পুষ্টির অভাব ও লক্ষণসমূহ

পুষ্টির অভাব ও লক্ষণসমূহ – “মাছের স্বাস্থ্য পরিচর্যা” কোর্স বইটি বিশেষভাবে স্কুল অব এগ্রিকালচার এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট-এর বিএজিএড প্রোগ্রামের ছাত্রদের জন্য লেখা হয়েছে। আপনি জানেন, দূর শিক্ষণে শিক্ষকের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নেই। তাই পাঠের কোনো কঠিন বিষয় যেন আপনার বুঝতে অসুবিধা না হয় সেদিকে দৃষ্টি রেখেই কোর্স বইটি লেখা হয়েছে। কোর্স বইটির আঙ্গিক ও উপস্থাপনা তাই প্রচলিত পাঠ্যবই থেকে কিছুটা ভিন্ন ধরনের। যেহেতু সরাসরি শিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই কোর্স বইটি আপনাকে নিজে পড়ে বুঝতে হবে, তাই এটি কীভাবে পড়বেন প্রথমেই তা জেনে নিন। এতে কোর্স বইটি পড়তে ও বুঝতে আপনার সুবিধা হবে।

 

পুষ্টির অভাব ও লক্ষণসমূহ

 

Table of Contents

পুষ্টির অভাব ও লক্ষণসমূহ

এ পাঠ শেষে আপনি-

  • দীর্ঘস্থায়ী খাদ্যাভাবের কারণে মাছে প্রকাশিত রোগের লক্ষণসমূহ নির্ণয় করতে পারবেন।
  • মাছের খাদ্যে প্রোটিন, কার্বহাইড্রেট ও চর্বি স্বল্পতার লক্ষণসমূহ বর্ণনা করতে পারবেন।
  • মাছের খাদ্যে বিভিন্ন ভিটামিন স্বল্পতার লক্ষণসমূহ বলতে ও লিখতে পারবেন।
  • মাছের খাদ্যে বিভিন্ন খনিজ লবণ স্বল্পতার লক্ষণসমূহ বর্ণনা করতে পারবেন।

দীর্ঘ দিন যাবৎ পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যের অভাবে অথবা খাদ্যে কোন পুষ্টি উপাদানের অভাবে মাছ দুর্বল হয়ে যায়, মাছের বর্ধন ব্যাহত হয় এবং মাছ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। পুষ্টির অভাবে মাছের দেহে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ বা লক্ষণ প্রকাশ পায়। এ উপসর্গগুলো ধীরে ধীরে দেখা দেয় তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। নিম্নে মাছের দেহে পুষ্টির অভাবে প্রকাশিত বিভিন্ন লক্ষণ সমূহ আলোকপাত করা হলো-

 

দীর্ঘ দিন যাবৎ পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যের অভাবে অথবা খাদ্যে কোন পুষ্টি উপাদানের অভাবে মাছ দুর্বল। হয়ে যায়, মাছের বর্ধন ব্যাহত হয় এবং মাছ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।

 

দীর্ঘস্থায়ী খাদ্যাভাব বা উপবাসের লক্ষণ

মাছের পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের অভাব দেখা দিলে অথবা পুকুরে দীর্ঘদিন যাবৎ পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ না করলে মাছ দীর্ঘস্থায়ী খাদ্যাভাবে আক্রান্ত হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী খাদ্যাভাব বা উপবাসের কারণে মাছের বর্ণ কালো হয়ে যায়, মাংস (flesh) নরম হয়ে যায়, রক্তশূণ্যতা দেখা দেয়, ফুলকা বিবর্ণ হয়ে যায় এবং দেহে পরজীবী ও রোগ-ব্যাধীর আক্রমণ বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘ দিন উপবাসের কারণে মাছের মাথা প্রসস্ত (enlarged) ও দেহ সরু হয়ে যায়।

 

মাছের পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের অভাব দেখা দিলে অথবা পুকুরে দীর্ঘদিন যাবৎ পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ না করলে মাছ দীর্ঘস্থায়ী খাদ্যাভাবে আক্রান্ত হতে পারে।

 

খাদ্যে প্রোটিন স্বল্পতার লক্ষণ

খাদ্যে প্রোটিন বা অত্যাবশ্যক অ্যামাইনো এসিডের স্বল্পতায় মাছের বর্ধন ব্যাহত হয়, এনজাইম ও হরমোনের জৈব-সংশ্লেষণ ব্যাহত হয় এবং কিডনীতে অস্বাভাবিক ক্যালশিয়াম জমা হয়। লাইসিন নামক অত্যাবশ্যক অ্যামাইনো এসিডের অভাবে মাছের পৃষ্ঠ পাখনায় ক্ষত দেখা দেয়, মিথিওনিন ও ট্রিপটোফেন নামক অত্যাবশ্যক অ্যামাইনো এসিডের স্বল্পতায় মাছের চোখে ছানি পড়ার (Cataract) কারণে মাছের দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পায়। লাইসিন, লিউসিন, ট্রিপটোফেন, আরজিনিন বা হিস্টিডিন নামক অত্যাবশ্যক অ্যামাইনো এসিডের স্বল্পতায় মাছের অস্থি ও কাটা (Bone and spine) বাঁকা হয়ে যায়।

 

খাদ্যে প্রোটিন বা অত্যাবশ্যক অ্যামাইনো এসিডের স্বল্পতায় মাছের বর্ধন এবং এনজাইম ও হরমোনের জৈব-সংশ্লেষণ ব্যাহত হয়।

 

কার্বহাইড্রেট বা শর্করা স্বল্পতার লক্ষণ

খাদ্যে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটের স্বল্পতায় মাছের স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হয় এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।

 

খাদ্যে লিপিডের স্বল্পতায় মাছ দুর্বল হয়ে যায়, যকৃত ফ্যাকাশে হয় ও ফুলে যায় এবং মাছের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়।

 

বিভিন্ন প্রকার পরজীবী শনাক্তকরণ

 

লিপিড বা চর্বি স্বল্পতার লক্ষণ

খাদ্যে লিপিড বা চর্বির স্বল্পতায় মাছের বৃদ্ধি হ্রাস পায়, ক্ষুধা মন্দা দেখা দেয়, মাছ দুর্বল হয়ে যায়, পেশীতে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়, যকৃত ফ্যাকাশে হয় ও ফুলে যায়, মাছের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং পুচ্ছ পাখনা ভেঙ্গে যায়। খাদ্যে লিপিড বা চর্বির স্বল্পতায় অনেক সময় মাছের অভিপ্রায়ণ (Migration) বন্ধ হয়ে যায় এবং মাছের রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা কমে যায়।

ভিটামিন স্বল্পতার লক্ষণ

দ্রাব্যতার ভিত্তিতে ভিটামিনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়- চর্বিতে দ্রবীভূত ভিটামিন এবং পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিন।

 

চর্বিতে দ্রবীভূত ভিটামিন হচ্ছে ভিটামিন A, D, E এবং K। এ সকল ভিটামিনের অভাবে মাছের দেহে বিভিন্ন রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায়।

 

চর্বিতে দ্রবীভূত ভিটামিন স্বল্পতার লক্ষণ

চর্বিতে দ্রবীভূত ভিটামিন হচ্ছে ভিটামিন A, D, E এবং K। এ সকল ভিটামিনের অভাবে মাছের দেহে বিভিন্ন রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায়।

ভিটামিন-A স্বল্পতার লক্ষণ

খাদ্যে ভিটামিন-A এর স্বল্পতায় মাছের চোখ ফুলে যায় (Exophthalmas), পেশীর অন্তঃকোষীয় ফাঁকা স্থানে তরল জমা হয় (Edema), পেটে তরল পদার্থ জমে পেট ফুলে যায় (Ascites) এবং পাখনার গোড়া ও বৃক্কে রক্তক্ষরন ঘটে। ভিটামিন-A এর মারাত্বক স্বল্পতায় মাছ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।

 

খাদ্যে ভিটামিন-A এর স্বল্পতায় মাছের চোখ ফুলে যায়। ভিটামিন-A এর মারাত্মক স্বল্পতায় মাছ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।

 

ভিটামিন-D স্বল্পতার লক্ষণ

ভিটামিন-D এর স্বল্পতায় মাছের কিডনী (Kidney) ক্ষয় প্রাপ্ত ও ধ্বংস হয় (Necrosis) এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়।

ভিটামিন-E স্বল্পতার লক্ষণ

ভিটামিন- E এর স্বল্পতায় মাছের বর্ণ কালো হয়ে যায়, ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, চোখ ফুলে যায় (Exophthalmas), তরল পদার্থ জমে পেট ফুলে যায় (Ascites), এবং রক্তে লোহিত কনিকা ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ায় মাছে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।

ভিটামিন-K স্বল্পতার লক্ষণ

ভিটামিন- K. এর স্বল্পতায় মাছের মাংসপেশী এবং ভিসেরাতে রক্তক্ষরণ (Haemorrhages) ঘটে। ভিটামিন-K এর স্বল্পতায় মাছের কেটে যাওয়া অংশ বা ক্ষতস্থানে রক্ত জমাট বাঁধতে অধিক সময় লাগে।
পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিন স্বল্পতার লক্ষণ

পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিন হচ্ছে- থায়ামিন (B1), রাইবোফ্লোবিন (B2), নিয়াসিন (B3) পেন্টোথেনিক এসিড (B5), বায়োটি, কোলিন এবং এসকরবিক এসিড (ভিটামিন- C)।

থায়ামিন (B1) স্বল্পতার লক্ষণ

খাদ্যে থায়ামিন বা ভিটামিন- B₁ এর স্বল্পতায় মাছ অস্বাভাবিক ভাবে চলাচল করে, ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, স্নায়ুবিক দূর্বলতা দেখা দেয় ও কর্ণিয়া অস্বচ্ছ হয়ে যায়। মারাত্বক স্বল্পতার কারণে মাছের ঐচ্ছিক মাংসপেশী অবস হয়ে গেলে মাছ মারাও যেতে পারে।

রাইবোফ্লোবিন (B2) স্বল্পতার লক্ষণ

খাদ্যে রাইবোফ্লোবিন বা ভিটামিন-B2 এর স্বল্পতায় মাছের বর্ণ কালচে হয়, ত্বক ও পাখনায় রক্তক্ষরণ হয় এবং দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পায়।

নিয়াসিন (B3) স্বল্পতার লক্ষণ

নিয়াসিনের স্বল্পতায় মাছ অস্বাভাবিকভাবে চলাচল করে, অস্ত্রে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, ফুলকা ফুলে যায় এবং পেটে পানি জমে যায় (edema)।

পেন্টোথেনিক এসিড (B5) স্বল্পতার লক্ষণ

পেন্টোথেনিক এসিডের স্বল্পতায় মাছে ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়, ফুলকা ফলক সমূহ একত্রে লেগে যায় ও শ্বাস কষ্ট দেখা দেয়।

সায়ানোকোবালমিন (B12), বায়োটিন, ফলিক এসিড ও কোলিন স্বল্পতার লক্ষণ

সায়ানোকোবালমিনের স্বল্পতায় দেহ বিবর্ণ হয়ে যায়, রক্তশূণ্যতা দেখা দেয় এবং লোহিতরক্ত কণিকা ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রায় অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। বায়োটিনের স্বল্পতায় মাছের ত্বকে নীল শ্লেষা রোগ (Blue slime patch disease) দেখা দেয় এবং কার্বহাইড্রোট ও লিপিডের বিপাকে বিঘ্ন ঘটে। ফলিক এসিডের অভাবে রক্ত শূণ্যতা দেখা দেয়। কোলিনের অভাবে মাছের বিপাক ও বৃদ্ধির হার কমে যায় এবং অস্ত্র ও বৃক্কে রক্তক্ষরণ ঘটে।

 

Google News
আমাদের গুগল নিউজে ফলো করুন

 

বায়োটিনের স্বল্পতায় মাছের ত্বকে সীলশ্লেষা রোগ দেখা দেয়। ফলিক এসিডের অভাবে রক্ত শূণ্যতা দেখা দেয়।

 

এসকরবিক এসিড (ভিটামিন-C) স্বল্পতার লক্ষণ

এসকরবিক এসিড বা ভিটামিন-C এর স্বল্পতায় মাছের আঘাত বা ক্ষতস্থান শুকাতে দেরী হয়। ভিটামিন-C এর অভাবে অস্থি ও কাঁটায় স্কলিওসিস (Scoliosis) ও লর্ডোসিস (Lordosis) ঘটে। তাছাড়া মাছের কানকোয়া (Operculum) ও ফুলকার গিল ল্যামিলির অস্বাভাবিক গঠন পরিলক্ষিত হয়।

 

এসকরবিক এসিড বা ভিটামিন- C এর স্বল্পতায় মাছের আঘাত বা ক্ষতস্থান শুকাতে দেরী হয়।

 

খনিজ লবণ স্বল্পতার লক্ষণ সমূহ

মাছের জন্য অনেক খনিজ লবণ অত্যাবশ্যক। মাছ খাদ্যের সাথে ও সরাসরি পানি থেকে খনিজ লবণ গ্রহন করে থাকে, কিন্তু মাছের মল, মূত্র ও রেচন দ্রব্যের সাথে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খনিজ লবণ বেরিয়ে যায় ফলে বিভিন্ন খনিজ উপাদানের স্বল্পতা দেখা দেয়। তাই মাছের খাদ্যে অত্যাবশ্যক খনিজ লবণসমূহ পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকা উচিত। অত্যাবশ্যক খনিজ লবণ সমূহের মধ্যে ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, জিংক ও আয়োডিনের অভাবে মাছে বিভিন্ন ধরণের রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায়।

ক্যালশিয়াম স্বল্পতার লক্ষণ

ক্যালসিয়ামের অভাবে মাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। হাড় ও কঙ্কাল গঠন বাধা প্রাপ্ত হয়।

ফসফরাস স্বল্পতার লক্ষণ

ফসফরাসের অভাবে মাছের হাড় ও কঙ্কাল গঠন বাধা গ্রস্ত হয় এবং মাছের বিপাক ক্রিয়া বিঘ্নিত হয়।

জিংক স্বল্পতার লক্ষণ

খাদ্যে জিংকের অভাব হলে চোখে ছানি পড়তে পারে এমনকি মাছ অন্ধও হয়ে যেতে পারে।

আয়োডিনের স্বল্পতার লক্ষণ

খাদ্যে আয়োডিনের অভাবে মাছের থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যায় এবং এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে গলগন্ড রোগ দেখা দেয়।

 

অত্যাবশ্যক খনিজ লবণ সমূহের মধ্যে ক্যালসিয়াম ফসফরাস, জিংক আয়োডিনের অভাবে মাছে বিভিন্ন ধরণের রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায়।

 

পুষ্টির অভাব ও লক্ষণসমূহ

 

অনুশীলন (Activity): মাছে বিভিন্ন ভিটামিন স্বল্পতার লক্ষণ সমূহ সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করুন।

সারমর্ম: অন্যান্য জীবের মত সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার জন্য মাছেরও পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন। মাছের খাদ্যে কোন একটি পুষ্টি উপাদানের অভাব দেখা দিলে মাছের দেহে বিভিন্ন ধরনের। রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায়। খাদ্যে প্রোটিনের স্বল্পতায় মাছের বর্ধন ব্যাহত হয় এবং এনজাইম ও হরমোনের জৈব সংশ্লেষণ বিঘ্নিত হয়।

কার্বহাইড্রেটের স্বল্পতায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। চর্বির স্বল্পতায় মাছের পেশীতে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। খনিজ লবণের স্বল্পতায় হাড় ও কঙ্কাল গঠন বাধাগ্রস্ত হয় আর ভিটামিন স্বল্পতায় নানাবিধ জটিল উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন- ভিটামিন D এর স্বল্পতায় মাছের কিডনী ক্ষয় প্রাপ্ত ও ধ্বংস হয় আবার ভিটামিন-C এর স্বল্পতায় মাছের আঘাত বা ক্ষতস্থান শুকাতে দেরী হয়।

আরও পড়ূনঃ

Leave a Comment