়োজন নেই কিনতু বরফ ব্যবহার করতে হবে। প্রতি ১০ লিটার পানিতে প্রতি ঘন্টার পরিবহন দূরত্বের জন্য ১০০ গ্রাম বরফ পলিথিন ব্যাগে করে পরিবহন পাত্রের ভিতর রাখতে হবে।
- পরিনয়নের সময় ৪ ঘন্টার বেশি হলে বরফ ও অক্সিজেন উত্তরই ব্যবহার করতে হবে।ব্যাগের পানির তাপমাত্রা উঠানামা রোধকল্পে গোনা দুই পালাযুক্ত ভাপ নিরোধক পাত্রে পরাকিং করতে হবে। এটা নিম্নেক্ত যে কোনো একজাবে করা যেতে পারে:
– ২ টি কার্ডবোর্ডের বাক্স একটির মধ্যে অন্যটি বলানো, মধ্যস্থলে দাস বা সংঘর্ষ নিরোধক বস্তু রাখতে
– ২টি প্লাস্টিক ব্যাগ একসঙ্গে যুক্ত করে ভিতরে পোনা রাখতে হবে। ব্যাপের উপরিভাগ মুড়ে দুই প্রন্থ কয়ে শক্তভাবে বাঁধতে হবে যেদ এই য্যাগ সম্পূর্ণরূপে বায়ু নিয়োফক হয়।
– পলিথিন ব্যাগগুলোর উপরিভাগ শক্তভাবে বেঁধে তা পরিবহন পাত্রে রাখতে হবে। তাপমাত্রা নিরোধক স্টাইক্রোফোন বাক্সে পোনা পরিবহন অধিক নিম্নাপল।
স্টেদা পরিবহন পদ্ধতি
প্যাকিংসহ অথবা প্যাকিং ছাড়া পোনা পরিবহন করা যেতে পায়ে। কম দূরত্বে অথবা সময় কম লাগলে মুখ খোলা পাত্রে সীমিত পরিমাণ গোনা মাখায় বা গাড়িতে করে খামার পর্যন্ত পরিবহন করা যায়। পানিতে বেশি অক্সিজেন দ্রবীভূত হওয়ার জন্য পরিবহনকালে পাত্রটি ঝাঁকুনি দেয়া ভালো।
গাড়ির চলার পথেও ঝাঁকুনিতে অক্সিজেন সরবরাহের কাজ হয়। তবে স্বল্প দূরত্বে পরিবহুসকালেও পলিথিন ব্যাগে অক্সিজেনসহ পরিবহন করা তালো। এতে ঝুঁকি কম থাকে। কার্টুন অথবা ইনসুলেটেড বক্সে পরিবহনকালে স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যায়। বাক্সের তেকরে পলিথিন ব্যাপের পানি ঠান্ডা থাকে বলে গোনা কম পীড়িত হয়।
পানির ট্যাংকে পোনা পরিবহন
এই পদ্ধতিতে একসাথে অনেক বেশি পোনা সহজে পরিবহন করা সম্ভব। পোনা পরিবহনের জন্য ফাইবার গ্লাস মেটারিয়ালের সাহায্যে হাইড্রোট্যাংক নির্মাণ করা যায়। ব্যাটারি চালিত অ্যারেটর বা প্রেসার ট্যাংক থেকে হাইড্রোট্যাংকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। এই পদ্ধতি কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও স্থায়ী। পানির ট্যাংকের সাহায্যে চিংড়ি পরিবহনের পর্যায়গুলো নিম্নরূপঃ
-পরিবহন যানের উপর স্থাপিত ট্যাংক উত্তমরূপে ধৌত করতে হবে।
– স্বাদুপানি দিয়ে এই ট্যাংকের অর্ধেক পূর্ণ করতে হবে।
-৬-৮ লিটার পানিসহ একটি সাদা পাত্রে ১৫-২০ দিন বয়সের ৫০০০ পোনা রাখতে হবে। একইভাবে অন্যান্য পাত্রেও এই একই পরিমাণ পানিতে সমপরিমাণ পোনা রাখতে হবে।
-ধীরে ধীরে পানিসহ পোনা ট্যাংকে রাখতে হবে। এতে পোনার পরিমাণ হবে প্রতি লিটারে ২০০-৩০০টি। ১ অর্থাৎ ২৫০ লিটার ক্যাপাসিটির ট্যাংকে ১২৫ লিটার পানিতে ২৫০০০-৩৭৫০০ পোনা থাকবে। সহজে ও নাড়াচাড়ার জন্য প্লাস্টিক বালতি ব্যবহার করা ভালো।
-ট্যাংকে একটি বহনযোগ্য ব্যাটারিচালিত অ্যারেটর (১২ ভোল্টে) স্থাপন করতে হবে।
-ট্যাংকটি ঢেকে দিতে হবে।
– এরপর পোনা পুকুরে/খামারে স্থানান্তর করতে হবে। পোনা পরিবহনের কাজ সকালে বা বিকালের দিকে করা ভালো, কারণ এ সময় তাপমাত্রা বেশ কম থাকে।
পুকুরে পোনা মজুদের হার
চিংড়ি খামারের মাটির উর্বরতা, পানির গুণাগুণ, সম্পূরক খাবার প্রয়োগ ও পানির ব্যবস্থাপনার ওপর ভিত্তি করে পুকুরে পোনা মজুদের হার নির্ধারণ করা হয়। চাষ পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে পোনা মজুদের হার নিচে বর্ণনা করা হলোঃ
চাষ পদ্ধতি | পোনা মজুদের হার |
প্রচলিত চাষ পদ্ধতি | ১০০০০-৩০০০০টি |
উন্নত হালকা চাষ পদ্ধতি | ৪০০০০-৮০০০০টি |
আধা নিবিড় চাষ পদ্ধতি | ৯০০০০-১৫০০০০টি |
আরও দেখুনঃ